বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়ার দামী ব্যাগ ও স্যান্ডেলের অভিনব কাহিনি!

  |   শনিবার, ১৯ মে ২০১৮ | প্রিন্ট

মালয়েশিয়ার দামী ব্যাগ ও স্যান্ডেলের অভিনব কাহিনি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ‘হেরমেস বিরকিন’ একটি অত্যন্ত দামী ও বিলাসবহুল ফরাসী হ্যান্ডব্যাগের নাম। একই সাথে এটি সম্পদ ও মর্যাদার আন্তর্জাতিক প্রতীক। এ সপ্তাহে এটি আবারও আলোচনায় এসেছে। তবে এই আলোচনা ধনী উন্নত কোনো দেশে নয়। এটি আলোচিত হচ্ছে রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চের দেশ মালয়েশিয়ায়। সেক্স এন্ড দ্য সিটি – এই টিভি সিরিয়ালের একটি আলোচিত উক্তি- ‘এটা ব্যাগ নয়। এটা বিরকিন -খবর বিবিসি

নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পালাবদলের পর দেশটিতে প্রকাশিত কিছু ছবিতে দেখা গেছে মালয়েশিয়ার পুলিশ একটি শপিং ট্রলি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে, যাতে রাখা কিছু হ্যান্ডব্যাগ। গত বুধবার রাতে একদল সশস্ত্র পুলিশ সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে এসব উদ্ধার করেছে। সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি ৯২ বছর বয়সী রাজনীতিক মাহাথির মোহাম্মদের কাছে পরাজিত হন।

নাজিব রাজাকের সাথে সম্পর্কিত আরো কয়েকটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সেসব বাড়ি থেকে তারা যেসব বিলাসবহুল জিনিস জব্দ করেছে সেসব সরিয়ে আনতে লেগেছে ২০০টি বাকশো। পুলিশ বলছে, একই সময়ে তারা ৭২ ব্যাগ স্বর্ণালঙ্কার, বিভিন্ন দেশের অর্থমূদ্রা, ঘড়িসহ বহু মূল্যবান সামগ্রী উদ্ধার করেছে। পুলিশ বলছে, তারা যেসব জিনিস উদ্ধার করেছে তার মধ্যে রয়েছে হেরমেস বিরকিন ব্র্যান্ডের কমলা রঙের বহু ব্যাগ। (এই রঙটি তাদের নিজস্ব রঙ)। বলা হচ্ছে, এসব ব্যাগের মালিক নাজিব রাজাকের স্ত্রী এবং সাবেক ফার্স্ট লেডি রোজমাহ মানুসরের।

পুলিশের এসব অভিযান অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। তাদের কল্যাণে মালয়েশিয়ার বহু লোকজন প্রথমবারের মতো মূল্যবান এই ব্যাগটি দেখতে পেয়েছেন। তারা দেখেছেন, এসব ব্যাগ রাখা হয়েছে সুপারমার্কেটের শপিং ট্রলিতে। তারপর সেসব ঠেলে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অপেক্ষমাণ পুলিশের একটি ট্রাকের কাছে। তারপর সেগুলোকে ট্রাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্য কোথাও।

নাজিবের আইনজীবী বলছেন, এসবই তার মক্কেলকে হয়রানির উদ্দেশ্যে করা। এবং পুলিশ যেসব জিনিস জব্দ করেছে সেগুলোর যে খুব বেশি দাম সেরকম কিছু নয়।মালয়েশিয়ার অনেক নাগরিক মনে করেন, যেসব বিলাসবহুল সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে সেগুলো নাজিব রাজাকের বিলাসী জীবন এবং কথিত দুর্নীতির অভিযোগের প্রতীক যার জেরে ক্ষমতা থেকে তার পতন ঘটেছে। মালয়েশিয়ার পুলিশ বলছে, রাজধানী কুয়ালালামপুরের বিভিন্ন বাড়িতে অভিযান চালিয়ে যেসব সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে সেগুলোর মালিকানা ও উৎস তারা তদন্ত করে দেখবেন।

নাজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন তহবিল থেকে তিনি ৭০০ মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছেন। কিন্তু সবসময়ই তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষও তাকে এই অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছিল। আরো কয়েকটি দেশে তার দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, মালয়েশিয়ায় আবারও তার বিরুদ্ধে মামলা করা হতে পারে।

গত কয়েক বছরে নাজিব রাজাকের স্ত্রী মিজ রোজমাহর কেনাকাটা করার শখ এবং ব্যান্ডেড জিনিসপত্রের প্রতি তার ভালোবাসার কারণে তিনি প্রচুর সমালোচনাও কুড়িয়েছেন। সোশাল মিডিয়াতেও এসব নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা হয়েছে। হ্যাশট্যাগ দিয়ে টুইটারে ট্রেন্ডিং করেছে বিরকিন ব্যাগ।

একজন টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ভিক্টোরিয়া বেকামের ১০০টির মতো বিরকিন ব্যাগ ছিলো। সেকারণে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে অন্য কেউ তার সিংহাসন দখল করে নিয়েছে। অনেকে লিখেছেন, রোজমাহকে দেখার আগে এরকম একটা ব্যাগের কথা তারা জানতেন না। একজন ব্লগার লিখেছেন, ‘ব্যাগগুলো দেখতে খুব খারাপ। তবে বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের চেয়েও ভালো।’

এই তল্লাশির পর রোজমাহকে আরো কিছু কুখ্যাত নারীর সাথে তুলনা দেওয়া হচ্ছে যাদের একজন ফিলিপিনের ইমেলদা মার্কোস। জুতা আর স্বর্ণালঙ্কারের প্রতি মোহের কারণে তিনি দুর্ণাম কুড়িয়েছেন।

মালয়েশিয়া বুধবার রাতে যা কিছু ঘটেছে তার বিপরীতে নতুন প্রধানমন্ত্রীর একটি ছবিও আলোচনায় এসেছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মাহাথির মোহাম্মদ একজোড়া কম দামী বাদামী স্যান্ডেল পরে একটি মসজিদে গিয়েছেন। তার সমর্থকরা একে দেখছেন তাদের নেতা ‘মিতব্যায়ী বা সংযমের নিদর্শন’ হিসেবে। আর এটি এমন এক সময়ে আলাচিত হচ্ছে যখন মুসলামনদের কাছে সংযমের মাস বলে বিবেচিত রমজান শুরু হয়েছে।

‘আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা মাহাথিরের গুচি কিম্বা হেরমেসের প্রয়োজন নেই। সামান্য বাটার জুতা হলেই তার চলে।’ সোশাল মিডিয়ায় এই মন্তব্য করেছেন তার একজন ভক্ত। কমদামী বাটা জুতা মালয়েশিয়ায় স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুব জনপ্রিয়। এখন রাজনীতিতেও এটি মাহাথিরকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। শুধু মাহাথির নন এই প্রচারণা থেকে মুনাফাও করে নিচ্ছে বাটা কোম্পানি।

বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সংবাদদাতা জনাথন হেড বলছেন, ১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশকে মাহাথিরের প্রথম শাসনামলে প্রচুর দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছিল তার সরকারের বিরুদ্ধে। ফলে চার ডলারের একজোড়া জুতা পায়ে তার ছবি নিশ্চিত কোন অর্থ বহন করে না।

তবে এক সপ্তাহের নাটকীয়তার পর, দৃশ্যত মনে হচ্ছে, ‘চতুর’ রাজনীতিক মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার রাজনীতির নতুন এক অধ্যায় লিখতে যাচ্ছেন এবং একই সাথে আঁকতে যাচ্ছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর ‘খলনায়কসুলভ’ ছবি। আরটিএনএন

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৪১ | শনিবার, ১৯ মে ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com