শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হেফাজতের ক্ষোভ পঞ্জিভূত হচ্ছে মাঠপর্যায়ে

  |   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট

হেফাজতের ক্ষোভ পঞ্জিভূত হচ্ছে মাঠপর্যায়ে

hafajot

নিজস্ব প্রতিবেদক,  ঢাকা : হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের ক্রমেই ক্ষোভ পঞ্জিভূত হচ্ছে মাঠপর্যায়ে। মূলত দীর্ঘ দিন মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি না থাকায় হতাশা থেকে এই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দুই-একটি কর্মসূচি দিয়েও প্রত্যাহার করে নেয়ার মতো বেশ কিছু ঘটনা মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ক্ষুব্ধ করেছে। হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের সাথে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ঘনঘন সাক্ষাতের ঘটনাকেও নেতাকর্মীরা ভালো চোখে দেখছেন না। অনেকে মনে করছেন বারবার কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়া এবং ১৩ দফার দাবি আদায়ের আন্দোলনের ধারাবাহিকতা না থাকার পেছনে হেফাজত নেতাদের সাথে সরকারি দলের নেতা ও কর্মকর্তাদের ঘনঘন সাক্ষাতের একটি যোগসূত্র রয়েছে। মূলত সরকার কৌশলে হেফাজতকে আন্দোলনবিমুখ করে রাখছে বলেও তাদের অনেকে মনে করছেন।

তাদের মতে, সারা দেশে হেফাজতের লাখ লাখ নেতাকর্মী দাবি আদায়ে জোরালো আন্দোলনের পক্ষে। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে সেই ধরনের কর্মসূচি না আসায় অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। এরই মধ্যে হেফাজত সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল থেকে কাউকে মন্ত্রী পরিষদে স্থান দেয়া এবং সব মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে হেফাজতের শীর্ষ পর্যায়ে প্রস্তাব করা হয়েছে- এমন গুঞ্জনও শুনা যাচ্ছে। তবে এসব গুঞ্জনের সত্যতা নেই বলে জানিয়েছেন হেফাজত নেতারা। তাদের মতে, হেফাজত যেহেতু রাজনৈতিক দল নয়, সেহেতু হেফাজতকে মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়ার সুযোগ নেই। আর মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টিও হেফাজতের ১৩ দফার মধ্যেই রয়েছে। হেফাজত ১৩ দফা আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

নেতাদের দাবি- প্রতিকূল পরিবেশ, বিশেষ করে সরকারের বাধায় হেফাজত মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি বাস্তবায়ন পারছে না। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হেফাজত পূর্বঘোষিত শানে রেসালত সম্মেলন কর্মসূচি নতুন তারিখ নির্ধারণ করে বাস্তবায়ন করা হবে। গত বছরের ৫ মে ঢাকা অবরোধ-পরবর্তী রাতে শাপলা চত্বরের অবস্থানের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের ঘটনার পর থেকে হেফাজত কার্যত রাজপথে কোনো কর্মসূচিই পালন করতে পারেনি। ঘটনার পর একদিনের হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেও পরে আমিরের নির্দেশে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এরপর দোয়া, খতমে বোখারি, আলোচনা ইত্যাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে কর্মসূচি।

গত নভেম্বর মাসে একদিন বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েও আমিরের নির্দেশে পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। গত ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে দুই দিনের সম্মেলন এবং ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিলেও শেষ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি না পাওয়ায় স্থগিত করার কথা জানানো হয়। গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বদানকারীদের অনেকে নাস্তিক এবং আল্লাহ রাসূলের অবমাননাকারী মর্মে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতের আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্র হয়ে ওঠে। তবে ৫-৬ মে-এর ঘটনায় ব্যাপক হতাহতের পর থেকে আর মাঠের কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি অরাজনৈতিক এই সংগঠনটি। হেফাজতে ইসলামের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথম দিকে নমনীয় ভূমিকা পালন করলেও ৫ মের পর থেকে প্রকাশ্যে কঠোর নীতি গ্রহণ করে।

৬ মে গ্রেফতার করা হয় হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে। পরে তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় জামিনে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তবে এরই মধ্যে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারি দলের কয়েকজন নেতা আল্লামা শফীর সাথে যোগাযোগ করতে থাকেন। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিলের আগে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ হেফাজত আমিরের সাথে ঘটা করে সাক্ষাৎ করে আসার পরই নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন। এরপর ঢাকা মহানগর হেফাজত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে উত্তাপ সৃষ্টি করে।

সমাবেশের দুই দিন আগে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল হেফাজত আমিরের সাথে হাটহাজারী মাদরাসায় গিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করে। এরপর সমাবেশের আগের দিন হেফাজত আমির ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়ে পুলিশি বাধায় মাদরাসায় ফিরে যান। অন্য দিকে একই সময় ঢাকা মহানগর হেফাজত সরকারের বাধার অভিযোগ করে সমাবেশ স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে হেফাজত আমিরের একটি খোলা চিঠি প্রদান ছাড়া হেফাজতের আর কোনো তৎপরতা সাম্প্রতিককালে ছিল না। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনপরবর্তী এখন পর্যন্ত হেফাজত নেতারা কোনো বৈঠকে মিলিত হননি। হেফাজত সংশ্লিষ্ট অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা মনে করছেন সরকারি দলের কয়েকজন নেতা এবং সরকারের বিশেষ দুই-একটি সংস্থার কর্মকর্তারা হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাথে সরাসির যোগাযোগ করে হেফাজতকে কৌশলে আন্দোলনবিমুখ করে রাখার কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে দায়ের করা বিভিন্ন মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও মাদরাসা-মসজিদে আর্থিক সাহায্য প্রদানের মতো কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকার হেফাজত নেতাদের দু’টি অংশের মধ্যে কিছুটা মনস্তাত্ত্বিক বিরোধ সৃষ্টি করে কার্যত ঢাকায়ও হেফাজতকে অনেকটা নিষ্ক্রীয় করে রাখা হচ্ছে। এসব বিষয়ে এখন মাঠপর্যায়েও নানা কানাঘুষা চলছে। মাঠপর্যায়ের হেফাজত নেতাকর্মীদের ক্ষোভ ও হতাশার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হেজাফত গাজীপুর জেলা সেক্রেটারি মাওলানা ফজলুর রহমান বলেন, নেতাকর্মীরাতো কর্মসূচি চান। কিন্তু সরকার যেভাবে বাধা দিয়েছে তাতে কর্মসূচি দিয়েও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছিল না। এই অবস্থায় কর্মসূচি দিয়েওতো লাভ হচ্ছিল না। তিনি বলেন, হেফাজত তার অবস্থানে অটল আছে। আন্দোলন-সংগ্রামও অব্যাহত থাকবে।

হেফাজত ঢাকা মহানগরীর যুগ্ম-আহ্বায়ন মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফীর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নেতাকর্মীরা হতাশ, এটা ঠিক নয়। আপাতত কর্মসূচি নেই। আমরা এখনো বসিনি। সরকার মামলা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে এবং মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া চলছে এমন খবরের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, মামলা প্রত্যাহারেতো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তিনি বলেন, এটাতো ১৩ দফা দাবির একটি। আমাদের মূল দাবিতো ১৩ দফা। এই দাবি আদায়ের আন্দোলন চলবে যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন। হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীর কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, হেফাজতকে নিয়ে যেসব কানাঘুষা বা গুঞ্জনের কথা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। সরকার ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা হেফাজত নেতাদের সাথে দেখা-সাক্ষাতের ঘটনা নতুন কিছু নয়। তাছাড়া হেফাজতকে মন্ত্রিত্ব দেয়া ও মামলা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস প্রদানের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।

তিনি বলেন, সরকার রাজনৈতিক দলের সাথে কেমন আচরণ করেছে সেটাতো সবাই দেখেছে। হেফাজত অরাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও হেফাজতকেও সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। তবে নির্বাচনের পরে অনুমতি দেয়া হবে বলে জানিয়েছিল। এখন আমরা শানে রেসালত সম্মেলনসহ ঘোষিত কর্মসূচি আবার পালন শুরু করব। তিনি বলেন, হেফাজত দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে কোনো আপস নেই। হেফাজতের আমির আল্লামা শফী এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১০:২১ | বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com