শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের ভ্রান্তনীতি পরিত্যাগ খুবই প্রয়োজন

  |   রবিবার, ২৩ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট

ভারতের ভ্রান্তনীতি পরিত্যাগ খুবই প্রয়োজন
সিরাজুর রহমান
sherajur-rahman-198x300
সরকার যেন আকাশ থেকে পড়ে গেল। ঢাকায় বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক শেষে ভারত ‘হঠাৎ করেই’ বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে বসল। অন্তত সে ধারণাই দিতে চায় সরকার। তারা বলছে, ভারতের কাছে তারা ঋণ চায়নি। প্রথম দৃষ্টিতে সৌভাগ্যই বলতে হবে। না চাইতেই এমন মোটা অঙ্কের ঋণ! চাইলে না জানি, আরো কত মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে এগিয়ে আসত ভারত! ভাগ্য ভালো। এখন আমি অর্থকষ্টে ভুগছি বলা সত্যের অপলাপ হবে। কিন্তু এক কালে অর্থকষ্ট আমারো ছিল। তখন কেউ অযাচিত ঋণের প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসেনি। বরং ঋণ চাইব ভয় করে কেউ কেউ রাস্তার অন্য দিক দিয়ে হেঁটেছেন।ফাটা কপালের মতো ভারতের এই আকস্মিক ঋণ দেয়ার আগ্রহ সে জন্যই আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। অনেক ভেবেচিন্তে কিছুটা হদিস পাওয়া গেল বাংলাদেশের বাণিজ্যসচিব মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন পাটোয়ারী এবং ভারতের যুগ্মসচিব অরবিন্দ মেহতার কিছু মন্তব্যে। দুই দেশের বৈঠকের সাফল্য সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তারা যেসব কথা বলেছেন, তা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধে ভারতীয় মোটরযান চলাচলের মোটর ভেহিক্যাল চুক্তি, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের কনটেইনার ট্রেন সার্ভিস চালু, নদীপথে ট্রানজিটের জন্য স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বাংলাদেশের ভেতরের লিংক রোডগুলোর উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
আপনাদের মনে থাকার কথা, ভারতের অর্থমন্ত্রী থাকাকালে প্রণব মুখার্জি ঢাকায় এসে ঘোষণা করেছিলেন যে, ভারত বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে। বিস্তারিত বিবরণ পাওয়ার পর জানা গেল, ভারতকে রেল সড়ক ও নদীপথে ট্রানজিট দান এবং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের অধিকার দেয়ার জন্য বাংলাদেশের অবকাঠামোগুলোর উন্নয়নকাজে ব্যবহার হবে সেই ঋণ। ভারত আরো শর্ত দিয়েছিল, অবকাঠামোগুলোর উন্নয়নের কাজ নির্বাহ করবেন ভারতীয় প্রকৌশলীরা এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, উপকরণ ইত্যাদি আসবে ভারত থেকে। অর্থাৎ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ হবে বাংলাদেশে কিন্তু তা থেকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে না।
ঢাকায় উভয় দেশের যৌথ কমিটির বৈঠকে আরো যেসব অবকাঠামো উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে সেসব কাজও খুবই ব্যয়বহুল। ভারত সরকার জানে, ‘সমাজতান্ত্রিক’ দুর্নীতি, ‘ফুটানি প্রকল্প’ এবং বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আসা দ্রুত হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির এখন শোচনীয় দৈন্যদশা। ভারতকে ট্রানজিট, ট্রানশিপমেন্ট ইত্যাদি সুবিধা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যয় নির্বাহের সামর্থ্য এই সরকারের নেই। সম্ভবত সে জন্যই অগ্রবর্তী হয়ে এই ঋণদানের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত, কেননা আওয়ামী লীগ যে কিছু দিন গদিতে আছে, তার মধ্যেই যা তারা পেতে চায় উসুল করে নিতে হবে। নইলে কার্যত অনির্বাচিত সরকারকে গদিতে রেখে দিল্লির সরকার যেভাবে বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভের মাত্রা তীব্র করে তুলেছে, তাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মানুষ ‘যথাসর্বস্ব’ ভারতের হাতে তুলে দিতে রাজি হবে না।
ভারতের দয়া যেতেও কাটে, আসতেও কাটে
ইংরেজি হিতোপদেশ হচ্ছে Beware the Greek bearing gifts  (যে গ্রিক উপহার নিয়ে আসে তার থেকে সাবধান)। এ প্রবাদের উৎপত্তি প্রাগৈতিহাসিক  ট্রয়ের (বর্তমানে তুরস্কে) যুদ্ধ থেকে। দীর্ঘ দিন ট্রয় অবরোধ করে রেখেও গ্রিকরা ট্রোজানদের পরাস্ত করতে পারেনি। শেষে তারা নতুন কৌশল করল। অবরুদ্ধ নগরীর ফটকের বাইরে বিশাল কাঠের ঘোড়া তৈরি করে তারা ভান করল যে, তাদের নৌবহরে চড়ে তারা দেশে ফিরে যাচ্ছে। ট্রোজানরা ভেবেছিল, গ্রিকরা কাঠের ঘোড়াটা তাদের জন্য উপহার হিসেবে রেখে গেছে। বিশাল সেই ঘোড়া টেনে তারা নগর প্রাকারের ভেতরে নিয়ে এলো এবং উৎসবে মেতে উঠল। রাতের আঁধারে গ্রিকরা ফিরে এলো। কাঠের ঘোড়ার পেটে লুকিয়ে থাকা গ্রিক সৈন্যরা নেমে ফটক খুলে দিলো। ঘুমন্ত ট্রোজানদের কচুকাটা করেছিল গ্রিকরা।
ভারতের ঋণদান চুক্তিও সব সময় নিরাপদ মনে করা যাচ্ছে না। যে ‘দয়াদাক্ষিণ্য’ তারা দেখাতে এগিয়ে এসেছে, সেটাও শাঁখের করাতের মতো- যেতেও কাটে আসতেও কাটে। প্রণব মুখার্জি ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিলেন ১.৭৫ শতাংশ সুদে। নতুন প্রস্তাবিত ঋণের জন্য সুদ দিতে হবে লন্ডনের লাইবর (আন্তঃব্যাংক লেনদেনের সুদের হার) সুদের চেয়ে ২.৫ শতাংশ বেশি হারে। লাইবর সুদের হার বর্তমানে দুই থেকে আড়াই শতাংশ। অর্থাৎ নতুন ভারতীয় ঋণের জন্য বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ থেকে ৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে অতীতে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ঋণ পেয়েছে ১ শতাংশেরও কম হারের সুদেÑ সাধারণত শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে। বর্তমান সরকারের ‘দুর্নীতির সমাজতন্ত্র’, পদ্মা সেতু দুর্নীতির হোতাদের শাস্তি দিতে অনিচ্ছা এবং ঝগড়াটে নীতি ও আচরণের কারণে ওই দু’টি বিশ্বসংস্থা এখন আর বাংলাদেশকে ঋণ দিতে এগিয়ে আসে না।
রেমিট্যান্সের দুরবস্থার কারণও এই সরকারের ভ্রান্ত পররাষ্ট্রনীতি। বাংলাদেশ থেকে সর্বাধিক শ্রমিক নিয়োগ করত মূলত উপসাগরীয় মুসলিম দেশগুলো। আওয়ামী সরকারের নীতি ইসলামবিরোধী হিসেবে গণ্য হওয়ার কারণে এসব দেশের সরকার বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ অথবা হ্রাস করে দিয়েছে। সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিদেশী রেমিট্যান্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস ছিল এই দেশ। কিন্তু আমিরাত এখন সরকারিভাবে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের স্বদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে দেশটি। এমনকি এখন থেকে আমিরাত আর কোনো বাংলাদেশীকে ট্রানজিট ভিসাও দেবে না। দেশটি সম্প্রতি ঘোষণা করেছে নেপাল থেকে তিন লাখ শ্রমিক নিয়োগ করে বাংলাদেশী শ্রমিকদের শূন্যস্থান পূরণ করা হবে।
আমিরাতের এই কঠোর অবস্থানের কারণ খুবই স্পষ্ট। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিল কয়েকটা দেশ। দুবাই আর রাশিয়া তাদের অন্তর্ভুক্ত। বাস্তবে বিদেশে বর্তমান সরকারের বন্ধু নেই একমাত্র ভারত ছাড়া। শেখ হাসিনা বন্ধুর সন্ধান করছেন সাবেক সোভিয়েত ব্লকে ভারতের পুরনো মিত্রদের মধ্য থেকে। দৃষ্টান্ত হচ্ছে, গত বছর হাসিনার মস্কো ও বেলারুশ সফর এবং সে দু’টি দেশ থেকে অস্ত্র ক্রয় চুক্তি। বাণিজ্যমেলার জন্য সরকার আমিরাতের পরিবর্তে সমর্থন দিয়েছে রাশিয়াকে। বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে আমিরাত এখন এর প্রতিশোধ নিলো।
সারকথা হচ্ছে, ভারতের প্রস্তাবে সরকার যতই ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করুক, শেষ পর্যন্ত কয়েক গুণ বেশি হারের সুদে সে ঋণ গ্রহণ করতে সরকার বাধ্য হবে। বাংলাদেশের মানুষের মাথা বন্ধক রেখে দেশের স্বার্থবিরোধী এসব কাজ করতে সরকার বাধ্য হচ্ছে এ কারণে যে, দেশবাসীর সমর্থনবিহীনভাবে তারা ক্ষমতায় থাকতে চায়। ভারত সে ব্যাপারে তাদের সব রকমের সাহায্য দিচ্ছে। কিন্তু সে সাহায্য শর্তহীন নয়। বিনিময়ে তারা সর্বাধিক সুবিধা আদায় করে নেবেই।
দূর মেয়াদে ভারত লাভবান হবে না
কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ভারতও এই সরকারের সাথে অন্যায্য চুক্তিগুলো থেকে খুব বেশি লাভবান হবে না। এই সরকার শুধু নতজানুই নয়, সাষ্টাঙ্গে উপুড় হয়ে আছে ভারতের কাছে। সে সুযোগে ভারত ট্রানজিট আদায় করে নিচ্ছে। অনেকের প্রশ্ন, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে কনটেইনার ট্রেনে যে অস্ত্র পাঠাবে না উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যের (সাত বোন) বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য সে গ্যারান্টি আছে কি। এসব কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের নিত্যনতুন ক্ষোভের কারণ সৃষ্টি করে যাচ্ছে দিল্লি সরকার। এ অবস্থায় কনটেইনার ট্রেনগুলো যে বাধার সম্মুখীন হবে না, তার নিশ্চয়তা দেবে কে? তা ছাড়া বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে ট্রানজিট ট্রেন কিংবা লরিতে হামলা করাও সাত বোনের সশস্ত্র আন্দোলনকারীদের সাধ্যাতীত নয়।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং শেখ হাসিনার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে তারা স্বাক্ষর করতে পারলেন না বলে। বাংলাদেশের মানুষ কি খুশি হবে তাতে? আনন্দে হাত তালি দেবে? বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ জানে অভিন্ন নদীগুলোর অবাধ স্রোত এ দেশের অস্তিত্বের ব্যাপার। ফারাক্কায় ভারত বাঁধ তৈরি করেছিল পদ্মার স্রোত পরিবর্তন করে ভাগীরথী দিয়ে প্রবহিত করার লক্ষ্যে। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার সাথে পানি বণ্টন চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু সে চুক্তি অনুযায়ী পানি বাংলাদেশ কোনো বছরই পায়নি। তার পর থেকে অভিন্ন নদীগুলোর ভারতীয় অংশে অন্তত ৩৫টি বাঁধ ভারত তৈরি করেছে বাংলাদেশের পানির হিস্যা কেড়ে নেয়ার জন্য। রাজনৈতিক সমস্যা-সঙ্কটে জর্জরিত বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টি সে দিকে গেছে টিপাইমুখ বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরে। বাংলাদেশের মানুষ এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, কেননা টিপাইমুখ সুরমা-কুশিয়ারা-মেঘনা অববাহিকাকে মরুভূমিতে পরিণত করবে। ওই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা ইলিয়াস আলী সেই যে ২৩ মাস আগে গুম হয়ে গেছেন আজ অবধি তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি খবর পাওয়া গেছে, ভারত অভিন্ন নদীগুলোর পানি ঊষর মধ্য ভারতে নিয়ে যাওয়ার পুরনো পরিকল্পনাটির কাজ শুরু করে দিয়েছে। এ পরিকল্পনামাফিক, সবগুলো নদীর মধ্যে সংযোগ খাল তৈরি করে পানি সুদূর মধ্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে। তাতে সেখানকার মরুভূমি সুজলা-সুফলা হবে কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এর প্রতিক্রিয়া কী হবে? শুধু তিস্তা কিংবা সুরমা-কুশিয়ারাই নয়, কোনো নদী দিয়েই আর যথেষ্ট পানি বাংলাদেশে আসবে না। অথচ মনমোহন সিং ঢাকঢোল পিটিয়ে ২০১১ সালে ঢাকায় এসেছিলেন তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে সই করবেন বলে।আন্তর্জাতিক চুক্তির অবমাননা
শুধু পানির ব্যাপারেই নয়। ভারতের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি। দুই দেশের সীমান্ত সহজীকরণ ও ছিটমহল বিনিময় চুক্তি হয়েছিল ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে। শেখ মুজিব কালবিলম্ব না করে জাতীয় সংসদে সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী পাস করেন এবং বেরুবাড়ী ছিটমহলটি ভারতের হাতে তুলে দেন। কিন্তু ভারত আজো সে চুক্তি অনুমোদন করেনি, তিন বিঘা ছিটমহলটি আজো বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোকে অলঙ্ঘনীয় জ্ঞান করা বিশ্বসভ্যতার অন্যতম খুঁটি। দেশে দেশে চুক্তি যদি লঙ্ঘিত হয় তাহলে আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের মানুষ এখন সঙ্গতভাবেই বলতে পারবে, গণবিচ্ছিন্ন সরকারের সাথে ভারত যেসব চুক্তি করেছে, সেগুলো মেনে চলতে তারা বাধ্য নয়।
ভারত বাংলাদেশের সাথে ন্যক্কারজনকভাবে বিশ্বাসভঙ্গ করেছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে, একটা অনির্বাচিত অবৈধ সরকারকে গদি আঁকড়ে থাকতে সাহায্য করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের পরম বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র তাদের একজন কূটনীতিকের কৃত অন্যায়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছিল। গোটা ভারতজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে তাতে। ওদিকে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে, তার জনগণে গণতান্ত্রিক অধিকারে অহরহ হস্তক্ষেপ করেছে নজিরবিহীনভাবে। অভিযোগ উঠেছে, সরকারিভাবেই তারা এক হাজার কোটি রুপি ব্যয় করেছে বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য। বাংলাদেশের মানুষ সে নির্বাচনকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। ৩০০ আসনের সংসদে ১৫৩ জন সংসদ সদস্যকে ভোটের তারিখের আগেই ‘নির্বাচিত’ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতে নির্বাচন শুরু হচ্ছে কয়েক দিন পরেই। ভারতের জনগণ কি সে নির্বাচনে অন্য কোনো দেশের সামান্যতম হস্তক্ষেপও সহ্য করবে? ভোটারবিহীন নির্বাচন ভারতে হলে সে দেশের জনতা কি পথে নামবে না? তোলপাড় হয়ে যাবে না ভারতে? অথচ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার জন্য ভারতীয় কূটনীতিকেরা বিশ্বব্যাপী তদবির করে বেড়াচ্ছেন।খালেদার আহ্বানে সাড়া দিন
ভারত সরকার, বিশেষ করে ভারতের মানুষ একটা কথা মনে রাখতে পারে। বিগত পাঁচ বছর আড়াই মাসে দিল্লির সরকার বাংলাদেশে যা করেছে সেটা দুই দেশের বন্ধুত্বের সম্পর্কে একটা দুষ্টক্ষত সৃষ্টি করেছে। যতই দিন যাবে সে ক্ষতের পচন ততই মারাত্মক ও প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে। তাদের নামে দিল্লির গণবিচ্ছিন্ন সরকার যা করেছে তার সঠিক চিত্র জানতে পারলে ভারতের জনসাধারণও নিশ্চয়ই প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের মানুষ মনেপ্রাণে বন্ধুত্বের, সহযোগিতার সম্পর্কই চায় ভারতের সাথে। কিন্তু বন্ধুত্ব কখনো একতরফা হতে পারে না। দিল্লির বর্তমান সরকারের অঘোষিত নীতি হচ্ছে, তারা কেবলই নিতে চায়, বিনিময়ে কানাকড়িও দেবে না।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং প্রকাশ্যেই বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মানুষকে ভারতবিমুখ করে তুলছে। এই প্রেক্ষাপটে মানুষের এই ধারণাই হচ্ছে যে, তার সরকারের উসকানিতেই সরকার জামায়াতের এবং সাধারণভাবেই ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে এসেছে। কিন্তু তার পরিণতি কী হয়েছে সাধারণ নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ভারতের ভোটদাতাদের সেটা জানা প্রয়োজন। সাদা চোখেও দেখা যাবে, বিগত পাঁচ বছরে জামায়াতের শক্তি ও সমর্থন অনেক বেড়ে গেছে। দফাওয়ারিভাবে যে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে তাতেও প্রমাণ হয়ে গেছে, অনেক জায়গায় জামায়াত এখন আওয়ামী লীগকে ছুঁই ছুঁই করছে। আওয়ামী লীগের সর্বাত্মক বলপ্রয়োগ এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস না হলে জামায়াত হয়তো আরো অনেক ভালো ফল করত। সাধারণভাবেই বিগত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের রাজনীতি অনেক বেশি ইসলামিভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে। হাসিনার সরকারের চরম নির্যাতন ও দমননীতি সেকুলার বাংলাদেশকে ইসলামি মৌলবাদের দিকে অনেকখানি ঠেলে দিয়েছে।
কলকাতার টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাথে সাক্ষাৎকারে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমানেও বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় জননেত্রী খালেদা জিয়া যথার্থই বলেছেন, ভারতের বর্তমান সরকার বাংলাদেশের মানুষকে বন্ধুত্বের পরিবর্তে ক্রমেই দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারকে সমর্থন দান বন্ধ করতে তিনি ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছেন। বস্তুত দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে এ পথেই- একে অন্যের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার শর্তে। বেগম জিয়া জানেন এবং ভারতের মানুষ আরো বেশি করে জানে, দিল্লির বর্তমান সরকারের আয়ু হয়তো আর বেশি দিন নয়। এপ্রিল-মের সাধারণ নির্বাচন সব কিছু ওলটপালট করে দিতে পারে। সে জন্য এটা মনে করাই সঠিক হবে যে, বেগম জিয়া প্রকৃতপক্ষে তার আকুল আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের ভোটারদের উদ্দেশে। লোকসভার নির্বাচনে ভোট দেয়ার সময় তারা সে আহ্বানের কথা মনে রাখলে দুই দেশেরই কল্যাণ হবে।

 লন্ডন, ১৮.০৩.১৪

সিরাজুর রহমান: বিবিসি বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান
serajurrahman34@gmail.com

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১০:৪৪ | রবিবার, ২৩ মার্চ ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com