বৃহস্পতিবার ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উত্তর ভারতে প্রবল বর্ষণ, গত দুদিনে মৃতের সংখ্যা ২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ১০ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট

উত্তর ভারতে প্রবল বর্ষণ, গত দুদিনে মৃতের সংখ্যা ২৫

হিমাচল প্রদেশ, দিল্লি, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীরসহ উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্যে টানা বর্ষণের কারণে গত দুই দিনে (শনিবার ও রবিবার) প্রায় ২৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন রাজ্যের নদীগুলোতে পানির স্তর এতটাই বেড়েছে যে একাধিক জায়গায় বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ব্যাহত জনজীবন, চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ।

 

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হিমাচল প্রদেশে। এই রাজ্যে ভারী এবং অবিরাম বর্ষণের কারণে পাঁচজন নিহত হয়েছে। লাহাউল জেলার চান্দেরতাল এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক মানুষ আটকে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপণায় রাজ্যটির বিভিন্ন নদীর পানির স্তর এতটাই বেড়েছে যে একাধিক ব্রিজ, জাতীয় সড়ক পানির নিচে চলে গেছে। ব্যাহত সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ পরিষেবা। মানুষের জনজীবনও স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক শতাধিক বাড়ি। আগামী দুই দিন- সোমবার ও মঙ্গলবার রাজ্যের সমস্ত স্কুলে সরকারি ছুটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর থেকে রাজ্যটির সাতটি জেলায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উদ্ধার কাজ নামানো হয়েছে বিপর্যয় দুর্যোগ মোকাবিলা দল। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুকু নদী ভ্রমণ করতে বারণ করেছেন।

 

উত্তরাখণ্ডের অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ। বর্ষণজনিত কারণে এই রাজ্যটিতেও পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এর মধ্যে তিনজন তীর্থযাত্রী। গঙ্গাসহ প্রধান নদীগুলোতে পানির স্তর বেড়ে যাওয়ার কারণে সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য প্রশাসন। ধসের কারণে বদ্রিনাথ জাতীয় সড়ক, জাতীয় সড়ক-৯ বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, আগামী দুদিন ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। বিনা প্রয়োজনে চলাফেরা করতে নিষেধ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। সেই সাথে আবহাওয়ার পরিস্থিতির উন্নতি হলেই রাজ্যে পর্যটকদের আসতে অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

 

টানা দুদিনের বৃষ্টির কারণে দিল্লিতেও স্তব্ধ স্বাভাবিক জনজীবন। একাধিক সড়ক পানির তলায়। পানির তলায় পার্ক, আন্ডার পাস, বাজার, স্কুল, হাসপাতাল চত্বর। আগামী সোমবারও রাজ্যে দিল্লির সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ১৫৩ মিলিমিটার। ১৯৮২ সালের পর এটাই কোনো একটি মাত্র দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। প্রায় বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে যমুনা নদীর পানি। দুটি পৃথক ঘটনায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দিল্লিতে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অত্যাধিক বর্ষণের কারণে রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম এড়াতে দিল্লির দক্ষিণ-পশ্চিম শহর গুরুগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্পোরেট অফিস কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মীদের সোমবার থেকে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর পরামর্শ দিয়েছে। এদিকে বিজেপি সাংসদ রমেশ বিদুরী কটাক্ষ করে বলেছেন, গত ডিসেম্বরে পৌরনিগম নির্বাচনে জেতার পর আম আদমি পার্টি (আপ) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে দিল্লিকে লন্ডন এবং প্যারিস বানানো হবে। তার বদলে বিভিন্ন জায়গায় ড্রেনগুলো ময়লা জমে স্তব্ধ হয়ে গেছে।

 

জম্মু-কাশ্মীরের একাধিক জায়গায় ভূমিধস দেখা দিয়েছে। পানি বাড়ছে ঝিলম, নীরু সহ বিভিন্ন নদীগুলোতে। নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। স্তব্ধ হয়ে পড়েছে উদমপুর জাতীয় সড়ক, ফলে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে একের পর এক পণ্যবাহী ট্রাক।

 

অবিরাম বর্ষণে উপত্যকায় সেনাবাহিনীর দুই জওয়ানসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। টানা বর্ষণের কারণে রবিবারও বন্ধ রাখা হয়েছে অমরনাথ যাত্রা। এর ফলে জম্মুসহ বিভিন্ন এলাকায় আটকে পড়েছে হাজার হাজার তীর্থযাত্রী। রামবান এলাকার পান্থিয়ালে টি-৫ টানেলের সংযোগস্থলে পানি জমেছে। ফলে ব্যাহত হয়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। শনিবার পুঞ্চ জেলার সুরানকোট মহকুমার অধীন ডোগরা নালা দুর্গম এলাকায় টহল দেওয়ার সময় ওই দুই জওয়ান পানির তোড়ে ভেসে যায়, রবিবার তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এই দিনই ডোডা জেলার ভাংরু গ্রামে ভূমিধসে মৃত্যু হয় আরো দুই জনের।

 

শনিবারের পর রবিবারও উত্তরপ্রদেশেও একাধিক জায়গায় অবিরাম বৃষ্টিপাত হয়ে চলেছে। এই রাজ্যে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রবিবার মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। একজনের মৃত্যু হয়েছে রাজ্যটির কৌশম্বিতে। ঘরের টিনের চালার উপর গাছ পড়ে দশ বছর বয়সী এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। অন্যদিকে মোজাফফর নগরে প্রবল বৃষ্টিতে ঘরের দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক নারী ও তার ছয় বছরের শিশু কন্যার। গত শনিবার বালিয়া এলাকায় দুটি পৃথক ঘটনায় বাজ পড়ে মৃত্যু হয় দুইজনের, আহত আরও তিনজন।

 

আজমেঢ়, আলোয়ার বুন্দী, ভারতপুর, দৌসা, উদয়পুর, বারমেড়, জয়পুর, কোটাসহ রাজস্থানের একাধিক জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়ে চলেছে। বর্ষণজনিত কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় এই রাজ্য থেকে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে চিত্তরগড়ে বাজ পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়, বাকি দুজনের মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে।

 

একদিকে টানা বর্ষণ, তার উপরে পাঞ্জাবের রাজধানী চণ্ডীগড়ে শুকনা লেক বাঁধ খুলে দেওয়ার ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে। একাধিক জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ডেরা বসাই এলাকায় বাইক নিয়ে প্রায় বুক সমান পানিতে হাঁটতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আটকে পড়েছে বহু মানুষ, তাদের উদ্ধারে অভিযানও চলছে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভাগবত মান আগামী ৪৮ ঘণ্টা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। পাশাপাশি ক্যাবিনেট মন্ত্রী, ডেপুটি কমিশনার, সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্গত এলাকা পরিদর্শন এবং দুর্গত মানুষদের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

 

একই অবস্থা হরিয়ানায়। টানা বর্ষণে একাধিক জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। পানি জমার কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। নাভিশ্বাস উঠেছে অফিস যাত্রী থেকে সাধারণ মানুষের। দিনভর বৃষ্টির কারণে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার রাজধানী চন্ডিগড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দাঁড়িয়েছে ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

উত্তর ভারতের একাধিক জায়গায় অবিরাম বর্ষণের ঘটনার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে দিল্লি এবং জম্মু-কাশ্মীরের গভর্নরকে ফোন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৬:৩৫ | সোমবার, ১০ জুলাই ২০২৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com