নওগাঁ: নওগাঁর মান্দা উপজেলার মান্দা কারিগরি ও কৃষি কলেজের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর ফজলে রাব্বির বিরুদ্ধে ভূয়া প্রেগন্যান্সি টেস্টের রিপোর্ট দিয়ে ধর্ষণ মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভূয়া এ রিপোর্ট দিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন ধর্ষণ মামলায় কোন রকম তদন্ত ছাড়াই থানা পুলিশ গভীর রাতে এক ঘন্টার মধ্যেই ফজলে রাব্বি (২৮)কে আটক করেছে বলে গুঞ্জন উঠেছে স্থানীয়দের মাঝে।
স্থানীয়রা জানান, প্রসাদপুর ইউনিয়নের ইনায়েতপুর (মন্ডলপাড়া) গ্রামের মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে ফজলে রাব্বি। পেশায় তিনি একজন অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর। এর পাশাপাশি তার একটি পেয়ারা বাগান রয়েছে। অপরদিকে মামলার বাদী কুসুম্বা ইউনিয়নের ছোট বেলালদহ গ্রামের (মেডিক্যাল মোড় এলাকায়) বাসিন্দা। বাদীর বাবা আকবর আলী বড় বেলালদহ ফাজিল মাদরাসার একজন অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহকারী। তার বাবার জন্মস্থান মান্দা উপজেলার ১২ নং কাঁশোপাড়া ইউনিয়নের রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে। সম্প্রতি ফজলে রাব্বির পেয়ারা বাগানে পেয়ারা নিতে গিয়ে তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা শুরু করে আফিমা সুলতানা মিতু (৩২) নামে ওই নারী।
এসব প্রতারণার ফাঁদে ফেলে আত্মসাতকৃত অর্থ দিয়ে বর্তমানে মেডিক্যাল মোড় (শ্মশানঘাটি) এলাকায় একটি তিন তলা বিশিষ্ট নিজস্ব ভবনে বিলাশবহুল ভাবে জীবন যাপন করছেন তিনি। ১৯৯১ সালে জন্ম প্রতারক ওই নারীর। তবে বর্তমানে জাতীয় পরিচয় পন্রে নতুনভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে বয়স কমিয়ে ১৯৯৫ সাল করা হয়েছে। তবে ২০০৭ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রথমে মান্দার প্রসাদপুরে শহিদুল ইসলামের ছেলে সামসুল আরেফিন ওরফে সুজনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি । এরপর সেখান থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের কয়েক বছর পর নানা-মামা এবং খালার পরিচয়ে একের পর এক ছেলেকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাত করেন বলে জানিয়েছেন অন্যান্য ভুক্তভোগীরা। এছাড়া টাকার বিনিময়ে দেহব্যবসাও করতেন বলে এলাকায় বেশ কুখ্যাতি আছে তার।
ভুক্তভোগীদের দাবি, ওই প্রতারক নারীর বড় মামা বেলাল হোসেন খান প্রসাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা বিএনপি’ র সাংগঠনিক সম্পাদক , মেজো মামা আবদুস সালাম অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ও একজন আ’লীগ নেতা, ছোট মামা গোলাম হোসেন খান অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক এবং খালা পাপিয়া একজন (জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদের জন্য চাকুরীচ্যুত) সহকারী শিক্ষক। তাদের পরিচয়ে এসব অপকর্ম করে আসছিলো সে। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। তার ব্যাপারে কেউ কিছু বললেই মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে থাকেন। তার প্রতারণার ফাঁদে পরে পরবর্তীতে এসব ব্যাপারে কেউ সমঝোতা করতে চাইলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে বসতো সে। টাকা দিতে পারলে ভালো, আর দিতে না পারলেই মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আত্মসাত করায় তার প্রধান কাজ।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, তার প্রতারণার ফাঁদে পা দেওয়ার পর অভিনব কায়দায় একাধিক ছেলের কাছ থেকে সে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আর এ পর্যন্ত সে বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০ জনের অধিক ছেলেকে অভিনব কায়দায় প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিয়ে করার পর তাদের সকলকে সর্বশান্ত করে দিয়েছেন ওই নারী। একের পর এক এসব প্রতারণার ফাঁদে পড়ার পরেও কোন প্রতিকার না পেয়ে নিরবে সহ্য করে যাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। এদের মধ্যে একজন জজ, কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যাবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজন রয়েছেন। সম্প্রতি, ওই প্রতারক নারী প্রেমের ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে বসে ফজলে রাব্বির কাছে । পরবর্তীতে তার দাবকৃত টাকা দিতে না পারার কারণে মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় জেলে যেতে হয়েছে ফজলে রাব্বিকে। শুধু ফজলে রাব্বিই না এর থেকে পরিত্রাণ পেতে চান সকল ভুক্তভোগীরা।
মামলার এভিডেন্স স্বরুপ গত ২৭ জুনের যে প্রেগন্যান্সি টেষ্টের রিপোর্টের কপি দেয়া হয়েছে সেটার কোন তথ্য নেই আইডিয়াল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিকের রেজিষ্ট্রার খাতায়। অপরদিকে ওই রিপোর্টে জাহিদ হাসান নামে যে মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) এর নাম পদবী উল্লেখ করা হয়েছে তিনি ওই হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিকের কেউ না বলে জানিয়েছেন আইডিয়াল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিক গ্রুপের পরিচালক আমিনুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন এক্স, বর্তমানে যিনি ল্যাব টেকনোলজিষ্টের দায়িত্ব পালন করেন তার নাম আবু সাইদ। তিনি আরো জানান যে, গত কয়েক দিন আগে ঈদুল আজহার ছুটির সময় তারা সবাই ব্যস্ত সময় পার করেছেন। ওই সময়ে এমনটি হওয়ার কথা না। তবে যদি কেউ প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য পরিকল্পিতভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে অথবা অন্যের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে এমনটি করে থাকে তবে তা খুবই অন্যায়। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ জন্য আমরা চরমভাবে বিব্রত।
এবিষয়ে জানতে মামলার বাদী আফিমা সুলতানা মিতুর মুঠোফোনে কল দিলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন। পরবর্তীতে তার মুঠোফোনে একাধিক বার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার কোন মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হননি। মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি -তদন্ত) মেহেদী মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, গত ১ জুলাই রাতে ওই নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মান্দা থানায় এজাহার দায়ের করায় ফজলে রাব্বিকে তার বাড়ি থেকে আটক করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।