এম এম হারুন আল রশীদ হীরা; নওগাঁ : ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁর মান্দায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরন মামলার এহাজারভূক্ত আসামি ছিলেন বিএনপিকর্মী বিদ্যুৎ হোসেন (৪৫)। নির্বাচন চলাকালিন প্রচার-প্রচারণা পোস্টারে আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকের ছবি বিকৃতি করায় নেতাকর্মীদের হাতে মারধরের শিকার ও হয়েছিলেন তিনি।
সেই বিএনপিকর্মী বিদ্যুৎ হোসেনকে আওয়ামীলীগকর্মী সাজানোর অভিযোগ উঠেছে একটি মহলের বিরুদ্ধে। কারণ তার বিরুদ্ধে মামলা চলমান। সেই মামলা থেকে বাঁচতে হয়ত নতুনভাবে পাটিতে ভেড়ার অপচেষ্টা করছে। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা ও চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
বিএনপিকর্মী বিদ্যুৎ হোসেন উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের পানিয়াল গ্রামের মৃত ওসমান আলীর ছেলে। নিজেকে আওয়ামী লীগ কর্মী দাবি করে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র (জামায়াত সর্মথিত) চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান কামরুলের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করায় আলোচনা- সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন তিনি।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আ.লীগকর্মী ছফিউল ইসলাম মান্দা থানায় মামলা করেন। এ মামলার ২৪ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন পানিয়াল গ্রামের বিদ্যুৎ হোসেন। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন আছে।
স্থানীয়রা জানান, গত ১০ জুলাই সন্ধ্যালগ্নে ইউনিয়ন পরিষদে ধরে এনে চেয়ারম্যান কামরুল ও তাঁর সহযোগীরা রড দিয়ে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিদ্যুৎ হোসেন। এ অভিযোগে নওগাঁ আদালতে চেয়ারম্যান কামরুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। মামলায় বিদ্যুৎ হোসেন নিজেকে নব্য আওয়ামী লীগ কর্মী পরিচয়ে আইনি সুবিধা লাভের অপচেষ্টা করেন।
তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল জলিল বলেন, বিদ্যুৎ হোসেন বিএনপিকর্মী হিসেবে এলাকায় চিহ্নিত। তিনি কোনো দিনই আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। নিয়মিত মাদক সেবনেরও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। সেই মামলা থেকে রেহাই পেতে তার এ নতুন উদ্যোগ। তাকে বাঁচাতে ও মামলায় সুবিধা লাভের আশায় এলাকার কতিপয় ব্যক্তি তাকে আওয়ামী লীগের কর্মী বানানোর অপচেষ্টা করছেন মাত্র।যা এলাকায় হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে।
তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজীবুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ হোসেন আওয়ামী লীগের কর্মী নয়, তবে সমর্থক। দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না নিলেও নৌকায় ভোট দেন। বিদ্যুৎ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমার জানা নেই।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ হোসেন বলেন, ‘চেয়ারম্যান কামরুলের নির্দেশে পরিষদে ধরে এনে রড দিয়ে পিটিয়ে আমার হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান কামরুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ মামলায় হয়রানী করতে আমাকে আসামি করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান কামরুল বলেন, ঘটনার দিন বিদ্যুৎ হোসেন মদ্যপ অবস্থায় লোকজনকে গালিগালাজ করছিলেন। তাই গ্রামপুলিশ দিয়ে তাকে পরিষদে ডেকে আনা হয়েছিল মাত্র। কিন্তু সেখানে আমাকে দেখে কিছু বুঝে ওঠার আগেই দৌড়ে পালানোর সময় পরিষদের দেয়ালের সাথে সজোর ধাক্কা লেগে পড়ে যান। এতে তিনি হাতে আঘাত পেয়ে আহত হয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু আমি ইসলামি দলের সর্মথক স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় আমাকে নানাভাবে হয়রানি করার জিঘাংসা চরিতার্থ করতে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকেসহ তার অপর ৪ জন কর্মীকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। তিনি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এ-র সঠিক বিচার দাবি করেন।
Like this:
Like Loading...
Related