শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সক্ষমতার অভাবে কাটছাঁট ২৮৭৭৬ কোটি টাকা

  |   মঙ্গলবার, ০৮ মে ২০১৮ | প্রিন্ট

সক্ষমতার অভাবে কাটছাঁট ২৮৭৭৬ কোটি টাকা

ডেস্কে রির্পোট: চলতি অর্থবছরে (২০১৭-১৮) ৪ লাখ ২৬৭ কোটি টাকার উচ্চাভিলাষী বাজেট ঘোষণা করলেও শেষ পর্যন্ত তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কমানো হয়েছে ২৮ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। এতে সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। সরকারের সংশ্লিষ্টদের সক্ষমতার অভাবে মূলত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। চলতি বাজেটের ব্যয় কমানোর পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও কমানো হয়েছে ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে সংশোধিত বাজেটের আকার চূড়ান্ত করা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

চলতি বাজেট সংশোধনের পর দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরের তুলনায় কাটছাঁটের পরিমাণ সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত বাজেটে (২০১৬-১৭) কমানো হয়েছিল ২৩ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা।

অবশ্য বাজেট কাটছাঁটের আভাস আগেই দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রাক-বাজেট বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১১ থেকে ১২ শতাংশ রাজস্ব আদায় কম হবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় এনে সংশোধন করা হচ্ছে চলতি অর্থবছরের বাজেট। তিনি আরও বলেছেন, আদায় কম হলেও গত বছরের চেয়ে রাজস্ব ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।

আগামী ৩০ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট পাস করা হবে। বাজেটের আকার ছোট করার বিষয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমাদের ব্যয় করার সক্ষমতার অভাব রয়েছে। এ দুর্বলতা কাটাতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে আগের তুলনায় এখন ব্যয় করার সক্ষমতা কিছুটা বেড়েছে। তিনি বলেন, বাজেট কাটছাঁট একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতিবছর এটি প্রয়োজনে কমানো হয়।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের উচিত বাস্তবায়নযোগ্য বিষয়টি মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়ন করা। শুধু ব্যয়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে আয়কে চাপের মুখে ফেলা হচ্ছে। এতে পুরো বাজেট প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। সেদিক বিবেচনা করে আয়ের লক্ষ্যমাত্রাসাপেক্ষে ব্যয় নির্ধারণ করা দরকার। তাহলে বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে। তিনি বলেন, প্রতিবার এ ধরনের কাটছাঁট করায় পুরো প্রক্রিয়ায় এক ধরনের প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে এবং বাজেট প্রণয়নে দুর্বলতা তৈরি করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বাজেটের আয়-ব্যয় ও ঘাটতির হিসাব মেলাতে কয়েকটি খাতে কাটছাঁট করা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে ৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। অপরদিকে সঞ্চয়পত্রের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাড়ানো হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তাও কাটছাঁট করা হয় ৬ হাজার কোটি টাকা।

আরও জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ১৩ শতাংশ। সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের মতে, গত ১ জুলাই থেকে বহুল আলোচিত ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কথা ছিল। আইনটি যথাযথ বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাজেট পাসের আগমুহূর্তে আইনটির বাস্তবায়ন স্থগিত করা হয়। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সার্বিক রাজস্ব আদায়ে।

সূত্র আরও জানায়, মোট রাজস্বের মধ্যে এনবিআরের মাধ্যমে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। তা সংশোধন করে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকার নন-এনবিআর রাজস্ব কাটছাঁট করে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি করবহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। কাটছাঁটের পর সংশোধিত আকারে এটি দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকায়।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিশ্র“তি বেশি থাকলে বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহার করা পুরোপুরি সম্ভব হয় না। ব্যয়ের সক্ষমতা কম থাকায় সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৬ হাজার ২৪ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে। জানা গেছে, বাজেটের ঘাটতি অর্থায়ন মেটাতে ৫১ হাজার ৯২২ কোটি টাকার বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কাটছাঁটের পর সংশোধিত আকার দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা।

সূত্রমতে, ঘাটতি অর্থায়নের আরেকটি বড় উৎস হচ্ছে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ। চলতি বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৮ হাজার ২০২ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত এ খাত থেকেও কমানো হয় ৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। ফলে সংশোধিত ব্যাংকিং খাতের ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২০ হাজার ৪২ কোটি টাকা। এদিকে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার বেশি মাত্রায় ঋণ নিচ্ছে। যে কারণে সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রাও বাড়িয়েছে। বছরের শুরুতে এ খাত থেকে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য স্থির করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নতুন করে ৪৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য স্থির করা হয় সঞ্চয়পত্র থেকে। সূত্র: যুগান্তর

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:৩৩ | মঙ্গলবার, ০৮ মে ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com