বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাইবোনের টান ছিয়াশির প্রতিদান

  |   বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

ভাইবোনের টান ছিয়াশির প্রতিদান

maksodul alam

মাকসুদুল আলম, টোকিও থেকে: ঢাকায় নাকি এখন কেউ আর নাটক দেখতে বেইলি রোডে যায় না। রাজনীতিই এখন সবচেয়ে বড় নাটকে পরিণত হয়েছে। পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালে কিংবা ঘরে বসে টিভি চালু করলেই তা উপভোগ করা যায়। জীবন বাজি রেখে বাইরে বের হওয়ার দরকার পড়ে না। সমপ্রতি নির্বাচনকালীন চারদলীয় সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা পুনর্গঠিত করা হয়েছে। নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৮ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও একজন উপদেষ্টাকে। আগের ৬৫ সদস্যের মন্ত্রিসভা বহাল না বাতিল তা এখনও স্পষ্ট করা হয়নি। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। পুরনো মন্ত্রিসভা বহাল থাকলে উপদেষ্টাসহ বর্তমানে বাংলাদেশে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা ৭৪। আমেরিকার মন্ত্রিসভার প্রায় পাঁচ গুণ। মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করার আগে বেশ কিছুদিন নাগাদ মঞ্চস্থ হয়েছে আলোচিত নাটক ‘বউ তালাক দিয়ে শ্বশুরবাড়ি আনাগোনা’। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নিজেদের সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী পদত্যাগ করে বেকায়দায় পড়েছিল সরকারের আগের দফার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। পরে অবশ্য বেমালুম অস্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে- ‘পদত্যাগ করা হয়নি, আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে মাত্র। পদত্যাগের অভিপ্রায় প্রকাশ করা হয়েছে।’ সারা দেশবাসীর সমালোচনা এড়াতে আরও বলা হয়েছে ‘পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করলেও তাতে তারিখ দেয়া হয়নি। পদত্যাগপত্র প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো হয়নি’ ইত্যাদি। পদত্যাগ নাটকে জনগণকে বিভ্রান্ত করায় সরকারের পদত্যাগী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অবৈধ ও অসাংবিধানিক কার্যক্রমকে সহযোগিতা ও অনুমোদন প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন মালিক। দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, সরকারের ৪৯ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগের পর অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রীয় পতাকা উড়িয়েছেন। প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে সরকারি গাড়ি ও বাড়ি ব্যবহার করেছেন। বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি নিয়েছেন।
আইন ও সংবিধান বিষয়ে কোন জ্ঞান নেই। মামলার রায় নিয়ে কথা বলার ধৃষ্টতাও দেখাতে চাই না। তাই প্রসঙ্গ পাল্টানো যাক। বাংলাদেশের প্রাক-নির্বাচনী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সব খেলোয়াড় এখন মাঠে সরব। খেলার মাঠ অবশ্য সবার জন্য সমান নয়। এবড়ো খেবড়ো। খেলোয়াড়দের কেউ সামনে কেউ একটু পেছনে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে। আশপাশেই রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, সেনাবাহিনী, জাতীয় পার্টি ও হেফাজতে ইসলাম। পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে অন্যরা। অনেকটা গায়ের জোরেই মাঠ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে জামায়াতে ইসলামীকে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জামায়াতে ইসলামীকেও নির্বাচনী খেলায় দেখতে চায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে পার্শ্ববর্তী দেশে থেকে বস্তাভর্তি টাকার প্রতিশ্রুতি এসেছে কিনা জানা নেই। আপাতত ছক কষা হয়েছে বিরোধী প্রতিপক্ষ ছাড়াই একতরফা নির্বাচনের। ১৯৮৬ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে। ঠিক যেন নাটকের পুনঃপ্রচার। অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভাইবোনের প্রতিদানের নির্বাচন। প্রয়াত চিত্রশিল্পী পটুয়া কামরুল হাসানের দেয়া উপাধি ‘বিশ্ববেহায়া’ খ্যাত ভাইকে নাকি ৬০০ কোটি রুপির লোভ দেখানো হয়েছে। নির্বাচন বর্জনকারী সরকার বিরোধী বেশ কয়েকটি ছোট ছোট দলকেও আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে সে মিশন। শেষ বয়সে প্রবীণ রাজনীতিকদের দালাল বানানোর পাঁয়তারা করা হয়েছিল। পল্লীবন্ধুর দরকষাকষির ফাঁদে পা দেননি প্রবীণ ওই নেতারা। ফলে মৃত্যু হয়েছে সাবেক স্বৈরাচারের রাজনৈতিক স্বপ্নের। নির্বাচনী মাঠে পথ হারিয়েছেন তিনি। দিশেহারা হয়ে বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছেন। সকাল হতে না হতেই ঢাকা থেকে বিমানযাগে আচমকা ছুটে গেছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। সমর্থন চেয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমিরের। ধর্মকে পুঁজি করে ব্যবসা করতে আলেম-ওলামাদের ভোট ব্যাংকও নিজের ভাগে আনতে চেয়েছেন। ১৩ দফা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাতেও কোন লাভ হয়নি। খালি হাতে ঢাকায় ফিরতে হয়েছে। বেশি খেলতে গিয়ে পানিতে ডুবে মরতে হয়েছে। অবশেষে জনগণের আইওয়াশ করতে মহাজোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ভাইবোনের এই নাটকীয় বিচ্ছেদে কোন বিরহ নেই। মনে কোন কষ্ট নেই। বোন হয়তো মুচকি হেসে বলছেন- ‘আই অ্যাম নট আনহ্যাপি ফর দিস সেপারেশন।’ মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়ায় বরং নির্বাচনকালীন চারদলীয় সরকারের রূপ কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ’৮৬  সালের ছোট বোনের প্রতিদান দিতে একতরফা নির্বাচনে গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার খোয়াব আরও সমপ্রসারিত হয়েছে। বড় ভাই এক সময় বলেছিলেন ‘নির্বাচনে গেলে মানুষ তাকে থুতু দেবে’। সুর পাল্টিয়ে এখন বলছেন ‘নির্বাচনে না গেলে মানুষ তাকে থুতু দেবে’। পটুয়া কামরুল হাসান বেঁচে থাকলে হয়তো ভাল বলতে পারতেন মানুষ আসলে তাকে দেখে কি ছিটাবে। সাবেক সেনাশাসক আরও বলেছিলেন ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু হবে না। তাই একতরফা নির্বাচন ও সর্বদলীয় সরকারে অংশ নেবে না জাতীয় পার্টি।’ সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেহেশতেও যেতে রাজি নই।’ বাস্তবতা পুরোই উল্টো। বস্তাভর্তি টাকার ফায়দা লুটতে ডিগবাজি দিয়েছেন তিনি। নিজের স্ত্রীসহ সাতজনকে নিয়ে চারদলীয় সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় হালুয়া রুটির ভাগ পেতে খাতায় নাম লিখিয়েছেন। বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়াস করিমের মতে, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মতো কেউ যেন ইতিহাসে জন্ম না নেয়।’
নির্বাচনী মাঠে হঠাৎ সুর নরম হয়েছে বড় খেলোয়াড় ভারতের। বিরোধী দলবিহীন একদলীয় নির্বাচন করে সরকার গঠন করলেও তা শেষ পর্যন্ত টিকতে পারবে না ভেবেই বাংলাদেশ প্রশ্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুর মেলানো শুরু করেছেন তারা। ভোল পাল্টাতে আগামী নির্বাচন সম্পর্কে বিবৃতি প্রকাশ করেছেন ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন। তাতে বলা হয়েছে- ‘বাংলাদেশের জনগণই তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ভারত বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থন করে।’ বন্ধুত্ব প্রকাশ করতে বিবৃতির প্রয়োজন হয় না। কাজকর্মেই তা প্রকাশ পায়। আরেক বড় খেলোয়াড় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সামপ্রতিক বাংলাদেশ সফরেও চলমান রাজনৈতিক সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। দফায় দফায় বৈঠক করে ঢাকায় তিন দিন ব্যস্ত সময় কাটালেও কোন ফল হয়নি। গতানুগতিক ধারায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেই দায়িত্ব সেরেছেন তিনি। এদিকে নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলাপ আলোচনার জন্য ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে বঙ্গভবনে যাওয়ার কথা রয়েছে বিরোধীদলীয় নেতার। নির্বাচনে সব দলের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করা ছাড়াও নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান প্রশ্নে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিকল্প হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে কোন প্রস্তাব রাখা হতে পারে। বর্তমান সংবিধানে হয়তো রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনিচ্ছাই হয়তো আসল সংবিধান। তারপরও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মুরুব্বি হিসাবে রাষ্ট্রপতির সদিচ্ছার যথেষ্ট মূল্য রয়েছে। রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে সাধারণ জনগণ তার সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখতে চায়। গঠনমূলক কোন শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। শুধুমাত্র কবর জিয়ারত করা ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাষ্ট্রের দুর্ধর্ষ খুনিদের মাফ করে দেয়াই রাষ্ট্রপতির কাজ হতে পারে না।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০০:৪৯ | বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com