| রবিবার, ০১ জুন ২০১৪ | প্রিন্ট
১ জুন: রাজনৈতিক সমঝোতার বেড়াজালে আটকে আছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা। রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা না হলে এ খাতের অনিশ্চয়তা কাটবে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরও অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। সরকারী বিনিয়োগ বাড়লেও বেসরকারী ও ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগে আস্থা ফিরেনি। ফলে কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)।
সংস্থাটি বলছে, অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা কমলেও অনিশ্চয়তা কাটেনি। এতে ব্যবসায়ীরা মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। একটি সমঝোতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেই এ আস্থার অভাব কেটে যাবে। সিডিপির ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন মত প্রকাশ পেয়েছে।
রবিবার দুপুরে ব্র্যাক ইন সেন্টারে বাংলাদেশ অর্থনীতির ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তৃতীয় অন্তবর্তীকালীন পর্যালোচনা মূলক প্রতিবেদন প্রকাশে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য তুলে ধরেন তিনি। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চিয়তার কারণে গত এক দশক ধরে যে এক শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সেটি ধরে রাখা যাবে না। সমঝোতামূলক রাজনীতির অন্তবর্তীকালীন দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা ছাড়া ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের অনিশ্চয়তা কাটছে না। ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আলাপ-আলোচনার জায়গাগুলো সংকুচিত হচ্ছে। আলোচনার ক্ষেত্র সৃষ্টির সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। ফলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক দূর্বলতায় প্রবৃদ্ধি হার কমে যাচ্ছে। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার জাতীয় আকাঙ্খা ব্যাহত হবে।
প্রতিবেদন বলা হয়, তুলনামূলক সামষ্টিক অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীলতা থাকলেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি তুলনামূলক বেশি, উৎপাদন পর্যায়ে পণ্যে দাম না পেলেও ভোক্তা পর্যায়ে বেশি। সরকারের ব্যয় বাড়ছে, উন্নয়ন বর্হিভূত খাতে ব্যয় বাড়ছে, ফলে উন্নয়ন খাতে ব্যয় কমছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতা কারণে অবকাঠোমা ভেঙ্গে পড়েছে। তবে খাদ্যবর্হিভূত খাতে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিটেন্স প্রবাহ ইতিবাচক পর্যায়ে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরে অর্থনীতি বড় ধাক্কার সম্মুখিন হয়েছিল। উৎপাদন ও সেবামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ড বাধার সম্মুখিন হয়েছিল। পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে ৬.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। এটা হলেও বাজেটে প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি ৭.২ শতাংশ থেকে কম হবে। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আর্ন্তজাতিক বাজার বাড়ছে। এই সুযোগ কাজে লাগানো দরকার। অবকাঠামো এখন বাংলাদেশের জন্য মূল সমস্যা। অবকাঠোমো উন্নয়ন করা সরকারের মূল দায়িত্ব। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হতে হলে প্রবৃদ্ধি হতে হবে ৮ থেকে ১০ শতাংশ।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে আমদানি নেতিবাচক ছিল। পরের তিন মাসে সে অবস্থা কাটিয়ে ১১ শতাংশ বেড়েছে। মার্চ মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে। এক মাসে ক্রেন এসেছে ৪৩৩ মিলিয়ন ডলারের। মোট আমদানির ৯৩.৫ শতাংশ এসেছে ১৭টি আইটেম থেকে। কম শুল্ক আছে এমন আইটেমে টাকা পাচারের সুযোগ বেশি থাকে। ক্রেনে ২ শতাংশ শুল্ক রয়েছে এবং বাকি ২টি পণ্যে শুন্য শতাংশ শুল্ক।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সরকারী বিনিয়োগ বাড়ছে, বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, ব্যাংক সুদের হার কমানো যাচ্ছে না, বেসরকারী খাত স্বল্পসুদে ঋণ পেতে পারে সেদিকে নজর দিতে দিতে, বিদ্যূতের প্রকৃত উৎপাদনের সঙ্গে সক্ষমতার বড় পার্থক্য হচ্ছে। সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি উৎপাদন না করতে পারলে ভোক্তার উপর তার অভিঘাত এসে পড়ে। ২০১০ সালে কুইক রেন্টাল আসলে তিন বছরের মধ্যে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন ২০১৮ পর্যন্ত টেনে নেওয়া হয়েছে। যাদের সময় বাড়ানো হচ্ছে তাদের সঙ্গে কী মূল্যে নির্ধারণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্থায়ী খরচ উঠে গেছে। সেই কারণে মূল্য কম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হচ্ছে না্। এডিপির মধ্যে জ্বালানি খাতে ১৪টি প্রকল্প ছিল। এর মধ্যে ২টি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুতর দাম আরো কমতো।
প্রতিবেদনে প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারকে আরো শক্তিশালী, অবকাঠোমো উন্নয়নে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও সুশাসন নিশ্চিত করাসহ ব্যক্তিগাতে প্রণোদণা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালাগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, তৌফিক ইসলাম খান, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Posted ১৩:১০ | রবিবার, ০১ জুন ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin