শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

যৌথবাহিনীর সাড়াশি অভিযান : রাজধানীসহ সারা দেশে গ্রেপ্তার প্রায় ৪শ'

  |   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

যৌথবাহিনীর সাড়াশি অভিযান : রাজধানীসহ সারা দেশে গ্রেপ্তার প্রায় ৪শ'

army 1

নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও আগামী রোববারের ১৮ দলের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিকে সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশব্যাপী সাড়াশি অভিযানে নেমেছে যৌথবাহিনী। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও গোয়েন্দা পুলিশের সমন্নয়ে গঠিত এ যৌথবাহিনী রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে প্রায় ৪শ’ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৫০ জনকে। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই জামায়াত-শিবির, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। পুলিশ জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও বিভিন্ন জেলা সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে জানা যায় ।

ঢাকা: বৃহস্পতিবার রাতে যৌথবাহিনীর সদস্যরা ‘কম্বিং অপারেশন’ চালিয়ে মিরপুরের কল্যাণপুর, দারুস সালাম, রূপনগর, সেনপাড়া, পল্লবী, কাফরুলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে দেড়শ’ ব্যক্তিকে আটক করেছে। মিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, কল্যাণপুরের শামীম কমিশনারের বাড়ি এবং মনিপুরের সেনপাড়ায় জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ভাই ও ছেলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭০ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের থানা হাজতে রাখা হয়েছে। পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ কমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, রাতভর অভিযানে মিরপুরের সব থানা এলাকা থেকে শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। পরে তাদের যাচাই বাছাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের যুগ্ন-কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যাদের নামে মামলা আছে, যারা সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনী। মূলত থার্টিফাস্ট নাইট ও নির্বাচনে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং যে কোনো ধরণের নাশকতা এড়াতে এ অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে বিরোধী দলের নেতাদের ধারণা, বিরোধীদলীয় জোটের ডাকা রোববারের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’কে প্রতিহত করতে এ ধরণের গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সারা দেশের মতো রাজধানীতেও নাশকতাকারী ও নাশকতার ইন্ধনদাতা হিসেবে প্রায় ২ হাজার ৩শ’ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ তালিকা ধরেই গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হচ্ছে।

গাজীপুর: গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে যৌথবাহিনীর সদস্যরা ২৯ জনকে আটক করেছে। এদের অধিকাংশ বিএনপি ও জামায়াতের কর্মী বলে জানা গেছে। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালায় পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় জেলার কোনাবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিজ বাসা থেকে সিটি করপোরেশনের ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজহারুল হক মোল্লাকে আটক করা হয়। তাকে ওই এলাকায় গাড়ি পোড়ানোর মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান জয়দেবপুর থানার ওসি এসএম কামরুজ্জামান।

যশোর: বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত যশোরের ৮টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ১৬ নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। এ সময় ১০টি হাত বোমাও জব্দ করা হয়েছে। যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানান, নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে বিএনপির ১৪ ও জামায়াতের দুই নেতাকর্মীসহ মোট ৫২ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া ১০টি হাত বোমা জব্দ করা হয়েছে। তাদের অনেকের নামে থানায় মামলা রয়েছে। এদিকে, শুক্রবার বিকেলে যশোরের শহরতলী ঝুমঝুমপুর বাড়ি থেকে শহর জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুলকে আটক করেছে র‌্যাব। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ জানান, জামায়াত নেতা গোলাম রসুলকে আটক করে যশোর ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। তবে কি কারণে তাকে আটক করা হয়েছে সে সম্পর্কে কিছুই জানায় নি।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মহানগরীসহ জেলার সাতকানিয়া ও সীতাকুণ্ডে পৃথক অভিযান চালিয়ে অন্তত ৪৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ ও যৌথবাহিনী। ২৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের উদ্যোগে মার্চ ফর ডেমোক্রেসিতে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসার সময় চট্টগ্রাম রেল স্টেশন এবং আশপাশের এলাকা থেকে বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের ২৬ জন কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বাকী ১৭ জনের মধ্যে সীতাকুণ্ড থেকে ৯ জন, সাতকানিয়া থেকে ৫ এবং লোহাগাড়া থেকে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। কোতোয়ালী জোনের এসি মির্জা সায়েম মাহমুদ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের রেল ষ্টেশন, বিআরটিসি বাস ষ্টেশন ও আশপাশের এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২৬ জনকে আটক করা হয়েছে।

দিনাজপুর: দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যৌথবাহিনীর সদস্যরা ৮ জনকে আটক করেছে। দিনাজপুর পুলিশ সুপার (এসপি) রুহুল আমিন আটকের ঘটনা স্বীকার করেছেন।

বগুড়া: বগুড়ার বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৫৫ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ১৮ দলের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। নাশকতার মামলায় আসামি হিসেবে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

নাটোর: জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভবিক রাখতে বৃহস্পতিবার রাতে নাটোরের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি জামায়াত-শিবিরের ৮ নেতাকর্মীকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। নাটোরের পুলিশ সুপার ড. নাহিদ হোসেন জানান, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যৌথ বাহিনী বৃহস্পতিবার রাতব্যাপী অভিযান চালায়। অভিযানে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ আটজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের শুক্রবার সকালে সদর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

কুমিল্লা: কুমিল্লা বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, আটককৃতদের মধ্যে বিএনপির ৮ এবং জামায়াত-শিবিরের ২৭ নেতাকর্মী রয়েছে। এছাড়া কোতোয়ালীতে জামায়াত ২, বিএনপি ২, চৌদ্দগ্রামে বিএনপি ২, শিবির ১, নাঙ্গলকোটে জামায়াত ১, লাকসামে জামায়াত-শিবির ১২, মনোহরগঞ্জে শিবির ৩, বরুড়ায় জামায়াত ২, মুরাদনগর বিএনপি ২, জামায়াত ২, চান্দিনায় জামায়াত-শিবির ৩, বুড়িচংয়ে বিএনপি ১ এবং বি.পাড়ায় এক শিবিরকর্মীসহ মোট ৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের নামে জেলার বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে।

জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত পৃথক অভিযান চালিয়ে ১৮ দলের ১৪ নেতাকর্মীকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। জেলা পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এ অভিযানে জয়পুরহাট সদর উপজেলা থেকে পাঁচজন, পাঁচবিবি থেকে তিনজন, আক্কেলপুর থেকে চারজন ও কালাই উপজেলা থেকে দু’জনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে বিএনপি’র দু’জন, জামায়াতের ১০ জন ও ছাত্র শিবিরের দু’জন নেতাকর্মী রয়েছে। আটককৃতরা হরতাল-অবরোধ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, রেল লাইন উৎপাটন, গাড়ি, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল নিক্ষেপসহ বিভিন্ন নাশকতার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ভোলা: নাশকতার অভিযোগে ভোলায় বিএনপি ও জামায়াতের ২৯ নেতাকর্মীকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। বৃহস্পতিবার গভীর রাত শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। ভোলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জমান জানান, ১৮ দলের ডাকা হরতাল ও অবরোধের সময় ভোলায় বিচ্ছিন্ন নাশকতা ঘটায় বিএনপি ও জামায়াত কর্মীরা। এ অভিযোগে পুলিশের একটি দল ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের আটক করে বলে তিনি জানান। এছাড়া ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে ১১, চাঁদপুর থেকে ৭, নারায়ণগঞ্জ থেকে ৭ ও অন্য জেলা থেকে আরো কয়েকজনকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। –

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২২:২৯ | শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

বিএনপি নেতাদের রক্তাক্ত করতে আওয়ামী লীগ জনপথের পর জনপথে শিমুলদের মতো এমপি বানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যদের সন্ত্রাসী বাহিনীরা দেশে নৈরাজ্য ও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করছে। বিজ্ঞাপন শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীনকে দেখতে গিয়ে এসব কথা বলেন। আরও পড়ুন ভিসা ফি বাবদ দৈনিক ৮০ কোটি টাকা নেয় ভারত : গয়েশ্বর ‘জিয়া মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মাবরণে পাকিস্তানের দোসর ছিলেন’ বিজ্ঞাপন বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ আলী গত ১৩ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে জেলা দায়রা জজ আদালতে হাজিরা দিয়ে মোটরসাইকেলে করে সিংড়ার দিকে রওনা হন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের ফুলবাগান এলাকায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে একটি মাইক্রোবাস তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরে মাইক্রোবাসে থাকা সন্ত্রাসীরা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তার বাম হাত ভেঙে দেয়। পায়ে তিনটি গুলি করে। খবর পেয়ে বিএনপির দুই কর্মী তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে তাৎক্ষণিক রাজশাহীতে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থানান্তর করা হয়। বিজ্ঞাপন রিজভী বলেন, ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের পর সরকার সন্ত্রাসীদের উপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে। কারণ, তাদের সঙ্গে কোনো জনগণ নাই, জনগণের ভোটের প্রয়োজন হয় না। তবে সন্ত্রাস নির্ভর সরকারের পরিণতি ভালো হবে না। নাটোরের এমপি শিমুলের সন্ত্রাসী বাহিনীরা ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীনকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, তার উপর গুলি চালিয়েছে। তিনি জেলা ছাত্রদল ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। সরকার বিরোধী আন্দোলন ও সংগ্রামে তিনি অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। আর এ কারণেই ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তার উপর ক্ষুব্ধ। কিন্তু হত্যা করে, নিপীড়ন করে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এবং স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম।

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com