| সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
ঢাকা : বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়াত্ত টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ (বিটিভি) পাঁচটি বেসরকারি টিভি স্টেশন তাদের সংবাদ পরিবেশনে তাৎপর্যপূর্ণ মাত্রায় রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট বলে জানিয়েছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যশনাল।
আন্তর্জাতিক এই এনজিও’র অধীনে বিটিভিতে পরিচালিত চলমান এক সংবাদ মনিটরিংয়ে বিষয়টি ধরা পড়েছে, যা ইংরেজি দৈনিক নিউএজ প্রকাশ করেছে।
এনজিওটি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন গণতান্ত্রিক অংশীদারিত্ব এবং সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। মার্কিন দাতা সংস্থা ইউএসএইড এবং ব্রিটিশ দাতা সংস্থা ইউকেএইড এর আর্থিক তহবিলের যোগান দিয়ে থাকে।
এনজিওটি গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়াত্ত বিটিভি এবং পাঁচটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত সব সংবাদ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে। তাদের গবেষণার ফলাফল ওয়েবসাইটে একটি ডাটাবেজে প্রকাশ করা হয়। চলতি সপ্তাহে তা সবার জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিটিভিতে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে যত সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে, সেসবের বক্তব্য এবং বিবৃতির বেশিরভাগই নেতিবাচক অথবা বিদ্বেষপূর্ণ।
অন্যদিকে, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যত খবর প্রচার করা হয়েছে, সেসবের বক্তব্য এবং বিবৃতির বেশিরভাগই ইতিবাচক এবং স্তুতিমূলক।
তেমনিভাবে পাঁচটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রচারিত খবরেও রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতা সনাক্ত করেছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যশনাল। তবে তাদের রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতার মাত্রা বিটিভির চেয়ে কিছুটা কম। ওই চ্যানেলগুলোর পরিবেশিত সংবাদে বিএনপি এবং খালেদা জিয়া সম্পর্কে অসংখ্য নেতিবাচক বক্তব্য এবং বিবৃতি প্রচার করা হয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা সম্পর্কে তেমন কোনো নেতিবাচক খবর প্রচার করা হয়নি।
তবে ওই পাঁচ বেসরকারি টিভি চ্যানেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে প্রচারিত সংবাদের বক্তব্য এবং বিবৃতিগুলোর বেশিরভাগই ইতিবাচক ছিল। যে পাঁচটি চ্যানেলকে এই গবেষণার জন্য বেছে নেয়া হয়েছিল সেগুলো হলো- এটিএন বাংলা, চ্যানেল আই, সময় টিভি, এনটিভি এবং একাত্তর।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালেরই চালানো এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, এই পাঁচটি টিভি চ্যানেলেরই সর্বোচ্চ সংখ্যক দর্শক রয়েছে। এনজিওটি তাদের ওই গবেষণায় গণমাধ্যম মনিটরিংয়ের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি ব্যবহার করে। গবেষণায় তারা মোট ছয়জন বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে বিটিভিতে প্রচারিত হাসিনা ও খালেদা সম্পর্কিত সংবাদের বক্তব্য এবং বিবৃতিগুলোতে খালেদার নাম যতবার উল্লেখ করা হয় তার তুলনায় হাসিনার নাম দ্বিগুণেরও বেশিবার উল্লেখ করা হয়েছে। হাসিনার নাম উল্লেখ করা হয় ২৪১ বার। আর খালেদার নাম উল্লেখ করা হয় মাত্র ১০৯ বার।
বিএনপির এই নেতার সম্পর্কে প্রচারিত ৬৭টি বিবৃতির একটিও ইতিবাচক ছিল না। যার মধ্যে ২৭টি ছিল খুবই নেতিবাচক বা বিদ্বেষপূর্ণ। ২৬টি সাধারণভাবে নেতিবাচক। আর বাকি ১৪টি নিরপেক্ষ।
অন্যদিকে, একই সময়কালে আওয়ামী লীগের নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে প্রচারিত ২৫টি বিবৃতির একটিও নেতিবাচক ছিল না। ওসব বিবৃতির ১০টি ছিল খুবই ইতিবাচক বা স্তুতিমূলক। ১২টি ছিল সাধারণভাবে ইতিবাচক আর অবশিষ্ট ৩টি ছিল নিরপেক্ষ।
ওই দুটি রাজনৈতিক দল সম্পর্কে প্রচারিত খবরেও বিটিভি একই রকম আচরণ করে। বিএনপি সম্পর্কে প্রচারিত ১২২টি বিবৃতির মধ্যে ১৫টি ছিল খুবই নেতিবাচক বা বিদ্বেষপূর্ণ। ৮৫টি ছিল সাধারণভাবে নেতিবাচক। আর ২২টি ছিল নিরপেক্ষ।
পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে প্রচারিত ৪২টি বিবৃতির ১০টি ছিল খুবই ইতিবাচক বা স্তুতিমূলক। ২৯টি ছিল সাধারণভাবে ইতিবাচক। আর মাত্র ২টি ছিল নেতিবাচক। তবে মন্তব্যগুলোর কোনোটিই খুবই নেতিবাচক ছিল না। ১টি ছিল নিরপেক্ষ।
এ সময়কালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে খবর প্রচারিত হয় ২২টি। যার মধ্যে ১০টিকে বিবৃতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আবার এর ৯টিই ছিল নেতিবাচক। ১টি ছিল খুবই নেতিবাচক বা বিদ্বেষপূর্ণ।
তিন মাসব্যাপী পরিচালিত ওই মনিটরিংয়ে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতাদের সম্পর্কে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর খবর প্রচারের সময়ও পক্ষপাতদুষ্টতা সনাক্ত করেছে।
সবগুলো চ্যানেলই রাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক নেতাদের সম্পর্কে ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক বিবৃতিই প্রচার করে বেশি। এক্ষেত্রে তারা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি এবং বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে বেশি নেতিবাচক বিবৃতি বা বক্তব্য প্রচার করে।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডাটাবেজ অনুযায়ী, এটিএন বাংলা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইতিবাচক সংবাদ প্রচারের বিপরীতে ৩ গুণ বেশি পরিমাণ নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করেছে (১০/৩২)। অন্যদিকে খালেদা সম্পর্কে প্রচারিত ইতিবাচক খবরের ৮ গুণ বেশি নেতিবাচক খবর প্রচার করেছে (৬/৫২)।
এনটিভিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্কে ৫৫টি নেতিবাচক এবং ১৬টি ইতিবাচক বিবৃতি প্রচার করা হয়। সেখানে খালেদা জিয়া সম্পর্কে ৪৩টি নেতিবাচক এবং মাত্র ৩টি ইতিবাচক বিবৃতি প্রচার করা হয়।
চারটি প্রাইভেট চ্যানেলের মধ্যে চ্যানেল আই এবং একাত্তর খালেদার সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ নেতিবাচক খবর প্রচার করে। এনজিওটির গবেষণায় দেখা যায়, চ্যানেল আই বিরোধীদলীয় নেতা সম্পর্কে ৫৭টি নেতিবাচক মন্তব্য প্রচার করে। আর ইতিবাচক মন্তব্য প্রচার করে মাত্র ৩টি (২০:১ অনুপাতে)। আর একাত্তর ৪৫টি নেতিবাচক মন্তব্যের বিপরীতে মাত্র ১টি ইতিবাচক মন্তব্য প্রচার করে (১৫:১ অনুপাতে)।
অন্যদিকে, দুটি চ্যানেলই শেখ হাসিনা সম্পর্কে যে নেতিবাচক ও ইতিবাচক মন্তব্য প্রচার করে তার অনুপাতের ব্যবধান খুবই কম। চ্যানেল আই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে ২৪টি নেতিবাচক খবরের বিপরীতে ১৬টি ইতিবাচক মন্তব্য প্রচার করে (১.৫:১ অনুপাতে)। আর একাত্তর ৩৯টি নেতিবাচক মন্তব্যের বিপরীতে ১৫টি ইতিবাচক মন্তব্য প্রচার করে (২.৫:১ অনুপাতে)।
সময় টিভি শেখ হাসিনার সম্পর্কে ২০টি নেতিবাচক মন্তব্যের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১৬টি ইতিবাচক মন্তব্য প্রচার করে। অন্যদিকে চ্যানেলটি খালেদার সম্পর্কে ৪৮টি নেতিবাচক মন্তব্যের বিপরীতে মাত্র ৭টি ইতিবাচক মন্তব্য প্রচার করে।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্পর্কে খবর প্রচারের ক্ষেত্রেও চ্যানেলগুলো বিএনপির নেতাদের সম্পর্কেই বেশি নেতিবাচক খবর প্রচার করে।
বিএনপির নেতাদের সম্পর্কে মন্তব্য প্রচারের ক্ষেত্রে এটিএন বাংলা ৯৪টি নেতিবাচক মন্তব্যের বিপরীতে মাত্র ৯টি ইতিবাচক মন্তব্য প্রচার করে; এনটিভি ৭৯টি নেতিবাচক মন্তব্যের বিপরীতে ৭টি ইতিবাচক মন্তব্য প্রচার করে; চ্যানলে আই ৯৬টির বিপরীতে ৪টি; সময় টিভি ৮৮টির বিপরীতে ৬টি এবং একাত্তর ৬৭টি নেতিবাচক মন্তব্যের বিপরীতে মাত্র ৩টি ইতিবাচক মন্তব্য প্রচার করে।
তবে জরিপে দেখা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে বিটিভি যতটা নেতিবাচক মন্তব্য প্রচার করেছে তার চেয়ে অনেক কম নেতিবাচক মন্তব্য প্রচার করেছে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো। এটিএন বাংলা তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে যে ৬০টি বিবৃতি এবং মন্তব্য প্রচার করে তার মধ্যে ৫৩টিই ছিল খুবই ইতিবাচক। আর মাত্র ৪টি ছিল নেতিবাচক বা খুবই নেতিবাচক।
একাত্তর টিভি তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে ৪১টি ইতিবাচক মন্তব্য প্রচার করে এবং মাত্র ৬টি নেতিবাচক মন্তব্য বা বিবৃতি প্রচার করে।
Posted ১২:০০ | সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin