| রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
বাংলাদেশ পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ৩০ বছর গণতন্ত্রের দেখা মেলেনি৷ এই সময় আমরা স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে স্বাধীন দেশের পতাকা দেখেছি। তবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কারণে খুব সহজেই আমরা এখন তুলনা করতে পারি৷ তাছাড়া আমাদের একটা প্রমিজিং জেনারেশন রয়েছে। সেই সময়গুলোতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলা ও লেখা ছিল একটা ট্যাবুর মতো।
আজ (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমির সাহিত্য আব্দুল করিম বিশারদ মিলনায়তনে ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ শীর্ষক গ্রন্থের পাঠ উন্মোচন উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, আসলে সঠিক ইতিহাস অনেক বছর পরেই লেখা হয়। বিষয়টি যারা ইতিহাসের ছাত্র তারা আমার সাথে একমত হবেন। এখন কিন্তু অনেক ইতিহাস বেরিয়ে আসছে ফ্যাক্টস এবং গুগল চেকিংয়ের মাধ্যমে।
বেনজীর আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর ছায়ার মতো সঙ্গী ছিল পুলিশ। সব সময় বাঙালি পুলিশরা তাকে সহায়তা করেছে। আপনারা যদি বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়েন তাহলে আরও বুঝতে পারবেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধিকারের যে আন্দোলন তার সাথে বাঙালি পুলিশ একাত্ম ছিল। এ কারণে যে, তারা সরকারি চাকরি করে বঞ্চনা কী জানতে পেরেছে। তারা এসব দেখেছে ও বুঝেছে। ফলে রাজারবাগে বাঙালি পুলিশদের সাথে পাকিস্তানি পুলিশদের ঝগড়া ফ্যাসাদ হতো। কারণ তারা বাঙালি পুলিশকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতো। আবার বিভিন্ন পেশাগত কাজে তাদেরকে অসহযোগিতা করতো। অথবা তাদের অতিরিক্ত খাটুনি করাতো। এসব কারণে বাঙালি পুলিশরা তাদের বঞ্চনার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারতো। যতদিন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা হবে, ততদিন পুলিশের বীরত্বগাঁথা উচ্চারিত হবে৷ কারণ স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা ছিল বীরত্বগাঁথা।
তিনি পাকিস্তান আমলে পুলিশ সদস্যের ভুমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, ওই সময় বাঙালি পুলিশের বঞ্চনা ছিল। তাদের যোগ্যতা ছিল, কিন্তু বঞ্চনার কারণে তারা সঠিক জায়গায় বসতে পারেনি। তারা সেই সময় তারা যদি স্বাধীন থাকতো তবে যারা কনস্টেবল ছিল তারা এসআই আর যারা এসআই তারা এএসপি পর্যন্ত হতে পারতো। শুধু পরাধীনতার কারণে অনেক বাঙালির জ্ঞান-বিজ্ঞানে পাণ্ডিত্য থাকার পরও তাদের নিম্নপদে কেরানির চাকরি করতে হয়েছে। কারণ বঞ্চনা। ব্রিটিশরা একবার বঞ্চনা করেছে। পরে পতাকা বদল হলে পাকিস্তানিরা বঞ্চনা করেছে। ফলে ভাগ্য বদল হয়নি।
আইজিপি বলেন, গত শতকে দুটি ঘটনা ঘটে গেছে। যা চার হাজার বছরের গতিপথ পাল্টে দেয়। তা হলো, বঙ্গবন্ধুর আবির্ভাব, আরেকটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। ইতিহাসে, চর্চায় বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার যুদ্ধে বীরত্বগাঁথা রয়ে যাবে। সেই যুদ্ধে পুলিশের যে বীরত্বগাঁথা ছিল তা এই গ্রন্থের নমুনা মাত্র।
অনুষ্ঠানে বইটির লেখক ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের উত্তরসূরিরা নির্মম নির্যাতনের শিকার। বঙ্গবন্ধুর আস্থা-বিশ্বাস খুবই বেশি ছিল পুলিশের ওপর। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার যে ঘোষণা, তার প্রথম প্রতিপালন করেছে পুলিশ। প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ করেছে পুলিশই। মুক্তিযুদ্ধ যে শুরু হয়েছে, সেটার জবাবও যে পুলিশ দিয়েছে সেটার মধ্য দিয়ে সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর ম্যাসেজ পৌঁছে যায়।
মুখ্য আলোচক হিসেবে ছিলেন কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও নাট্যজন অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী। তিনি বলেন, রাজারবাগে পুলিশ হাজার বছরের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে বিদ্রোহ করে। পুলিশের ইতিহাস হাজার বছরের। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দিয়ে পুলিশকে বিবেচনা করলে হবে না। পুলিশের ইতিহাস আরও পুরনো।
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সহযোগিতায় ছিল পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড।
Posted ১৭:১৫ | রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain