| বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
ঘরে বাইরের নানা চাপ সামলে এগিয়ে চলছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে কঠিন চ্যালেঞ্জের প্রথম ধাপে তিনি সফল হয়েছেন বলে মনে করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। ২ ডিসেম্বর মনোনয়ন জমাদানের শেষদিন পর্যন্ত তিনি বেশ চিন্তায় ছিলেন। কারণ সরকার দল ও জোট থেকে নেতাদের বাগিয়ে নিতে সবধরনের চেষ্টাই করেছে। কিন্তু খালেদা জিয়া সরকারের সে চেষ্টা ‘শক্তহাতে’ নিয়ন্ত্রণ করেছেন। যার কারণে তার দল ও জোট থেকে কেউই বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন জমা দেননি।
তবে এ ঘটনায় তৃপ্তির ঢেঁকুর না তুলে নবউদ্যমে তিনি সামনে এগোতে চাইছেন। তাই ফের নড়েচড়ে বসছেন। সামনে চলমান দাবিতে কীভাবে আরও কঠোর আন্দোলন করা যায়, তার কর্মকৌশল নিয়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে ফোনে আলোচনাও করেছেন।
বুধবার এক ভিডিও বার্তায় বিএনপির মুখপাত্র ও যুগ্মমহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ আল্টিমেটাম ঘোষণা করে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার মধ্যে নির্বাচনের তফসিল বাতিল করে এবং আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়া না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
সূত্র জানায়, ২ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়ার ওপর দল ও জোটের নেতাদের আস্থা আরও বেড়ে গেছে। এতদিন নেতাদের সঙ্গে কৌশলগত কারণে জোরগলায় কথা বলেননি। কিন্তু এবার তিনি নেতাদের সবাইকে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে আন্দোলনে মাঠে নামতে নির্দেশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নির্দেশে কাজ না হলে আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়বে বলে সূত্র জানিয়েছে।
চলমান আন্দোলন-সংগ্রামে দলের কর্মীদের ভূমিকায় খালেদা জিয়া বেশ উজ্জীবিত। বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া মনে করেন, এখন কেউ না এলেও কর্মীরাই আন্দোলন চালিয়ে নিতে পারবেন।
সূত্রে জানা গেছে, চলমান আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে যেসব নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন, শুধু তাদের মামলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য দলের আইনজীবীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে যারা গ্রেফতার বা আটক হননি তাদের গ্রেফতার এড়িয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে আদালতে হাজির হয়ে জামিন না চাইতে বলা হয়েছে। খালেদা জিয়া মনে করেন, চলমান আন্দোলন জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার। এই আন্দোলনে জনগণের বিজয় হবেই। তাই বিজয় শেষে সবার মামলা পরিচালনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিএনপি মনে করে, এখন সমঝোতা ছাড়া নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। এরশাদের নির্বাচন বর্জন এবং জাতীয় পার্টি ভেঙে কাজী জাফরের নতুন দল গঠন এবং ১৮ দলের বাইরে বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে চলমান আন্দোলনের পক্ষে বিকল্প জোট গঠন হতে যাচ্ছে। ১৮ দলের আন্দোলনের সঙ্গে এসব দল একাত্মতা ঘোষণা করলে সরকারের দাবি মানা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না বলে মনে করে বিএনপি।
সূত্র জানায়, দাবি আদায়ে ১৮ দলের টার্গেট অনুসারে তারা কর্মসূচি ঠিক করছে। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মানসিক অবস্থা ঠিক রাখতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে খালেদা জিয়া অথবা দলের সিনিয়র নেতারা টেলিফোনে নিয়মিত কথা বলছেন। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে খালেদা জিয়া নিজেই রাজপথে নেমে আসবেন। সে ক্ষেত্রে প্রতিকূল অবস্থা হলে গুলশানের বাসায় না গিয়ে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেবেন।
প্রসঙ্গত, দলের চলমান সমস্যা সমাধানে ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হওয়ায়, তার সফরে ইতিবাচক কিছু হচ্ছে না বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। তারা বলছেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ। এখন বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে হলে নতুন করে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। এর আগে অবশ্যই সংলাপে বসে বিএনপির দাবি মানতে হবে।
এদিকে জাতীয় পার্টির নির্বাচন বর্জনকে ইতিবাচক ভাবলেও দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের প্রতি আস্থা নেই প্রধান বিরোধী দল বিএনপির। তিনি আবারও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন কি না তা নিয়ে সন্দেহে আছেন তারা। দলের নেতারা মনে করে, নির্দলীয় সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যদি রাজপথে নামেন, তাহলেই তার ইতিবাচক মনোভাব স্পষ্ট হবে। তবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হলে তাকে আরও ‘পরীক্ষা’ দিতে হবে।
জানা গেছে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা পর্যন্ত তাকে পর্যবেক্ষণ করবে বিএনপি হাইকমান্ড। তারপর দলটি তার ব্যাপারে মন্তব্য করবে। তবে তাকে জোটে নেয়া না নেয়ার বিষয়ে দলের দুটি অংশ এখনও সক্রিয় রয়েছেন।
একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এরশাদ নির্বাচন বয়কট করলেও তাকে আর গুরুত্ব দিতে রাজি নয় অধিকাংশ জ্যেষ্ঠ নেতা। এরশাদের সঙ্গে কোনো ধরনের জোট গঠনেও রাজি নয় তারা। যদিও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন নেতা এরশাদকে জোটে ভিড়াতে চান। সোমবার দলের এক প্রভাবশালী স্থায়ী কমিটির সদস্যের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এরশাদের সঙ্গে জোট করা হলে তিনি আর রাজনীতি করবেন না।
Posted ১৭:০৬ | বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin