| বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৪ | প্রিন্ট
যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিয়ানীবাজারের দুই প্রজন্মের কৃতি সন্তানদের সংবর্ধনা দিলো প্রবাসী বিয়ানীবাজারবাসীদের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে। প্রাইড অব বিয়ানীবাজার হিসেবে সম্মাণনা জানানো হয় আরো চার কীর্তিমানকে। একই অনুষ্ঠানে ট্রাস্টের উদ্যোগে ও সরাসরি তত্ত্বাবধানে বিয়ানীবাজারের গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর নির্মান করে দেয়ার চলমান প্রকল্পের জন্যও সংগ্রহ করা হয় বিপুল পরিমাণ তহবিল।
যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বিয়ানীবাজারের কয়েকজন প্রবীন ব্যক্তিত্ব, যাঁরা কমিউনিটির কল্যানে সারা জীবন কাজ করে গেছেন, তাদের অসমান্য অবদানের স্বীকৃতি দিতে এবং তরুণ প্রজন্ম, যারা পরীক্ষায় অসাধারণ সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে কমিউনিটির মুখকে উজ্জল করছে, তাদেরকে সম্মাণনা প্রদান করে আরেকটি নতুন নজির স্থাপন করলো বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে। ২৭ এপ্রিল রোববার, পূর্ব লন্ডনের মেনর পার্কে অবস্থিত রয়েল রিজেন্সির নান্দনিক বিশাল হল রুমে প্রায় ৭ শতাধিক প্রবাসীর প্রাণজ উপস্থিতিতে এই সম্মাণনা প্রদান করা হয়। দুই প্রজন্মের মধ্যে সেতুবন্ধনের পাশাপাশি সকল প্রবাসীর পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ককে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেয়ার অনন্য এক আয়োজন ছিলো এই অনুষ্ঠান।
বৃটেন প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে যে কয়েকটি সংগঠন নিজেদের এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে দিনের পর দিন অবদান রেখে চলেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে। গত বছর সংগঠনের এক যুগ পূর্তি অনুষ্ঠান হয়েছিলো অত্যন্ত সাড়ম্ভে। বিয়ানীবাজারে দু:স্থ গৃহহীনদের ঘর বানিয়ে দেয়া, রিকশা প্রদান, শিক্ষার উন্নয়নে কম্পিউটার প্রদান ইত্যাদি নানা অসাধারণ কল্যানমূখি প্রকল্প নিয়ে কাজ করে বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ব্রিটেন সহ ইউরোপে এবং স্বদেশে আজ অত্যন্ত মর্যাদাকর ও শক্তিশালী সামাজিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। বিয়ানীবাজারের ১৬ জন বিশিষ্ট মুরব্বী ও কমিউনিটি নেতা, ১৬ জন কৃতি শিক্ষার্থী এবং ৪ জন কৃতি সন্তানকে সম্মাণনা জানাতে আয়োজিত এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে’র সভাপতি, বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও সমাজসেবী জনাব মুহিবুর রহমান মুহিব।
ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক মো: দেলওয়ার হোসেন ও রহিমা বেগমের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পরিবেশিত হয় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। এসময় সবাই দাড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনুষ্ঠানের সূচনা পর্বটি উপস্থাপন করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আহমদ রাজু। অনুষ্ঠানে অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টের সভাপতি জনাব মুহিবুর রহমান মুহিব। তিনি বলেন, বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট তার কর্ম তৎপরতার মাধ্যমে সকলের কাছে একটা মর্যাদার আসন লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু প্রবাসী বিয়ানীবাজারবাসীরাই এর ট্রাস্টি হচ্ছেন না, আজ এখানে আমরা এমন কয়েকজন মহৎপ্রাণ ব্যক্তিকে উপস্থাপন করবো, যারা আমাদের কার্যক্রম ও সাংগঠনিক তৎপরতায় অনুপ্রাণিত হয়ে অনারারি ট্রাস্টিশীপ গ্রহণ করে আমাদের সকলকে অশেষ ঋণে আবদ্ধ করেছেন।
তিনি ট্রাস্টের উদ্যোগে ও সরাসরি তত্ত্বাবধানে বিয়ানীবাজারের গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর নির্মান করে দেয়ার চলমান প্রকল্পে যারা আর্থিক অনুদান দিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি ট্রাস্টের গৃহায়ন প্রকল্পে অংশ নেয়ার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিয়ানীবাজারের যে ১৬ জন বিশিষ্ট মুরব্বী ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্বকে সংবর্ধনা জানানো হয়। তাঁরা হলেন, জনাব আলহাজ্ব মানিক মিয়া (সোনা মিয়া), জনাব আতিকুর রহমান খান, আলহাজ্ব শামস উদ্দিন খান, আলহাজ্ব আব্দুল মালিক হামিদ মিয়া, আলহাজ্ব এম এ মতলিব, ডা: আলাউদ্দিন আহমেদ, আলহাজ্ব মো: শফিক উদ্দিন, জনাব মো: আব্দুর রব, আলহাজ্ব মাহমুদুর রশীদ, আলহাজ্ব মনজির আলী, আলহাজ্ব আব্দুল কাদির, ডা: এ কে এম জাকারিয়া, আলহাজ্ব মো: আব্দুল মতিন, আলহাজ্ব মসব্বির আলী ও আলহাজ্ব মো: ফজলুল হক। আলহাজ্ব মো: আব্দুল রাজ্জাককে প্রদান করা হয় মরণোত্তর সম্মাণনা। সংবর্ধিত মুরব্বীদের ট্রাস্টের মনোগ্রাম খচিত উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয় ও প্রদান করা হয় সম্মাণনা ক্রেস্ট।
এরপর এওয়ার্ড প্রদান করা হয় ২০১৪ সালের জিসিএসই, ডিপ্লে¬ামা ও এ-লেভেল এ বিশেষ কৃতিত্ব অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের। তারা হচ্ছেন জিসিএসই-তে আবিদা ইসলাম (৬ এস্টার, ৪ এ), আদিল আহমদ (৬ এ স্টার, ৩ এ), কামরান হোসেন (৬ এ, ৪বি), নাহিদা রহমান (৯ এ স্টার, ১ এ), তামান্না রহমান (৬ এ স্টার, ২ এ), তানজিনা জাহান হক (১০ এ স্টার, ১ এ), তাসনিম রওশন কামাল (১০ এ স্টার, ১ এ) এবং উবায়েদ তানজিম (৪ এ স্টার, ৪ এ)। ডিপ্লোমায় নাদিয়া সিদ্দিকা (ডাবল ডিস্টিঙ্কশন) ও সামিয়া আহমদ (ডাবল ডিস্টিঙ্কশন)। এ লেভেলে খালেদ আহমদ উদ্দিন (১ এ স্টার, ২ এ, মাহিদ আহমদ চৌধুরী (৩ এ স্টার, ১ এ), মহিমা আহমদ (১ এ স্টার, ২ এ) ও নিশি চৌধুরী (৩এ)
বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট তাদের এওয়ার্ড কার্যক্রমে এবার আরেকটি নতুন সংযোজন এনেছে। তা হলো-প্রাইড অব বিয়ানীবাজার হিসেবে বিয়ানীবাজার তথা গোটা বাংলাদেশকে যারা গৌরবান্বিত করে যাচ্ছেন, তাদের সম্মাণনা প্রদান করা। প্রাইড অব বিয়ানীবাজার এওয়ার্ড লাভ করেন চার জন কৃতি সন্তান, যাদের কারণে বাংলাদেশ ও বাঙালি কমিউনিটি আজ গৌরবান্বিত। তাঁরা হলেন, সার্কিট জাজ, ব্যারিস্টার স্বপ্নারা খাতুন, সবচেয়ে সফল এশিয়ান ফুটবল প্রজেক্ট লন্ডন টাইগারস’ এর চীফ এক্সিকিউটিভ মেসবাহ আহমদ, বিশ্বের প্রথম সৌরচালিত মাল্টিকপ্টার ডিজাইন ও নির্মানকারীদের একজন শাকির আহমদ এবং ৫০ মিলিয়ন ডলার বার্ষিক টার্নওভারের গবেষনা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, ম্যাথওয়ার্কস ইউকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শামিম আহমদ।
সংবর্ধিত এই চার প্রাইড অব বিয়ানীবাজার তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় এমন সম্মাণনা পেয়ে তারা নিজেদের গর্বিত বলে উল্লে¬খ করেন। তাঁরা বলেন আজ যেসকল শিক্ষার্থী এখানে এওয়ার্ড পেয়েছে, একদিন তারাও বিয়ানীবাজারের শুধু নয়, গোটা বাংলাদেশের মুখকে সারা বিশ্বে উজ্জল করবে। তারাও একদিন একেকটি নক্ষত্র হিসেবে আবির্ভূত হবে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইংল্যান্ডের প্রথম নির্বাচিত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মেয়র, টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান, স্থানীয় এমপি স্টিফেন টিমস্, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন, অল ইউরোপীয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা) এর চীফ এডভাইজার আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত তোজাম্মল টনি হক, বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের বাংলাদেশ কো-অর্ডিনেটর মোশতাক আহমদ এবং নিউহ্যাম কনজারভেটিব পার্টির মেয়র ক্যান্ডিডেট স্টিফান ম্রোজিনস্কি, টাওয়ার হ্যামলেটস বারায় লেবার দলীয় মেয়র পদপ্রার্থী জন বিগস্, এনসিএল ট্যূরস্ এর সিইও নাজিম উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের যুগান্তকারী নানা কল্যানমুখি কার্যক্রমে অভিভূত হয়ে অনারারি ট্রাস্টি পদ গ্রহণকারী বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, কমিউনিটি নেতা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সর্বজনাব টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর হেলাল আব্বাস (বালাগঞ্জ, সিলেট), মোসলেহ উদ্দিন আহমদ (গোলাপগঞ্জ, সিলেট), মইনুল আমিন বুলবুল (নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ), শওকত মাহমুদ টিপু (চট্টগ্রাম), শাহনুর খান (কুলাউড়া, মৌলভিবাজার), নুরুল করিম (কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী), তারাউল ইসলাম (রাজনগর, মৌলভীবাজার), মো” ফয়জুল হক (বিশ্বনাথ, সিলেট), আব্দুল বারী (দক্ষিণ সুরমা, সিলেট), ঢাকার ট্রাস্ট কলেজের চেয়ারম্যান খালেদ চৌধুরী (ছাতক, সুনামগঞ্জ), লন্ডন আইকন কলেজের প্রফেসর ড. নুরুন্নবী (চট্টগ্রাম), গোলাম কিবরিয়া (বালাগঞ্জ, সিলেট), সুফিকুল ইসলাম (দিরাই, সুনামগঞ্জ), দরস আহমদ (বালাগঞ্জ, সিলেট) এবং লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমিরুল ইসলাম চৌধুরী (জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ)। এই ১৫ জন অনারারি ট্রাষ্টি ছাড়াও ২৬ জন সাধারণ ট্রাষ্টি পদ গ্রহন করেন।
অনুষ্ঠানের ফান্ড রেইজিং পর্বে অনেকেই ট্রাস্টের গৃহ নির্মান প্রকল্পে অর্থ সহযোগিতার কথা ঘোষনা করেন। দুই কক্ষ বিশিষ্ট টিনশেড এর একটি পাকা ঘর নির্মাণে বাংলাদেশী টাকায় ৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। অনুষ্ঠানে ৮টি ঘর নির্মাণে আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। যাঁরা এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা হলেন, সর্বজনাব খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর খান ও আব্দুল আলী ফজলু, হাজী আব্দুস শফিক, এনামুল মুনিম শামীম লোদী, ট্রাস্ট কলেজের চেয়ারম্যান খালেদ চৌধুরী, মনজির আলী, আলহাজ্ব বাজিদুর রহমান, মাথিউড়া উন্নয়ন সংস্থা, মুহিনুর রেস্টুরেন্ট গ্রুপ এবং ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট মুহিবুর রহমান মুহিব। অনারারি ট্রাস্টি ও সাধারন ট্রাষ্টি খাতে ২০,৫০০ পাউন্ড এবং গৃহ নির্মান প্রকল্প খাতে ১৯ হাজার পাউন্ড, সর্বমোট ৩৯,৫০০ পাউন্ড তহবিল সংগৃহিত হয়। সম্মাণনা অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে ছিলো সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সবশেষে অনুষ্ঠিত হয় নৈশভোজ।
Posted ১০:৫৭ | বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin