নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ২৪ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট
কর্তৃত্ববাদী সরকারের অন্তিম সময়ের বিষাদের সুর বাজছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘নিশিরাতের সরকারের পতনের দিনগণনা শুরু হয়েছে। দেশের মুক্তিকামী জনতা মাফিয়াদের পতনের ধ্বনি শুনতে পাচ্ছে। এ কারণে জনবিচ্ছিন্ন ভোটারবিহিন ব্যর্থ সরকার অস্থির বেপরোয়া উঠেছে। এখন একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারের অন্তিম সময়ের বিষাদের সুর বাজছে।’
শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি-নেতারা উদ্ভ্রান্ত হয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে। অসংলগ্ন কথাবার্তা আর ক্রমাগত হুমকি যেন আর্তচিৎকার। অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা, মানসিক চাপ ও উদ্বেগে অবৈধ সরকার তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। ফলে বিগত ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনপূর্ব সময়ের মতো একই কায়দায় বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, গ্রেফতার ও গায়েবি মামলা বিস্ময়করভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাইকারিহারে সারাদেশে গণগ্রেফতার, মিথ্যা মামলা, বাড়ি বাড়ি অভিযান চালানো হচ্ছে। রাত নামলেই আওয়ামী যুবলীগ-ছাত্রলীগের তাণ্ডব চলছে প্রতিটি জনপদে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘুম কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তারা কেউ বাড়িতে অবস্থান করতে পারছেন না। সরকারের বিরুদ্ধে যারা সমালোচনা করছেন তাদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য বহুমাত্রিক নীলনক্শা করছে।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘রাজারবাগ-বেইলিরোড-গণভবনকে কাশিমবাজার কুঠিতে পরিণত করা হয়েছে। আমরা খবর পাচ্ছি প্রতিদিন সেখানে বিরোধী দলমত নিশ্চিহ্ন করে ভোট ডাকাতি সফল করার কলাকৌশল নিয়ে বৈঠক চলছে। পুলিশ এবং প্রশাসনে রাজনৈতিক রদবদল চলছে। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, ‘সামনে অনেক বড় সংকট আসছে। সেই সংকট মোকাবেলা করতে ইউনিফর্মধারী পুলিশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রশাসনের দলবাজদের বলব-এখনো সময় আছে আপনারা জনগণের পাশে থাকুন। ক্ষমতাসীন দলের দালালি, মোসাহেবি করবেন না। কোনো সরকারই চিরস্থায়ী নয়। কর্তৃত্ববাদী, ধুরন্ধর, গণবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের হয়ে আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার হরণের যন্ত্র হিসেবে কাজ করবেন না। নিশিরাতের ভোট ডাকাত সরকারের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে আপনারা প্রতিনিয়ত গণধিকৃত হচ্ছেন। অতিদ্রুতই সকল অনাচার ও অপকর্মের জন্য নিশিরাতের সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।’
রিজভী বলেন, ‘অবৈধ আওয়ামী নাৎসী সরকার গায়ের জোরে সবকিছু করতে গিয়ে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে। এখন কিছুই সামাল দিতে পারছে না। ডলার সংকটে যখন দেশের জনগণ উদ্বিগ্ন, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ রেমিটেন্সের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। অথচ, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার লোভে জনগণকে দমন করে গণতন্ত্রকামী বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য মন্তব্য গণতন্ত্রকামী মানুষের মনে চিন্তার উদ্রেক করেছে। আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনা কী কারণে আমেরিকা সম্পর্কে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন এটি কারও কাছে বোধগম্য নয়। তাঁর প্রতিহিংসামূলক কথাবার্তায় বাংলাদশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মুখোমুখি দাঁড় করে দিচ্ছেন। এসব আর ছোট করে দেখার অবকাশ নেই।
রিজভী বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা সার্বভৌমত্ব দুর্বল করেছে, স্বাধীনতাকে বিপন্ন করেছে, গণতন্ত্রকে নিরুদ্দেশ করেছে। এরা তাদের নিজেদের প্রহসনের নির্বাচনেও স্বস্তি পায় না। উচ্চ আদালত হিরো আলমের প্রার্থিতা বৈধতার রায় দিলেও নির্বাচন কমিশন জনবিচ্ছিন্ন সরকারের ইশারায় আলমের প্রার্থিতা বাতিল করেছে। এই তামাশার নির্বাচনের মধ্যেও সরকারের অনৈতিক চাপ দৃশ্যমান। এরা গণতন্ত্রের সকল স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা তার পরিবার নিয়ে সুইজারল্যান্ড সফরের পরপরই দেশি-বিদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলোতে খবর বেরিয়েছে—সুইস ব্যাংকগুলোতে রাখা বাংলাদেশিদের সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। এই টাকাগুলো এক বছরে কারা সরিয়েছে? এটি একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে মানুষের মনে। কারণ একচেটিয়া টাকা পাচারের সঙ্গে যারা জড়িত তারা সবাই ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ। আওয়ামী লুটেরারাই যে সুইস ব্যাংক থেকে সাড়ে দশ হাজার কোটি টাকা সরিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ভয়াবহ ডলার সংকটের সময়ে বিশাল বহর নিয়ে শেখ হাসিনার ঘন ঘন বিদেশ সফর এবং সম্প্রতি সুইজারল্যান্ড সফর খুবই রহস্যজনক। সফর করে ফিরে এসে তাঁর কথাবার্তাও রহস্যজনক।
বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষনেতা আরও বলেন, ‘উৎসাহ, উদ্যম, প্রয়াস, অনমনীয় মনোবল ও আত্মত্যাগ কখনোই বৃথা যায় না। লুন্ঠিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করবে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবে।
Posted ০৯:৫৭ | শনিবার, ২৪ জুন ২০২৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain