ত্রিশালে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় গত ৩৬ ঘণ্টায় সন্দেহভাজন পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের মধ্যে দু’জন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী, যাদের জেএমবির অর্থদাতা হিসাবে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, এই পাঁচজনসহ ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাঁচজনের মধ্যে দু’জন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। জেএমবিকে তারা অর্থ দিয়ে সহায়তা করতেন বলে পুলিশের ধারণা।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে সাড়ে চার কেজি বিস্ফোরক, ১৪ রাউন্ড গুলি, আসামি ছিনতাইয়ের কৌশলের নির্দেশিকা ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। ৩৬ ঘণ্টায় গ্রেফতারকৃত পাঁচজনের মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার হওয়া দুই জেএমবি জঙ্গিও রয়েছেন।
এর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালের সউদকান্দা এলাকা থেকে আলামিন (২৫) ও জিতু (২৮) নামে ওই দু’জনকে আটকের কথা পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হলেও শনিবার যোগাযোগ করা হলে ছানোয়ার হোসেন বলেন, তাদের ঢাকা থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ত্রিশালে অভিযান চালানো হয়। বেলা ১১টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে গ্রেফতারের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
এ সময় ঢাকা মহানগর ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, গত ১৩ মার্চ হাতিরঝিল এলাকা থেকে আলামিন, জিতু, রাহাত ও আজমীরকে গ্রেফতার করা হয়। রাজুকেগ্রেফতার করা হয়েছে শনিবার ভোরে। রাহাত ও আজমীর গার্মেন্ট ব্যবসায়ী।
সমপ্রতি আজমীর ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা দিয়ে সাতারকুলে একটি গার্মেন্ট কিনেছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া কল্যাণপুরে রাহাতের ‘রাহাত ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি গার্মেন্ট রয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, মূলত জঙ্গিদের পুনর্বাসন ও অর্থ জোগান দেয়ার জন্য এই গার্মেন্ট দুটি পরিচালনা করা হতো। জিজ্ঞাসাবাদে এ সংক্রান্ত বেশি কিছু তথ্য জানা গেছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় একটি প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে তিন জেএমবি জঙ্গিকে ছিনতাই করা হয়। ওই তিন জঙ্গি হলেন মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবি নেতা সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি, রাকিবুল হাসান এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান। এর মধ্যে রাকিবুল ওইদিনই টাঙ্গাইলে ধরা পড়েন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
পরিকল্পনা ৮ মাসের গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে জানান, জঙ্গি সদস্য ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন কারাবন্দি জঙ্গি হাফেজ মোহাম্মদ রকিব। তারা আগামী কয়েক বছর আগে অল্প সময়ের মধ্যে জামিন পেতে যাচ্ছেন এমন কয়েকজন জঙ্গি সদস্যদের সহযোগিতায় তিনি এ কারাবন্দি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন কারাবন্দি থাকা অবস্থাতেই। পরিকল্পনা অনুসারে বেশ কয়েকজন জঙ্গি সদস্য জামিনে বের হয়ে এসে অভিযানের জন্য অর্থ এবং শক্তি সঞ্চারের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
কারাবন্দি কয়েকজন জঙ্গি সদস্য জেলখানা থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বাইরে অভিযানের জন্য অপেক্ষারত জঙ্গি সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। তারা গত ৮ মাস আগে গাজীপুরের কাশিমপুর ও কোনাবাড়ী এলাকায় একাধিক বাসা ভাড়া নিয়ে গাজীপুর এলাকায় এ জঙ্গি ছিনতাই করার জন্য সুবিধাজনক একটি স্থান খুঁজতে থাকেন। কিন্তু তারা এরকম নির্ভরযোগ্য কোনো স্থান না পাওয়ায় গত ৫ মাস আগে অপরাধ সংঘটনস্থল পরিবর্তন করে ভালুকা-ত্রিশাল এলাকা বেছে নেন।
তারা ওই এলাকায় পরিকল্পনা মাফিক একাধিক বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান গ্রহণ করতে থাকেন। কেউ কেউ সপরিবারে সেখানে অবস্থান করেন। এ সময় তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিস্ফোরক, বোমা তৈরির নানা সরঞ্জামাদি, কাটার, অস্ত্র-গুলি, প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিভিন্ন যানবাহন ইত্যাদি জিনিসপত্র সংগ্রহ এবং মজুত করতে থাকেন। এমনকি ঘটনার আগের দিন তারা মহড়াও দেন। যেন ঘটনার দিন কোনো সমস্যা না হয়। জঙ্গি ছিনতাই ঘটনায় সরাসরি জড়িত গ্রেফতারকৃত একাধিক জঙ্গি সদস্যদের বক্তব্য থেকে এসব জানা গেছে বলেও জানান মনিরুল ইসলাম।