শনিবার ৩০শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ভূয়া নিয়োগ বাণিজ্য ও অনিয়মের অভিযোগ

  |   রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ভূয়া নিয়োগ বাণিজ্য ও অনিয়মের অভিযোগ

এম এম হারুন আল রশীদ হীরা; নওগাঁ : নওগাঁর নিয়ামতপুরের বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ভূয়া নিয়োগ দেওয়া ও বিভিন্ন অনিয়মের করার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক এরশাদ আলী। ইতিমধ্যে সেসব অভিযোগের তদন্তও সম্পন্ন করা  হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অর্থনীতি বিষয়ে ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট এরশাদ আলীকে ডিগ্রী ৩য় পদে নিয়োগ দেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী অর্থনীতি ২য় পদ শূন্য হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ও গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত ক্রমে ০২/২০১৬ অধিবেশনের সিদ্ধান্তে ওই বছরের ১৫ মার্চ তাকে ডিগ্রী ৩য় পদ থেকে ডিগ্রী ২য় পদে সর্বসম্মতি ক্রমে সমন্বয় করা হয়। সে মোতাবেক অধ্যক্ষ ২য় পদের সমন্বয়ের সঠিক রেজুলেশন প্রদান করেন এবং উক্ত পদে পদায়নের পরে তিনি পুনরায় ১৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে তাকে ২য় পদের নিয়োগপত্র প্রদান করলে ২০ মার্চ সে ২য় পদে যোগদান করেন।

২০১৯ সালে ডিগ্রি স্তর এমপিও হলে অধ্যক্ষ অনলাইনে এম.পি.ও ভুক্তির আবেদন প্রেরণ করার সময় অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে অর্থের লােভে নিয়োগ বোর্ডের আসল সকল কাগজপত্রাদি টেম্পারিং করে অধ্যক্ষ অতিরিক্ত পাঁচটি বিষয়ের (বাংলা, ইংরেজী, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ভুগোল) অবৈধ নিয়োগ দেখিয়েছেন। এই পাঁচটি বিষয় শিক্ষক নিয়োগ নির্বাচনী বাের্ড জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মনোনয়ন চিঠিতে এবং নিয়োগ নির্বাচনী কমিটিতে ডিজির প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত থাকার বিষয়ে চিঠিতে উল্লেখ নেই। অতিরিক্ত এই সেই পাঁচটি বিষয়ে নিয়োগের মূল রেজুলেশন, চিঠিতে এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সাথেও কোন রকম মিল নেই।

অভিযোগে তিনি আরও বলেন, আমার নিয়োগ সংক্রান্ত মূল কাগজপত্রাদি টেম্পারিং করে নিজে কাগজপত্র তৈরি করে নিয়োগের মূল রেজুলেশন ঘষামাজা করে অতিরিক্ত পাঁচটি বিষয় বসিয়েছেন যা নিয়োগের আসল কোন কাগজের সাথে মিল নেই। এমপিও আবেদন করার মুহূর্তে আমার আসল সকল কাগজপত্রাদি টেম্পারিং করে আমার এম.পি.ও ভুক্তির জন্য ১ম আবেদন তিনি গোপনে গত ২০২০ সালের ২ মে প্রেরণ করেন। একই তারিখে আমার কলেজের ডিগ্রী শাখার সকল শিক্ষক ও কর্মচারীর আবেদনও প্রেরণ করেন। একারণে এরশাদ আলীরসহ সকল শিক্ষকের ফাইল রিজেক্ট হয়। রিজেক্টের কারণ তারসহ সকল শিক্ষকের একই ছিল। পরবর্তীতে গত ২৮ জুলাই ২০২০ তারিখে পুনরায় আবার এরশাদ আলীর আবেদনসহ সকল শিক্ষকের আবেদন প্রেরণ করেন এবং সকল শিক্ষকের বেতন হয়ে যায়। কিন্তু তার ফাইল রিজেক্ট হয়ে যায়।

নিয়োগের সঠিক কাগজপত্র প্রেরণ না করায় এবং তার বেতন না হওযার কারণ দেখতে চাইলে ও রিজেক্ট কপি চাইলে তিনি দেননি। ওই সময় তিনি বলেন সামান্য ভুল আছে, আমি ঠিক করে নিব, সামনের ধাপে আমি তোমার বেতন করে দিব। তুমি কাউকে কিছু বলবা না, অন্য মানুষকে জানাজানি যেন করোনা। বলাবলি করলে তোমার বেতন করে দিব না। কলেজের কোন শিক্ষককে ও গভর্নিং বডিকে বলতে নিষেধ করেন, প্রতিদিন কলেজে যেতেও নিষেধ করেন এবং কলেজে আমি গেলে যেন কলেজ টাইমের পরে যাই সেটা বলেন। এম.পি.ও আবেদনের সময় হলে তিনি আবেদনের ওই কয়েক দিন কলেজে ঠিক মত আসেন না, আমার ফোন রিসিভ করেন না। বিভিন্ন তালবাহানা করতে থাকেন। আমি তার কথায় চুপচাপ ছিলাম কিন্তু তিনি বিভিন্ন অপকৌশলে শুধু কালক্ষেপন করতে থাকেন।

এক পর্যায়ে আমি আমার বেতন না হওয়ার আসল কারণ অফিসের মাধ্যমে জানতে পারি এবং আমার বেতনের জন্য পাঠানো কাগজগুলি আমি সংগ্রহ করি। সেখানে দেখা যায় আমার নিয়োগের সঠিক কাগজপত্র গুলোর সাথে প্রেরণকৃত কাগজপত্রের কোন মিল নাই। তিনি আমার নিয়োগ ৩য় পদ এবং পরে সমন্বয়ে ২য় পদ উল্লেখ করে আমার বেতনের কাগজ প্রেরণ করেননি। আমার নিকট আমার বৈধ নিয়োগের আসল রেজুলেশনসহ যাবতীয় মূল কাগজ পত্র আছে। বর্তমানে অধ্যক্ষ আমার সাথে তেমন কোন যোগাযোগ করেন না আমি যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাইনা।

এবিষয়ে এরশাদ আলী বলেন, বিধি মোতাবেক আমাকে নিয়োগ দেয়ার পর অধ্যক্ষ গোপনে অশুভ উদ্দেশ্যে আমার নিয়োগ বোর্ডের চিঠিপত্র টেম্পারিং করেন। মূল রেজুলেশনসহ পুরো নিয়োগ বোর্ডের স্মারক নং, সীল ও স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া নিয়োগ বোর্ড তৈরী করেছেন। আমার নিয়োগের মূল রেজুলেশন কাটাকাটি বা ঘোষামাজা প্রথমে ধরা পড়ে রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসে। এরপর তার সকল জালিয়াতি বের হয়ে আসে। তার জালিয়াতির জন্যই আমার বেতনের ফাইল আটকে রয়েছে। বিষয়টি রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সরেজমিনে কলেজে তদন্ত করেছেন এবং অধ্যক্ষের জালিয়াতির এ বিষয়টি প্রমাণ ও পেয়েছেন। বর্তমানে অধ্যক্ষ নিজের অপরাধ লুকানোর জন্য আমার সাথে বিভিন্নভাবে অপকৌশল ও ষড়যন্ত্র করছেন। তিনি আমাকে উষ্কানিমূলক নানা কথাবার্তা বলছেন। আমাকে তিনি বিভিন্নভাবে পাগল, মাথা টালমাটাল ইত্যাদিসহ অকথ্য ভাষা ব্যবহার করছেন।

তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য আমার সাথে নানা অপকৌশল করে যাচ্ছেন। আমি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় গত ৮ আগস্ট পূণরায় আমার বেতনের ফাইল তিনি প্রেরণ করেননি। আমি অনেক অনুরোধ করলেও তিনি আমার কোন কথা আমলে নিচ্ছেন না। তার এমন কথা আমার কাছে রেকর্ড আছে যে, আমার সঠিক কাগজ দিয়ে বেতন হবে কিন্তু তিনি অনেক বড় বিপদে পড়ে যাবেন ও চাকরি চলে যাবে।

তিনি আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও রাগ দেখিয়ে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছেন যেন আমি উগ্র মেজাজি হই। বর্তমানে মাঝে কলেজে যাওয়া আসা নিয়ে অনেক ভীত সংকোচ অনুভব করছি। তিনি গত ২৮ আগস্ট কলেজের প্যাডে তিনি আমাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করে একটি চিঠি পোস্ট মাধ্যমে আমার কাছে প্রেরণ করেন এবং অধ্যক্ষের সহযোগী শিক্ষক প্রতিনিধি বিধান ও সহকারী লাইব্রেরীয়ান  নজরুল ইসলাম ও অফিস সহকারী বিপুল আমাকে হুমকি-ধামকী দিচ্ছেন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য। এবিষয়ে আমি থানায় জিডি করেছি। এবিষয়ে রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক ও সহকারী পরিচালক গত বছরের ২৭ অক্টোবর এবং  মাউসির আদেশে নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নাজমুল হাসান ও অধ্যাপক জাকির হোসেন এবছরের ২৮ মে সরেজমিনে কলেজ তদন্ত করে অধ্যক্ষের সকল জালিয়াতি প্রমাণ পেয়েছেন।

হুমকি দেওয়ার রেকডিং প্রতিবেদকের হাতে আছে বলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি বিধান বলেন, মোবাইলে এই বিষয়ে আমি কোন কথা বলবো না। আপনি কলেজে আসেন সামনাসামনি কথা হবে। এবিষয়ে জানার জন্য সহকারী লাইব্রেরীয়ানের মুঠোফোনে কল দিলে তার সহধর্মিণী রিসিভ করায় তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অফিস সহকারী বিপুল সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বিভিন্ন অজুহাতে ফোন কেটে দেন।

এবিষয় গুলো সরেজমিনে যাচাইয়ের জন্য কলেজে গিয়ে দেখা যায়, এরশাদ আলীর নিয়োগের রেজুলেশনে ফ্লুট দিয়ে ঘষামাজা রয়েছে। এসময় রেজুলেশনে ফ্লুট দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন নিজের ভুল স্বীকার করেন এবং এরশাদ আলীর এমপিও করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা নওগাঁ সরকারি কলেজের ইংরেজি বিষয়ের অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, তদন্তভার পাওয়ার পর আমি ওই প্রতিষ্ঠানে তদন্তে গিয়েছিলাম। তবে কলেজের অধ্যক্ষ সেদিন কলেজে উপস্থিত ছিলেন না। প্রতিষ্ঠানের সকল তথ্য বিশ্লেষণ করে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৬:৩৭ | রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com