| রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৪ | প্রিন্ট
ঢাকা, ২০ এপ্রিল : রানা প্লাজার ভিকটিমদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে কি পরিমাণ টাকা জমা হয়েছে তা জনসমক্ষ প্রকাশ করা উচিত। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১২৭ কোটি টাকা জমা হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের দেয়া হয়েছে মাত্র ২২ কোটি টাকা। কি পরিমাণ টাকা জমা হলো আর কি পরিমাণ দেয়া হলো তা পরিষ্কার থাকা দরকার।
রবিবার অ্যাকশন এইড আয়োজিত রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে এক সংলাপে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপার্সন ড. হামিদা হোসেন এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অ্যাকশন এইডের জরিপের তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পরিবারগুলোর দাবি এই মুহূর্তে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৫ টাকা দরকার। তবে কোনো পরিবার ২৫০০০ থেকে ৬ লাখ টাকা এই মুহূর্তে দরকার। ৬২ দশমিক ৬ শতাংশ নিহত শ্রমিকের প্রতিনিধিরা এক থেকে ৫ লাখ টাকা এই মুহূর্তে দাবি করেছে। ৪৫ জন প্রতিনিধি ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেছে। জরিপে বলা হয়েছে, গত ১২ মাসে ৫৫টি পরিবার তাদের আয়ের উৎস খুঁজে নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
এখনও ৬৭ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিক নিত্যপ্রয়োজন নিয়ে সমস্যা মোকাবেলা করছে। ২৬ শতাংশ শ্রমিক কিছু সমস্যায় ভুগছে, ৪ দশমিক ২ শতাংশ শ্রমিক নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে সক্ষম নয়, ২ দশমিক ২ শতাংশ শ্রমিকের নিত্য প্রয়োজন মেটাতে সমস্যা নেই বলেও জানানো হয় জরিপের মাধ্যমে।
সংলাপে রানা প্লাজা এগ্রিমেন্ট সমন্বয় কমিটির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাবা কাজিজি বলেন, রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত তহবিল থেকে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সব সদস্যদের জন্য একটি করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করার কথা বলেন। যাতে ক্ষতিপূরণ সবাই পান। সিপিডি অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের হিসেবে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা ছিলো বিক্ষিপ্ত। তবে এই বিক্ষিপ্তভাবে নেওয়া প্রচেষ্টাগুলোর সমন্বয়ের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সবাইকে তহবিলের আওতায় আনতে হবে, যাতে কেউ বাদ না পড়ে। যে পোশাককর্মী নিহত হয়েছে অথচ তার কোনো সঠিক তথ্য নেই। তবে কি ওই কর্মী ক্ষতিপূরণ পাবে না ? এটা তো হতে পারে না। তাদের এই তহবিলের আওতায় আনতে হবে। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত সবাই ক্ষতিপূরণ পায়। তিনি বলেন, পোশাকশিল্পে এতোদিন যারা কাজ করছে তাদের কোনো সঞ্চয় নেই। এটা পরিতাপের বিষয়। ক্ষতিগ্রস্ত যে সব শ্রমিক আর পোশাক কারখানায় কাজ করতে চায় না তাদেরকে অন্য কোনো খাতে চাকরি দেয়া দরকার ।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও’র প্রতিনিধি শ্রীনিবাস রেড্ডি বলেন, রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তহবিল গঠন করা হয়েছে। যেখানে আইএলও, ক্রেতারাসহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী অংশ নিয়েছে। তবে এটা আরও আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানো দরকার। তিনি বলেন,পোশাকশিল্পে যদি দীর্ঘমেয়াদে পরিবর্তন আনতে হয় তবে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আইএলও শ্রমিকদের নিরাপদ পরিবেশ করার কাজে আগ্রহী। তাই স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় শিল্পের পরিবর্তন আনতে কাজ চলতে পারে । তিনি বলেন, কম্প্লায়েন্স ইস্যুতে ইতোমধ্যে ২৫ শতাংশ কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে। এক বছরের মধ্যে ৩ হাজারেরও বেশি কারখানা পরিদর্শন এই খাতে নেয়া একটা বড় ধরনের পদক্ষেপ।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব রায় রমেশ বলেন, সত্যিকার অর্থে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা সম্ভব নয়। কারণ ওখানে যারা কাজ করতো তাদের অনেকেরই পরিচয়পত্র ছিল না। প্রকৃত অর্থে এই খাতে কতো কারখানা রয়েছে তারও সঠিক হিসেব নেই বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, এখনও কোনো শ্রমিককে নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না। তাই তিনি পোশাকখাতে এমন দুর্ঘটনা মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা উচিত। যাতে সামনের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়।
সংলাপে বক্তারা পোশাক শ্রমিকদের জন্য একটি স্থায়ী কল্যাণ ট্রাস্ট ফান্ড করার প্রস্তাব দেন। যাতে ভিকটিমরা সহজেই ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। এ সময় বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা তাদের দায়িত্ব পালন করেননি। ফলে ক্ষতিপূরণ কেউ একাধিকবার পেয়েছে আবার কেউ কেউ কিছুই পায়নি। তাই ক্ষতিগ্রস্তদের জীবনমান উন্নয়নে একটি কার্যকরী সমন্বয় কমিটি থাকা দরকার।
সংলাপে অন্যদের মধ্যে অ্যাকশন এইড এর বাংলাদেশের প্রতিনিধি ফারা কবির, বিলসের সহকারি পরিচালক সুলতান উদ্দিন আহমেদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সদস্য শিরিন আক্তার, বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ফায়ার সার্ভিসের বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান, জিআইজেড এর প্রতিনিধি ড. আনিসুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।
Posted ১২:০১ | রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin