| বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট
বাসস : জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি বলেছেন, সাপের শেষ রাখতে নেই- বেইমানের ক্ষমা নেই। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে সামাজিক সহায়তা উদ্যোগে আয়োজিত ‘স্বাধীনতার ৪৩ বছর উদযাপন, বীরাঙ্গনাদের সংবর্ধনা, একাত্তরের স্মৃতিচারণ ও ভাতা বিতরণ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সামাজিক সহায়তা উদ্যোগ’র আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ, সামাজিক সহায়তা উদ্যোগ’র সমন্বয়কারী এটিএম জায়েদ হোসেন, কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জের বীরাঙ্গনা কমলা খাতুন, ময়মনসিংয়ের বীরাঙ্গনা পয়রবি নেছা ও সামাজিক সহায়তা উদ্যোগে’র ময়মনসিংহের সমন্বয়ক রবিউল করিম। ময়মনসিংহ জেলার ১৫ জন বীরাঙ্গনা বীর মাতাকে অনুষ্ঠানে ভাতা প্রদান করা হয় এবং ‘বীরাঙ্গনা বীর মাতার জবানীতে ৭১’র ভয়াল স্মৃতি’ প্রামাণ্যচিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধে দুটি পক্ষ থাকে। একটি শত্রু পক্ষ আর একটি বেইমান পক্ষ বা বিশ্বাসঘাতক পক্ষ। একাত্তরে পাকিস্তানি সৈন্য ছিল শত্রু পক্ষ আর জামায়াত রাজাকার আলবদর ছিল বেইমান পক্ষ। ৭১’র মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী বেইমানদের বিচার করতে না পারা ছিল আমাদের ঐতিহাসিক মহাভুল। এখনও স্বস্তি ফেলার সময় হয়নি।
৭১’র যুদ্ধে পরাজিত বেইমানরা ঘাপটি মেরে আছে। তারা ভুল স্বীকার করেনি। তারা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মৌলবাদী-জঙ্গিবাদিদের বিরুদ্ধে শেষ লড়াই চালিয়ে পরাজিত করে আমাদের এই মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। রাজাকারদের ক্ষমা নেই উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার শেষ করব, সাজা কার্যকর করব, অপরাধ করলে বিচার হয় এটা প্রমাণ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করব।’ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের জননী উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ ত্যাগ না করলে খালেদা জিয়াকে জঙ্গিবাদের মতো বিতাড়িত করতে হবে।
‘জঙ্গিবাদ মৌলবাদীদের সঙ্গ ত্যাগ না করলে গণতন্ত্রে কিসের আলোচনা’ এ প্রশ্ন তুলে মন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের সঙ্গে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ-যুদ্ধাপরাধী যায় না। জঙ্গিবাদ কচুরিপানার মতো। কচুরিপানার ফুল দেখতে সুন্দর হলেও ক্ষেতে প্রবেশ করে ফসল নষ্ট করে দেয়। এ জন্য ক্ষেতে ঢোকার আগেই কচুরিপানা উপড়ে ফেলতে হয়।
জাসদ সভাপতি বলেন, জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ প্রশ্নে নিরপেক্ষতা বলে কিছু নেই, মাঝামাঝি বলেও কিছু নেই। ৭১’র লড়াই ছিল রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই। এখন লড়াই হচ্ছে গণতন্ত্র বনাম জঙ্গিবাদের লড়াই। এটা হাসিনা-খালেদার লড়াই নয়। মুক্তিযুদ্ধের মূল পথে ফেরত যাওয়ার যাত্রা। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করে অসাম্প্রদায়িক পথে যাত্রা। নির্বাচিত স্বৈরাচার খারাপ আরও খারাপ সামরিক স্বৈরাচার। তার চেয়েও বেশি খারাপ যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গিরা। মুক্তিযুদ্ধের মূল চার নীতি বাদ দিয়ে রাজাকার পুনর্বাসন করে জিয়াউর রহমান ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে ইনু মন্তব্য করেন।
বীরাঙ্গনাদের সম্মান ও মর্যাদা প্রদান প্রসঙ্গে মন্ত্রী দায় স্বীকার করে বলেন, এখনও বীরাঙ্গনাদের মর্যাদা দিতে না পারা আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা। একজন পুরুষ মুক্তিযোদ্ধা দেশ রক্ষা ও জীবন রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেছেন। অন্যদিকে একজন নারী যুদ্ধ করেছেন দেশ রক্ষা, জীবন রক্ষা ও ইজ্জত রক্ষার জন্য। পুরুষের চেয়ে নারী যুদ্ধে এক ধাপ বেশি ভূমিকা পালন করেছে।
কোনো নারী রাজাকার-আলবদর বাহিনীতে নাম লেখাননি উল্লেখ করে মন্ত্রী বীরাঙ্গনাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়ার দাবির প্রতি একাত্ম প্রকাশ করে বলেন, বীরাঙ্গনাদের মর্যাদা প্রদান এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানে কোনো কৈফিয়ত চলবে না। বীরাঙ্গনারা নিজের ভবিষ্যত্ উত্সর্গ করে আমাদের ভবিষ্যত্ গড়ে দিয়েছেন। তিনি বীরাঙ্গনাদের সংবর্ধনা ও ভাতা প্রদানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এবং রাষ্ট্রের এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল বলে মন্ত্রী মন্তব্য করেন।
ইনু বলেন, যুদ্ধের কিছু নীতি থাকে। পাকিস্তানিরা ৭১’র মহাযুদ্ধে সেই নীতি রক্ষা না করে নারী শিশু হত্যা করেছে। বর্তমানের তাদের প্রেতাত্মারা পেট্রোল- বোমা মেরে মানুষ মারে, শিশুর গায়ে, নারীর গায়ে আঘাত করে। ভিন্ন ধর্মের উপাসনালয়ে হামলাসহ গাছ কেটে পরিবেশ বিনষ্ট করছে। এদের ক্ষমা নেই। বিএনপি নেত্রী এদের লালন-পালন করছে বলে মন্ত্রী অভিযোগ করেন।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, বীরাঙ্গনাদের সামাজিকভাবে, পারিবারিকভাবে ও রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো মর্যাদার আসনে দেখা হয় না। ময়মনসিংহের রবিউল করিম অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘একজন বীরাঙ্গনা এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা আসার কথা ছিল কিন্তু গ্রামের মানুষ তাকে বলেছে- ঢাকা গেলে তোমাকে টেলিভিশনে দেখাবে, পত্রিকায় ছবি আসবে। তাতে আমাদের গাঁয়ের মর্যাদা নষ্ট হবে। ঠিক তার পরিবার থেকেও একই কথা বলা হয়েছে।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করে বীরের মতো ফিরেছে। অন্যদিকে বীরাঙ্গনারা অমর্যাদা ও গ্লানি নিয়ে ফিরেছে। সমাজ ও পরিবার কেউ তাদের ভালো চোখে দেখে না। তাদের এ পরিণতি থেকে রক্ষা করতে হবে।
Posted ১৩:০৮ | বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin