শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৃটেনে কাগজ-পত্রহীন অভিবাসীদের বৈধতা দিলে সরকারের লাভ ও ক্ষতিসমূহ

  |   বুধবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট

বৃটেনে কাগজ-পত্রহীন অভিবাসীদের বৈধতা দিলে সরকারের লাভ ও ক্ষতিসমূহ

রাজু আহমেদ, বার্মিংহাম :  ব্রিটেনে দীর্ঘদিন বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা এখন এই দুর্যোগের মুহুর্তে অপেক্ষার প্রহর গুনছে তাদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনার। এটাই সঠিক সময় তাদের বৈধকরনের কারন এদের বৈধকরন করা হলে এরা ব্রিটেনের অর্থনীতিতে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন অনেকেই ।

বৈধ কাগজপত্রহীন দের বৈধতাকরন করলে সরকারের ভবিষ্যতে লাভসমূহ :

১, বৈধ কাগজপত্রহীনদের বৈধতাকরনের আওতার নিয়ে আসলে প্রথমেই হোম অফিস ফী বাবদ বিপুল অর্থ আয় করতে পারবে ।

২, NHS সার্চ চার্জ হিসেবে বিপুল অর্থ সরকারী স্বাস্থ খাত আয় করবে ।

৩, সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে সরকারি রাজস্ব খাত এই খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন বাড়বে ।

৪, এই অভিবাসীরা দীর্ঘদিন ব্রিটেন থাকার কারনে তারা প্রায় সবাই বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ তাই সুযোগ পেলে তারা তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ব্রিটেনে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে ।

বৈধ কাগজপত্রহীনদের বৈধতা না দেয়ায় সরকারের ক্ষতি সমূহ :

১, বৈধ কাগজপত্রহীনদের পিছনে ইম্মিগ্রেশন রেইড বা তাদের ধরার জন্য যে বাহিনী রয়েছে তাদের জন্য সরকারকে প্রতি বছর বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে যা দেশের জনগনকে ট্যাক্সের অর্থ থেকে পরিশোধ করতে হচ্ছে ।

২, এই সমস্ত অভিবাসীদের রাখার জন্য বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টার রয়েছে যার ব্যয় বাবদ সরকার কে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে । বৈধ কাগজপত্রহীনদের বৈধতা দেয়া হলে সরকারের এই বিপুল পরিমান অর্থ সাশ্রয় হবে ।

তাই উপরোক্ত বিষয়গুলি বিবেচনা করে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্রিটেনে বসবাসকারী বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসী যাদের কোন খারাপ রেকর্ড নেই তাদের অতি দ্রুত বৈধতা দেয়ার অনুরোধ করছি । ব্রিটেনে নতুন লোক আনার পাশাপাশি বৈধ কাগজপত্রহীনদের দ্রুত বৈধতাকরনের দিকে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া উচিত ।

৩১ ডিসেম্বরের ২০২০ পর ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকছেনা তাই ভবিষ্যতে দক্ষ জনবলের তীব্র সংকটের কথা মাথায় রেখে সরকার ইতিমধ্যেই অন্য দেশে থেকে নতুন লোক আনার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে পাশাপাশি যদি দক্ষ দীর্ঘদিনের বৈধ কাগজপত্রহীনদের বৈধতাকরন করা হয় তাহলে এই দক্ষ জনবলের সংকট অনেকাংশেই লাঘব হবে । বর্তমান করোনা মহামারীর সময় নতুন লোকদের পরিস্থিতির সথে মানিয়ে নিতে সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হবে তাই দীর্ঘদিনের বৈধকাগজপত্রহীন দক্ষ অভিবাসী যাদের কোন খারাপ রেকর্ড নেই তাদের বৈধতাকরন এখন সময়ের দাবী ।

ব্রেক্সিট ও করোনা ভাইরাসের এই মহামারীর কারনে ব্রিটিশ অর্থনীতি এক নাজুক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে এই অবস্থার থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকার স্টুডেন্ট ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সহজকরণ করেছে যাতে নতুন অভিবাসীরা ব্রিটেনে এসে সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করতে পারে অথচ দীর্ঘ দিনের বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসী যারা বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ তাদের শুধু বৈধতাকরণ করা হলে তারা এখনই সরকারকে নতুন অভিবাসীদের চেয়ে বেশি বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্স প্রদান করে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে প্রস্তুত , তাই সরকারের এখনই এই ব্যাপারে সুদৃষ্টির দেয়া প্রয়োজন যাতে এদের অতিদ্রুত বৈধতাকরণের আওতায় আনা সম্ভব হয় ।

বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের দীর্ঘদের দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য তাদের বৈধতাকরনের চেষ্টা হিসেবে গত ২৪ জুন বেশকিছু এমপি পার্লামেন্টে একটি মোশন উদ্ধাপন করেছেন । ইতিমধ্যেই ৪০ জন এমপি এই মোশনটিকে সমর্থন করেছেন যার ফলে এটি পরবর্তী ধাপে যাওয়ার রাস্তা সহজ হয়েছে । এই উদ্যোগটি সফল হলে ভবিষ্যতে লক্ষ লক্ষ বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের দুর্ভোগের লাঘব হবে ।

যেই ৪০ জন এমপি ইতিমধ্যে এই মোশনটিকে সমর্থন করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো লাইম হাউস এন্ড পপলারের এমপি আফসানা বেগম । লাইম হাউস এন্ড পপলারের এই এমপি ইতিমধ্যেই এই ইস্যুটি পার্লামেন্টে একাধিক বার উপস্থাপন করেছেন নতুন এমপি হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে এই অসহায় বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বৈধতাকরনের এই অব্যাহত চেষ্টার কারনে আফসানা বেগম এমপি বিশেষ প্রশংসা পাবার যোগ্যতা রাখেন আশা করা যাচ্ছে আরও অনেক এমপি অতিসত্ত্বর তারমত এই ইস্যুতে সোচ্চার হবেন এর আগে রুপা হক এমপি ও রুশনারা আলী এমপি বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বৈধতাকরনের ইস্যুতে পার্লামেন্টে সোচ্চার ছিলেন ।

করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণের জন্য পৃথিবী এক দুঃসময় অতিবাহিত করছে ব্রিটেনেও এর বিরাট প্রভাব পড়েছে । এই দুঃসময়ে বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা আছে বিরাট বিপদে কারন এদের জন্য কোনো সরকারি সহযোগিতা পাওয়া সম্ভব নয় তাই এই দুঃসময়ে সকলের সহযোগিতা এদের জীবন বদলে দিতে পারে কিন্তু বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা ত্রান বা ভিক্ষা চায়না বৈধকরণের জন্য সবার সহযোগিতা চায়। এই দুঃসময়ে অনেকে ইচ্ছা করলেই তাদের লোকাল এমপি দের কাছে সরাসরি যোগাযোগ বা ইমেইল করে এদের বৈধকরণের জন্য সহায়তা করতে পারে লোকাল এম পিরা যদি তাদের লোকাল জনগণের অনুরোধ পায় তবে অবশ্যই এই ইস্যুটি জরুরী ভিত্তিতে সরকারের কাছে তুলে ধরবে । এম পি রা যদি এই ইস্যুটি নিয়ে সোচ্চার হন তবে পর্তুগাল ও ইতালির মতো বৃটেনেও এই আপদকালীন সময়ে বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বৈধতাকরন সম্ভব হবে ।

একটা প্রবাদ আছে ভালো কাজ করুন আপনার ভালো হবে । বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্ব এক দুর্যোগময় মুহূর্তে আছে ব্রিটেনে এই রোগের দ্বিতীয় ধাপের কারনে ইতিমধ্যে ভয়াবহ আকার ধারন করেছে সরকার আবার লক ডাউন ঘোষণা করে বেশির ভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে , সরকারের তরফ থেকে দেশের নাগরিকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে কিন্তু বৈধ কাগজপত্রহীন কাগজপত্রহীন মানুষগুলি আর্থিক সহায়তাতো দূরের কথা ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা পাবে কিনা তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা দেয়াও হলেও অনেকে ভয়ে যায় না যা স্বাস্থ্য খাতে মারাত্মক হুমকির কারন হতে পারে ।

ব্রিটেনের দীর্ঘদিন বসবাসকারী বৈধ কাগজপত্রহীন লক্ষ লক্ষ অভিবাসীরা অপেক্ষা প্রহর গুনছেন কবে তাদের বৈধকরনের বিশেষ পরিকল্পনা আসবে কারন ক্ষমতায় এখন তাদের পক্ষে কথা বলা প্রধানমন্ত্রী যিনি প্রায় দীর্ঘ একযুগ ধরে এই দীর্ঘ দিন কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের বৈধকরনের কথা বলে আসছেন ।

২০০৮ সালে প্রথমে তিনি দীর্ঘদিনের বৈধ কাগজপত্রহীনদের বৈধতা দেয়ার দাবীটি করেছিলেন , ২০০৮ সালে লন্ডন মেয়র নির্বাচনের আগে চ্যারিটি সংগঠন সিটিজেনের একটি অনুষ্ঠানে , ২০১৩ সালে এলবিসির অনুষ্ঠানে , ২০১৬ সালের ১৯শে জুন ব্রেক্সিটের ভোটাভুটির ঠিকআগে তিনি একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যার প্রভাব ব্রেক্সিটের ভোটাভুটিতে গুরুত্বপূর্ণভূমিকা রেখেছে , প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি এই সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের কথা ভুলে যাননি তাই প্রধানমন্ত্রী হয়ে সংসদে প্রথম দিনেই রুপা হক এমপির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দীর্ঘদিন কাগজপত্রবিহীন এইসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের বৈধতা দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের আছে বলে জানান ।

ব্রিটেনে বৈধকাগজপত্রহীনদের বৈধতাকরনের দাবীতে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাইন চলছে , ২০০৮ সালের ২০ শে এপ্রিল এই দাবীতে প্রথম লন্ডনের ট্রাফলগর স্কোয়ারে এক বিরাট জনসমাবেশ হয়েছিল পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে এমপিদের সাথে এই দাবিতে যোগাযোগ করা হচ্ছে । বার্মিংহামের একটি ক্যাম্পাইন গ্রুপ বেশ কিছু লোকাল এমপিদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেছে তারা ২০১৮ সালে হাউস অফ কমন্সে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে যান ও সেখানে তৎকালীন ছায়া ইম্মিগ্রেশন সেক্রেটারি আফজাল খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন , ২০১৮ সালে বিসিয়ের নেতৃত্বে হাউস অফ কমেন্সের সামনে বিক্ষোভ ও অনুষ্ঠিত হয়।

বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের এই মহামারীর সময় কয়েকশত লোকাল এমপিদের তাদের লোকাল জনগণের মাধ্যমে বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বৈধতাকরণের সহায়তা করার অনুরোধ করে ইমেইল করা হয়েছে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে ইতিমধ্যে অনেক এমপি এই ইস্যুতে একমত পোষন করে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন যা ধারাবাহিক ক্যাম্পাইনের সফলতার ফসল ।

ব্রিটেনে দীর্ঘদিন বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা এখন এই দুর্যোগের মুহুর্তে অপেক্ষার প্রহর গুনছে তাদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনার। এটাই সঠিক সময় তাদের বৈধকরনের কারন এদের বৈধকরন করা হলে এরা ব্রিটেনের অর্থনীতিতে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন অনেকেই ।-সূত্র : বৈধ কাগজপত্রহীনদের নিয়ে কাজ করা Help the helpless নামক একটি সংগঠন এই তথ্য গুলি দিয়েছেন

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১০:৫৮ | বুধবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২০

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com