শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘সবাই আমাকে এখন ইয়াবাখোর বলে ডাকে’

  |   শনিবার, ০৯ জুন ২০১৮ | প্রিন্ট

‘সবাই আমাকে এখন ইয়াবাখোর বলে ডাকে’

ডেস্ক রিপোর্ট : ডাক্তারও হলাম, ইয়াবাখোরও হলাম। সবাই আমাকে এখন ইয়াবাখোর বলে ডাকে। আমার পাঁচ বছরের ফুটফুটে কন্যা সন্তানটার দিকে তাকালে নিজের উপর ঘৃণা হয়। বাচ্চাটি যখন বড় হয়ে বুঝবে, ওর বাবা একজন চিকিত্সক হয়েও ইয়াবা আসক্ত তখন কতটাই না কষ্ট পাবে। ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল, আমি বড় হয়ে একজন ভালো চিকিত্সক হবো। আর আমি হয়েছি ইয়াবাখোর। বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি। স্ত্রীর মুখের দিকে তাকাতে লজ্জা লাগে। আমি এ জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। ইয়াবাসক্ত একজন চিকিত্সক মাদক নিরাময় কেন্দ্রে প্রতিবেদককে কথাগুলো বলছিলেন গত সপ্তাহে।

দীর্ঘ দিন রাজধানীর একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিত্সা নিচ্ছেন ওই চিকিত্সক। আগের চেয়ে অনেকাংশে তিনি সুস্থ আছেন বলেন জানান তার চিকিত্সকরা। তবে সুস্থ হয়েও ইয়াবা ছাড়তে পারছেন না বলে জানান আসক্ত চিকিত্সক। বললেন, ইয়াবা দেখলে মাথা ঠিক থাকে না। আমি ছাড়তে চাইলেও ইয়াবা আমায় ছাড়তে চায় না। যেদিকে তাকাই, চোখের সামনে শুধু ইয়াবা দেখি। মনে হয়, আমি ইয়াবার মাঝে ডুবে আছি।

তিনি আরো বলেন, ছাত্র জীবনে বন্ধু-বান্ধবের পাল্লায় পড়ে তিনি ইয়াবা আসক্ত হয়েছেন। বর্তমানে তার ইয়াবা আসক্ত তিন বন্ধুর মধ্যে একজন ব্যবসায়ী, একজন একটি বহুজাতিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, অন্যজন চাটার্ড একাউন্টে পড়াশোনা শেষ করেছেন। ইয়াবা আসক্ত হওয়ার কারণে এদের দুজনের স্ত্রী তাদের ত্যাগ করেছেন।

এসসিপিএস প্রথম পর্বে আছেন ওই চিকিত্সক। স্ত্রীও একজন ডাক্তার। তাদের আছে ফুটফুটে সুন্দর একটি কন্যা সন্তান। কিভাবে ইয়াবা আসক্ত হলেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানালেন, মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনার সময় তিনি ইয়াবা আসক্ত হন। প্রথমে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক সিনিয়র ভাইয়ের কাছে ইয়াবা সেবন করা শেখেন। ওই সিনিয়র ভাই তখন নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতেন। ইয়াবা সেবনের উপকারিতা সম্পর্কে ওই সিনিয়র ভাই তাকে বলেন, ইয়াবা খেলে চোখে ঘুম আসে না। সারা রাত জাগলেও শরীরে কোনো ক্লান্তি থাকবে না, চোখও বুঝে না, ক্লান্তিও ধরা পড়ে না। পড়াও থাকে মনে। সে নিজেও প্যাকটিস করেছে। ফলও নাকি মিলেছে। এজন্য তাকেও পরামর্শ দিয়েছে। কথাটি তাকে গোপন রাখতে বলা হয়েছে। ওই বড় ভাই তাকে আসরে আসতে বলে। তারা প্রতিদিন আসর বসায় সবাই মেডিক্যালের শিক্ষার্থী। পরীক্ষা আসলেই আসরে লোকজনের সংখ্যা বেড়ে যায়। তবে কোথায় পাবেন ইয়াবা এমন প্রশ্ন করলে ওই ভাই তাকে বলে, ওইসব নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।

এভাবে তিনি ইয়াবা আসক্ত হয়ে ওঠেন। চিকিত্সক হয়েও গত দুই বছর ধরে চিকিত্সা নিচ্ছেন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে। ডাক্তার হয়েও ছাড়তে পারেননি নেশাদ্রব্য ইয়াবা। এখন চিকিত্সায় তার মন বসে না। ইয়াবা ছাড়া অন্য কিছু ভালো লাগে না। তবে ইয়াবা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চান তিনি। বললেন, আমি ভালো হতে চাই। বহু চেষ্টা করেও ছাড়তে পারেছি না। আমি স্বাভাবিক থাকতে পারি না। ইয়াবা আমাকে সব সময় টানছে।

ইয়াবা আসক্ত ডাক্তারের ভাষ্যে, চিকিত্সা পেশায় তার মতো এ রকম অনেক ডাক্তার আছেন যারা ইয়াবা আসক্ত। ছাত্র জীবনে তার মতো অনেকে না বুঝে ইয়াবা সেবন করে পেশায় ঢুকে ছাড়তে পারেন না। ফলে পেশায় তাদের মনোযোগ থাকে না। এমনকি ভুল চিকিত্সার অন্যতম কারণ এটি বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, আমি না বুঝে ইয়াবা সেবন করেছি। আমি চাই না আমার মতো কেউ এ পথে পা বাড়াক। তার মতো ভুল করে কোনো মেডিক্যালের শিক্ষার্থী যেন ইয়াবা সেবন না করে সে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ইত্তেফাক

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৩:০০ | শনিবার, ০৯ জুন ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com