শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

ভারতকে হারিয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশের মেয়েরা

  |   রবিবার, ১০ জুন ২০১৮ | প্রিন্ট

ভারতকে হারিয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশের মেয়েরা

ক্রিকেট সম্ভবত এমনই! শেষ বল পর্যন্ত থাকবে টান টান উত্তেজনায়। গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলাটি শেষ বল কেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও নিশ্চিত হয়নি কে জিততে পারবে! অবশেষে শেষ বলে যখন জাহানারা এবং সালমা দু’বারের জন্য জায়গা পরিবর্তন সফলভাবে করতে সক্ষম হলো, তখনই বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠলো পুরো বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের কিনরারা একাডেমি ওভাল মাঠ থেকেই বিজয়ের ঢেউ ছড়িয়ে পড়লো পুরো বাংলাদেশের প্রতিটি শহর, থেকে গ্রামে।

প্রচণ্ড তাপদাহে জীবন ওষ্ঠাগত। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। চারদিকে দুঃসংবাদের ছড়াছড়ি। এমন পরিবেশেও বাংলাদেশের মানুষের আশা-ভরসার একটা জায়গা ছিল, ক্রিকেট। কিন্তু ভারতের দেরাদুন থেকে চরম হতাশাই উপহার দিয়েছিল সাকিব আল হাসানরা। আফগানিস্তানের মতো দলের কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় পুড়তে হলো পুরুষ ক্রিকেট দলকে। সেই আশা-ভরসার ক্রিকেটও যেন পথ হারিয়ে বসেছিল দেরাদুনে গিয়ে; কিন্তু সত্যিই কি ক্রিকেট এত সহজে হারতে পারে? পারে না।

পারে না বলেই, পুরুষ ক্রিকেটাররা না পারুক, নারী ক্রিকেটাররাই বয়ে নিয়ে এলো বাংলাদেশের জন্য দারুণ এক গৌরব। তৈরি করলো এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ক্রিকেটের ইতিহাসে (হোক সেটা পুরুষ কিংবা নারী) বাংলাদেশকে প্রথম কোনো ট্রফি জয়ের স্বাদ দিলো বাংলাদশের নারী ক্রিকেটাররা। কুয়ালালামপুরের কিনরারা একাডেমি ওভাল মাঠে নারী ক্রিকেটের পরাশক্তি ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা জিতে নিলো বাংলাদেশ। ঈদের আগেই বাংলাদশকে ভাসালো ঈদের আনন্দে।

এই ভারতই এশিয়া কাপের আগের ৬ আসরের টানা ৬বার চ্যাম্পিয়ন। সবচেয়ে মজার বিষয়, নারী এশিয়া কাপের আগের ৬ আসরে একটি ম্যাচও হারেনি ভারতের মেয়েরা। এবার তারা হারলো দুটি ম্যাচ এবং দুটিই বাংলাদেশের কাছে। সর্বশেষ ফাইনালে বাংলাদেশের উজ্জীবিত নারী ক্রিকেটারদের কাছে হেরেই ভারতের গৌরবের সমাপ্তি ঘটে গেলো।

কুয়ালালামপুরের কিনরারা ওভাল স্টেডিয়ামে শেষ মুহূর্তে তৈরি হয়েছিল দারুণ উত্তেজনা। স্নায়ুক্ষয়ী পরিস্থিতি। টানটান উত্তেজনা। পেন্ডুলামের মতো দুলছিল পুরো ম্যাচ। কে জিতবে, নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারছে না। এমনই পরিস্থিতিতে শেষ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায় ৯ রান। বোলিংয়ে ভারতের অধিনায়ক এবং অন্যতম সেরা বোলার হারমানপ্রিত কাউর। ব্যাটসম্যান সানজিদা রহমান এবং রুমানা আহমেদ।

সানজিদা এবং রুমানা আহমেদ দু’জনই মোটামুটি সেটা ব্যাটসম্যান। রুমানা তো আশা-ভরসারই প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। হারমানপ্রীত কাউরের কাছ থেকে ১ রান নিয়ে রুমানাকে স্ট্রাইকে পাঠান সানজিদা। দ্বিতীয় বলে এক্সট্রা কভার দিয়ে ৪ মেরে সমীকরণ সহজ করে নেন রোমানা। পরের বলে ১ রান নিয়ে লক্ষ্যমাত্রাটা ৩ বলে ৩ রানে নামিয়ে আনেন রোমানা।

চতুর্থ এবং পঞ্চম বলে তৈরি হয়েছিল চরম নাটকীয়তা। ছক্কা মারতে গিয়ে লংঅনে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন সানজিদা। তখনো ২ বলে প্রয়োজন ছিল ৩ রান। তবে স্ট্রাইকে রোমানা থাকায় আশা বেঁচে ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু ২ রান নিতে গিয়ে রানআউটে কাঁটা পড়েন ২২ বলে ২৩ রান করা রোমানা। নিজের ভুলের কারণে রানআউট হয়ে যান তিনি।

শেষ বলে প্রয়োজন ২ রান। জাহানারা আলম উইকেটে। হারমানপ্রিতের অফস্টাম্পের বলে সুইপ করেই পড়িমড়ি দৌড় লাগান স্ট্রাইকে থাকা জাহানারা। অনেকটা অসম্ভব এক ডাবল নিয়েই উল্লাসে ফেটে পড়ে জাহানারাসহ পুরো বাংলাদেশ দল। স্টেডিয়ামে উপস্থিত বাংলাদেশি দর্শক-সমর্থকরা নেমে আসেন মাঠে। আনন্দ-উল্লাস করতে শুরু করেন নারী ক্রিকেটারদের ঘিরে।

এর আগে ভারতের ছুড়ে দেয়া ১১৩ রানের চ্যালেঞ্জ তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশকে দারুণ সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার শামীমা সুলতানা এবং আয়েশা রহমান। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভার থেকে বিনা উইকেটে ৩৩ রান করে বাংলাদেশ। ইনিংসের সপ্তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন ভারতীয়দের সেরা বোলার পুনম।

ওভারের শেষ দুই বলে দুই ওপেনারকেই সাজঘরে পাঠিয়ে দেন পুনম। দুই ওপেনার শামীমা ১৬ এবং আয়েশা করেন ১৭ রান। তৃতীয় উইকেটে ২০ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়েন নিগার সুলতানা জ্যোতি এবং ফারজানা হক পিংকি। এই জুটিও ভাঙেন লেগস্পিনার পুনম। ১১ রান করে ফেরেন ফারজানা।

চতুর্থ উইকেটে বাংলাদেশ ইনিংস এগিয়ে নেন রোমানা আহমেদ এবং নিগার সুলতানা জ্যোতি। মাত্র ২২ বলে ৩০ রান যোগ করে এই জুটি। নিজের শেষ ওভার করতে এসে আবারো জুটি ভাঙেন পুনম। কোমরের অনেক উপরের ফুলটস বল উইকেট ছেড়ে ছক্কা মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ধরা পড়েন জ্যোতি।

উইকেট ছেড়ে অনেক এগিয়ে আসায় নো বল থেকে বেঁচে যান পুনম। আউট হওয়ার আগে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন জ্যোতি। তার বিদায়ে উইকেটে এসেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন ফাহিমা খাতুন। স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ধরা পড়ার আগে ১ চারের মারে ৭ বলে ৯ রান করেন ফাহিমা। অপর প্রান্তে বাংলাদেশের আশা বাঁচিয়ে রাখেন রোমানা।

শেষের ৩ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৩ রান। ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রিতের করা ওভার থেকে ১০ রান নিয়ে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু ১৯ তম ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফেরান দীপ্তি শর্মা। শেষ ওভারে বাকি জয়ের জন্য বাকি থাকে ৯ রান। ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রিত কাউরের কাছ থেকে এই ৯ রান নিয়ে বিজয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশ।

এর আগে টস জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশের অধিনায়ক সালমা খাতুন। ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই চাপে পড়ে যায় ভারতীয়রা। ইনিংসের ৪র্থ ওভারে রানআউটের মাধ্যমে প্রথম ব্রেকথ্রু পায় বাংলাদেশ। নাহিদা আকতারের দুর্দান্ত থ্রো’তে ৭ রান করে ফেরেন স্মৃতি মান্ধানা। রানের চাকা থামিয়ে দেন সালমা-নাহিদারা।

ইনিংসের ৭ম ওভারে দীপ্তি শর্মাকে সরাসরি বোল্ড করে সাজঘরের পথ দেখান জাহানারা আলম। পরের ওভারেই মিথালি রাজকে ফারজানা হকের হাতে ক্যাচে পরিণত করেন খাদিজা তুল কুবরা। তার এক ওভার পরে উইকেটরক্ষক শামীমা সুলতানার থ্রো ইচ্ছাকৃতভাবে থামিয়ে আউট হন অনুজা পাতিল।

পঞ্চম উইকেটে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন অধিনায়ক হারমানপ্রিত এবং ভেদা কৃষ্ণামুর্থি। ১৩তম ওভারে কৃষ্ণামুর্থিকে সরাসরি সরাসরি বোল্ড করে জুটি ভাঙেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সালমা খাতুন। অপরপ্রান্তে বাংলাদেশের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে খেলতে থাকেন হারমানপ্রিত।

অষ্টম উইকেটে অভিজ্ঞ ঝুলন গোস্বামিকে নিয়ে ৩৩ রানের জুটি গড়েন হারমানপ্রিত। আউট হওয়ার আগে ১১ রান করেন ঝুলন। ইনিংসের শেষ বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন হারমানপ্রিত। ক্যারিয়ারের ৫ম হাফসেঞ্চুরিতে ৫৬ রান করেন তিনি। ভারতের ইনিংস থামে ৯ উইকেটে ১১২ রানে।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৭:১৭ | রবিবার, ১০ জুন ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com