| শনিবার, ০৮ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট
বিভাজন ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। রাজপথে এই সংগঠনটির টানা ব্যর্থতায় হতাশ দলের হাইকমান্ড। নতুন এ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চাঙ্গা করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে দলটি এবং এরই অংশ হিসাবে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি করার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।
বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি হওয়ার ইঙ্গিত পেয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পদের লোভে নিজেদের মতো করে রাজপথে সরব হতে শুরু করেছে।নতুন করে যে কমিটি হতে যাচ্ছে তাতে সিনিয়রদের স্থান হবে নাকি তুলণামূলক কম সিনিয়রদের নিয়ে আসা হবে এ নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে বর্তমান কমিটিতে পদ পাওয়ার পর যারা রাজপথে আন্দোলন করার চেষ্টা করেছে তাদেরকে মূল্যায়ণ করা হবে বলে জানা গেছে।
সুত্র জানায়,সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১০১ সদস্য হওয়ার কথা থাকলেও ২৯১ সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটিতে পদ পাওয়ার পর যারা একদিনও রাজপথে নেমে আন্দোলন করেননি ইতিমধ্যে তাদের তালিকা করা হয়েছে।
নতুন কমিটির ক্ষেত্রে ত্যাগীদেরকে মূল্যায়ণ করে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় রাখার চিন্তা রয়েছে বিএনপির হাই কমান্ডের। কমিটিতে পদ পেতে ইতিমধ্যে লবিং তদবির শুরু করেছেন পদ প্রত্যাশীরা।দীর্ঘদিন পর একত্রিত হওয়ার পরও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের ভিন্ন ভিন্নস্থানে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। গত কমিটির মতো এবারও যদি ব্যাবসায়ী, সন্তানের পিতা ও অযোগ্যদের স্থান দেয়া হয় তাহলে আবারো আন্দোলনে ব্যর্থতার পরিচয় দিবে ছাত্রদল। এক্ষেত্রে নিয়মিত শিক্ষার্থী আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভুমিকা রাখবে,অথবা তুলণামূলক কম সিনিয়রদের দিয়ে কমিটি করলে রাজপথে নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখা সম্ভব হবে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে পদপ্রত্যাশী কয়েকজন বলেন, বর্তমান কমিটির যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদেরকে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে তারা গ্রেপ্তার হয়েছেন এমন কথা তাদের বলার কোন সুযোগ নেই।
ঢাবি হল শাখার পদ প্রত্যাশী কয়েকজন কর্মী জানান, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ছাত্রদলের নেতারা প্রকাশ্যে আসেনি। এর আগে হরতাল অবরোধের ঘোষণা হলে অনেকেই মোবাইল বন্ধ করে রাখতেন। যারা এসব কাজ করেছেন তাদেরকে বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও হল কমিটি না হওয়ায় সংগঠনটিতে কর্মী সঙ্কট দেয়া দেয়। ফলে ক্যাম্পাসেও বড় কোন কর্মসূচি পালন করতে পারেনি ছাত্রদল। তবে ঢাবির সুপার ফাইভের কমিটি দেয়ার পর বেশ কয়েকবার ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা চালায় নেতাকর্মীরা।
ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিশ্চিত করতে ঢাবির হল কমিটি গঠনের তালিকা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে দেয়ার পরও এটা নিয়ে নানা নাটকিয়তা দেখা দেয়। পরবর্তীতে ভাগ ভাটোয়ার দ্বন্দ্বে আটকে যায় কমিটি। এজন্য তৃণমূলের কর্মীদের পাশে পায়নি ছাত্রদল। ফলে খালেদা জিয়ার ও ভিডিও বার্তায় তারেক রহমানের ঘোষণার পরও কোন কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, বর্তমান কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে গত ৬ ডিসেম্বর উত্তরার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ এবং ১৭ নভেম্বর দলটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবকে শান্তিনগরের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।তাদের গ্রেফতারের পর সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসিরকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রেপ্তার হন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবেদ। তাকে গ্রেপ্তারের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন সহ-সভাপতি ও ঢাবি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ।জানা গেছে পদ পাওয়ার পর তিনিও মোবাইল ফোন বন্ধ করে নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ফলে দিকনির্দেশনার অভাবে রাজপথের আন্দোলন করতে পারেনি তারা।
অভিযোগ রয়েছে ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন, জেলা ও মহানগর কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিনিয়র নেতাদের অপেক্ষাকৃত জুনিয়রদের নীচে পদ দেয়া, আন্দোলন সংগ্রামে চরম ব্যর্থ।
জানা যায়, ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনে অনেক নাটকিয়তার জন্ম হয়। স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য ও কেন্দ্রীয় কয়েক প্রভাবশালী নেতা অনেকটা খালেদা জিয়ার প্রতি চাপ সৃষ্ঠি করে আব্দুল কাদের ভুইয়া জুয়েলকে সভাপতি ও হাবিবুর রশিদ হাবিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যর কমিটি ঘোষনা করে। এরপর তারা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন।
তবে শীর্ষপদ ঘোষণার আগে তারা খালেদা জিয়ার কাছে ওয়াদা করেছিলেন যেকোন মূল্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবেন। নেতারা খালেদা জিয়াকে এমনও আশ্বাস দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার আন্দোলনের দাবানল ছড়াতে পারলে তা অতি দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। তবে কমিটি ঘোষণার পরে আর সে পথে হাটেননি সেই নেতারা। সংগঠনের মধ্যে নিজের বলয় তৈরী, একক আধিপত্য বিরাজের লক্ষে নিজ অনুসারীদের অত্যাধিক প্রীতি আর বিরোধীদের অবমূল্যায়ন কমিটির শুরুতেই ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয় বর্তমান কমিটি।
বিশেষ করে হরতালে ঢাকা মহানগরের একটা মিছিল পর্যন্ত করতে পারেনি ছাত্রদল। খালেদা জিয়াকে বাসভবনে আটকে রাখার পরেও কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনি ছাত্রদল। এমনকি যেকোন কর্মসূচী ঘোষনা করলেই কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা তাদের মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান। তৃণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের জন্য দেয়া হয়না কোন নির্দেশনাও। কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে তৃনমূল কর্মীরা হতাশ ও অভিবাবকহীন হয়ে পড়েন।
দলের চেয়ার পারসন বেগম খালেদা জিয়ার দিকনির্দেশনায় ছাত্রদলের কমিটি গঠনের দায়িত্ব ছাত্রদলকে দিতে হবে ও ছাত্রদলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে,কাউন্সিল করে, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ছাত্রদলের নেতা নির্বাচন করতে হবে। তবেই ছাত্রদলের নেতৃত্বে কখনোই শূন্যতা দেখা দিবে না।ছাত্রদলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা শুধু রাজপথে ।
Posted ১১:০৬ | শনিবার, ০৮ মার্চ ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin