বৃহস্পতিবার ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

`সরকার নিজেই সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে' -ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন

  |   বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

321_pht

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, এনডিসি, পিএসসি (অব)। সাবেক নির্বাচন কমিশনার। বিডিআর বিদ্রোহের রায়, বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও করণীয় ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু নিয়ে সম্প্রতি সাপ্তাহিক-এর মুখোমুখি হন। বিডিআর বিদ্রোহের আসল উদ্দেশ্য বের করতে না পারলে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। শঙ্কা প্রকাশ করেন বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু
সাপ্তাহিক : বিডিআর বিদ্রোহের রায় হলো। এই রায়কে কীভাবে দেখছেন?
ব্রি. জে. (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন : বিডিআর বিদ্রোহ এমন একটি নৃশংস ঘটনা যে, বাংলাদেশের জন্য তো বটেই সারা বিশ্বের সামরিক ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। গত দুই দশকে এমন ঘটনা আমরা আর প্রত্যক্ষ করতে পারিনি। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সঙ্গেও এটিকে তুলনা করা যায় না। এই ঘটনার উদ্দেশ্য কী ছিল সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর ৫৭ জন সামরিক কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে একদিনে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে হত্যা, যা যুদ্ধের মধ্যেও দেখা যায় না।
বিচারের রায় নিয়ে প্রথমত বলতে হয়, এরকম একটি ঘটনার বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করা উচিত ছিল। রায়টি ছিল সময়ের দাবি। যদিও বিচারের একটি অংশের রায় দিয়েছে আদালত। অন্যান্য ঘটনার বিচারকার্য চলছে।
সাপ্তাহিক : কেন এই দ্রুততা?
সাখাওয়াত হোসেন : দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার শেষ করা এই কারণে জরুরি যে, এই ধরনের বিচারকার্য প্রলম্বিত করলে ফলাফল ভালো হয় না। এই কারণেই সামরিক বাহিনীর আদালতে যে কোনো বিচার অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করতে হয়। কারণ, সময়ের ব্যবধানে অপরাধীদের প্রতি এক প্রকার সহানুভূতির চিন্তা প্রকাশ পেতে পারে। আবার দীর্ঘ সময় ধরে আসামিদের আদালতে আনা নেয়ার বিষয়টি দেখতে পেরে অন্যান্য বাহিনীর মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়ে। আসামিদের পরিবার পরিজনের পক্ষ থেকে নানা আবেদন গুরুত্ব পেতে থাকে। এ কারণেই দ্রুত রায়ের মধ্য দিয়ে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করা জরুরি ছিল।
সাপ্তাহিক : বিডিআরের নিজস্ব আইন ছিল। কিন্তু বিচার হলো ফৌজদারি আইনে।
সাখাওয়াত হোসেন : বিডিআর-এর যে আইন রয়েছে সেই আইনে এত বড় একটি ঘটনার বিচার সম্পন্ন করার বিধান নেই। এই কারণেই আধাসামরিক বা সামরিক বাহিনীর কিছু কিছু ঘটনা ফৌজদারি আইনে বিচার করতে হয়। এখানেও তাই হয়েছে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে বিচারের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি কখন হয়। আমি আবারও বলব, যতদ্রুত সম্ভব এই বিচার শেষ করা উচিত।
সাপ্তাহিক : আপনি বিডিআর বিদ্রোহের উদ্দেশ্যের কথা বললেন। দ্রুত বিচারের মধ্য দিয়ে সেই উদ্দেশ্য ঢাকা পড়ছে কিনা?
সাখাওয়াত হোসেন : বিচারের রায়ে সেই উদ্দেশ্য ঢাকা পড়ার কথা নয়। এখনও ২০ জন লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বলা হচ্ছে, এই ২০ জনের মধ্যেই কেউ না কেউ ঘটনার মূল হোতা। এদের খুঁজে পাওয়া গেলে হয়ত ঘটনার উদ্দেশ্য বের করা যেতে পারে। হতে পারে জিম্মি করে দাবিদাওয়া আদায় করা। কিন্তু এখানে তো হয়েছে হত্যা। হত্যার পরে তো কোনো দাবি-দাওয়ার প্রসঙ্গ গুরুত্ব পায় না। সরাসরি অপারেশনে চলে গেছে। বিদ্রোহের সময় দেখা যায় মূল হোতারাই শুধু ঘটনার উদ্দেশ্যের ব্যাপারে ধারণা রাখে। অন্যেরা প্রভাবিত হয়ে অপারেশনে অংশ নেয়।
বিডিআর বিদ্রোহটাকে আমি একটু অন্যভাবে দেখতে চাই। এটি একটি আধাসামরিক বাহিনী। সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ হয় ক্ষমতায় যাওয়া বা ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে। যেমন, আমরা ১৯৭৫ সালে দেখেছিলাম, ক্ষমতা নিয়ে কমান্ডারদের মধ্যে দ্বান্দ্বিক পরিবেশ সৃষ্টি হওয়াকে। কিন্তু বিডিআর-এর তো সে রককম কোনো শক্তি নেই যে, তারা সামরিক বাহিনীর মতো ক্যু করে ক্ষমতায় যাবে। এখানেই বিষয়টি অস্পষ্ট।
সাপ্তাহিক : মূল হোতারা যদি ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায় তাহলে রায়ের পূর্ণাঙ্গতা আসে কীভাবে?
সাখাওয়াত হোসেন : তদন্তে কী আসছে সে ব্যাপারেও আমরা পরিষ্কার ধারণা পাইনি। তবে আদালতের পর্যবেক্ষণে বেশ কয়েকাট কারণ উল্লেখ করেছেন। সেনাবাহিনীর মনোবলকে ভেঙ্গে দেয়া, সেনাবাহিনীকে মানুষের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করা, বহির্বিশ্বের কাছে উচ্ছৃঙ্খল হিসেবে পরিচিত করা। সামরিক নিরাপত্তা, কূটনীতিক এবং রাজনৈতিক কারণের কথা উল্লেখ করেছেন বিচারক। আদালত তো তদন্ত করেনি। বিচারক মামলার ঘটনা প্রবাহ থেকে এই পর্যবেক্ষণ করেছেন। কেবল ডাল-ভাত অপারেশনের কারণে এই ঘটনা, তা অসম্ভব। সুতরাং মূল হোতাদের খুঁজে বের করেই উদ্দেশ্য জানা যেতে পারে।
সাপ্তাহিক : আদালত ডাল-ভাত অপারেশনের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিয়েছেন?
সাখাওয়াত হোসেন : আমিও বিডিআর-এর দায়িত্ব পালন করেছি। বৈষম্য থাকতেই পারে। তার জন্য দরবার সিস্টেম আছে। শুধু ডাল-ভাত অপারেশনের জন্য এত বড় হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। তবে ডাল-ভাত অপারেশনের মতো কাজ সৈনিকদের দিয়ে করানো ঠিক না। বড়জোর তদারকি করতে পারে। দাঁড়িপাল্লা নিয়ে দিনভর দোকান পরিচালনা করাটা অনেক সৈনিকই হয়ত পছন্দ করেনি।
সাপ্তাহিক : তাহলে তো এই ক্ষোভ থেকে বিদ্রোহ হতেই পারে?
সাখাওয়াত হোসেন : ক্ষোভ থাকতে পারে। কিন্তু এটিই একমাত্র কারণ না। শান্তি মিশনে না যেতে পারাটাও একটি কারণ হতে পারে। তাই বলে কি হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মিশনে যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার হবে? এত আরও খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকল। আদালতের যে পর্যবেক্ষণ তার বাইরে আমার আরও কিছু পর্যবেক্ষণ আছে, যা আমি বলতে চাই না।
একটি আধাসামরিক বাহিনীর সঙ্গে সামরিক বাহিনীর তুলনা করলে চলবে না। অস্ত্র, প্রশিক্ষণসহ নানা তফাৎ রয়েছে। একটি সামরিক বাহিনীর যে অস্ত্র তা আধাসামরিক বাহিনীর কাছে থাকতে পারে না। বিডিআর-এর কাছে যে অস্ত্র থাকার কথা তার চেয়ে ভারী অস্ত্র হয়ত ছিল। এ কারণে আদালতের পর্যবেক্ষণগুলো নিয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত।
সাপ্তাহিক : আদালতের পর্যবেক্ষণে গোয়েন্দা বাহিনীর ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ব্যাপারে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
সাখাওয়াত হোসেন : এই ঘটনায় গোয়েন্দা বাহিনীগুলো সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছিল বলে আমি মনে করি। গোয়েন্দাদের জাতীয় পর্যায়ের ব্যর্থতা এটি। কারণ, এটি একটি জাতীয় কর্মসূচি ছিল। বিডিআর সপ্তাহ চলছিল। প্যারেড হচ্ছিল। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী যাবেন। প্রায় ১০ হাজার বিডিআর জওয়ানের উপস্থিতি। এত বড় একটি কর্মসূচি নিয়ে গোয়েন্দারা এলার্ট থাকবে না, তা কেউ বিশ্বাস করতে পারে না। কেবল বিডিআর-এর ছোট একটি গোয়েন্দা বাহিনী এই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতে পারে না। চারদিন আগে থেকেই লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছিল। বিডিআর-এর ডিজি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কী কথা বলেছিলেন? জনগণ কিন্তু এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানে না। আদালত কিন্তু এই বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়েই বলেছেন। গোয়েন্দারা প্রতিনিয়ত রিপোর্ট করেন। এখানেও ঠিক তাই করার কথা। সেই রিপোর্টগুলোতে কী ছিল তা কিন্তু পরিষ্কার হয়নি। প্রশ্নগুলোর উত্তর বের করা অতি জরুরি বলে মনে করি। কারণ ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানোর জন্যই সঠিক তথ্য বের করা উচিত।
সাপ্তাহিক : এতে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর কী প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন?
সাখাওয়াত হোসেন : আমাদের রাষ্ট্র অত্যন্ত দুর্বল কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে আছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আমাদের নৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতি চার বছর পর পর সঙ্কট তীব্র হয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকলে প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য কাঠামো ভেঙে পড়ে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বলয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর বিডিআর-এর ঘটনা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকেই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, সার্বিক নিরাপত্তা বলয়ের ওপর আঘাত করেছে। এই আঘাত থেকে আমরা কতটুকু বের হতে পেরেছি তা কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে। আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
সাপ্তাহিক : এই ঘটনার জন্য অনেকেই বাইরের শক্তির দিকেও ইঙ্গিত করেছিলেন। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?
সাখাওয়াত হোসেন : আগে আমাদের নিজেদের কথা বলতে হবে। কিছু হলেই আমরা বাইরের দিকে আঙুল তুলি। এই আঙুল তোলার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের দায়দায়িত্ব ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি। এটি হচ্ছে আসল ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা। বাইরের কোনো শক্তি করতেই পারে। কিন্তু সেটা তো আমাদের লোকাল শক্তি দিয়েই করিয়েছে। কী ঘটেছিল, কেন ঘটেছিল সেটাই তো তদন্তে বের হওয়া দরকার। রাষ্ট্র অন্তত এটি তো করতে পারত। সব ঘটনা নিয়েই তো রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া যায় না। ঘটনার পরপরই একটি দেশের কথা বলা হলো। এখন আবার আরেকটি দেশের কথা বলা হচ্ছে। আমরা আসল ঘটনা জানতে চাই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কী ভূমিকা ছিল, গোয়েন্দাদের কী ভূমিকা ছিল এই প্রশ্নগুলোর উত্তর তো সরকারকেই দিতে হবে। কারণ ঘটনাটি তো ছোট কোনো বিষয় নয়। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরও বিদ্রোহ হয়েছিল। ওই দিনও সেনা কর্মকর্তারা নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনার এমন ব্যাপকতা ছিল না। বিডিআর বিদ্রোহ ছিল গোটা দেশের ব্যবস্থাপনার ওপরে সাংঘাতিক রকমের আঘাত।
১৫২ জন সৈনিককে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে। এর বাইরেও তো আরও পক্ষ থাকতে পারে। গোয়েন্দাদের ভূমিকা, দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের কী ভূমিকা ছিল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্থানীয় সাংসদ বিডিআরদের সমস্যার কথা শুনে তারা কী ভূমিকা রেখেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী কখন জানলেন। এই বিষয়গুলোর কিন্তু আমরা কিছুই জানি না। এই ঘটনার গোড়ার কারণ বের করতে না পারলে বিপদমুক্ত হওয়া যাবে না। ভবিষ্যতের জন্যই প্রশ্নগুলোর উত্তর জরুরি। এই কারণেই আদালত অত্যন্ত স্পষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন।
সাপ্তাহিক : আপনি কি মনে করছেন যে, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলবে?
সাখাওয়াত হোসেন : উত্তর বের করতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এই ঘটনার কারণ বের করতে হবে। এখন হয়ত করতে পারছে না ঠিক, কিন্তু পরবর্তীতে বের হবে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ, এখানে কেবল একটি পক্ষ নেই। ভুক্তভোগীদের স্বার্থে, আসামিদের স্বার্থে, সর্বোপরি দেশের স্বার্থে এর কারণ বের করতে হবে। কারণ হচ্ছে, জাতীয় নিরাপত্তার কথা আসলেই বিডিআর-এর এই ঘটনা সামনে আসবে।
সাপ্তাহিক : হত্যাকাণ্ডের বিপরীতে দাঁড়িয়ে কথা বললে প্রতিটি বিদ্রোহের পেছনেই ন্যায্যতা থাকে। আপনি নিজেও ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের কথা বললেন। এই প্রশ্নে কী বলবেন?
সাখাওয়াত হোসেন : ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ছিল ভিন্ন পরিস্থিতিতে। সিপাহীরা ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। ব্রিটিশরা দেশীয় কোনো শক্তি ছিল না। তারা এদেশের মানুষের ওপর জোর করে ক্ষমতা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। পাকিস্তান আমলেও তাই হয়েছে। ফলে ওই সময়ের বিদ্রোহগুলোয় এক প্রকার ন্যায্যতা ছিল। জাতীয় স্বার্থে ওই বিদ্রোহগুলোর ঘটনা ইতিহাসে সেইভাবেই জায়গা পেয়েছে।
সাপ্তাহিক : ঔপনিবেশিক মনোভাব, বৈষম্য তো রয়েই গেছে?
সাখাওয়াত হোসেন : জাতীয় স্বার্থের চেয়ে এখানে পরস্পরবিরোধী স্বার্থগুলোই গুরুত্ব পেয়েছে। এটি রাষ্ট্রের দেখা উচিত ছিল। কিন্তু যখন হাত রঞ্জিত হয়েছে তখন কিন্তু ন্যায্যতার প্রসঙ্গ ম্লান হয়ে যায়। এরকম একটি বাহিনী ধাপে ধাপে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। দাবি-দাওয়াও সেই ধাপে ধাপেই আদায় করার কথা। এক পর্যায়ে মানা না হলে আরেক পর্যায়ে জানানো হতো। ডিজির দরবারে এসব গুরুত্ব পেত। আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম, তখন সবাইকে বলেছি তোমাদের যা কিছু বলার আছে বলতে পারো। সবাই মন খুলে কথা বলেছে। সব দাবি একেবারে মেনে নেয়া সম্ভব হয়নি। কিছু মেনে নেয়ে বাকিগুলোর জন্য বলতাম এখন টাকার অভাবে সম্ভব হচ্ছে না। পরে দেখা যাবে। সব কিছুরই একটি সিস্টেম আছে। আর ওই দিন এমন কোনো দাবি ছিল না যা সমাধান করা যেত না। আমার মনে হয়, দাবিগুলো উপলব্ধি করার বিষয় ছিল।
সাপ্তাহিক : বিডিআর পরিচালনায় সেনাবাহিনী দায়িত্বে থাকেন। এই কারণে দ্বান্দ্বিক অবস্থা তৈরি হচ্ছে কিনা?
সাখাওয়াত হোসেন : দেখুন, সেনাবাহিনীর কাঠামো এবং বিডিআর (বিজিবি)-এর কাঠামো ভিন্ন। কাজের ধরনও ভিন্ন। এটা মেনে নিয়েই তো চাকরিতে যোগদান করে। আর সেনাবাহিনীর যারা বিজিবিতে গিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন তারা তো এ দেশেরই মানুষ। হতে পারে একই গ্রামের বাসিন্দাও। ভাষাও এক। একে অপরকে বুঝতে পারবে না বিষয়টি তো এমন নয়। এখানে ভুল বোঝানো হয়েছে। ভুল বোঝানোর সুযোগ নিয়েই বিষয়টি বড় করা হয়েছে। একজনকে উস্কিয়ে দিয়ে পরিবেশ ঘোলা করা যেতেই পারে। বৈষম্য যে নেই আমি তা বলছি না। কিন্তু সেই বৈষম্য নিরসনের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া আছে। আপনাকে তো সেই প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে কথা বলতে হবে।
সাপ্তাহিক : বিডিআরে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি এই ঘটনার জন্য কতটুকু দায়ী হতে পারে?
সাখাওয়াত হোসেন : এই সিস্টেম তো আজকের নয়। অনেক আগে থেকেই চলে এসেছে। আমিও তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছি। আমাকে সৈনিকরা আসতেই দিতে চায়নি। আপনি বৈষম্যের কথা বলছেন, বৈষম্য কী সেনাবাহিনীতে নেই। অবশ্যই আছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না যে, কেবল বৈষম্যের কারণেই বিডিআর বিদ্রোহ। বিদ্রোহ করে কী লাভ হলো। তাদের অবস্থার কিন্তু কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। কেবল সংস্থার ক্ষতিই হয়েছে।
সাপ্তাহিক : যেমন?
সাখাওয়াত হোসেন : বিজিবির সদস্যদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়েছে। যাদের ফাঁসি বা যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই সংস্থার কারও না কারও বন্ধু, সহকর্মী। এই ধরনের একটি ঘটনা সবাইকে নাড়া দেয়। আবার দীর্ঘ সময়ের জন্য উদাহরণও হয়ে থাকবে।
সাপ্তাহিক : এই রায়ের মধ্য দিয়ে সমাজের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?
সাখাওয়াত হোসেন : এর সামাজিক প্রভাব তো আছে। পরিবার, আত্মীয়স্বজনের ওপর এর প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। আসামিদের পরিবারকে সমাজের অনেকেই ভিন্ন চোখে দেখতে চাইবে। তবে সরকারের উচিত বিষয়টি সহনশীল মাত্রায় রাখা। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পরিবারের একজন জড়িত থাকতে পারেন। এই কারণে পরিবারের সবাই তো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না।
সাপ্তাহিক : বিদ্রোহের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফোন করেছিলেন বলে উইকিলিকসে প্রকাশ। একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক হিসেবে এ ব্যাপারে কী বলবেন?
সাখাওয়াত হোসেন : উইকিলিকস কী প্রকাশ করেছে আমি জানি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কী কথা বলেছেন তা না শুনে তো মন্তব্য করা যায় না। তবে আপনি যদি ইতিবাচকভাবে বিষয়টি দেখেন তাহলে প্রধানমন্ত্রী এরকম একটি ঘটনার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করতেই পারেন। কারণ ভারতের সঙ্গেই আমাদের সবচেয়ে বেশি সীমানা রয়েছে। সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ মুখোমুখি থাকেন। এলার্ট করতেই পারেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী কথা বললে সেটা বিশেষ সতর্ক অবস্থায় বলবেন। তাদের মধ্যকার কথা তো উইকিলিকস ফাঁস করার কথা নয়।
সাপ্তাহিক : চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। কোথায় যাচ্ছি আমরা?
সাখাওয়াত হোসেন : দেশের বর্তমান সঙ্কট যে কত ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তা সম্প্রতি অন্য দুটি দেশের মতপার্থক্য থেকে স্পষ্ট। দেশের পরিস্থিতি আজ কেবল দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বাংলাদেশের বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবেও গুরুত্ব পাচ্ছে। আমি মনে করি, বাইরের শক্তির এই হস্তক্ষেপ আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর দেউলিয়াপনারই শামিল।
এর পরিণতি যে কী হবে তা আমি অনুমান করতে পারছি না। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা যেটি দাঁড়িয়েছে তা হচ্ছে, মারামারি-হানাহানি গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। এটি অতীতে ছিল না। গ্রামের অনেক জায়গায় পুলিশ পর্যন্ত যেতে পারছে না। এই পরিস্থিতি কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য মোটেও কাম্য নয়।
সাপ্তাহিক : এর সমাধান কোথায়?
সাখাওয়াত হোসেন : ছাড়ের প্রশ্নে দুই দলকে কাছাকাছি পর্যায়ে আসতে হবে। আমি সবসময় বলে এসেছি, সরকারি দলের দায়িত্ব অনেক বেশি। সরকারকে এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে হয়।
সাপ্তাহিক : সরকার তো নির্বাচনী আয়োজনে ব্যস্ত?
সাখাওয়াত হোসেন : আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দল যেভাবে নির্বাচনের আয়োজন করছে তাতে তাদের জন্য আরও ক্ষতির কারণ হয়ে যাবে। এটি একটি গণতান্ত্রিক সংগঠনের নির্বাচন হতে পারে না। বিএনপির কথা আসলেই ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা আসে। বিএনপি নেতা মরহুম সাইফুর রহমান তার বইয়ে লিখে গেছেন, ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হচ্ছে তাদের জন্য সব চেয়ে কলঙ্কময় অধ্যায়। ওই নির্বাচন নিয়ে বিএনপি তো ভালো থাকেনি। আওয়ামী লীগেরও সেই অবস্থা হবে। দীর্ঘ মেয়াদে সংগঠনটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আমি মনে করি।
সাপ্তাহিক : তাহলে এই অবস্থার শেষ কোথায়?
সাখাওয়াত হোসেন : আলোচনায় আসতে হবে। রাষ্ট্রপতির ভূমিকা এখনও শেষ হয়নি। তিনি সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদের অধিকারী। তার একটি ভূমিকা সবাই প্রত্যাশা করতে পারে। এখন ছাড়ের প্রশ্নটি হার-জিতের প্রশ্নে দাঁড়িয়েছে। সরকারকেই ছাড়ের প্রশ্নে এগিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী টেলিফোনে বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে আরেকবার কথা বললে দোষের কিছু আছে বলে মনে করি না।
সাপ্তাহিক : সরকার সেই ছাড় দেবে বলে মনে করেন?
সাখাওয়াত হোসেন : এটিই হচ্ছে ভয়ের কথা। সরকার হার্ডলাইনে গিয়ে কী অর্জন করবে তা আমরা বুঝতে পারছি না। মামলা, গ্রেপ্তার করে সমাধান আসে না। সরকারের লোকজন নানা ধরনের কথা বলে পরিস্থিতি আরও জটিল করছে। আওয়ামী লীগের মতো একটি দল এমন কঠোরতা অবলম্বন করে বিশেষ সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয় না। এই জন্যই আমি বলেছি, সমাধানের রাস্তা বন্ধ নয় বরং পরিষ্কারের জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। অন্যদিকে হরতালও কোনো সমাধান নয়। বিরোধী দলকে দাবি আদায়ের জন্য সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় কর্মসূচি দিতে হবে। দেশ, দেশের মানুষকে জিম্মি করে কোনো দাবি আদায় করা যায় না। হরতালের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টেও কোনো কথা হয় না। এটি অবাক হওয়ার মতো ঘটনা। কারণ, হরতালকে হাতিয়ার হিসেবে সবাই ব্যবহার করতে চায়। আজ বিএনপি করছে। ২০০৬ এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ করেছে। এ কারণেই যৌথভাবে হরতালের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার সাহস নেই দলগুলোর।
সাপ্তাহিক : সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে নির্ভর করে কথা বলা হচ্ছে। এই নির্ভরতা কতটুকু যৌক্তিকতা পায়?
সাখাওয়াত হোসেন : আপনাকে দেখতে হবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন কয়টি নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। আমরা দায়িত্বে থেকে ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করেছি। সরকারের এককভাবে কৃতিত্ব নেয়ার কিছু নেই। আপনাকে এখন নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিয়ে কথা বলতে হবে। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা আরও কাটছাঁট করা হচ্ছে। সে ব্যাপারে কেউ কোনো কথা বলছে না।
সাপ্তাহিক : যেমন?
সাখাওয়াত হোসেন : নির্বাচনকালীন সময়ের ৯০ দিন তো সরকার নিজেই খেয়ে ফেলল। এ ব্যাপারে কমিশনের কোনো কথা শুনতে পাইনি। আমাদের সময় নির্দিষ্টভাবে কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। সে ব্যাপারে আর কোনো উদ্যোগ নেই। সবাই নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার কথা বলছেন। কিন্তু কীভাবে করা হবে সে ব্যাপারে কোনো কথা নেই। পার্লামেন্টে তো এ ব্যাপারে কথা হতে পারত।
যখন বিরোধী দল ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাতে গেল তখন তো কমিশন বলতে পারত যে আসুন আমরা আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করি। তা কিন্তু করেননি।
সাপ্তাহিক : আপনি ক্ষমতায় ছিলেন। কমিশনের সত্যিকার ক্ষমতা নিয়ে কী বলবেন?
সাখাওয়াত হোসেন : আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশনকে যথেষ্ট ক্ষমতা দেয়া আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ক্ষমতার প্রয়োগ নিয়ে। আমার মনে হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের নিজেরও উপলব্ধি হওয়া দরকার যে, তারা নির্বাচন করতে পারবে কিনা? কারণ নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সব দলের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের অর্থই হচ্ছে সকলের অংশগ্রহণ। এই দায়িত্ব সরকারের নয়। সরকার নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। আজকে বিরোধী দল বলছে একতরফা নির্বাচন করা হলে প্রতিহত করা হবে। এই অবস্থায় নির্বাচন হলে সাধারণ ভোটার, মহিলা ভোটার, সংখ্যালঘুরা কেউই ভোট কেন্দ্রে যাবে না।
কমিশন রাষ্ট্রপতিকে বলবে যে, নির্বাচন করা আমার সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন্তু এই এই কারণে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। তখন রাষ্ট্রপতি যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা না নিলেও নির্বাচন কমিশনের জবাবদিহি করার সুযোগ থেকে গেল।
সাপ্তাহিক : সংসদ অধিবেশনের মেয়াদ আবারও বাড়ানো হয়েছে। সরকার নির্বাচনের দিকেও যাচ্ছে…
সাখাওয়াত হোসেন : এই বিষয়টিই উদ্বেগের। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশন কোনো কথা বলছে না। ৯০ দিনের অনেক দিন চলে গেল। কমিশন সরকারকে বলছেন না যে, তার সময় কোথায়? স্পিকারকেও বলছে না। সংসদ চললে নির্বাচন করবে কীভাবে, সে ব্যাপারে এখনও কোনো বক্তব্য পেশ করেনি কমিশন।
সাপ্তাহিক : কীভাবে পরিষ্কার করা যেতে পারে?
সাখাওয়াত হোসেন : নির্বাচন কমিশন তার অবস্থান জাতির উদ্দেশে পরিষ্কার করতে পারে। তাদের কী করার কথা এবং কেন তা করতে পারছে না এটি বলা জরুরি। ২০১৪ সালে ভারতে নির্বাচন। গত সপ্তাহে সে দেশের নির্বাচন কমিশন রাহুল গান্ধীকে নোটিশ করে বলেছে, যে আপনি সম্প্রতি এক সমাবেশে নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে যা বলেছেন তা সঠিক নয়। আগামী সাত দিনের মধ্যে আপনাকে এ ব্যাপারে জবাব দিতে হবে। তাদের নির্বাচনের তফসিলই ঘোষণা হয়নি। আমাদের বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালীন সময়ের মধ্যে অবস্থান করেও কী এমন নোটিশ করতে পারবে।
সাপ্তাহিক : ভারতের নির্বাচন কমিশন তো শক্তিশালী?
সাখাওয়াত হোসেন : ভারতের নির্বাচন কমিশনের চেয়ে আমাদের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা অনেক দেয়া আছে। মূলত ক্ষমতা প্রয়োগ করার সুযোগ দেয়া হয় না।
সাপ্তাহিক : পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলেও তো সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতেই হবে?
সাখাওয়াত হোসেন : সরকার নিজেই সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। সরকার যে সংবিধানের কথা বলছে, সেই সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা আছে যে, মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু সরকার এখনও বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করছে। প্রকল্প উদ্বোধন করতে গিয়ে ভোট চাইছে। আর অন্যদের কোনো খবরই নেই। এখন ২৪ জানয়ারি পর্যন্ত যদি অধিবেশন চলে এবং এই অবস্থায় আমি যদি দায়িত্বে থাকতাম তাহলে কোনোভাবেই নির্বাচন সম্পন্ন করার কথা ভাবতে পারতাম না। এই পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।
সাপ্তাহিক : সংবিধানে সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচনের কথা বলা আছে।
সাখাওয়াত হোসেন : সংবিধানের ব্যাপারে আমি বিস্তারিত না জানলেও এতটুকু বলতে পারি যে, সরকার এখন নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন সময়ের মধ্যে আছে। নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হয়নি সেটা রাজনৈতিক ব্যর্থতা। কিন্তু এই সময়টুকুতে কমিশনের যে ক্ষমতা তার প্রয়োগও আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সংসদ অধিবেশন বহাল রেখে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না।
সাপ্তাহিক : তবুও নির্বাচন…
সাখাওয়াত হোসেন : সংসদ চললে নির্বাচন কীভাবে হবে। নির্বাচন কমিশনের এ ব্যাপারে কোনো পরিষ্কার বক্তব্য নেই। সঙ্কট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
সাপ্তাহিক : এমন সঙ্কটময় অবস্থায় সেনাবাহিনীকে গুরুত্ব দিয়ে অনেকেই কথা বলছেন। আপনি কী মনে করছেন?
সাখাওয়াত হোসেন : আমার মনে হয় সেনাবাহিনী বারবার এই সঙ্কটের মধ্যে এসে নিজেদের অবস্থান বিতর্কিত করবে সেই মুড হয়ত নেই। সঙ্কট তৈরি করেছেন রাজনীতিবিদরা। আর বারবার তা মোকাবেলা করতে হবে সেনাবাহিনীকে তা তো হতে পারে না।
সাপ্তাহিক : যদি পরিবেশ পরিস্থিতি করে?
সাখাওয়াত হোসেন : আমি আবারও বলছি, সেনাবাহিনী বা পুলিশ বাহিনী সমস্যা তৈরি করেনি। আপনি কেন তাদের এখন সমাধানের জন্য ডাকবেন।
সাপ্তাহিক : তাহলে শেষ পরিণতি কী হতে পারে?
সাখাওয়াত হোসেন : সেই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গড়াবে। ইতোমধ্যেই বিশ্ব দরবারে চলে গেছে। কারণ বর্তমান বিশ্বে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে একে অপরের সহযোগী। এ কারণে যে কোনো অঞ্চল নিয়ে বিশ্বের সবাই নজর রাখে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ অনেক বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে, স্বাক্ষর করেছে। এই স্বাক্ষরের মধ্য দিয়েই আপনি অন্যকে কথা বলার অধিকার দিয়েছেন।
সাপ্তাহিক : তার মানে বৈশ্বিক হস্তক্ষেপ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই?
সাখাওয়াত হোসেন : বৈশ্বিক হস্তক্ষেপ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। আমার বিস্তারিত বলার কিছু নেই।
(14/11/2013)

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৪:৩৩ | বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com