নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ০৪ জুন ২০২৪ | প্রিন্ট
ভারতের কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীভা গার্ডেন নামে একটি ফ্ল্যাটে হত্যার শিকার হয়েছে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি নিয়ে ভারত— উভয় দেশের চলছে ‘চুল ছেঁড়া’ বিশ্লেষণ। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে গ্রেফতার আসামিদের।
পশ্চিমবঙ্গ ও ঢাকা পুলিশের সমন্বিত তথ্য বলছে— এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে বিভিন্নভাবে জড়িত এমন ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুই দেশেই তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী আমানুল্লাহ আমান, শিলাস্তি রহমান ও তানভীর ভূঁইয়াকে রিমান্ডে নিয়েছে ঢাকার ডিবি। গ্রেফতার অপর আসামি কসাই জিহাদকে রিমান্ডে নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি।
গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে তদন্তকারী সূত্র। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন আসামি শিলাস্তি রহমান। পুলিশের দাবি, আনার হত্যায় শিলাস্তিকে ব্যবহার করা হয়েছিল ‘হানিট্র্যাপ’ হিসেবে। শুধু এতটুকুই নয়, হত্যার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে আনারের মরদেহ টুকরো করা— সব কিছুতেই যুক্ত ছিলেন তিনি। এই হত্যাকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার।
পুলিশের ভাষ্যমতে, আনারকে নিউটাউনের ওই ফ্ল্যাটে যখন আনা হয়; শিলাস্তি তখন সেখানেই ছিলেন। আনারকে ‘রিসিভ’ করা থেকে শুরু করে তাকে হত্যা করা পর্যন্ত নিউটাউনের ওই ফ্ল্যাটেই ছিলেন তিনি। এই খুনের ঘটনায় আমানুল্লাহ, তানভীর ভূঁইয়া এবং শিলাস্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশকিছু রোমহর্ষক তথ্য পাওয়া গেছে। আনারকে হত্যার পরে নিজেদের মধ্যে দায়িত্বভাগ করে সব কাজ করেন তারা। এমনকি আজিমের দেহ টুকরো ফ্ল্যাটের বাইরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও শিলাস্তির ভূমিকা ছিল।
এদিকে রিমান্ডে থাকাকালীন অবস্থায় আজ সোমবার (৩ জুন) ঢাকার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন শিলাস্তি রহমান। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমানের আবেদনের ভিত্তিতে শিলাস্তির জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
এ সময় তিনি বিচারককে জানান— কলকাতার উপকণ্ঠ নিউটাউনের যে ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যা করা হয় সেখানে মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহিনের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। আদালত ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ভারতের থানায় আখতারুজ্জামান শাহিনের স্ত্রী হিসেবে ফরম পূরণ করা হয়। পরে সেই ফরম দেখিয়ে সঞ্জীভা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেওয়া হয়।
সঞ্জীভা গার্ডেন নামে ওই ফ্ল্যাটটির মালিক সন্দীপ রায়। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দফতরে কাজ করেন। তার কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহিন। সূত্র বলছে— ভারতে ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে হলে সব পক্ষের (ভাড়াটিয়া, দালাল ও বাড়িয়ালা) ছবিসহ সব নথি স্থানীয় থানায় জমা দিতে হয়। জমা দেওয়া নথিতে দেখা গেছে, মো. আখতারুজ্জামান, আমানুল্লা সৈয়দ এবং শিলাস্তি রহমান ওই ফ্ল্যাটে থাকবেন বলে সেটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল।
তথ্য বলছে— নিউটাউন থানায় ওইসব নথি জমা দেওয়া হয় চলতি মাসের ১ তারিখে। থানায় জমা দেওয়া নথিতে ‘তিনজন থাকবেন’ লেখা থাকলেও ফ্ল্যাটটি সল্ট লেক অঞ্চলের এক দালালের মাধ্যমে ভাড়া নিয়েছিলেন মো. আখতারুজ্জামানই। এ সময় তিনি নথি হিসেবে নিউইয়র্কের ড্রাইভিং লাইসেন্সের নম্বরও জমা দিয়েছিলেন। পেশা হিসাবে তিনি সেখানে লিখেছেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে— নিউটাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার। এরপরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের পুলিশের বরাত দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
Posted ১০:১২ | মঙ্গলবার, ০৪ জুন ২০২৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain