| বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর : নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেন, নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসলে মৃত্যু ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি মারা গেলে জনগণ এ সিদ্ধান্তের জন্য স্বাগত জানাবে।
বৃহস্পতিবার রাত দশটায় বারিধারাস্থ নিজ বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্কে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন এরশাদ।
নির্বাচন থেকে বর্জনের ঘোষণার ফলে দল ভেঙ্গে যেতে পারে কী না সংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার এ সিদ্ধান্তের কারণে দল থেকে কেউ যাবে না। দলের ভেতরে দু’একজন লোক থাকে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য।
তিনি বলেন, আমাদের সামনের দিকে এগুতে হবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মাঝে মধ্যে মনে হয়- রাজনীতি ছেড়ে দেব। কিন্তু আমি রাজনীতি ছাড়লে আমার দলের নেতাকর্মীদের অবস্থা কি হবে, এ কথা বিবেচনা করে রাজনীতি ছাড়তে পারছি না।
এর আগে দুই দফা সমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন- কিন্তু এখন কেন বেঁকে বসলেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুবিচার পাইনি। ’৯৬ সালে এক দল প্রস্তাব করেছিল- তাদের সমর্থন দিলে আমাকে প্রধানমন্ত্রী করবে। তাদের সেই প্রস্তাব উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছি। এর বিনিময়ে আমার দল ভেঙ্গেছে। মামলা প্রত্যাহার করেনি। বরং প্রভাব খটিয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, মঞ্জু হত্যা মামলায় আমার কোনো শাস্তি নেই। তারপরও এ মামলাটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, শুধু তাই নয়। মহাজোট গঠনের সময়ে আমাকে ৪৮টি আসন দেয়ার কথা ছিল- তাও দেয়নি। মাত্র ২৯টি আসন দিয়েছিল। আমার গাড়িতে হামলা করেছিল।
তিনি বলেন, একজন মহিলা জজ দিয়ে আদালতেও আমাকে অপমান করেছে আওয়ামী লীগ। জেলা পরিষদের প্রশাসক পদের একটিতেও আমার দলের লোকদের নেয়া হয়নি। অথচ আমি না থাকলে মহাজোট এত আসন পেত না।
এরশাদ বলেন, সর্বদলীয় সরকারের রূপরেখাও আমি দিয়েছি। কথা ছিল সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু ভেতরে গিয়ে দেখলাম- এটি পাতানো।
তিনি বলেন, রাজনীতি করি জনগণের জন্য, দেশ ও জাতির জন্য। লাশের রাজনীতি করি না। লাশের ওপর পা দিয়ে আমি নির্বাচনে যাব না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, সরকার থেকে চাপ আছে। কিন্তু আমি আমার অবস্থানেই আছি। কথার পরিবর্তন করলে জনগণ আমার মুখে থুতু দেবে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এডভোকেট সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরলেই জাতীয় পার্টির দলীয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র তার কাছে জমা দেয়া হবে।
এর আগে এরশাদের নির্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বেগম রওশন এরশাদ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার, বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু এবং নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট সালমা ইসলাম নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগপত্র তার হাতে দেন।
এর আগে বুধবার বিকালে এরশাদের পদত্যাগের নির্দেশের পর বৃহস্পতিবার দিনভর এ নিয়ে নানা নাটকীয়তা চলে। বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন নির্বাচনকালীন সরকারের জাতীয় পার্টির তিন মন্ত্রী রওশন এরশাদ, রুহুল আমীন হাওলাদার ও মজিবুল হক চুন্নু।
এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ব্যারিস্টার জিয়া উদ্দিন বাবলু।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আকস্মিকভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এর পরদিন বুধবার তিনি তার দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং মন্ত্রীদের পদত্যাগেরও নির্দেশ দেন
Posted ১৭:০৯ | বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin