| মঙ্গলবার, ০৩ জুলাই ২০১৮ | প্রিন্ট
জাতীয় বেতন ও উত্পাদনশীলতা কমিশন-২০১৫-এর সুপারিশ অনুযায়ী সরকারি খাতের শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের জন্য জাতীয় মজুরি স্কেল-২০১৫ ঘোষণা এবং ন্যূনতম বেতন দ্বিগুণ করে ৮,৩০০ টাকার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সময়ে সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে কমিশন করা হয়, তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে স্কেল নির্ধারণ করা হয়। সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বেতন কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছিল। নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ৮ হাজার ৩০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মজুরি ১১ হাজার ২০০ টাকা। আগে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৪ হাজার ১৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৬০০ টাকা ছিল। ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন মজুরি এবং ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ভাতা কার্যকর হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
২০১৫ সালে সরকারি চাকুরেদের বেতন বাড়ানোর পর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খানকে চেয়ারম্যান করে ‘জাতীয় মজুরি ও উত্পাদনশীলতা কমিশন-২০১৫’ গঠন করা হয়। এই কমিশন গত বছরের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয়। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম ৮ হাজার ৩০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৬০০ টাকা মজুরি নির্ধারণের সুপারিশ করেছিল। সর্বশেষ ‘জাতীয় মজুরি ও উত্পাদনশীলতা কমিশন ২০১০’ এ রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়িয়ে সর্বোচ্চ মজুরি ৫ হাজার ৬০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৪ হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর পর তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনঃনির্ধারণ করা হয় ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর। তিন হাজার টাকা মূল বেতন ধরে ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি ঠিক করা হয়েছিল তখন। নতুন কাঠামোয় ওই বেতন তারা পাচ্ছেন ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে।
কয়েক বছরের মূল্যস্ফীতিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ১৬ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার শ্রমিকরা আগের মতই মূল মজুরির ৫০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া, দেড় হাজার টাকা চিকিত্সা ভাতা, মূল বেতনের সমান দুটি করে উত্সব ভাতা, ছুটি নগদায়ন অথবা অবসরকালীন ১৮ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ল্যাম্প-গ্রান্ট এবং মূল বেতনের ১০ শতাংশ কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড সুবিধা পাবেন। এছাড়া প্রতি বছর চাকরির জন্য দুই মাসের মূল মজুরির গ্র্যাচুইটি, মূল মজুরির ৩০ শতাংশ তবে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা পাহাড়ি ভাতা, প্রতি রাতে ঘণ্টাপ্রতি ১৫ টাকা হারে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা নাইট শিফট ডিউটি ভাতা, ২০ শতাংশ হারে নববর্ষ ভাতা এবং বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাবেন। এর বাইরে প্রতি মাসে ২০০ টাকা যাতায়াত ভাতা, ১০০ টাকা ধোলাই ভাতা, ২০০ টাকা টিফিন ভাতা, মূল মজুরির ১০ শতাংশ তবে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা রোটেটিং শিফট ডিউটি ভাতা এবং ৪০০ টাকা করে ঝুঁকি ভাতা পাবেন রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার শ্রমিকরা। নতুন মজুরি কাঠামোয় শ্রমিকদের জন্য আগের মতই গ্রুপ ইন্সুরেন্স সুবিধা রাখা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, এক সন্তারের জন্য ৫০০ টাকা এবং দুই সন্তানের জন্য মাসে এক হাজার টাকা শিক্ষা সহায়তা ভাতা পাবেন তারা। আর নারী শ্রমিকরা পাবেন ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি।
মন্ত্রিসভায় বাসস আইনের খসড়া অনুমোদন
‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) আইন-২০১৮’র খসড়া আইন অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। জাতীয় সংবাদ সংস্থা হিসেবে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি ১৯৭৯ সালে জারিকৃত অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৭৯ সালের অধ্যাদেশের কিছু পরিবর্তন এনে খসড়া আইনটি প্রণীত হয়েছে।
খসড়ায় সংস্থাটি পরিচালনার জন্য ৩ বছর মেয়াদী ১৩ সদস্যের একটি বোর্ড গঠনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সদস্য থাকবেন। সরকার বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেবে এবং এই জাতীয় সংবাদ সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক পদের জন্য সাংবাদিকতায় ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন সাংবাদিক যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। সংস্থাটি একই সঙ্গে কম্পোট্রোলার ও অডিটর জেনারেল (সিএন্ডএজি) এবং চার্টার্ড একাউন্ট ফার্ম দিয়ে নিরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মাছ আমদানিতে ক্ষতিকর জীবাণু রোধে আইনের প্রস্তাব অনুমোদন
মাছ আমদানির ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক জীবাণু বহন প্রতিরোধে শাস্তির বিধান রেখে নতুন একটি আইনের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, মাছ আমদানির ক্ষেত্রে কোনো ক্ষতিকারক জীবাণু বহন করে বা নিয়ে আসে সেটার জন্য কোনো আইন নেই। সবজির জন্য আইন আছে, এ আইনটি নতুন তৈরি করা হয়েছে। মাছ আমদানির সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমদানি বলতে জল, স্থল, আকাশপথে অন্য কোনো দেশ থেকে বাংলাদেশে কোনো পণ্য আনা। মত্স্য বলতে সব ধরনের কোমল ও কঠিন অস্থিবিশিষ্ট মাছ, স্বাদু ও লবণাক্ত পানির চিংড়ি, উভচর জলজ প্রাণী, কচ্ছপ, কুমির, কাঁকড়া জাতীয় প্রাণী, শামুক বা ঝিনুক জাতীয় জলজ প্রাণী, ব্যাঙ বা সরকারি প্রজ্ঞাপনে ঘোষিত জলজ প্রাণী।
আইনে একটি সঙ্গনিরোধী কর্তৃপক্ষ গঠিত করার কথা বলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই দায়িত্ব পালন করবে মত্স্য অধিদফতর। কর্তৃপক্ষকে অনেকগুলো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে মাছের রোগ-জীবাণু অনুপ্রবেশ ও বিস্তার রোধে মত্স্য, মত্স্যপণ্য, উপকারী জীবাণু বা প্যাকিং দ্রব্যাদির আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ ১০টি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।ইত্তেফাক
Posted ১১:৫৭ | মঙ্গলবার, ০৩ জুলাই ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain