শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানুষের নিরাপত্তায় আল্লাহর বিশেষ বাহিনী

  |   বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট

মানুষের নিরাপত্তায় আল্লাহর বিশেষ বাহিনী

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী:বান্দার প্রতি আল্লাহতায়ালার দয়া সম্পর্কে যতই চিন্তা করা যায়, ততই হৃদয়-মন অভিভূত হয়ে পড়ে। কৃতজ্ঞতার সেজদায় নুয়ে আসে মাথা। কোনো এক গভীর রাতে কোরআনের মহাসমুদ্রের বেলাভূমিতে হাঁটছিলাম। হৃদয়ে এক অন্যরকম ভাবের ঢেউ খেলছিল তখন। সুরা রাদ পড়া শুরু করেছি। পড়তে পড়তে ১১ নম্বর আয়াতে এসে চমকে উঠি। আয়াতের শুরু হয়েছে এভাবে, লাহু মুয়াক্কিবাতুন… শব্দটির বাংলা তরজমা যা লেখা ছিল মনে হলো এর গভীরতা আরও বেশি। আয়াতটি সম্পর্কে সে ভাবরাত্রির চিন্তাগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরছি।

 

আল্লাহ বলছেন, ‘লাহু মুয়াক্কিবাতুন মিন বাইনি ইয়াদাইহি ওয়া মিন খালফিহি ইয়াহফাজুনাহু মিন আমরিল্লাহ। আয়াতের সরল তরজমা করলে দাঁড়ায়, আল্লাহর নির্দেশে মানুষের সামনে এবং পিছনে একদল প্রহরী নিয়োজিত রয়েছে, যাদের একমাত্র দায়িত্ব তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাকে রক্ষা করা।’ সুবহানাল্লাহ।

 

আয়াতের মুয়াক্কিবাতুন শব্দটি খুবই গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। আরবি মুয়াক্কিবাত শব্দের ব্যাখ্যায় আরব মুফাসসিরগণ লিখেছেন ‘মালাইকাতুন’ অর্থাৎ ফেরেশতামন্ডলী। বাংলা অনুবাদকদের কেউ কেউ ফেরেশতারা ছাড়াও ‘প্রহরী’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। উর্দু অনুবাদকদের অধিকাংশই ‘পালাক্রমে আগমনকারী’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন। ইংরেজ অনুবাদকদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইউসুফ আলী ‘সাকসেশন’ অর্থাৎ ‘ধারাবাহিক বা বিরতিহীনভাবে আগমনকারী দল’ উল্লেখ করেছেন।

আসলে আরবি মুয়াক্কিবাতুন শব্দটি তাকিবুন মাসদার থেকে বাবে তাফয়িল, ইসমে ফায়েলের জামা মুয়ান্নাসের ছিগাহ। শব্দটির অর্থ হলো, পিছনে আসা, ধারাবাহিকতা রক্ষা করা, পালা বদল করা, ক্রমান্বয়ে আসতে থাকা। মৌলিকভাবে আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়, ‘সামনে ও পিছন থেকে পালাক্রমে একদল বাহিনী আল্লাহর আদেশে মানুষকে রক্ষা করে যাচ্ছে।’

 

যেহেতু ফেরেশতা আল্লাহর বিশেষ বাহিনী, তাই মুফাসসিরগণ, মুয়াক্কিবাতুন এর ভাবার্থ মালাইকাতুন বা ফেরেশতার দল লিখেছেন। তাছাড়া বুখারিসহ একাধিক হাদিস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রসুল (সা.) বলেছেন, দিনে রাতে এক দল ফেরেশতা বান্দার হেফাজতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়। এ হাদিসটি মুয়াক্কিবাতুনের অর্থ যে ফেরেশতা এ সম্পর্কে অনেকটা নিশ্চিত করে দিয়েছে।

 

আরেক দল মুফাসসির মনে করেছেন, ফেরেশতা ছাড়াও আল্লাহর আরও বিশেষ বাহিনী থাকতে পারে, তাই তারা ফেরেশতা না বলে প্রহরী বলেছেন। যেহেতু আয়াতে আল্লাহ ফেরেশতা শব্দটি সরাসরি উল্লেখ করেননি, তাই এ দল মুফাসসিরও মুয়াক্কিবাতুনের অর্থ সরাসরি ফেরেশতা না বলে ব্যাখ্যায় ফেরেশতার কথা এনেছেন।

 

তৃতীয় দল মুফাসসির যারা ফেরেশতা ও প্রহরীর বদলে আয়াতের শাব্দিক অর্থ ‘ক্রমান্বয়ে আগমনকারী বা পালাক্রমে আগমনকারী দল’ উল্লেখ করেছেন তাদের যুক্তি হলো- মানুষকে হেফাজত করার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একদল বাহিনী আল্লাহ নিয়োজিত রেখেছেন, যারা একের পর এক আসতে থাকে। সুতরাং তারা ফেরেশতা কিংবা বিশেষ প্রহরী যাই হোক না কেন, তারা আসলে একদল যেতে না যেতেই আরেক দল এসে দাঁড়িয়ে ডিউটির জন্য থাকে। এর মানে হলো, আল্লাহর নিয়োজিত বিশেষ বাহিনী বা ফেরেশতা সর্বক্ষণ আল্লাহর নির্দেশে বান্দাকে হেফাজত করে যাচ্ছে।

 

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় সব মুফাসসির এক বাক্যে স্বীকার করেছেন, জলে-স্থলে সর্বত্র বান্দা যেন কোনো বিপদের সম্মুখীন না হয় এ জন্য একদল বিশেষ ফেরেশতা আল্লাহ নিয়োজিত রেখেছেন। এ ফেরেশতাদের কাজ হলো, অদৃশ্য ইশারায় বান্দাকে সব ধরনের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করা। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো মুফাসসির বিশেষ করে ইবনে আব্বাস (রা.) এ কথাও বলেছেন, যেসব বান্দা আল্লাহর গোলামী করে না, আল্লাহর নাফরমানি করে, গোনাহর পর আল্লাহর কাছে তাওবা করে না এবং এ কারণে তার ওপর আজাব অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে, এসব বান্দার পক্ষ হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্যও একদল ফেরেশতা আল্লাহ নিয়োজিত করে রেখেছেন। সুবাহাল্লাহ।

 

মূলত এটা বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশাল অনুগ্রহ। অনবরত গোনাহের কারণে আজাব যখন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে, তখন যেন বান্দা তাওবা করার আরও কিছু সুযোগ পায় এ কারণে আল্লাহ নাফরমান বান্দার জন্য দোয়া করতে ফেরেশতা নিয়োজিত করেছেন। আর এভাবেই বান্দাকে আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচিয়ে দেন। আয়াতে বলা ‘আমরিল্লাহর’ সূক্ষ্ম রহমানি খেলা এটাই। সুরা শুরার ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ওপর যে বিপর্যয়ই নেমে আসে না কেন, তা আসলে তোমাদেরই কর্মফল। যদিও তিনি অনেক কিছু তোমরা ক্ষমা না চাইলেও এমনিই ক্ষমা করে থাকেন।’

 

তবে এ কথাও সত্য, বান্দা যদি আল্লাহর হুকুম না মানে, নেয়ামত অস্বীকার করে, বিশেষ হেফাজতে থাকা সত্ত্বেও পাপাচারিতায় লিপ্ত থাকে- তাহলে আল্লাহর আজাব ও পাকড়াও থেকে তাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। তাই আলোচ্য আয়াতের শেষে আল্লাহ বলে দিয়েছেন, ‘নিজের ভিতর থেকে না বদলালে অর্থাৎ দৃষ্টিভঙ্গি না বদলালে আল্লাহ কোনো জাতি বা মানুষের অবস্থা বদলান না। যখন আল্লাহ কোনো জনগোষ্ঠীকে তাদের সামগ্রিক পাপাচার ও অন্যায়ের জন্য শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তা রদ করার ক্ষমতা কারও নেই। কারণ আল্লাহ ছাড়া কেউই ওদের রক্ষা করতে পারবে না।’

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৪:৫২ | বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com