শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেরপুরে হাঁসের খামারে সফলতা

শাহরিয়ার মিল্টন   |   শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

শেরপুরে হাঁসের খামারে সফলতা

শেরপুর : হাঁসের খামার করে সফলতা পেয়েছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার ধুকুড়িয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান বিদ্যুৎ। বর্তমানে তিনি হাঁসের খামার থেকে মাসে যে টাকা আয় করছেন, তা বেসরকারি কলেজের এমপিওভুক্ত একজন অধ্যাপকের বেতনের টাকার চেয়ে বেশি। তিনি হাঁসের খামার করে প্রমাণ করেছেন উচ্চ শিক্ষিত হলেই যে চাকরি করতে হবে, এমন ধারনা সঠিক না। কঠোর পরিশ্রম আর প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যে কোনো কাজে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন।

অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান বিদ্যুৎ জানান, এমপিওভুক্ত অধ্যাপক হিসেবে তিনি যে সম্মানি পেতেন, তা দিয়েই তার সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। কিন্তু চাকরি শেষের দিকে এসে তিনি অনেকটাই চিন্তায় পড়ে যান। আয়ের কোনো নতুন উৎস না হলে কিভাবে চলবে সংসার! ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচইবা কিভাবে চলবে! এমন সব চিন্তা যেন তাকে ঘিরে ফেলে। ঠিক এমন সময় ইউটিউবে বেকার যুবক-যুবনারীসহ বিভিন্ন এলাকার হাঁস খামারিদের সফলতার খবর দেখে সিদ্ধান্ত নেন চাকরি শেষে তিনিও হাঁসের খামার করার। সিদ্ধান্ত মোতাবেক চাকরি শেষ হওয়ার আগের বছর তথা ২০২০ সাল থেকেই তিনি হাঁসের খামারের কাজ শুরু করেন। ওই বছর ৫০০ হাঁস দিয়ে তার খামারের যাত্রা শুরু হয়।

৬০ ভাগ হাঁসের ডিম দেওয়া শুরু হলে তার স্ত্রী সৈয়দা বেগম লবিবা করোনা পজেটিভ হয়। তার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হলে তাকে রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে বাধ্য হয়েই হাঁসগুলো বিক্রি করে দেন তিনি। ওই সময় তার আসল টাকা উঠে আসে। উৎপাদনের মাঝ সময় খামার ছেড়ে দেওয়ার পরও লোকসান না হওয়ায় ও তার স্ত্রী সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে আসলে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন বড় পরিসরে হাঁসের খামার করবেন। ২০২১ সালে জুলাই মাসে তিনি অবসরে এসে সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২২ সালের মে মাসে ভারতীয় জেন্ডিং জাতের এক হাজার হাঁসের বাচ্চা দিয়ে বড় পরিসরে খামারের কাজ শুরু করেন। সরকারি হাঁস প্রজনন কেন্দ্রে থেকে জিরো সাইজের প্রতিটি বাচ্চা ৩০ টাকা করে কিনে আনেন তিনি। এর আগে হাঁসগুলোকে রাতে রাখার জন্য টিন শেড বড় ঘরনির্মাণ করেন। হাঁসের গোসলের পানি সরবরাহের জন্য বৈদ্যুতিক পাম্প স্থাপন করার পাশাপাশি পাম্পের সঙ্গেই পাকা হাউজ তৈরি করেন।

তাছাড়া দিনের বেলায় হাঁস রাখা ও খাবার দেওয়ার জন্য নির্মাণ করেন ঢালু পাকা মাঠ। এতে তার ৩ লাখ টাকা ব্যয় হয় । এছাড়া হাঁসের বিষ্টা মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহারের সুবিধার্থে খামারের পাশেই ৩০ শতাংশ জমিতে পুকুর খনন করেন। হাঁসের বিষ্টা পুকুরের মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করায় মাছের জন্য আলাদা খাবার দিতে হয় না। এতে করে হাঁসের খাবারেই মাছের খাবারের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। তিনি জানান, বর্তমানে তার খামারের এক হাজার হাঁসের মধ্যে ৯৩টি মর্দা রয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে ৫৫০ থেকে ৫৮০ হাঁস আপাতত ডিম দিচ্ছে। এতে ডিম থেকে প্রতিদিন আয় হচ্ছে ৭ থেকে ৭ হাজার ৫৪০ টাকা। প্রতিদিনই ডিম দেওয়া হাঁসের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে আয়ও বাড়ছে বলে তিনি জানান। তার খামারের সব মাদী হাঁস বছরে অন্তত ৭ মাস ডিম দিলে বছরে তার আয় হবে কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা। তার খামারে কাজের জন্য ২ জন শ্রমিক রাখা হয়েছে।

তাদের দুই জনের মাসিক মজুরি ১১ হাজার ৫শ টাকা। শ্রমিকরাই হাঁসের খামার ও পুকুরের সব কাজ করে। আমি নিয়মিত দেখভাল করি ও দিকনির্দেশা দেই মাত্র। তবে প্রতিদিন কিছু কিছু কায়িক পরিশ্রম করি। তাতে একদিকে যেমন শরীর সুস্থ্য থাকছে, মন থাকছে প্রফুল্ল অন্যদিকে শ্রমিক ব্যয় কিছুটা হলেও কম লাগছে। এ বছর ঘরনির্মাণসহ খামারের অন্যান্য জরুরি কাজ, শ্রমিক মজুরি, হাঁসের খাবার, বৈদ্যুতিক বিলসহ সব খরচ বাদে ১০ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা তার লাভ হবে বলে তিনি আশা করেন। হাঁসের খামার করার আগে তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকার লাভজনক অন্তত ১২টি হাঁসের খামার পরিদর্শন করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। অর্জিত এ অভিজ্ঞতা ও মেধাকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন তার খামারে ।

তিনি বলেন, যে কোনো বেকার নারী-পুরুষ হাঁস পালনে এগিয়ে এলে তাকে সরকারের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সহজ কিস্তিতে ব্যাংক ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন। এতে করে কিছুট হলেও বেকারত্ব কমবে, বাড়বে কর্মসংস্থান, সমৃদ্ধ হবে কৃষি অর্থনীতি।

নকলা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড. ইসহাক আলী বলেন, শিক্ষিত হলেই যে চাকরি করতে হবে এ ধারনা মোটেও সঠিক না। কঠোর পরিশ্রম আর প্রয়োজনীয় পরিকল্পানা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন। আর এর উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান বিদ্যুৎ। তার দেখাদেখি উপজেলার অনেক শিক্ষিত বোকর যুবক-যুবনারী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাঁস-মুরগী ও গরুর খামারের দিকে ঝুঁকছেন । এসব খামারীদের নিয়মিত পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১০:৩৫ | শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর ২০২২

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com