শনিবার ৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

গণঅনশনে রাজনীতিক-পেশাজীবীরা : অনিবার্য গৃহযুদ্ধ থেকে দেশকে বাঁচাতে একতরফা নির্বাচন থামান

  |   শনিবার, ০৪ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট

GanaAnashan

স্টাফ রিপোর্টার : পেশাজীবীদের গণঅনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দেশের প্রবীণ রাজনীতিক ও পেশাজীবী নেতারা সরকারকে অনিবার্য গৃহযুদ্ধ থেকে দেশকে বাঁচাতে একতরফার তামাশার নির্বাচন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, সরকার গায়ের জোরে এ নির্বাচন করলেও আজকের দিনটি ইতিহাসে কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। শেখ হাসিনার কপালে কলংকের চিহ্ন এঁকে দেবে। এজন্য ভবিষ্যত্ প্রজন্ম দিনটিকে ঘৃণার চোখে দেখবে।

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে পেশাজীবীদের গণঅনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দেশের প্রবীণ রাজনীতিক, সাংবাদিক, চিকিত্সক, প্রকৌশলী, শিক্ষকসহ পেশাজীবী নেতারা এসব কথা বলেন। বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনার একগুঁয়েমির কারণে দেশ ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ অনিবার্য গৃহযুদ্ধের দিকে চলে যাবে। তার তামাশার নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্য হবে না। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ, জাতীয় প্রেস ক্লাব, সুপ্রিমকোর্ট ও ঢাবি শিক্ষকদের উপর হামলার প্রতিবাদ এবং সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এ গণঅনশন কর্মসূচির আয়োজন করে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল সোয়া তিনটা পর্যন্ত এ গণঅনশন কর্মসূচি চলে। পরে অংশগ্রহণকারীদের একে অপরকে জুস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়।

গণঅনশনে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ৫ জানুয়ারি সরকার তামাশার নির্বাচন করছে। শত বছরের ইতিহাসে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক নির্বাচনের নজির আর নেই। গ্রিনিচ বুকে এ তামাশার নির্বাচনের কথা লেখা থাকবে। তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর কারণে দেশে বর্তমান সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল না করলে এ সঙ্কটের সৃষ্টি হতো না। তিনি প্রেস ক্লাব, সুপ্রিমকোর্ট, ঢাবি শিক্ষকদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে দেশ অনিবার্য গৃহযুদ্ধের দিকে চলে যাবে। বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি একজন বিরোধীদলীয় নেত্রী। অথচ তাকে পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশ এ নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশকে অনিবার্য গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচাতে আজকের নির্বাচন স্থগিত করুন। একগুঁয়েমির কারণে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবেন না। শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। পেশাজীবীদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। গায়ের জোরে সরকার নির্বাচন করে ফেললেও তাদের শেষ রক্ষা হবে না।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় এ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ইতিমধ্যে লাশ হয়ে গেছে। আজ রোববার তাদের দাফন হবে। এখন শেখ হাসিনা আগামীতে আপনি কুলখানির জন্য তৈরি থাকুন। নির্বাচন কমিশনকে সরকারের তল্পীবাহক উল্লেখ করে রব বলেন, আজ যে তামাশার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা হবে জাতির জন্য ন্যাক্কারজনক। প্রার্থীবিহীন নির্বাচন প্রাদেশিক আমলেও হয়নি। তিনি বলেন, কী অদ্ভুত নির্বাচন। স্বাধীন দেশে নির্বাচনের প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যায় না।

এ সময় তিনি সরকারের তামাশার নির্বাচন বন্ধের জন্য রাষ্ট্রপতিকে আহ্বান জানান। রব বলেন, আপনি রাষ্ট্রপতি, দেশের অভিভাবক। যে নির্বাচনের পক্ষে কেউ নেই, সেই নির্বাচন আপনি বন্ধ করুন। এখনো নির্বাচন পিছানোর জন্য ১১০ দিন সময় আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অতি আশা ভালো নয়। প্রধানমন্ত্রী দেশটাকে জ্বালিয়ে দেবেন না। তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণকে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে পেশাজীবীদের নির্বাচন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করার আহ্বান জানিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে পরামর্শ দেন। যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে জাতিকে বিভক্ত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন এই মুক্তিযোদ্ধা। রব বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধদের মন্দির ও উপাসনালয়ে হামলা করে আওয়ামী লীগ। তারাই বাসে আগুন দিয়ে আবার হাসপাতালে গিয়ে মায়াকান্না করেন।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশের মানুষের মতকে উপেক্ষা করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কারণে শেখ হাসিনার নাম বিশ্বের স্বৈরাশাসক হিটলার, চেঙ্গিসদের পাশে থাকবে। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিতে কোনো মানুষ যাবে না, যাবে শয়তানরা। শয়তান গিয়ে ভোট দিলেও হাসিনার কোনো উপায় থাকবে না। ২৪ জানুয়ারির পর এ সরকারকে কেউ মানবে না। জনগণ নির্বাচন বয়কট করেছে জানিয়ে তিনি আজকের নির্বাচন বাতিল করার আহ্বান জানান।
বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার সমালোচনা করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রী। তাকে পুলিশ যেভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথ আটকে রেখেছিল, তাতে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা যথার্থই বলেছেন। সুপ্রিমকোর্টে মহিলা আইনজীবীদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে বঙ্গবীর বলেন, একটি দেশে যখন একজন নারী চিত হয়ে পড়ে থাকে, তখন দেশ লজ্জায় পড়ে যায়। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা হলে এসব করতে পারতেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, খালি মাঠে হাসিনা বক্তৃতা করতেই পারেন, যখন মাঠ সোজা হয়ে দাঁড়াবে তখন হাসিনার কোনো খোঁজ থাকবে না।

শেখ হাসিনাকে দেশের জন্য আপদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সঙ্গে যেমন ভারত আছে, আমার সঙ্গেও ভারত আছে। আমার সঙ্গে আসুন, দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি। দুই-তিন মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে বিদায় করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, আজকের দিনটি ইতিহাসে কালো দিবস হয়ে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। শেখ হাসিনার কপালে কলংকের চিহ্ন এঁকে দেবে। ভবিষ্যত্ প্রজন্ম দিনটিকে ঘৃণার চোখে দেখবে। জেদের বশবর্তী হয়ে একগুঁয়েমি না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশ ও গণতন্ত্রের প্রতি সামান্যতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে তফসিল বাতিল করে সবদলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।

সভাপতির বক্তব্যে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, প্রহসনের নির্বাচন জনগণ মানবে না। যে নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া নেই সে নির্বাচন জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত পেশাজীবীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখবে বলেও তিনি জানান। পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। দেশে গণতান্ত্রিক কোনো কর্মসূচি পালন করা যায় না। বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। জনগণ অবৈধ নির্বাচন মানবে না। নির্বাচন প্রতিহত করা হবে।

বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে শেখ হাসিনা সফল হবে না। সরকার যে পথে হাঁটছে তাতে তাদের পতন নিজেরাই ডেকে আনছে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোয়িশনের (ইউট্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার বলেন, তামাশার নির্বাচন প্রতিহত করতে হবে। এজন্য সবাইকে রাজপথে নেমে আসতে হবে। ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক বলেন, দেশে নব্য বাকশাল চলছে। সারাদেশ আজ কারাগারে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনার পতন ছাড়া মুক্তি নেই।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমেই দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। ‘জনগণের এখন একটাই দাবি, শেখ হাসিনা কবে যাবি।’ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, যেসব মন্ত্রী-পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে তারা এক সময় হুকুমের আসামি হবেন।

সরকারকে তামাশার নির্বাচন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, এক ব্যক্তির ক্ষমতার লোভের কারণেই আজ প্রহসনের নির্বাচন করছে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখনো সময় আছে তফসিল বাতিল করুন, অন্যথায় একতরফার এ তামাশার নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু হবে।
ড্যাবের সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার হারুন-অর-রশীদ বলেন, শেখ হাসিনা আজ যে তামাশার আয়োজন করেছেন, নির্বাচনের ইতিহাসে তা কলংকজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী বলেন, জবরদস্তির নির্বাচনে যে ৩০০ জন এমপি মনোনীত হতে যাচ্ছেন তারা হবেন গণতন্ত্রের কয়েদি।

ড্যাবের যুগ্ম-মহাসচিব ডা. এম এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চুর সঞ্চালনায় এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ইউট্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক তাহমিনা আক্তার টপি, ঢাবির অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন, ঢাবি শিক্ষক ড. আবুল হাসনাত, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বিএফইউজের সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. খলিলুর রহমান, এ্যাব নেতা প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ড্যাবের সহ-সভাপতি ডা. আবদুস সালাম, কৃষিবিদ গোলাম হাফিজ কেনেডী, এডভোকেট আরিফা জেসমিন, কৃষিবিদ এমএ করিম, ডিইউজে প্রচার সম্পাদক আকন আবদুল মান্নান, ডিইউজের আমার দেশ ইউনিট প্রধান বাছির জামাল, সংগ্রাম ইউনিটের প্রধান শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

advertisement

Posted ১১:৫১ | শনিবার, ০৪ জানুয়ারি ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
This newspaper (Swadhindesh) run by Kabir Immigration Ltd
যোগাযোগ

Bangladesh Address : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217, Europe Office: 552A Coventry Road ( Rear Side Office), Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

ফোন : 01798-669945, 07960656124

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com