বৃহস্পতিবার ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

শেরপুরের নকলার তরুণ উদ্যোক্তা উজ্জল মিয়া সবজি জাতীয় ফসল মাশরুম চাষে সফলতা

শাহরিয়ার মিল্টন   |   রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট

শেরপুরের নকলার তরুণ উদ্যোক্তা উজ্জল মিয়া সবজি জাতীয় ফসল মাশরুম চাষে সফলতা

শেরপুর : মাশরুম চাষ করে সফলতা পেয়েছেন শেরপুরের নকলার তরুণ উদ্যোক্তা উজ্জল মিয়া। তিনি উপজেলার চরঅষ্টধর ইউনিয়নের নারায়নখোলা গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে। ২০১৬ সালের শেষ দিকে শখেরবসে তিনি বাড়ির পরিত্যক্ত একটি ঘরে মাশরুম চাষ শুরু করেন। কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই অপেক্ষাকৃত অপ্রচলিত সবজি মাশরুমের চাষ শুরু করায় প্রথম কয়েক বছর তাকে লোকসান গুণতে হয়েছে। পরে রাজধানী ঢাকার সাভারের মাশরুম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সল্প মেয়াদী একটি প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মাশরুম চাষ করায় এখন তিনি লাভের দেখা পেয়েছেন। উজ্জল এরইমধ্যে উপজেলা ছাড়িয়ে জেলার একজন সফল মাশরুম চাষি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

উজ্জল মিয়া বলেন , করোনার সময় তার ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আয় কমে যাওয়ায় মাঝে মধ্যে দোকান ভাড়া নিজের পুঁজি থেকে দিতে হতো। তাই বিকল্প আয়ের উৎস্য খোঁজতে গিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষের দিকে ঝুঁকেন। মাশরুম চাষের পরিধি বৃদ্ধি করেন। শুরুতে ৩০টি স্পনের প্যাকেট দিয়ে তার মাশরুম চাষ শুরু হয়। বর্তমানে তার সংগ্রহে ১৫০টি খড়ের বড় সিলিন্ডার, যার ওজন ২ কেজি থেকে ৩ কেজি এবং ৫০০টি এক থেকে দেড় কেজি ওজনের কাঠের গুড়া ও তুষের ছোট সিলিন্ডার রয়েছে। এখন মাশরুম থেকে সব খরচ বাদে মাসে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা তার আয় হচ্ছে। মাশরুম চাষ বিষয়ে উজ্জল মিয়া বলেন, করোনাকালে আমি যখন দিশেহারা হওয়ার পথে, তখন চরবস্তী এলাকার কৃষিবিদ শফিউল আলম সুইম ভাই আমাকে সাহস দিয়ে মাশরুম চাষের দিকে আগ্রহী করে তোলেন। তার উৎসাহ পেয়ে সাভার থেকে স্পন বা মাশরুম বীজ এনে নিজে স্পন প্যাকেট তৈরি করছি।

ঘরে বসে খুব সহজেই মাশরুম চাষ করা যায়, উজ্জলের দেখাদেখি এলাকার অনেক শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। কেউ কেউ কয়েকটি করে প্যাকেট কিনে নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকে সফলতার মুখ দেখছেন। বিশ্বজুড়ে চাষ করা হয় নানা জাতের মাশরুম। তবে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় এবং তুলনামূলক সহজ পদ্ধতিতে ঘরে ফলানোর জন্য উপযুক্ত অয়েস্টার, মিল্কি, প্যাডি স্ট্র জাতীয় মাশরুম। অয়েস্টার মাশরুম ফলানোর পক্ষে আবার শীতকাল উপযুক্ত। বাকি দুটোর উপযুক্ত সময় মার্চের পর থেকে, যখন ঠান্ডা কমে যায়। এই ধরনের মাশরুম চাষ করার জন্য প্রধানত তিনটি উপকরণ দরকার। এগুলো হচ্ছে- স্পন বা মাশরুমের বীজ, খড় ও পলিথিনের ব্যাগ। মাশরুম একটি পুষ্টিকর খবার। মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন থাকে। খেতেও সুস্বাদু ও সহজপাচ্য। প্রোটিনের পাশাপাশি প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকায় হাড় ও দাঁতের গঠনে বিশেষ উপযোগী। ফলিক অ্যাসিড থাকায় রক্তস্বল্পতা রোগে উপকারী। তাই চিকিৎসকরা হাই প্রোটিনযুক্ত এই মাশরুম চাষ ও খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

মাশরুম চাষের জন্য প্রথমে আধ থেকে এক ইঞ্চি মাপের খড় কেটে জীবাণুমুক্ত করার জন্য ফুটন্ত গরম পানিতে প্রায় ২০ মিনিট ফুটিয়ে নিন অথবা ব্লিচিং পাউডার ও চুন মেশানো পরিষ্কার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ফোটানো বা ভেজানোর পড়ে পানি ঝরিয়ে নিয়ে ভেজা ভাব থাকা অবস্থায় একটি পলিব্যাগের মধ্যে দুই ইঞ্চি পুরু করে খড় বিছিয়ে তার উপর ব্যাগের ধার ঘেঁষে মাশরুম বীজ বা স্পন ছড়িয়ে দিতে হয়। বীজের উপরে আবার খড় ও খড়ের উপর আবার বীজ, এইভাবে প্রায় সাত-আটটা স্তর তৈরি করে পলিব্যাগের মুখ কয়েকটা প্যাঁচ দিয়ে কষে বন্ধ করে দিতে হয়। খড় বিছানোর সময় প্রতিবার হাত দিয়ে ভালো করে চেপে দিতে হবে, যাতে খড়ের ভিতর হাওয়া জমে না থাকে। এরপরে প্যাকেটে দশ থেকে বারোটা ছোট ছোট ছিদ্র করে তুলা দিয়ে ছিদ্রের মুখ বন্ধ করে দিলে স্বাভাবিক হাওয়া চলাচল বজায় থাকবে, আবার তুলা থাকায় ধুলাও ঢুকতে পারবে না।

প্যাকেটটি সাত থেকে দশ দিনের জন্য কোনো অন্ধকার জায়গায় রেখে দিতে হবে। কয়েক দিনের মধ্যেই সেই প্যাকেটে বীজের জায়গায় সাদা আস্তরণ দেখা দেবে, যাকে মাইসেলিয়াম বলে। অল্প কয়দিনের মধ্যে পুরো ব্যাগটাই মাইসেলিয়ামে ভরে গেলে তুলা সরিয়ে ফেলে আরও কয়েকটি ছিদ্র করে ব্যাগটিকে কিছুটা আলোর মধ্যে রাখতে হবে। তবে সরাসরি রোদে নয়, ঘরের ভিতর যেটুকু আলোয় বই পড়া যায়, তেমন আলোয়। বাতাসে আর্দ্রতা বুঝে প্রয়োজন মাফিক প্যাকেটের উপরে মাঝে মাঝে পানি স্প্রে করবেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই ছিদ্র দিয়ে মাশরুমের পিনহেড উঁকি দেবে। সাধারণত পঁচিশ থেকে তিরিশ দিনের মধ্যে মাশরুম খাওয়ার মতো পরিণত হয়ে যায়। একটি ব্যাগ থেকে তিনবার ফলন পাওয়া যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, অন্ধকার হলেও জায়গাটিতে যেন হাওয়া চলাচল করে। জায়গাটি যাতে পরিষ্কার ও পোকা-মাকড়মুক্ত থাকে, সে খেয়ালও রাখতে হবে। মাছি কিন্তু মাশরুম চাষে ভয়ানক ক্ষতি করে। তাই মাছির আক্রমণ থেকে রক্ষা করা জরুরি।

নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, মাশরুম ‘গরীবের মাংস’ হিসেবে খ্যাত। এটি খেতে সুস্বাদু। এটি ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন একটি সবজি জাতীয় ফসল, যা বর্তমানে অনেকেই চাষ করছেন। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এবং স্বাদ ভালো হওয়ায় এটি মানুষের নিকট সমাদৃত হয়েছে। বর্তমান বাজারে দিন দিন মাশরুমের চাহিদা বাড়ছে। তাই বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু হয়েছে। বহু বেকার যুবক-যুবতী মাশরুম চাষ করে এরইমধ্যে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হচ্ছেন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:৪০ | রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com