| শনিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট
মোঃ রেজাউল বারী বাবুল, গাজীপুর ২৫ জানুয়ারি : বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে লাখো মুসল্লির জিকির-আজগার ও তাবলীগের মুরব্বিদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ানের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে।
রবিবার জোহরের নামাজের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বিশ্ব তাবলীগ জামাতের এই বিশাল জনসমাবেশের প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটবে।
চার দিন পর ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার সন্ধ্যা থেকেই দূর দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা দলে দলে ইজতেমাস্থলে আসতে শুরু করেছেন।
আখেরি মোনাজাতে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়া, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, মুসলিম বিশ্বের কূটনীতিকরা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
আখেরি মোনাজাতে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বয়ান মঞ্চে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় মোনাজাতে শামিল হবেন বলে আইন-শৃংখলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়। এটলাস কোম্পানির ছাদে বিশেষ মঞ্চে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও মূল মঞ্চের কাছে গিয়ে মোনাজাতে শরিক হবেন বলে জানা গেছে।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য ছাড়াও সংসদ সদস্য এবং ভিআইপিদের জন্য ইজতেমা মাঠ এবং আশপাশের বিভিন্ন ভবনের ছাদে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইজতেমা সূত্র জানায়, প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে রবিবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী কালিগঞ্জ সড়ক দুপুর পর্যন্ত যানচলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া যান চলাচল বন্ধের কারণে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় কলকারখানার মালিক কর্তৃপক্ষ বিশ্ব ইজতেমার জন্য ১ দিন কারখানা বন্ধের ঘোষণা করে।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে ময়দানে একজন বিদেশিসহ আরো ৪ জন মুসল্লি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শুক্রবার রাতে ২ জন, শনিবার ভোরে ১ জন ও সকালে একজন বিদেশি মুসল্লি মারা যান।
নিহতরা হলেন, কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার পাকুরিয়া গ্রামের মো. জিহাদ আলী (৫৩)। তিনি শনিবার ভোর সাড়ে ৪টায় ইজতেমা ময়দানে আকষ্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। সকাল ৮টায় মধ্যপ্রাচ্যের ইয়েমেনের নাগরিক আবু আহমেদ আবদুল্লাহ হারুন (৭০) মারা যান। শুক্রবার রাত ১টার দিকে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাগলা গ্রামের সামসুদ্দীন (৬০) হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। নিহত অন্য জনের (৫০) পরিচয় জানা যায়নি। রাত দেড়টায় ময়দানের ৮ নম্বর টয়লেট ভবনের সামনে থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে তাবলীগ জামাতের লাশের জিম্মাদারদের কাছে হস্তান্তর করে। অজ্ঞাত পরিচয় এই ব্যক্তির লাশ ইজতেমা ময়দানে লাশের গোসলখানায় রাখা হয়। তাবলীগ জামাতের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে মিসর, ওমান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, কাতার, অষ্ট্রেলিয়া, ব্রনাই, কানাডা, কম্বোডিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, জার্মানী, ইরান, জাপান, মাদাগাস্কার, মালি, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, পানামা, সেনাগাল, দঃ আফ্রিকা, তাঞ্জেনিয়া, ত্রিনিদাদ, রাশিয়া, আমেরিকা, জিম্বাবুই, বেলজিয়াম, ক্যামারুন, চীন, কমোরেস, ফিজী, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, ইটালী, কেনিয়া, মালয়শিয়া, মায়ানমার, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, থাইল্যান্ড, তার্কি, যুক্তরাজ্য, জাম্বিয়া, কোরিয়া, আলজেরিয়া, ডিজিবুতি, ইথোপিয়া, ইরাক, ফিলিস্তিন, কুয়েত, মরক্কো, কাতার, সোমালিয়া, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন, পাকিস্থান, বাহরাইন, ইরিত্রিয়া, জর্দান, মৌরিতানিয়া, ভারত, সুদান, দুবাইসহ বিশ্বের ১৩৩টি রাষ্ট্রের প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন ভাষা-ভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানে বিদেশি মেহমানদের জন্য মোট ৩টি পৃথক বিদেশি নিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে শনিবার বিকালে ইজতেমাস্থলে হযরত ফতেমা (রা.) ও হযরত আলী (রা.) বিয়ের দেন মোহর অনুসারে বিনা যৌতুকে দেড় শতাধিক বিয়ে সমপন্ন হয়। বিয়ের পূর্বে বাদ আসর দিল্লির মাওলানা যোবায়েরুল হাসান বয়ান করেন। বয়ান শেষে এ সকল বর-কনের অভিভাবকদের সম্মতিতে বরের উপস্থিতিতে বিয়ে পড়ান হয়। বিয়ে শেষে উপস্থিত দম্পতিদের স্বজন ও মুসল্লিদের মধ্যে খুরমা খেজুর বিতরণ করা হয়।
টঙ্গীর রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা মো. হালিমুজ্জামান জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে ২৯টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া আখেরি মোনাজাতের আগে ও পরে সকল ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো. আব্দুল বাতেন জানান, মোনাজাতের দিন সকাল থেকে গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকা থেকে ইজতেমাস্থল পর্যন্ত মুসুল্লিদের সুবিধার্থে ৫০টি বিআরটিসি বাস ও ব্যাক্তি মালিকানাধীণ ৫০টি (ইজতেমার স্টিকার লাগানো) শ্যাটল বাস চলাচল করবে। এছাড়া ইজতেমায় মুসুল্লিদের যাতায়তের জন্য বিভিন্ন স্ট্যান্ড থেকে বিআরটিসি’র ৩০০টি বাস চলাচল করছে।
বিশ্বইজতেমায় আগত মুসুল্লীদের যানবাহন পার্কিংয়ের জন্য স্থান নির্ধারণ করেছে ট্রাফিক বিভাগ : ঢাকা মহানগর এলাকা- (১) সাধারণ পার্কিং-১: উত্তরার নিকুঞ্জ-১এর আবাসিক এলাকার খালি জায়গা, (২) সাধারণ পার্কিং-২: উত্তরা ৬নং সেক্টর ও রাজউক কলেজের আশেপাশের খালি জায়গা, (৩) সিলেট বিভাগ- উত্তরা-১২ নং সেক্টর, (৪) বরিশাল বিভাগ- ধৌড় ব্রিজ হতে ২০০ মিটার পশ্চিমে রাস্তার বাম পাশ, (৫) ঢাকা বিভাগ পার্কিং- উত্তরা সোনারগাও জনপথ সড়কের পূর্বপাশে, (৬) খুলনা বিভাগ পার্কিং-উত্তরা ১০ ও ১১নং সেক্টারের উভয়পাশে, (৭) রংপুর বিভাগ- প্রত্যাশা হাউজিং, (৮) চট্টগ্রাম বিভাগ-উত্তরা ১০নং সেক্টরেরর গাউসুল আজম রোড ও গরীব নেওয়াজ রোড, (৯) রাজশাহী বিভাগ- কামারপাড়া হাউজিং মাঠ/উত্তরা ১০নংসেক্টরের খালি জায়গা। ঢাকা জেলা- আশুলিয়া কলেজ মাঠ ও আশুলিয়া হাইস্কুল মাঠ। গাজীপুর জেলা- (১) টঙ্গীর কে-২/নেভি সিগারেট কারখানা সংলগ্নস্থান, টঙ্গী রেলওয়ে জংশনের পূর্বপাশ, (২) কাদেরিয়া টেঙটাইল মিল গেইট সংলগ্ন খালি জায়গা, (৩) কাদেরিয়া টেঙটাইল সংলগ্ন রাস্তার উভয় পাশে, (৪) মেঘনা টেঙটাইল মিল সংলগ্ন রাস্তার উভয় পাশে, (৫) সফিউদ্দিন সরকার একাডেমী মাঠ, (৬) জয়দেবপুর-চৌরাস্তা ট্রাক স্ট্যান্ড, (৭) চান্দনা-হাইস্কুল মাঠ ও (৮) ভাওয়াল কলেজ মাঠ।
যেসব স্থানে গাড়ি পার্কিং নিষেধ- মহাখালী ক্রসিং থেকে টঙ্গী হয়ে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কের দুইপাশ, আব্দুল্লাহপুর থেকে বাইপাইল, প্রগতিসরণীস্থ মধ্যবাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রগতিসরণীস্থ সড়কের দুই পাশ।
Posted ১২:৩৮ | শনিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin