| বুধবার, ১৫ জুলাই ২০২০ | প্রিন্ট
ইদানীং সিলেট সহ আপনার এলাকার বন্যা পরিস্থিতি সবার মত আমাকেও মনোকষ্ট ও মর্মাহত করেছ। কিভাবে আমি ‘মর্মাহত ’ হয়েছি তা ব্যাখ্যা করব তবে তার পৃর্বে নদী,খাল বা দাড়া ভরাট ও অবৈধভাবে দখল করলে “পানি আইন” কি বলে তা জেনে নেই।
পানি আইনের ১৩ নম্বর ধারায় জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধাদান কল্পে ভরাট অপসারণ করতে বলা হয়েছে, আইনের ২০ নম্বর ধারায় জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিতকরণ করতে বলা হয়েছে। পানি আইনের ২২ নম্বর ধারায় জলাধার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে। পানি আইনে এতই যখন নির্দেশনা তবে গ্রামের অধিবাসীরা কি পাচ্ছি? ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই নয়।
আবার, ‘পরিবেশ আইন ১৯৯৫ এবং প্রাকৃতিক জলধারা সংরক্ষণ আইন ২০০ বিধান অনুসারে খাল (বা দাড়া)ভরাট আইন বহির্ভূত ও বেআইনি। তখন প্রশ্ন দাঁড়ায় যারা বেআইনিভাবে দাড়া দখল ও ভরাট করেছেন তারা কি আইনের উর্দ্বে?
নিজে নিজেকে প্রশ্ন করুন এবারের বন্যায় আমার বাড়ী, ঘর, খামার ও কৃষিজমি তলিয়ে গেল কেন? আমি কি বিগত ১০ বছরেও এরকম দুর্যোগ দেখেছি আমার এলাকাতে? বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হওয়ার জন্য যে নালা, খাল ও দাড়া রয়েছে প্রতিটি গ্রামের আশপাশে তা কি আদৌ আছে? নাকি দখল হয়ে গেছে? আমি জানি যখন আপনে নিজে নিজের সাথে প্রশ্নবানে জর্জরিত করবেন তখনই পেয়ে যাবেন মূল রহস্য।
এবার আমি প্রত্যাক্ষ করেছি সিলেটের কামালবাজার বা তার আশপাশের এলাকা যেখানে আগে এরকম বন্যার ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি যা বিগত কয়েক বছর যাবত হয়ে যাচ্ছে। তবে হা, নির্দিদ্বায় বলা যায় আগামীতে এই বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। কারণ বৃষ্টির ফলে যে পানির সৃষ্টি হয় তা প্রবাহিত বা নেমে যাওয়ার জন্য যে “খাল বা দাড়া” রয়েছে তা অবৈধভাবে দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। খাল উদ্ধার ও খনন এখন সময়ে দাবি।
আমার দেখা ২০০৪ সালের পর এবারের বন্যা অপ্রত্যাশিত একটি দুর্যোগ যা সরাসরি মানুষ দ্বারা সৃষ্টি। আমাদের যত খাল ও দাড়া রয়েছে তার সবগুলো অবৈধ দখল ও ভরাট করা হয়েছে, যারপেক্ষিতে বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি তার স্বাভাবিক প্রবাহে নদীতে বা হাওর ও বীলে নামতে পারে না। ফলে সামন্য বৃষ্টিপাতে ফসলীজমিতে জলাবদ্ধতায় প্রায় কয়েক কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়ে যায়। কতিপয় ভূমিগ্রাসী এলাকার খাল দখল করে আমাদের পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে ঢেলে দিচ্ছে যা ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত।
২০১০ সালে মহামান্য হাইকোর্টে একটি যুগান্তাকারী রায় দিয়েছিল ঢাকার তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীর সংযোগকারী হাইকার খাল দখল, মাটি ভরাট ও নির্মাণ কাজ বন্ধ ও উদ্ধার করার জন্য। হাইকোর্টের এই আদেশ থেকে একটি বিষয় ক্লিয়ার কেউ যদি সরকারী খাল বা দাড়া দখল করে থাকেন তবে তা পুনরুদ্ধার করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে।
সিলেট ও আপনার আশপাশের এলাকাজুড়ে বর্ষা মৌসুমে অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও অকাল বন্যা সৃষ্টি হয়। এতে কৃষকদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এর মূল কারণ খাল-নর্দমা বা ড্রেন, ম্যানহোল ইত্যাদির মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হতে না পারা। যে স্থান দিয়ে পানি প্রবাহিত হবে, সেই খালগুলো দখলের কারণে সরু হয়ে গেছে। ফলে পানি নামতে পারছে না। খাল বা দাড়া দখল ও ভরাট করার ফলে কৃষিজমি সোনালী ফসল নষ্ট হয়ে যায় প্রতিবছর। প্রশ্ন হলো যারা অবৈধভাবে খাল বা দাড়া ভরাট করে দখল করেছেন তাদের চোখে এই অপ্রত্যাশিত জলাবদ্ধতা পড়ে না? নাকি দেখেও না দেখার ভান করছেন, যদি তাই হয় তবে ভুল করবেন, মানুষ খুবই সচেতন তারা সময়মত তাদের নাগরিক সুবিধা আদায় করে নিবে। সময় এসেছে খাল দাড়া দখল মুক্ত করে তা খনন করার। আমরা আমাদের অধিকার নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রে বাঁচতে চাই। যারা তা হস্তক্ষেপ করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করবেন তার খেসারত হবে ভয়াবহ।
বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ তা যেকোনো সময় হতেই পারে কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা মানুষ দ্বারা সৃষ্টি একটি দুর্দশা। এই দুর্দশার পেছনে অবশ্যই কেউ না কেউ জড়িত, আমার কাছে এমন চমকপ্রদ তথ্য রয়েছে যা আপনে জানলে চমকে উঠবেন।রাগ, মান, অভিমান ও ক্ষোভে ফেটে পড়বেন, বিক্ষোভ করবেন কিন্তু আমরা কি আদৌ তা চাই? না, এখন নাই বলি কিন্তু নাম ধরে ধরে বলে দিব বৃহত্তর কামালবাজার এলাকায় বন্যা প্লাবিত হওয়ার জন্য কারা দায়ি।
এখন আবার অনেকে ভাবছেন বন্যা হয়েছ ত কি হয়েছে এটা ত সব এলাকাতে হচ্ছে এখানে কি করোর হাত রয়েছে, এটা নিয়ে বলার কি রয়েছে। হা আপনে একদম মনের কথা ধরেছেন। কিন্তু আপনাদের জানা উচিত কেন আমরা বার বার বন্যায় প্লাবিত হই?
পৃথিবীর আর অনেক রাষ্ট্র রয়েছে যাদে ভূমি প্রায় সমূদ্রের লেবেলের প্রায় সমান, কিন্তু তারা ত এই দুর্যোগে পড়ে না, তবে আমরা কেন এর শিকার হই? হা প্রশ্ন করুণ, গোমর বেরিয়ে আসবে।
আপনার আমার এলাকার বন্যার চিত্র বদলে দিতে পারে ড্রেনেজ সিস্টেম বা খাল। কিন্তু আশ্বর্যজনক হলেও সত্য আমরা কি সেই সুবিধা পাচ্ছি বা আমাদের জনপ্রতিনিধিরা সেই সুযোগ করে দিচ্ছেন? জনপ্রতিনিধিদের মূল কাজ কি? আসলে তারা নিজেরাই জানে না তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে।
প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক যাকে আমি খুবই সম্মান ও শ্রদ্ধা করি মনভরে। এই ব্যাক্তিটি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন খাল- নর্দমা বা ড্রেনেজ কি পরিমাণ গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে একটি শহরকে বন্যা থেকে রক্ষা করতে। তাই তিনি ঢাকা শহরকে বন্যা মুক্ত রাখার জন্য খাল উদ্ধার ও খননে আটঘাট বেধেঁ মাটে নেমেছিলেন।
আবার সিলেটের মেয়র আরিফুল হকের কথা বলা যায়, তিনি সিলেট নগরিতে খাল উদ্বার ও খনন করে জলাবদ্ধতা অভিশাপ থেকে রক্ষা করে যাচ্ছেন। এই মানুষগুলোকে স্যালুট জানাই, তারা সফল জনপ্রতিনিধি। মানুষের দুর্ভোগ তাদের হৃদয় স্পর্শ করেছে। বন্যার প্লাবন কি পরিমাণ অভিশাপ সাধারণ মানুষের জন্য তা তারা সহজে উপলব্দি করতে পেরেছেন। খাল বা দাড়া নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে কীভাবে বাঁচাবে তা তারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন।
আমি শুরু করেছিলাম বন্যায় ব্যাতিত হওয়ার কারণ নিয়ে, যে বন্যার প্লাবন আমার হৃদয়কে কম্পিত করেছে। হাজার হাজার মানুষ আজ পানিবন্দী তারা বন্যার কবলে পড়ে হাপিয়ে উঠছে। মানুষ দিশেহারা, কি বলবে, কার কাছে যাবে, এই বিপদ কীভাবে কাঠিয়ে ওঠবে, চিন্তার অন্ত নেই। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে বন্যা ডুবে যায় মাট ঘাট ও ফসলিজমি।
বন্যায় কমবেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে কৃষকরা। কৃষক হচ্ছে একটি রাষ্ট্রের প্রাণ তারা দেশকে বাঁচিয়ে রাখে। আমরা ত অনেক অর্থনৈতিক হিসাব রাখি না বা রাখার চেষ্টা করি না। কৃষকদের উৎপাদনে রাষ্ট্রের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী হয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে কৃষকদের দেওয়া হয় প্রথম শ্রেণির নাগরিক সুবিধা। তারা সর্বাধিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে কৃষিকাজ সম্পাদন করে। কিন্তু আমাদের দেশে তাদের কি সেই সম্মান যতাযত দেওয়া হয়?
বন্যা বা বৃষ্টির পানি থেকে বাচঁতে হলে খাল দাড়া বা নদী দখল মুক্ত করে পুনরায় খনন করতে হবে। মনে রাখবেন স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে আপনার যে অধিকার রয়েছে তা ছিনিয়ে আনতে হবে, রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিধা ভোগ করা আপনার সাংবিধানিক অধিকার। অন্যথায় আপনাকে তিলে তিলে মেরা ফেলবে শোষিত পুজিঁবাদী দালাল।
মোঃ হাফিজুর রাহমান
অনলাইন এক্টিভিষ্ট
যুক্তরাজ্য প্রবাসী
Posted ১৫:২৩ | বুধবার, ১৫ জুলাই ২০২০
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin