![Swadhindesh -স্বাধীনদেশ](http://www.swadhindesh.com/wp-content/uploads/2022/11/main_logo.png)
এম এম হারুন আল রশীদ | বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট
নওগাঁ প্রতিনিধি: সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, জাল দলিলের মাধ্যমে জমি খারিজ (নামজারি) এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমানের বিরদ্ধে। তিনি জেলা শহর থেকে ১২কিলোমিটার দূরে রাণীনগর অফিসে প্রতিদিন যাতায়াত এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যবহার করছেন সরকারি গাড়ি। ফলে একদিকে যেমন জ্বালানি তেলের অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে সরকারি কোষাগার থেকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হওয়ায় প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু সরকারি যানবাহন ব্যবহারের নীতিমালা অনুসারে একজন কর্মকর্তাকে অবশ্যই তার ক্যাম্পাসের মধ্যে কিংবা কর্মস্থলের অদূরে বসবাস করতে হবে। এছাড়া কোন কর্মকর্তা সরকারি গাড়ি অবশ্যই রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে শুধুমাত্র তার কর্মস্থলের এলাকার মধ্যেই ব্যবহার করতে পারবেন। নিয়ম রয়েছে সরকারি কাজ ছাড়া উপজেলার বাইরে গাড়ি নিয়ে যেতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও সংশি¬ষ্ট কারণ থাকতে হবে। এমন বিধি নিষেধ থাকলেও বছরের পর বছর সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান সরকারের নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজের পারিবারিক কাজেও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে আসছেন। বিষয়টি জেলায় ওপেনসিক্রেট হলেও বিষয়টিতে নজর নেই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের।
এছাড়া উপজেলা ভূমি অফিস বর্তমানে দুর্নীতি আর অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অর্থের বিনিময়ে ভুয়া কাগজপত্রাদির মাধ্যমে একজনের জমি অন্যের নামে খারিজ করার একাধিক ঘটনা উপজেলায় ব্যাপক তোলপাড়সহ আলোড়নের সৃষ্টি করেছে। অর্থ না দিলে সহজে জমি খারিজ হয় না এবং অর্থ না দিলে নামজারি করা হয় না। অর্থ না দিলে কিংবা অফিসে থাকা দালালদের সাথে যোগাযোগ না করলে জমি সংক্রান্ত মামলার ফাইলে দিনের পর দিন নম্বরও পড়ে না এমন অভিযোগ একাধিক সেবাগ্রহিতার। এই অফিসে মোহাম্মদ হাফিজুর রহমানের যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতির পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন বিভিন্ন সময়ে অফিসে সেবা নিতে আসা সেবা গ্রহিতারা।
সম্প্রতি একটি প্রতারক চক্রের মাধ্যমে উপজেলা ভূমি অফিসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাল দলিলের মাধ্যমে জমি খারিজ (নামজারি) করে দেওয়ার অভিযোগটি ব্যাপক আলোনার জন্ম দিয়েছে। আবদুল কুদ্দুসের নামে নামজারি করা খারিজের পর ওই জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এই ঘটনায় জমির ওয়ারিশ ও ক্রয়সূত্রে ৫জন মালিক একযোগে আবদুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে জাল দলিলের মাধ্যমে তথ্য গোপন করে এবং ভূয়া তথ্য দিয়ে জমি খারিজ করে নেওয়ার অভিযোগ এনে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর অভিযোগ প্রদান করেছেন। ডিজিটাল যুগের এমন ডিজিটাল জালিয়াতির ঘটনায় ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকান্ড নিয়ে সাধারণ মানুষদের মাঝে চরম হতাশা, ক্ষোভ, উদ্বেগ, মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ভীতির সঞ্চার হয়েছে।
জাছের আলীসহ কয়েকজন জানান, আমরা রাণীনগর সাব-রেজিষ্ট্রী অফিস থেকে সম্প্রতি আবদুল কুদ্দুসের ৬৮১৫ নম্বর দলিলের জাবেদা কপি (নকল) তুলে দেখি জাবেদার সাথে আবদুল কুদ্দুসের দলিলের কোন মিল নেই। দলিলের দাতা, গ্রহীতা, মৌজা এমনকি জমিরও কোন মিল পাওয়া যায়নি। এছাড়া আবদুল কুদ্দুসের ৬৩৬০নম্বর দলিল রেজিষ্ট্রী অফিসে পাওয়া যাচ্ছে না।
তারা বলেন, একটি প্রতারক চক্রের মাধ্যমে আবদুল কুদ্দুস জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আমাদের জমির খতিয়ানের দুই মালিক সফেজান বিবি এবং মছিরন বিবিকে দাতা বানিয়ে এবং আবদুল কুদ্দুস নিজে গ্রহীতা সেজে দুইটি জাল দলিল তৈরি করেছেন। সেই দুইটি জাল দলিল দিয়ে আমাদের প্রায় ৮শতাংশ জমি আবদুল কুদ্দুস ভূমি অফিস থেকে খারিজ করে নিয়েছে। এ ঘটনায় আমরা ওই খারিজ বাতিলসহ আবদুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযুক্ত আবদুল কুদ্দুসের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, উপজেলার খাগড়া গ্রামের মৃত-মমিন সরদারের ছেলে হাফিজুর রহমান হাফিজ সম্পর্কে আমার শ্যালক (বউয়ের ভাই) হয়। শ্যালক হাফিজ টাকার বিনিময়ে আমাকে এই কাজ করে দিয়েছে। এর চেয়ে আমি আর বেশিকিছু জানি না। কোথায় কি করতে হয়েছে তার সবকিছু শালা হাফিজ করেছে এবং সবকিছু সে জানে।
এই বিষয়ে হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, আবদুল কুদ্দুস সম্পর্কে আমার ফুফাতো দুলাভাই। সেই সূত্রে ওই এলাকায় আমার যাওয়া-আসা। আবদুল কুদ্দুস দুলাভাই আমার কাছে জমির খারিজ করার কাজে সহযোগিতা চেয়েছিলো বলেই আমি তাকে একটু সহযোগিতা করেছি মাত্র। আমার কোন চক্র নেই। আমি জমি সংক্রান্ত কোন বিষয়ই তেমন ভাবে জানি না। একটি কুচক্রী মহল আমাকে সামাজিক ভাবে হেয় করার জন্য আমার বিষয়ে এমন মিথ্যে অভিযোগ তুলেছে।
এ বিষয়ে সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান মুঠোফোনে জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা। এই কথা বলেই তিনি লাইন কেটে দেন।
নওগাঁর ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) গোলাম মওলা মুঠোফোনে জানান ওই এসিল্যান্ডের স্ত্রী পেশায় একজন চিকিৎসক হওয়ার কারণে তাকে নওগাঁ শহরে থাকতে হয়। তাই হয়তো বা সরকারি গাড়িটি একটু ব্যবহার করে। তবে আমি তাকে নিষেধ করে দিবো।
Posted ১৭:০৫ | বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin