| সোমবার, ২৭ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : আজ সোমবার সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের নবম বার্ষিকী। দীর্ঘ ৯ বছরেও হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ শুরু না হওয়ায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত কিবরিয়াসহ তার সঙ্গে নিহতদের পরিবারগুলো। যত দ্রুত সম্ভব কিবরিয়াসহ ৫ হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখতে চায় নিহতদের পরিবার। অপর দিকে মামলার বাদী হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন, নতুন সরকারের আমলেই মনিটরিং সেলের মাধ্যমে এ আলোচিত হত্যকাণ্ডের বিচার কাজ সম্পন্ন করবে সরকার।
বর্তমানে মামলাটি সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুন নেছা তৃতীয়বারের মতো অধিকতর তদন্ত করছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ২০১৩ সালের মার্চের দিকে এই আলোচিত হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট দাখিল করা হবে। তদন্ত এখন শেষ পর্যায়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তদন্ত কাজ শেষ করতে পারেননি তিনি। এ বিষয়ে গতকাল রোববার তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তদন্ত চলছে। তবে কবে নাগাদ তদন্ত শেষ হবে ঠিক বলা যাচ্ছে না।
সর্বশেষ ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি নিহত শাহ এএমএস কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়ার নারাজি আবেদনের প্রেক্ষিতে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক দিলীপ কুমার বণিক একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসারের মাধ্যমে মামলার অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুন নেছা। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চার্জশিট দিতে পারেননি।
কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের পর পরই মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান মামলাটি তদন্ত করে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ওই বছরের ২০ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। নিহত কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়ার পরামর্শে এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেন মামলার বাদী অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান। বাদী মামলার অধিকতর তদন্ত দাবি করেন। এ প্রেক্ষিতে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামকে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তিনি ২০১১ সালের ২০ জুন আরও ১৪ জনকে আসামি করে এই আলোচিত মামলার অধিকতর তদন্তের চার্জশিট দাখিল করেন। তার তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, ইতোপূর্বে বিএনপির যে ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছিল তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন। অধিকতর তদন্তে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান, লস্করই তৈয়বার সদস্য আব্দুল মজিদসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়। ওই বছরেরই ২৮ জুন এই চার্জশিটের ওপরও নারাজি দিয়ে অধিকতর তদন্ত দাবি করেন আসমা কিবরিয়া। তার পক্ষে আদালতে নারাজি দেন তাদের আইনজীবী আলমগীর বাবুল।
নারাজি আবেদনে আসমা কিবরিয়া উল্লেখ করেন, হবিগঞ্জের তত্কালীন জেলা প্রশাসক এমদাদুল হককে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মূল তথ্য উদঘাটন হবে। তিনি আরও দাবি করেন অভিযোগপত্রে দণ্ডবিধি ১১৪ ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু এই ধারা কার ওপর বর্তায় তা পরিষ্কার করা হয়নি। তার দৃঢ় বিশ্বাস, অভিযোগপত্রে যাদের নাম এসেছে তার বাইরে আরও অনেকেই জড়িত রয়েছে এ হত্যাকাণ্ডে।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে ঈদ-পরবর্তী এক জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলায় শিকার হন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও তখনকার এমপি শাহ এএমএস কিবরিয়া। এই নির্মম হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিত্সার জন্য ঢাকা নেয়ার পথে তিনি মারা যান। এই হামলায় আরও নিহত হন কিবরিয়ার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী। মারাত্মকভাবে আহত হন হবিগঞ্জ-লাখাই আসনের বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহিরসহ শতাধিক লোক।
এ ব্যাপারে মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আলমগীর ভূঁইয়া বাবুল জানান, তদন্তকারী কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে চার্জশিট দাখিল করতে বিলম্ব হচ্ছে।
মামলার বাদী হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ খান জানান, দীর্ঘ সময়েও অধিকতর তদন্তের চার্জশিট দাখিল করতে না পারায় আমি বাদী হিসেবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছি। তবে আশা করি, নতুন সরকারের আমলেই মনিটরিং সেলের মাধ্যমে এই আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ সম্পন্ন হবে।
Posted ০৭:৪৯ | সোমবার, ২৭ জানুয়ারি ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin