বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হলি আর্টিজান বিভীষিকার তিন বছর

  |   সোমবার, ০১ জুলাই ২০১৯ | প্রিন্ট

হলি আর্টিজান বিভীষিকার তিন বছর

সারা বিশ্ব তোলপাড় করা রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার তৃতীয় বর্ষপূর্তি আজ সোমবার। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের ওই অভিজাত ইতালিয়ান রেস্তোরায় নৃশংস হামলা চালিয়ে ১৮ বিদেশী নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। এটি ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ও নৃশংস জঙ্গি হামলা।

তিন বছর আগের এই দিনের এক ঘটনায় থমকে গিয়েছিল সারা দেশ। তখন চলছিল রমজান মাস। রাত পৌনে ৯টার দিকে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করে ২০ বিদেশি নাগরিকসহ ৩০ থেকে ৩৫ জনকে জিম্মি করে রাখে এবং রাতভর হত্যাযজ্ঞ চালায়।পরদিন শনিবার সকালে রেস্তোরায় জিম্মিদের উদ্ধারে কমান্ডো অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী। তবে এর আগে শুক্রবার রাতেই জঙ্গিদের সঙ্গে গোলাগুলিতে ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন খান নিহত হন।অভিযান শেষে যৌথ বাহিনী বিদেশি নাগরিকসহ মোট ১৩ জনকে জীবিত এবং মোট ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। অভিযানে ছয় জঙ্গিও নিহত হয়। নিহত ২০ জনের মধ্যে দু’জন বাংলাদেশি, ১ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান, ৯ জন ইতালিয়ান, ৭ জন জাপানি ও ১ জন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।নিহত দুই বাংলাদেশি হলেন-ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ হোসেন এবং ডেএক্সওয়াই ইন্টারন্যাশনালের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ইশরাত আখন্দ। এছাড়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান অবিন্তা কবির ও ভারতীয় তরুণী তারুশি জেইনও নিহতদের মধ্যে ছিলেন। অবিন্তা কবির এলিগ্যান্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান রুবা আহম্মেদের একমাত্র মেয়ে। তিনি নিহত হওয়ার মাত্র ৪ দিন আগে ২৭ জুন বাবার সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশে এসেছিলেন।

কমান্ডো অভিযানে নিহত ছয় জঙ্গির মধ্যে নিবরাজ ইসলাম, মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ওই হামলায় অংশ নিয়েছিল বলে পুলিশ জানায়।

২২ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির অবসান ঘটেছিল ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ নামের কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে। অভিযান শুরুর আগের রাতেই ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা, নিহতদের ১৭ জনই বিদেশি। ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গি। বাংলাদেশের এ ঘটনা আলোড়ন তুলেছিল বিশ্বজুড়ে। ১৭ বিদেশির মৃত্যুতে ওই হামলার পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনামেও উঠে এসেছিল বাংলাদেশ।

হলি আর্টি জানহামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো মিলে সাঁড়াশি অভিযানে নামে, তাতে মিলতে থাকে ‘নব্য জেএমবি’র একটির পর একটি আস্তানার খোঁজ। এসব অভিযানে মারা পড়েন জঙ্গি নেতাদের অনেকেই, উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক।

ওই ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে যে মামলাটি হয়েছে, তার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রও দিয়েছে পুলিশ। হামলায় জড়িত মোট ২১ জনকে চিহ্নিত করলেও অভিযোগপত্রে আসামি করা হয় আটজনকে।

গুলশানের এই ভয়াবহ হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিতে জঙ্গী নেতা রাজীব গান্ধী, সোহেল মাহফুজ, রকিবুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান। কোথায় বসে হামলার পরিকল্পনা হয়, কারা হামলায় অংশ নেয়, কীভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়, অর্থ সংগ্রহের দায়িত্বে কারা ছিল এসব প্রশ্নের উত্তর জঙ্গীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে উঠে এসেছে। তবে হামলায় জড়িত শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন পলাতক আছেন।

তদন্ত কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, চার মাস ধরে গুলশানে এই হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল জঙ্গীরা। ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বেছে নেয় তারা। হামলাকারীরা তাদের লক্ষ্যস্থল সম্পর্কে জানতে পারেন হামলার মাত্র তিন থেকে চারদিন আগে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নব্য জেএমবির নেতারা ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় বিদেশীদের ওপর বড়সড় হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। হামলা করার জন্য ওই বছরের ২৮ জুন নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরী বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা আনেন। হুন্ডি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা সংগ্রহ করে নব্য জেএমবির আরেক নেতা বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট তামিমের কাছে পৌঁছে দেন।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশান ২ নম্বর সার্কেলের ৭৯ নম্বর সড়কে হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়েছিল পাঁচ জঙ্গী। তাৎক্ষিণকভাবে প্রতিরোধ গড়তে গিয়ে নিহত হন ডিবির সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন। জঙ্গীদের হামলায় ইতালির ৯ নাগরিক, জাপানের ৭ নাগরিক, ভারতের ১ জন এবং বাংলাদেশের ৩ নাগরিককে হত্যা করে। পরদিন সকালে প্যারাকমান্ডো অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গীসহ ছয়জন।

হামলার ঘটনায় গুলশান থানায় এসআই রিপন কুমার দাস বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আলামত হিসেবে জব্দ দেখানো হয় ১টি সাদা কাপড়ের রুমাল, ৫টি নাইন এমএম পিস্তল, তিনটি একে ২২ মেশিনগান, ১৩টি ম্যাগাজিন, নাইন এমএম ক্যালিবারের ৬টি তাজা গুলি, সেভেন পয়েন্ট সিক্সফাইভ ক্যালিবারের ২৮টি গুলি, একে-২২ এর ৩৫টি গুলি, পয়েন্ট টুটু বোরের ৪৪টি গুলি, ৬ পয়েন্ট ১৬ ক্যালিবারের ১২টি গুলি, সেভেন পয়েন্ট সিক্সটু ক্যালিবারের দুইটি গুলি, একই ক্যালিবারের ১৯৫টি গুলির খোসা, নাইন এমএম ক্যালিবারের গুলির ১০৫টি খোসা, নয়টি গ্রেনেড সেফটি পিন, দুটি ছোরা, একটি চাপাতি ও একটি চাকু।

মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিটিসি) সূত্রে জানা গেছে, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঙ্গী হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন বা চার্জশীট (অভিযোগপত্র) চূড়ান্ত করা হয়েছে। আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ও সাক্ষীদের জবানবন্দী থেকে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার আদ্যোপান্ত জানতে পেরেছে সিটিটিসি। ওই হামলায় তামিম ও সরোয়ার জাহান মানিকসহ ২২ জঙ্গীর জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে সিটিটিসি ইউনিট। এই ২২ জনের মধ্যে ১৩ জন নিহত হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে। হামলার পর প্যারা কমান্ডোদের অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত হয় রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামীহ মোবাশ্বীর, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল। ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে অভিযানে নিহত হন আবু রায়হান তারেক। ওই বছরের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় অভিযানে নিহত হয় তামিম আহমেদ চৌধুরী। পরে রাজধানীর রূপনগরে মেজর (অব) জাহিদুল ইসলাম, আজিমপুরে তানভীর কাদেরী, আশুলিয়ায় সরোয়ার জাহান মানিক, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে নূরুল ইসলাম মারজান নিহত হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে অভিযানে নিহত হয় বাশারুজ্জামান চকলেট ও ছোট মিজান।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:২৯ | সোমবার, ০১ জুলাই ২০১৯

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com