| সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ত্রাস আদম বাহিনীর প্রধান, ৫টি হত্যাসহ ১০ মামলার পলাতক আসামি, পৌর কাউন্সিলর ও পৌর যুবলীগের সভাপতি আদম আলীকে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে যৌথবাহিনী। উপজেলার মুরগিহাটা থেকে তাকে আটক করার পর মনিরামপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাসহ ১০টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মনিরামপুর থানার ওসি মীর রেজাউল ইসলাম। এদিকে আদম আলী আটকের খবরে বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করে তার ও তার বাহিনী দ্বারা নির্যাতিত মানুষেরা। তাকে এক নজর দেখার জন্য থানায় ছুটে যায়। তবে বিড়ম্বনায় পড়েছেন এমপি এড. খান টিপু সুলতান। প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতার পকেটের লোক বলে পরিচিত আদম আলীর আটকের খবরে ক্ষুব্ধ হন তার দলের নেতাকর্মীদের একাংশ। তারা মিছিল সহকারে থানায় হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে থানার প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়। সশস্ত্র অবস্থান নেন পুলিশ সদস্যরা। তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা থানার প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন। গেটের উপর মাইক বসিয়ে তারা শুরু করে বিক্ষোভ সমাবেশ। একটু পরেই সেখানে হাজির হন এমপি এড. খান টিপু সুলতান।
তিনি থানার প্রধান ফটক খুলে কয়েকজন নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে থানার ভেতরে প্রবেশ করেন। তিনি তার বিশ্বস্ত রাজনৈতিক কর্মী আদম আলীকে নিরীহ রাজনীতিবিদ ও একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে আখ্যায়িত করে তার মুক্তি দাবি করেন। কিন্তু পুলিশ অস্বীকার করলে এমপি টিপু সুলতান থানার প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন। এসময় থানার বাইরে কয়েক শ’ দলীয় নারী-পুরুষ মুহুর্মুহু স্লোগানের মাধ্যমে আদম আলীর মুক্তি দাবি করে। তারা জেলা পুলিশ সুপার জয়দেব ভদ্রকে জামায়াত-শিবিরের দোসর আখ্যায়িত করে স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে এমপি টিপু সুলতান মিডিয়াকর্মীদের জানান, যশোরের পুলিশ সুপার জয়দেব ভদ্র জেলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছেন। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক থাকার কারণে তাদের আটক করছেন না। ফলে জামায়াত-শিবির আর বিএনপির সন্ত্রাসীরা গ্রামের পর গ্রামে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। ওই চক্র তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্টকে হত্যার উদ্দেশে হামলা চালিয়ে তার গাড়িটি আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ সুপার সে সব মামলার আসামিদের আটকে কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। পক্ষান্তরে তার প্রধান নির্বাচনী প্রতিপক্ষ স্বপন কুমার ভট্টাচার্যের পক্ষ অবলম্বন করে তাদেরকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিতে মনগড়া সব কাজ করছেন। পুলিশ সুপারের গাফিলতির কারণেই গত ৫ তারিখের নির্বাচনের দিন নৌকার প্রতিপক্ষরা ভোট কেন্দ্র দখলে মেতে ওঠে। পটকা ফাটিয়ে দখল করে নেয় একাধিক ভোটকেন্দ্র। সে সব মামলার আসামিদের আটকে পুলিশের কোন সাফল্য নেই বলে দাবি করেন এমপি টিপু সুলতান। তিনি বলেন, চাপাতলার মালোপাড়ার তুলনায় যশোরের মনিরামপুরের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াত-শিবির ও বিএনপি চক্রের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ভয়াবহতা কয়েক গুণ বেশি। অথচ পুলিশ সুপার সেখানে যেভাবে ভূমিকা পালন করলেন তার সিকি ভাগ উদ্যোগও নেই মনিরামপুরে। এর থেকেই প্রমাণিত হয় তিনি এক সাম্প্রদায়িক লোক। তার কারণেই মনিরামপুর অশান্ত হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এই এসপি বদলি না হচ্ছেন এবং আদম আলীসহ তার নিরীহ কর্মী- সমর্থকদের থানা থেকে মুক্ত করা না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি থানার গেট ছাড়বেন না। প্রয়োজনে অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এড. টিপু সুলতান বলেন, আসন্ন নির্বাচনে স্বপনকে মাঠ দখলে সহযোগিতা করতেই বেছে বেছে তার নির্বাচনী কর্মী ও সমর্থকদের পুলিশ লেলিয়ে আটক করাচ্ছেন এসপি জয়দেব। এরই অংশ হিসেবে নিরপরাধ জনপ্রতিনিধি আদম আলীকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে এলাকার ত্রাস আদম আলীকে আটক করায় জেলা পুলিশ ও যৌথবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে মনিরামপুর শহরে আনন্দ মিছিল করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের অপর একটি অংশ। পরে পৌর চত্বরের সামনে অনুষ্ঠিত হয় একটি আনন্দ সমাবেশ। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। সমাবেশে আওয়ামী লীগ ছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন যুবলীগের সেক্রেটারি আলাউদ্দিন, পৌর কমিশনার গৌতম চক্রবর্তী প্রমুখ।
এদিকে রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও সন্ত্রাসী আদম আলীর মুক্তির দাবিতে যশোর-৫ মনিরামপুর আসনের এমপি ও ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এড. খান টিপু সুলতানের নেতৃত্বে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ থানা ঘেরাও করে সমাবেশ ও গণসংগীত পরিবেশন করতে থাকে। যোগাযোগ করা হলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, দুপুরের পর থেকে থানার পুলিশ এক প্রকার অবরুদ্ধ। থানার প্রধান ফটক দখল করে টিপু সুলতান ও তার কর্মী-সমর্থকরা সমাবেশ করছে। গণসংগীত পরিবেশন করছে। আরেকটি গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করার চেষ্টা করছেন। অথচ এই আদম আলীকে আটকের দাবিতে শুধু মনিরামপুর নয় গোটা জেলার লাখো মানুষের দাবি ছিল দীর্ঘ দিনের। আজ পুলিশ ও যৌথবাহিনীর সদস্যরা সে কাজটি করতে পেরেছে। এর ফলে সবাই পুলিশকে বাহবা দেবে। অথচ একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে এখন যা হচ্ছে তা বর্ণনাতীত।
এদিকে পুলিশ সুপার জয়দেব ভদ্র বলেন, আদম একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান। সে একাধিক হত্যাসহ ৫/৭টি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি। নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে যৌথবাহিনীর যে অভিযান চলছে তারই আলোকে এই মোস্ট ওয়ানটেড ক্রিমিনাল আদমকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে আদম আলীর মতো একজন মোস্ট ওয়ানটেড আসামিকে বাইরে রাখলে নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নিত হতে পারে। ভোটাররা কেন্দ্রে ভোট দিতে যেতে ভয় পাবে। এ কারণেই পুলিশ তাকে আটক করেছে।
Posted ১২:১১ | সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin