| সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থায় খালেদা জিয়া গতকাল রোববার সাংবাদিকদের কাছে সরকারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছেন, তার পাল্টা জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি।
তিনি বলেছেন, গতকাল খালেদা জিয়া সরকারকে জড়িয়ে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর অভিযান, সেনাবাহিনী ইত্যাদি বিষয়ে যা বলেছেন তা মিথ্যাচার।
গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দীপু মনি এ কথা বলেন। সেখানে তিনি বিডিআর হত্যাকাণ্ড, ৫ মে মতিঝিলের সমাবেশ, বিরোধী দলের বিভিন্ন কর্মসূচি ও সারা দেশে সহিংস পরিস্থিতি সম্পর্কে খালেদা জিয়ার বিভিন্ন মন্তব্যের পাল্টা উত্তর দেন।
২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের জন্য বিরোধী দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করা প্রসঙ্গে দীপু মনি বলেন, নৃশংস হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে খালেদা জিয়া যে বক্তব্য রেখেছেন তা অসত্য, নিজেদের কাজ অন্যের ওপর চাপানোর নির্লজ্জ প্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সরকারি প্রোটোকল ও কোনো রকম নিরাপত্তা ছাড়া তিনি বাসা থেকে বের হয়ে কোন অজ্ঞাত স্থানে গিয়েছিলেন? ঘটনার পর জাতীয় সংসদে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী বলেছিলেন, ‘কিছু প্রাণী মারা গেছে। এটা কিসের ইঙ্গিত?’ দীপু মনি আরও বলেন, মহাজোট সরকার এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছে। খালেদা জিয়া চড়া গলায় কথা বলেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তাঁর প্রিয়ভাজন আইনজীবীরাই আইনি সহায়তা দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা দীপু মনি বলেন, বিরোধী দলের নেতা তাঁর বক্তব্যে আলেম-ওলামাদের ওপর নির্যাতনের কথা বলেছেন। এটি মিথ্যাচার। দীপু মনি বলেন, বারবার বিরোধী দলের কাছে নিহত ব্যক্তিদের তালিকা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সে তালিকা পাওয়া যায়নি।
গোপালগঞ্জ জেলার নাম নিয়ে খালেদা জিয়া যে বিষোদগার করেছেন, তা ভাবতেও সরকারি দল লজ্জাবোধ করছে বলে জানান দীপু মনি।
সংবাদ সম্মেলনে দীপু মনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট দেশে উন্মত্ততা চালাচ্ছে। বিরোধী জোটের নাশকতা থেকে শিশু, বৃদ্ধ, নারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক কেউ রেহাই পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিরোধী দলের কর্মসূচিকে ন্যক্কারজনক চিহ্নিত করে তিনি বলেন, এসব কর্মসূচি কখনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন হতে পারে না। গণতন্ত্র রক্ষা করতে দশম সংসদ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিএনপির নেতারা ভিত্তিহীন কথা বলছেন বলে অভিযোগ করেন দীপু মনি। তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতেই এমনটা করা হয়েছে। তিনি সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিএনপির নেতাকে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানান। গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ সবার প্রতি তিনি সেনাবাহিনীর খবর পরিবেশন সম্পর্কে দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান জানান।
গোপালগঞ্জ জেলা নিয়ে খালোদা জিয়ার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করেন দীপুমনি। তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার ন্যায় একজন জাতীয় নেত্রী গোপালগঞ্জ জেলা ও তার অধিবাসীদের সম্পর্কে উত্তেজিত, অগ্নিমূর্তি ধারণ করে যে বিষোদগার করেছেন তা কল্পনায় আনতেও আমাদের কষ্ট হয়। প্রকৃতঅর্থে বেগম খালেদা জিয়া গোপালগঞ্জ ও তার অধিবাসীদের লক্ষ্য করে কটাক্ষপূর্ণ উক্তির মধ্য দিয়ে আরেকবার প্রমাণ করেছেন তিনি পাকিস্তানিদের পদলেহী ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান নিয়ে খালেদা জিয়ার ‘প্রতিহিংসা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রতি তার কৃতজ্ঞতা ও আনুগত্যের স্বাক্ষরই বহন করে’ বলেও মন্তব্য করেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়ার বক্তব্যেকে ‘কুরুচিপূর্ণ’ এবং ‘সভ্যতার জন্য লজ্জা, বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের আহবান ‘খালেদা জিয়া বারংবার চতুর কৌশলের সাথে’ উপেক্ষা ও এড়িয়ে চলেছেন বলে মনে করেন দীপুমনি। সংসদে ৯০ ভাগ আসন থাকার পরও স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার জন্য শেখ হাসিনার প্রস্তাব খালেদা জিয়া গ্রহণ করেননি। খালেদা জিয়ার বেছে নেওয়া ‘সংঘাত, সহিংস অপরাজনীতির পথ’ দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘খালেদা জিয়া ফটোসেশন করেছেন’: কর্মসূচীতে যাওয়ার চেষ্টার নামে খালেদা জিয়া ‘ফটোসেশন’ করেছেন বলে মন্তব্য করেন দীপু মনি। ১৮ দলীয় জোটের ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচীতে খালেদা জিয়াকে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দীপুমনি বলেন, ‘এগারোটার সময় কর্মসূচী দিয়ে খালেদা জিয়া বের হওয়ার চেষ্টা করলেন তিনটার দিকে। তিনি বাসা থেকে বের হলেন, একটা চেয়ার আনা হলো, তিনি বসলেন, হাতে একটি পতাকা নিলেন। তারপর একজন ফটোগ্রাফার এসে ছবি তুললেন, তারপর তিনি বাসার ভেতরে চলে গেলেন। এটা ফটোসেশন ছাড়া আর কিছু নয়।’
দীপুমনি আরও বলেন, বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা তাদের কর্মসুচীতে একাত্ম হয়নি বলেই কেউ রাস্তায় বের হয়নি। তাই বিরোধীদল ‘মানুষ ভাড়া করে জামায়াত শিবিরকে দিয়ে নাশকতা করাচ্ছে’।
বিরোধীদলের কর্মসূচীর কারণে সরকারই অবরোধ দিয়েছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারন সম্পাদক বলেন, সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব হলো জনগণের জানমাল রক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের রক্ষা করা। সরকার তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের নেওয়া ব্যবস্থার কারণে কোন সহিংসতা এবং জানমালের ক্ষতি হয়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
Posted ১৫:০০ | সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin