বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যাচাই-বাছাই করে রোহিঙ্গাদের নিতে প্রস্তুত মিয়ানমার: সু চি

  |   মঙ্গলবার, ০১ মে ২০১৮ | প্রিন্ট

যাচাই-বাছাই করে রোহিঙ্গাদের নিতে প্রস্তুত মিয়ানমার: সু চি

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করে মিয়ানমার ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দেশটির নেত্রী ও কার্যত সরকার প্রধান (ডি-ফ্যাক্টো) অং সান সু চি। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরো সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

সোমবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে একথা বলেন সু চি। বৈঠকে মিয়ানমারের সেনা প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাং উপস্থিত ছিলেন।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু হওয়ার পর নিরাপত্তা পরিষদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের এটাই প্রথম বৈঠক।

এদিন মিয়ানমারের আইনপ্রণেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের  বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতিসংঘ মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের একথা জানান।

মঙ্গলবার সকালে নিরাপত্তা পষিদের প্রতিনিধি দলটি রাখাইনের ক্ষতিগ্রস্থ এলকাগুলি পরিদর্শনে গেছেন।

এর আগে ২৮ এপ্রিল বিকাল চারটার দিকে কুয়েত থেকে সরাসরি একটি চার্টার বিমানে করে কক্সবাজার পৌঁছায় ৩০ সদস্যের জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল। এদিন ইনানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, নিরাপত্তা বাহিনী ও রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবসন কমিশনারের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা।

২৯ এপ্রিল সকালে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তমব্রু শূন্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দেখতে যান তারা। একইদিন এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পও পরিদর্শন করে প্রতিনিধি দলটি। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে তারা মিয়ানমারের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন।

এর আগে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলটি সাংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের। দেশটিকে এ সংকটের সমাধান করতে হবে। তবে খুব শিঘ্রই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলেও জানান তারা।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার সরকার। সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে চার দশক ধরে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে একটি নিরাপত্তা চৌকিতে কথিত হামলার অভিযোগ তুলে সেনা অভিযানের নামে নৃশংসতা শুরু হলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এ সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এদের আশ্রয় হয়েছে কক্সবাজারে উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে।

রোহিঙ্গাদের স্রোত শুরু হওয়ার পর বিষয়টি বাংলাদেশ তোলে জাতিসংঘে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও প্রথমে রোহিঙ্গা নির্যাতনের কথা স্বীকার না করলেও পরে ‘কিছু হত্যার’ বিষয়টি স্বীকার করেন দেশটির সেনা প্রধান।

এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিতে মিয়ানমারের সঙ্গে প্রথমে সমঝোতা স্মারক এবং পরে ফিজিক্যাল অ্যারাঞ্জমেন্ট নামে চুক্তিও হয়েছে। প্রত্যাবাসনের প্রথম ধাপ হিসেবে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারকে আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকাও দেয়া হয়। যদিও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাইয়ের নামে সেখান থেকে মাত্র তিনশ মতো রোহিঙ্গাকে তাদের নাগরিক বলে দাবি করে।

সম্প্রতি মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী প্রথমবারের মতো একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে রোহিঙ্গাদের দেখতে বাংলাদেশ সফর করেন। তারা কক্সবাজারের ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের দুর্দশাও দেখেন।

দেশে ফিরে গিয়ে ২১ এপ্রিল ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে’ বলে মিথ্যাচার করেন তিনি। ইয়াঙ্গুনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি জানান, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরাতে তারা (মিয়ানমার) বাংলাদেশকে একটি যাচাই ফরম বিতরণ করতে বলেছিল। অথচ বাংলাদেশ সে কাজে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।’

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে না নিয়ে নানা তালবাহানা করছে- একথা জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বাস্তবতায় রোহিঙ্গাদের জন্য মানসম্পন্ন আশ্রয় প্রকল্প নির্মাণে সরকারকে বিপুল অংকের টাকাও ব্যয় করতে হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত খুঁজে পেয়েছে বলে জানিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলেও আখ্যা দিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গা নিপীড়নকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে। তবে বরাবরের মতো মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করে আসছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৩:৫৬ | মঙ্গলবার, ০১ মে ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com