বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

৬ মে- রক্তাক্ত শাপলা চত্বর দিবস : বালাকোট থেকে শাপলা চত্বর এবং -হেফাজতের ১৩ দফা

  |   শুক্রবার, ০২ মে ২০১৪ | প্রিন্ট

মুহাম্মদ রুহুল আমীন নগরী

h

আজ ঐতিহাসিক ৬ মে। শহীদে বালাকোট ও শাপলা চত্বর দিবস। ১৮৩১ সালের এই দিনে বালাকোটের যুদ্ধ এবং ২০১৩ সালের একই দিবসের সুচনা লগ্নে ঢাকার শাপলা চত্বরে লাখো ইসলামী জনতার উপর রাষ্ট্রিয় বাহিনীর র্নিমম হত্যা যঞ্জ চলে। অনেকেই অনেক নামে অভিহিত করেছেন এই র্নিমমতাকে। মে-মাসটি নানা কারনে ঐতিহাসিক ভাবে আলোচিত। বিশেষকরে উপমহাদেশের মুসলমানদের ইতি হাসের রক্তাক্ত,বেদনা বিদুর দিন। ১লা মে আর্ন্তজাতিক শ্রমিক দিবস। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকরা শ্রমের ন্যায্য মূল্য এবং আটঘন্টা কাজের সময় র্নিধারণের দাবীতে আন্দোলগড়ে তোলে। শ্রমিকদের এই আন্দোলন দমনে সরকার মালিক পক্ষের উস্কানীতে নিরীহ শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায়। কয়েকজন শ্রমিকের রক্তের বিনিময়েই আজ বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। ১৮৫৭ সালের আযাদী আন্দোলন, ১৯৫২ সালের মাতৃভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কিছু সংখ্যক নিবেদীত প্রাণ জীবন-যৌবন ত্যাগকরার কারনেই তারা পরবর্তী প্রজন্মেও নিকট চিরস্মরণীয়-বরণীয়। যে কোন ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য যে কোন শ্রেণি পেশার লোকজন গণতান্ত্রীক পন্থায় আন্দোলন করতে পারেন। মিছিল মিটিং করা এটা গণতান্ত্রিক অধিকার । এই অধিকারে বাধা-বিগ্ন সৃষ্টিকরা কারো কাম্র হতে পারেনা। কোন সরকার যদি জনগনের দাবীকে বন্দুকের নলের সাহায্যে প্রতিহত করতে চায় এচাকেই আমাদেশে বাকশাল, ফ্যাসিস্ট ইত্যাদি বলে আখ্যায়িত করা হয়। আমার আজকের আলোচ্য বিষয় হলো- হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবী এবং শাপলা চত্বরে ঘুমন্ত লাখো জনতা ওপর হামলা প্রসঙ্গে। প্রথমেই৩দেখা যাক ১৩ দফায় কী আছে?

হেফাজতের ১৩ দফা: হেফাজতের ১৩ দফা দাবী নিয়ে কোন কোন মহল থেকে উত্থাপিত সমালোচনা ও বিতর্কের প্রেক্ষিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ জাতীর সামনে সংশ্লিষ্ট দাবীর ব্যাখ্যা ও প্রকাশ করেছিল। অরাজনৈতিক এই সংগঠনের আমীর দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী সকল অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি নিরসনে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ১৩ দফা দাবীর এই ব্যাখ্যা প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি বলেছিলেন, হেফাজতে ইসলামের উত্থাপিত ১৩ দফা দাবি নিয়ে কোনরূপ বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের সুযোগ নেই। আমরা গত ৯ মার্চ ২০১৩ জাতীয় উলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে দেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী নেতৃবৃন্দ ও বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এই দফা দাবী প্রণয়ন করেছি। আমাদের সকল দাবী মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদার সংরক্ষণ এবং দেশের স্বাধীনতা, সামাজিক শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরী। সুস্থ বিবেকের কোন নাগরিকই আমাদের যে কোন দাবীর বিরোধীতা করতে পারেন না। আল্লামা শাহ আহমদ শফী আশা প্রকাশ করে বলেন, ১৩ দফা দাবী নিয়ে এই ব্যাখ্যা প্রকাশিত হওয়ার পর আর কোন বিভ্রান্তি থাকবে না। আল্লামা শাহ আহমদ শফী উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে জানান, ১২ ও ১৩নং দাবীর বক্তব্য প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় এই ২টিকে একিভুত করা হয়েছে এবং পরিস্থিতির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ১৩ নম্বরে নতুন দাবী সংযোজন করে হেফাজতে ইসলামের দাবীসমূহ আরো যুগোপযুগী করা হয়েছে।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী উপস্থাপিত হেফাজতে ইসলামের ১৩ দাফা দাবীর ব্যাখ্যা নিম্নে হুবহু পেশ করা হল-

১। সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ পুণঃস্থাপন করতে হবে।
ব্যাখ্যা ঃ বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এদেশের জনসংখ্যার ৯০ ভাগই মুসলমান। আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস মুসলমানদের ঈমানের প্রধান বিষয়। এদেশের মানুষ ধর্মপরায়ণ এবং তাদের ধর্মীয় চেতনা অত্যন্ত শানিত। আযানের ধ্বনিতে এদেশের মানুষের ঘুম ভাঙ্গে। ইসলামী আচার-আচরণ, সংস্কৃতি তাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই বিশাল ধর্মপ্রাণ জনগণের বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন হিসেবেই সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসকে সংবিধানের প্রধান মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মহাজোট নেতৃত্বাধীন এবং বামপন্থীদের প্রভাবাধীন বর্তমান সরকার কারো মতামতের তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে সংবিধান সংশোধন করে। সর্বশেষ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মূলনীতি থেকে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দিয়ে তদস্থলে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি যুক্ত করে। সরকার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে একতরফাভাবে এই কাজটি করে দেশকে ধর্মহীনতার দিকে নিয়ে যাওয়ার পথ তৈরী করেছে। যাতে বামপন্থী ও নাস্তিক ধর্মবিদ্বেষীদের বহুদিনের পুরনো আকাংখা পুরণ হয়। এর মাধ্যমে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানের ওপর প্রচন্ড আঘাত হানে সরকার। দেশের আলেম উলামা পীর মাশায়েখসহ দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষ এর তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ে এবং হরতালসহ নানা কর্মসূচী পালন করে আসছে। কিন্তু সরকার কারো কোন দাবির প্রতিই কর্ণপাত করছে না।

এরপর সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির আলোকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে শুরু করে। ইতিমধ্যেই যার প্রতিফল আসতে শুরু করেছে। পাঠ্যপুস্তকে ইসলাম বিরোধী বক্তব্য সংযোজন, কোমলমতি শিক্ষাথীদের বইয়ে অশালীন যৌন শিক্ষার বিষয় যুক্ত করা এবং ধর্মীয় চেতনা ধ্বংস, অপসংস্কৃতি বিস্তারের নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। দেশে নাস্তিক্যবাদের বিস্তার এবং ধর্ম অবমাননা ভয়াবহ রূপে দেখা দেয়। যা জাতি ইতিমধ্যেই প্রত্যক্ষ করেছে। এ কারণেই সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতিটি পুনস্থাপনের জন্য এদেশের তৌহিদী জনতা দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে রাজপথে নেমেছে। হেফাজতে ইসলাম অত্যন্ত যৌক্তিককারণেই দেশের মানুষের ঈমান আক্বীদা ও চিন্তা-চেতনার সাথে জড়িত এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে তাদের প্রধান দাবি হিসেবে পেশ করেছে। ইতিমধ্যেই ৬ এপ্রিল লংমার্চের মাধ্যমে সারাদেশের কোটি কোটি মানুষ এই দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছে। সরকারি প্রতিবন্ধতা উপেক্ষা করে ঢাকার মহাসমাবেশে জড়ো হওয়া লক্ষ লক্ষ তৌহিদী জনতার সাথে সারা দেশের মানুষ এই দাবিসহ ১৩ দফা দাবির প্রতি একাত্মততা ঘোষণা করেছে। এটি এখন এদেশের তৌহিদী জনতার প্রাণের দাবি। এই দাবি অত্যন্ত পরিষ্কার এবং যৌক্তিক। ২। আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে। ব্যাখ্যা ঃ পৃথিবীর কোন ধর্ম কিংবা দেশ-সমাজে ধর্ম অবমাননাকে স্বীকৃতি দেয়নি। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কোন অধিকার কারো নেই। তারপরও একশ্রেণীর ধর্মান্ধ, ধর্মদ্রোহী নাস্তিক মুরতাদ ধর্ম অবমাননা করে থাকে এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকে। এ জন্য পৃথিবীর বহু দেশে ধর্ম অবমনানার কঠোর শাস্তির বিধান সম্বলিত আইন রয়েছে।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশ হওয়া সত্ত্বেও এদেশের ৯০ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারি হওয়া সত্ত্বেও এক শ্রেণীর ধর্ম বিদ্বেষী নাস্তিক মুরতাদ ও ভিন্নধর্মাবলম্বী ক্রমাগতভাবে ইসলামের ওপর আঘাত করে আসছে। এই ধর্ম অবমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রতিকারে এদেশের আলেম উলমাসহ তৌহিদী জনতা তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন করার পাশাপাশি ধর্ম অবমাননার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করে আইন পাসের দাবি জানিয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু কোন সরকারই গুরুত্বপূর্ণ ও ন্যায্য এই দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি। সর্বশেষ শাহবাগের আন্দোলনের সাথে জড়িত ব্লগারদের ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে চরম অবমাননা ও কটূক্তির খবর জনসমক্ষে আসে। তার আগে সর্বোচ্চ আদালত ব্লগারদের ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলেও বর্তমান সরকার কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আগে সালমান রুশদী তসলিমা নাসরিনের মতো ব্যক্তিরা বিছিন্নভাবে ধর্ম অবমাননা করেছে। তৌহিদী জনতার প্রতিবাদ আন্দোলনের মুখে তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ধর্ম অবমাননার এই প্রবণতা এখন মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। নাস্তিক মুরতাদ ও ভিন্নধর্মী ইসলাম বিদ্বেষীরা এখন সংঘবদ্ধভাবে এই কাজটি করছে। অনলাইনে ব্লগে, ফেসবুক-টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করে কার্টুন এঁকে তারা এই কাজটি করে যাচ্ছে। এটা দেশের তৌহিদী জনতা কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না। তাই ধর্ম অবমাননার জন্য কঠোর শাস্তি তথা সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করে আইন পাস করা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ধর্ম অবমাননার মাধ্যমে কোন স্বার্থান্বেষী মহল যাতে দেশে কোন বিশৃঙ্খলা বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে না পারে- এই দিক বিবেচনায়ও এ ধরণের আইন করা জরুরী।

পবিত্র কুরআন এবং হাদীসের একাধিক বাণীতে নাস্তিক মুরতাদদের ন্যায্য শাস্তি মৃত্যুদন্ডের কথা বলা হয়েছে। এ শাস্তি কার্যক্রম বহাল করার জন্য ইসলামী রাষ্ট্র কিংবা শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের দরকার নেই। শরীয়তের যেসব বিধান মতে মুসলিম সমাজে বিয়ে হয়, তালাক হয়, সম্পদ বণ্টন হয়, সেসব প্রচলিত ধারায় এই আইন বাস্তবায়ন করা যায়। মরহুম প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের অবমাননাকারীদের শাস্তির বিধান থাকতে পারলে কোটি কোটি মুসলমানের প্রাণাধিক প্রিয় আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের কটূক্তিকারীরা নিরাপদ থাকবে, তাদের কঠোর কোন শাস্তির বিধান বা আইন থাকতে পারবে না- এটা যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এই ন্যায় আইনের জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হবে কেন? সরকার স্বপ্রণোদিতভাবে এ আইন বাস্তবায়ন করে ঈমানী দায়িত্ব পালন করতে পারে।

৩। তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কতিপয় ব্লগার, নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলাম বিদ্বেষীদের সকল অপতৎপরতা ও প্রচারণা বন্ধ করতে হবে এবং যে সকল নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তি-সংগঠন যে কোন মাধ্যমে আল্লাহ-রাসূল (সা.), ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতঃ দেশের ৯০% মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে, তাদেরকে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
ব্যাখ্যা ঃ তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্লগার এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে যারা মুক্ত চিন্তা ও বাকস্বাধীনতার আড়ালে কোটি কোটি মানুষের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, প্রিয় নবী রাসূল (সা.), পবিত্র কুরআন ও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে জঘন্য কুৎসা ও অবমাননায় জড়িত। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ছাড়াও দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে এবং সভ্যতা-ভব্যতা ও গণতন্ত্রের কোন মাপকাঠিতেই এমন কুৎসা ও অবমাননা মেনে নেওয়া যায় না। ওরা ইসলামের এমন জঘন্য অবমাননা করেছে, যা পশ্চিমা বিশ্বের কোন অমুসলিমের মুখেও কখনো শোনা যায়নি। সুস্থ বিবেকের কোন মুসলমানের পক্ষে এসবের সম্পূর্ণটা পড়ে দেখার সাধ্যও নাই।
ধর্মঅবমাননা বিরোধী আইনের আওতায় এসব ব্লগারের সবাইকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দাবী করছি আমরা। কারণ এদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে, দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীরা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে দ্বিগুণ উৎসাহে এ ধরনের হীন তৎপরতা অব্যাহত রেখে দেশকে চরম বিশৃঙ্খলা ও গণঅসন্তোষের দিকে নিয়ে যেতে পারে। যা দেশের স্বাধীনতা, সুশৃঙ্খলা ও আইনি কাঠামোর জন্য মারাত্মক হুমকী তৈরী করতে পারে।

৪। দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নারী জাতির সার্বিক উন্নতির বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে তাদের নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মস্থল, সম্মানজনক জীবিকা এবং কর্মজীবি নারীদের ন্যায্য পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরে-বাইরে ও কর্মস্থলে নারীদের ইজ্জত-আব্রু ও যৌন হয়রানী থেকে বেঁচে থাকার সহায়ক হিসেবে পোষাক ও বেশভূষায় শালীনতা প্রকাশ ও হিজাব পালনে উদ্বুব্ধকরণসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এবং একই লক্ষ্যে নারী-পুরুষের সকল প্রকার বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে অবাধ ও অশালীন মেলামেশা, নারী-নির্যাতন, যৌন হয়রানী, নারীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার সহিংসতা, যৌতুকপ্রথাসহ যাবতীয় নারী নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা কঠোর হাতে দমন করতে হবে।

ব্যাখ্যা ঃ তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নাস্তিক্যবাদি ব্লগাররা শুধু আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেই থামেনি। সাথে সাথে আবহমান বাংলার রক্ষণশীল সামাজিক অনুশাসন এবং সংস্কৃতির উপরও আঘাত করে অনেক কর্মকান্ড ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে। বিয়ে বহির্ভুত ও ঘনিষ্ঠ অনাত্মীয় নারী-পুরুষের দৃষ্টিকটু বিচরণ ও রাস্তায় একঙ্গে; এমন কি একই তাবুতে অবস্থান করে রাত্রি যাপনের মত অনৈসলামিক, অনৈতিক, অসামাজিক ও এদেশের আবহমান কৃষ্টিকালচার সংস্কৃতি বিরোধী কাজ প্রকাশ্যে ঘটছে শাহবাগে। ধর্মীয় অনুভূতি ছাড়াও যা পারিবারিক, সামজিক এবং জাতীয় সাংস্কৃতিক দৃষ্টিতেও কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

শাহবাগে যে কালচারের চর্চা চলেছে ও চলছে, তা দেশে চালু হলে নারীদের নিরাপত্তা সর্বক্ষেত্রেই বিঘœ হবে। দেশের নারী সমাজকে ইভটিজিং, ধর্ষণ ও যৌনহয়নারী থেকে বাঁচিয়ে রেখে সর্বোপরি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই উপরোক্ত কর্মকান্ড বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। ইসলাম নারীর মর্যাদা, নিরাপত্তা এবং যৌনহয়নারী থেকে বেঁচে থাকার জন্য হিজাব প্রথা বাধ্যতামূলক করেছে এবং পুরুষদেরকেও বৈধ সম্পর্কের বাইরে নারীদের সাথে দৃষ্টিঅবনত রেখে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে বলে চমৎকার ভারসাম্য রক্ষা করেছে। কাজেই হিজাব পালন করে, অথবা যৌন উদ্দীপনা তৈরী করে না- এমন শোভনীয় পোষাক পরে নারীরা নিরাপদ কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে বা ঘর থেকে বের হতে তো কোন বাধা নেই। ইসলাম নারীর নিরাপত্তার দিকটা কঠোরভাবে দেখে। কেবল সুযোগসন্ধানীরাই এটাকে নারী অবদমন বলে অপপ্রচার চালায়। আমাদের কথা পরিস্কার যে, হিজাব বা শালীনতার সাথে নারীদের নিরাপদ পথচলাচল, শিক্ষার্জন ও কর্মক্ষেত্রে যেতে কোন বাধা নেই। উদাহরণতঃ নারীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য আলাদা বালিকা বিদ্যালয় বা মহিলা কলেজ থাকতে পারলে আলাদা কর্মক্ষেত্র প্রতিষ্ঠার দাবীতে আপত্তি তোলার যুক্তি থাকতে পারে না।

৫। নারীনীতি ও শিক্ষানীতির ইসলাম বিরোধী ধারা ও বিষয়সমূহ বিলুপ্ত করতে হবে এবং শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলামের মৌলিক শিক্ষা মুসলিম ছাত্রদের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে।

ব্যাখ্যা ঃ ত্যাজ্য সম্পত্তিতে সমঅধিকারের আইনসহ নারী নীতির পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ধারাগুলোই আমরা সংশোধনের দাবী করছি। এছাড়া জাতিসংঘ কর্তৃক বিতর্কিত সিডো সনদ বাতিলের দাবী জানাচ্ছি। এই সিডো সনদের বিরুদ্ধে খ্রীস্টানদের ধর্মীয় নেতা পোপ ও ভ্যটিকানসহ অনেক মুসলিম ও খ্রীস্টান দেশ আপত্তি জানিয়েছে। এই সিডো সনদ কার্যকর হলে পারিবারিক ব্যবস্থা বলে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। এই বিতর্কিত সনদে বিয়ে বহির্ভুত অবাধ যৌনাচারের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে সন্তানের পিতৃ পরিচয় বিলীন হয়ে যাবে। আমরা নারী সমাজকে স্পষ্ট করে জানাতে চাই, ইসলাম সর্বোত্তম উপায়েই নারীদের মর্যাদা, অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার পক্ষে। আর বর্তমানের নাস্তিক্যবাদিরা নারীদেরকে কেবল অলংকারিক ও ভোগ্যপণ্য রূপেই বিবেচনা করে।
অন্যদিকে সরকার ঘোষিত শিক্ষা নীতিতে ধর্মীয় শিক্ষাকে সংকোচিত করা হয়েছে। এখানে ধর্ম শিক্ষা রাখা হলেও ছাত্র-ছাত্রীদের মন ও মননে ধর্মহীন করার জন্য কুটকেীশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। চলতি ২০১৩ সালের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্য বইসমূহে ইসলামের যে অপব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে, তা চরম অগ্রহণযোগ্য। তাছাড়া কোমলমতি ছেলে-মেয়ে শিশুদেরকে ক্লাসে একসাথে বসিয়ে যেভাবে যৌন শিক্ষা চালু করা হয়েছে, তা এদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নৈতিকতা ও সুস্থ সামাজিক অনুশাসনকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। মানুষকে যাবতীয় পশুপ্রবৃত্তি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অন্যায়-অপরাধ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে ধর্মশিক্ষা বা ধর্মীয় অনুভূতির বিকল্প নেই। এ কারণে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ থেকেই আমরা দাবী জানিয়ে আসছি যে, শিক্ষার সকল স্তরে সঠিক ধর্ম শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইসলাম সবসময় অন্যায়, অবিচার, ঘুষ-দূর্নীতি, মদ-জুয়া, মিথ্যা, খুন, ধর্ষণ, মারামরি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখে। সুতরাং সুস্থ মানসিকতাপূর্ণ আদর্শ নাগররিক গঠনে ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প কিছু হতে পারে না।

৬। ভাস্কর্যের নামে মূর্তিস্থাপন, মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলনের নামে শিরিকী সংস্কৃতিসহ সকল বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
ব্যাখ্যা ঃ দেশে ভাষ্কর্যের নামে আবক্ষ নারী-পুরুষ বা জীবজন্তুর মূর্তি তৈরী ও ফুল দিয়ে সেসবকে সম্মানপ্রদর্শনের রেওয়াজ যেহারে শুরু হয়েছে, তা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কখনো কাম্য হতে পারে না। ইসলামে স্পষ্টভাবে মূর্তি তৈরী ও সম্মান প্রদর্শনকে শিরক ও হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আমরা কখনো প্রাণহীন শিল্পকর্মের বিরোধী নই। বরং ইসলাম সৌন্দর্য ও জ্ঞান-উদ্দীপক শিল্পকর্মকে উৎসাহিত করে। অপরদিকে মঙ্গলপ্রদীপ ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন অগ্নিপূজক ও পশ্চিমা সংস্কৃতি। কথিত গণজাগরণ মঞ্চ থেকে এটাকে এদেশে ঢালাওভাবে প্রচলনের জোর চেষ্টা চলছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে অগ্নিপ্রজ্জ্বলনের মতো পশ্চিমা ও বিজাতীয় এই সংস্কৃতির প্রচলন কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারো ধর্মী আচরণে এধরণের কোন সংস্কৃতির চর্চার বিধান থাকলে সেটা তারা নিজেদের পরিসরে পালন করতে পারে। কিন্তু কথিত গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ঘোষণা দিয়ে ঢালাওভাবে এদেশের তরুণ ও ছাত্রসমাজকে দিয়ে এই সংস্কৃতি চর্চা করিয়ে জাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এদেশের তৌহিদী জনতা এটা মেনে নিতে পারে না। এই ধরণের কার্যক্রম বন্ধের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক এবং বাস্তবসম্মত।

৭। রেডিও টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করতে হবে। ব্যাখ্যা ঃ বর্তমানে উপরোক্ত গণমাধ্যমে ইসলামী নিদর্শন নিয়ে হাসি তামাশা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। খুনী, দাঙ্গাবাজ, সন্ত্রাসী ও দেশদ্রোহী চরিত্রে পায়জামা-পাঞ্জাবী ও দাড়ি-টুপি চরিত্রধারীদের উপস্থাপন করা হয়। যা স্পষ্টতঃই ইসলাম ও মুসলমানদেরকে ষড়যন্ত্রমূলক হেয় করা ছাড়া আর কিছু নয়। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এমন আচরণ কোনভাবেই চলতে দেয়া যায় না এবং এটা সুস্থ চিন্তার মতপ্রকাশও হতে পারে না। এর কুফল বর্তমানে সমাজে পড়তে শুরু করেছে। কথিত শাহবাগীরা দাড়ি-টুপীধারী, বয়োবৃদ্ধ মুসলমান ও ইসলামী সংস্কৃতির প্রতি যেভাবে হামলে পড়ছে, তা অমুসলিম দেশেও সচরাচর দেখা যায় না। আমাদের এই দাবীর যৌক্তিকতাও বলার অপেক্ষা রাখে না।

৮। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘেœ নামায আদায়ে বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে। ব্যাখ্যা ঃ বর্তমানে রাজনৈতিক কারণে মসজিদ-মাদ্রাসায় অনাকাঙ্খিত বিভিন্ন ধরণের হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। জুমার দিন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের বিভিন্ন গেট বন্ধ রাখা, গুলিবর্ষণ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, তল্লাশির নামে হয়রানী, বুট জুতা নিয়ে পুলিশের মসজিদে প্রবেশসহ হরেক রকমের অবমাননা ও মুসল্লীদের জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরী হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় ওয়াজ ও তাফসীর মাহফিলে বাধাদান, মাইক খুলে নেওয়া ও অনুমতি না দেওয়ার মত ঘটনাও ঘটছে। ধর্মকর্ম পালনে এবং মসজিদে কোন ধরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে চাপিয়ে দেওয়া ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ৯। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখ-তা রক্ষার স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ঈমান ও দেশ বিরোধী কর্মকা-ে জড়িত এনজিও ও খ্রিস্টান মিশনারীদের ধর্মান্তকরণসহ সকল অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। ব্যাখ্যা ঃ পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে পশ্চিমা খ্রীস্টান বিশ্ব সুগভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত; এটা এখন আর কারো কাছে গোপন বিষয় নয়। খ্রীস্টান মিশনারীসমূহের পার্বত্য এলাকায় ধর্মান্তকরণ প্রক্রিয়া এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, যা এদেশের স্বাধীনতা ও অখ-তার জন্য মারাত্মক হুমকী সৃষ্টি করছে। এছাড়াও অনেকগুলো চিহ্ণিত এনজিও দেশের শিক্ষায় অনগ্রসর ও অনুন্নত এলাকায় বেচে বেচে সাহায্য-সহযোগিতা ও শিক্ষাদানেরর আবরণে মুসলমান শিশু-কিশোর ও বয়স্কদেরকে খ্রীস্টান ধর্মে দীক্ষিত করছে। যা খুবই উদ্বেগজনক। আমাদের দাবী হলো, সরকার আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীসহ অন্যান্য তদারকী সংস্থার কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এসবের নিয়ন্ত্রণ করে সন্দেহজনদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে হুমকী মুক্ত রাখতে হবে।

১০। কাদিয়ানিদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। ্যাখ্যা ঃ কখনো শেষ নবী, কখনো ঈসা (আ.) এবং কখনো ইমাম মাহদী’র দাবীদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর অনুসারী আহমদিয়ারা নিজেদেরকে মুসলমান দাবী করে এদেশের সরলমনা মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করে কাদিয়ানী বা আহমদিয়া জামাতভুক্ত করে ঈমানহারা করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। যাতে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক সরলমনা মুসলমানই ঈমানহারা হচ্ছেন। কাদিয়ানী তথা আহমদিয়াদের এই ঈমানবিধ্বংসী প্রতারণা বন্ধ করার জন্য বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মত বাংলাদেশেও তাদেরকে সরকারীভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। এবং তাদের প্রতারণাপূর্ণ সকল অপতৎপরতা ও অপপ্রচার নিষিদ্ধ করতে হবে। এই দাবী আমাদের দীর্ঘ দিনের।

১১। রাসূলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদরাসার ছাত্র, মসজিদের ইমাম-খতীব ও তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন, নির্বিচারে গুলিবর্ষণ এবং হত্যাকা- বন্ধ করতে হবে। ব্যাখ্যা ঃ দেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের যৌক্তিক ঈমানী দাবিগুলোর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন রাসূলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা ছাত্র, মসজিদের ইমাম-খতীব এবং তৌহিদে বিশ্বাসী মুসলমান। কেবল ইসলামের কথা বলতে বা দাবি জানাতে গিয়ে তারা যে মিছিল সমাবেশ ও প্রতিবাদ কর্মসূচীর আয়োজন করেছে, তাতে দমন পীড়ন চালানো হয়েছে, নির্বিচারে গুলি বর্ষণ ও গণহত্যা চালানো হয়েছে। এ ধরনের কর্মকা- বন্ধ করতে হবে। দেশের বিভিন্নস্থানে এদেরকে ধর্মকর্ম পালনে হুমকি ও ভয়ভীতি দানের খবরও আসছে। একটা স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমনটা চলতে পারে না। ১২। অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সকল আলেম-ওলামা, মাদরাসার ছাত্র, ইমাম-খতীব ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং দুষ্কৃতিকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। ব্যাখ্যা ঃ হেফাজতে ইসলামের ঈমান-আক্বীদা ও ইসলামের ইজ্জত সংরক্ষণ, দেশের স্বাধীনতা, সংস্কৃতি, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন নিরাপদ রাখার চলমান আন্দোলনে অন্যায়ভাবে অনেক আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা ছাত্র, মসজিদের ইমাম-খতীব ও তৌহিদে বিশ্বাসী নিরীহ নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সকল আলেম-ওলামা, মাদ্রাসা ছাত্র, ইমাম-খতীব ও তৌহিদী জনতাকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

১৩। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। ব্যাখ্যা ঃ আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে উজ্জ্বল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। বাংলাদেশে বহু সম্প্রদায়ের সম্প্রীতিমূলক অবস্থান বিশ্বের অনেকের কাছেই দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। বাংলাদেশের এই সুনামকে নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারী মহল এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সহাবস্থানকে কলংকিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ে হামলায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত ও শাস্তিদান এবং দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহের ন্যায্য অধিকার ও নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার দাবী জানাচ্ছি।

উপরোক্ত দাবী নিয়ে সরকারের সবোর্চ্চ মহলে যথাযথ নিয়মে অবগতি অবহিত করণসহ র্দীঘ আলোচনার পর হেফাজতে ইসলামের আহ্বানে ৬ এপ্রিল ২০১৩ ঢাকা অভিমুখী লংমার্চ কর্মসুচি ঘোষণা করা হয়। এই লংমার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সরকারের দুটি সম্পূর্ণ পৃথক রূপের প্রকাশ আমরা দেখেছি। ইসলাম এবং মুসলমানদের ব্যাপারে ক্ষমতাসীনরা আসলে যে ন্যক্কারজনক প্রতারণাপূর্ণ কৌশল নিয়েছিলেন সে বিষয়টাও পরিষ্কার হয়েছে। দেখা গেছে, মুখে না বললেও সর্বান্তঃকরণে তারা ইসলামবিদ্বেষীদের পক্ষই নিয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে ঢাকা অভিমুখী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ার কথা উল্লেখ করা যায়। বাস-ট্রাক থেকে লঞ্চ-স্টিমার শুধু নয়, ট্রেন এবং বিভিন্ন ঘাটে নৌযান চলাচলও বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। ১৯৭১ সালে প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তানের হানাদার সেনাবাহিনী, আর এবার ক্ষমতাসীনরা এদেশেরই লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে প্রতিপক্ষ বানিয়েছেন। আর সরকারের নগ্ন রুপ প্রকাশ পেয়েছে ৬ মে ২০১৩ এর মধ্যরাতে! সরকারের মদতে শাহবাগের নাস্তিক্যবাদি ও ইসলামবিদ্বেসী ব্লগারদের পাশাপাশি নির্মূল কমিটি ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মতো নামসর্বস্ব সংগঠনগুলোর বাড়াবড়িও সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। শাহবাগের ব্লগারদের ব্যাপারে সরকারের নীতি ও কর্মকাণ্ডও লক্ষ করা দরকার। দিনের পর দিন, এমনকি দীর্ঘ দু’মাস পর্যন্ত এই নাস্তিক ব্লগাররা শাহবাগের মতো অত্যন্ত ব্যস্ত এবং জনগুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা দখল করে রেখেছে। স্বাভাবিক যানচলাচল তো বন্ধ হয়েছেই, গুরুতর অসুস্থ রোগীরা পর্যন্ত চিকিত্সার জন্য বারডেম ও পিজি হাসপাতালে যেতে পারছিলেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকার শাহবাগিদের জামাই আদরে রেখেছে। তাদের জন্য প্যাকেটে প্যাকেটে বিরিয়ানি আর মোরগ পোলাও সরবরাহ করা হয়। শুধু তা-ই নয়, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশকে দিয়ে সরকার তিন-চার স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে শাহবাগিদের জন্য। মঞ্চে গিয়ে সংহতি প্রকাশ করেছেন ৭০ জন এমপি এবং বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। সংসদে দাঁড়িয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শাহবাগিদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। বলেছেন, তারও নাকি মন পড়ে আছে শাহবাগে! জাতীয় সংসদও শাহবাগিদের নির্দেশে রাতারাতি আইন সংশোধন করেছে। এই প্রক্রিয়ায় সর্বশেষে ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নিজেও শাহবাগিদের স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন। অথচ শাহবাগিরা জনগণের নির্বাচিত কোনো গ্রুপ বা গোষ্ঠী নয়। বড়কথা, তারা একদিকে দেশের আদালতকে চ্যালেঞ্জ করেছে, অন্যদিকে ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে নোংরা প্রচারণা চালাচ্ছে আল্লাহ ও রাসুল (সা.) এবং ইসলামের বিরুদ্ধে। জাতির এই সংকটময় মুহুর্তে রাজপথে নেমে আসলেন হাল যামানার শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফি।

এমন এক অবস্থায় সরকারের কর্তব্য যখন ছিল নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া, সরকার তখন উল্টো প্রশ্রয় ও সহযোগিতা তো দিয়েছেই, একই সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের আইনসম্মত লংমার্চকেও ভণ্ডুল করে দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছে। লংমার্চ অবশ্য সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করেই সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইসলামের প্রশ্নে এই বলিষ্ঠতার জন্য আমরা হেফাজতে ইসলামের নেতাদেরকে এবং সেই সঙ্গে ইসলামপ্রিয় জনগণকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই। হেফাজতের শান্তিপুর্ন লংমার্চ করায় স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও হেফাজতকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববাসী দেখেছে, লংমার্চ বানচালে সরকারের মদতে নজিরবিহীন হরতাল পালন করেছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি (ঘাদানিক) ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ আওয়ামী লীগ ও বাম ঘরানার ২৭ সংগঠন।

২৭টি সংগঠনের নামে এ হরতাল ডাকা হলেও এর বেশিরভাগই নামসর্বস্ব ও ভূঁইফোড় সংগঠন। একই ব্যক্তি এদের একাধিক সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর পাশাপাশি মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি এবং বাম ঘরানার গণঐক্য, পার্বত্য জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এবং সিপিবি এ হরতালে সমর্থন দিয়েছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আহূত এই হরতাল ও অবরোধে সরকারের নিদের্শেই নৌ, সড়ক ও রেলপথ বন্ধ করে দেয়ার কারণে শুক্রবার বিকাল থেকে রাজধানীর সঙ্গে গোটা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

ইমরানের দম্ভোক্তি : লংমার্চ ও মহাসমাবেশ শেষে রাজধানীর মতিঝিল থেকে ফেরার পথে রমনা পার্ক এলাকায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা আক্রমণের শিকার হন। হেফাজতের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পর কথিত শাহবাগি আন্দোলনের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ঘোষণা দেন, ‘শাহবাগ শান্ত হবে হেফাজতে ইসলামের রক্ত দিয়ে।’ সত্যি সত্যিই এই শাহবাগীরা রাষ্ট্রিয় শক্তির উন্মাদনায় হেফাজতের নিরস্ত্র লাখো জনতার রক্তের হোলি খেলা দেখে তারা এখন শান্ত! কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষদেয় রক্তস্নাত কোন আন্দোলনই বৃথা যায়না। ক্ষরিত রক্ত থেকেই আন্দোলনের বীজ উদগত হয়। ৫ মে দিন ব্যাপী ঢাকা অবরোধের পর শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিলো লাখো হেফাজত কর্মী। নিরন্ন,নিরস্ত্র এই আল্লাহ-রাসুল প্রেমিকদের ওপর মধ্যরাতে নেমে এলো ইতিহাসের এক জঘন্য নিষ্টুরতা। স্বদেশ ভুমে কত জন শাহাদাতের পেয়ালা পান করেছেন এর সঠিক হিসাব একমাত্র তিনি জানেন, যিনি পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ওয়ামতাজুল ইউমা আয়্যুহাল মুজরিমুন। ৬ মে রজনীর শুরুটাই যেন ছিল শাপলা চত্বরের জন্য এক কাল অধ্যায়। ১৮৩১ সালের সালের এই তারিখেই সংঘটিত হয়েছিলো ঐতিহাসিক বালাকোটের যুদ্ধ। শহীদদের নজরানা, ধর্মপ্রাণ রাসুলপ্রেমিকদের অসহায়ত্ব আর হৃদয়ের করুণ ফরিয়াদ নিশ্চয়ই বৃথা যাবেনা। শাপলা চত্বরের র্নিমমতাকে বালাকোট আর শহীদে কারবালার সাথেই তুলনা করা যায়। কারবালা-বালাকোট থেকে শাপলা চত্বর ঈমাণ জাগানিয়া আন্দোলনের সে সূত্রপাত হয়েছে জানিনা এর সমাপ্ত কোথায়?

পরিশেষে বলতে চাই, হাফিজ শহীদ আনোয়ার জাহিদরা যে দিন আহকামুল হাকীমিনের সবোর্চ্চ আদালতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিবেন, আমিও সে দিন এসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আল্লাহর আদালতেই বিস্তারিত বলবো ইনশা আল্লাহ ।

লেখক: পরিচালক- মাদানী প্রভাতি স্কুল এন্ড মাদ্রাসা।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৪৬ | শুক্রবার, ০২ মে ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com