| শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০১৪ | প্রিন্ট
– পদ বঞ্চিতরা গঠন করলেন বার্মিংহাম সিটি ও ওয়েস্ট মিডল্যান্ড আওয়ামীলীগ
– যুক্তরাজ্য আ’মীলীগের নির্দেশনা না মানলে কমিটি বিলুপ্ত হতে পারে
মো:আতিকুর রহমান: বার্মিংহাম আওয়ামীলীগের অন্ত:র্কোন্দলের কারনে দ্বীধা-দ্বন্ধে পড়েছেন মিডল্যান্ড আওয়ামীলীগসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। কবীর গ্রুপ না মাখন গ্রুপ কার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবেন এ নিয়ে দু’টানায় পড়েছেন অনেকেই। আর দীর্ঘ দশ বছর পর বার্মিংহাম আওয়ামীলীগের সম্মেলন হলেও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন করে দীর্ঘ দিন প্রবাসে রাজনীতি করা ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের পদ বঞ্চিত করা হয়েছে। আর এর জের ধরেই বার্মিংহাম সিটি আওয়ামীলীগ ও ওয়েষ্ট মিডল্যান্ড আওয়ামীলীগ নামে আরো দু’টি পৃথক সংগঠন আত্নপ্রকাশ করেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। এদিকে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ বার্মিংহাম আওয়ামীলীগের এই কোন্দলের ব্যাপারে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রমতে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ এই দুই নেতাকে এক হয়ে দলের জন্য কাজ করার নির্দেশ দিবে। আর তারা যদি এই নির্দেশ না মানেন তবে খুব শীঘ্রই এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন করে সম্মেলনের ডাক দেয়া হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিডল্যান্ড আওয়ামীলীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, শুধুমাত্র বার্মিংহাম আওয়ামীলীগের কোন্দলের কারনে আজ মিডল্যান্ড আওয়ামীলীগসহ বার্মিংহামের সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনে দলা-দলী, গ্রুপিং শুরু হয়ে গেছে। এমনকি এই দু’টি গ্রুপ সাংবাদিকদের মাঝেও বিবেদ সৃষ্টি করে রেখেছে। সূত্রমতে, বার্মিংহাম আওয়ামীলীগের সম্মেলনের পর তাদের কোন অভিষেক হয়নি। বরং কার্যকরী কমিটির প্রথম সভায়ই কবীর উদ্দিনের অনুসারী ও মাহবুব আলম চৌধুরী মাখনের অনুসারীর মাঝে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। পরবর্তীতে ধাক্কাধাক্কীর এক পর্যায়ে মাখন গ্রুপ পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। আর এ থেকেই এ দু’জনের মাঝে রেশা-রেশী চরম আকার ধারন করে। এর পর থেকেই একজন আরেকজনের ছায়া মারাতেও নারাজ।
সুত্রমতে এ ঘটনার কয়েকদিনপর ছাতক-দুয়ারা আসনের সংসদ সদস্য মানিক মিয়া এমপি’কে বার্মিংহামে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধনার দিন স্হানীয় একটি রেষ্টুরেন্টে বার্মিংহাম আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মাখন গ্রুপের শাহ রুকনকে লাঞ্চিত করেন একই সংগঠনের সদস্য কবীর গ্রুপের ফখরুল আলম।এনিয়ে তুমুল হট্রগোল শুরু হয়। এনিয়ে স্হানীয় পত্র-পত্রিকায় খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এঘটনার পর মাহবুব আলম চৌধুরী মাখন, কামাল আহমদ, ভূলন চৌধুরী, সাইফুল আলমসহ কয়েকজন মিডল্যান্ড আওয়ামীলীগে আসেন এঘটনার মধ্যস্হতা করে দেয়ার জন্য। এনিয়ে দ্বিতীয় বৈঠক হয় মাহবুব চৌধুরীর ইস্ট এন্ড কারী রেষ্টুরেন্টে। এসময় আওয়ামীলীগের প্রবীণ নেতা আজির উদ্দিনকে দায়িত্ব দেয়া হয় কবীর উদ্দিনকে এব্যাপারে জিঙ্গেস করার জন্য। পরবর্তীতে তা যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগে জানাজানি হলে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ থেকে আজির উদ্দিনকে এ ব্যাপারে কোন কিছু না করার জন্য বলা হয় এবং এ ব্যাপারে সব ধরনের সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ নিবে বলে মিডল্যান্ড আওয়ামীলীগকে জানানো হয়।
এদিকে এঘটনার পর থেকেই মিডল্যান্ড আওয়ামীলীগেও দ্বিধা-বিভক্তি শুরু হয়েছে বলে কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র মতে দলীয় কোন সিদ্ধান্ত না হলেও মিডল্যান্ড আওয়ামীলীগের একটি অংশ নিয়মিত মাখন গ্রুপের সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। আর অপর অংশ কবীর গ্রুপের সভা সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। আর এনিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ নেতা-কর্মীরা। তারা কার সাথে লিয়াজো ঠিক রেখে চলবেন তা নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন।
এনিয়ে মিডল্যান্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বেলালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মিডল্যান্ড আওয়ামীলীগে কোন দ্বিধা-বিভক্তি নেই। এখানে সবাই একটি পরিবারের মতো। কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে দাওয়াত দেয়ায় অনেকেই অনেক মিটিং এ উপস্হিত হন। এর সাথে দলীয় কোন সিদ্ধান্ত জরীত নয়।
আর মিডল্যান্ড আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আকমল খান বলেন, মিডল্যান্ড আওয়ামীলীগে কোন কোন্দল অথবা দ্বীধা-বিভক্তি নেই।তাছাড়া মিডল্যান্ড আওয়ামীলীগ চায় সবাইকে সাথে নিয়ে একই প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে।আর ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারনে কেউ কেউ কারো দাওয়াতে উপস্হিত হন। এর সাথে দলীয় সিদ্ধান্তের সম্পর্ক নেই।
বার্মিংহাম সিটি আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আলী সিটি আওয়ামীলীগ গঠনের উদ্দ্যেশ্য কি জানতে চাইলে বলেন, আওয়ামীলীগ একটি বিশাল দল। দশ বছর আগে বার্মিংহামে যে পরিমাণ নেতা-কর্মী ছিলো আজ তা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর বিগত সম্মেলনে অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মীকে জায়গা দেয়া সম্ভব হয়নি যারা সিলেটে সরাসরী ছাত্র এবং যুবলীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। তাই বঙ্গবন্ধু আদর্শে বিশ্বাসী এসব নেতাকর্মীদের দলে সচল রাখতে সময়ের প্রয়োজনেই সিটি আওয়ামীলীগ গঠন করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের অনুমোদন ছাড়া সংগঠন চালানো কতোটুকু যুক্তিযুক্ত এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগকে অনুসরণ করেই বার্মিংহাম সিটি আওয়ামীলীগ কাজ করে যাচ্ছে। আর এব্যাপারে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগও অবগত রয়েছে।
বার্মিংহাম আওয়ামীলীগের সভাপতি কবীর উদ্দিন তাদের অভিষেক না হওয়ার কারন হিসেবে জানান, দলকে সংগঠিত ও জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ান বাস্তবায়নের লক্ষে শুরু থেকেই বার্মিংহাম আওয়ামীলীগ কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে সরকারের বিগত দিনের উন্নয়ন কার্যক্রম এদেশের মূল ধারার নের্তৃবৃন্দকে জানানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের এমপি ও মন্ত্রীর সাথে তিনি বৈঠক করছেন। তিনি বলেন আওয়ামীলীগ একটি বিশাল রাজনৈতিক দল। এখানে কারো ব্যক্তিগত স্বার্থের কারনে দলের কার্যক্রম থেমে থাকতে পারেনা। এছাড়া দলকে এগিয়ে নিতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বেশ কয়েকবার অপর গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করে কোন সদুত্তর পাননি বলে জানান। বার্মিংহাম সিটি আওয়ামীলীগ ও ওয়েস্ট মিডল্যান্ড আওয়ামীলীগ গঠনের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না উল্ল্যেখ করে বলেন, সম্মেলনের বেশ কয়েক দিন পূর্বে অনেকেই বার্মিংহাম আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের অনেককেই কমিটিতে রাখা সম্ভব হয়নি। আবার কেউ কেউ পছন্দ মাফিক পদ পাননি। আর ছাতক-দোয়ারার সংসদ সদস্যকে সংবর্ধনার সময় গঠিত অনাকাংখিত গঠনা দলীয় কোন সভায় নয় এবং দলীয় কোন্দলের কারনে নয় বলেও তিনি জানান। যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ এব্যাপারে অবগত রয়েছে কী না তা তিনি জানেন না।
এব্যাপারে কথা বলার জন্য বার্মিংহাম আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম চৌধুরীর সাথে আবারো বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।
এব্যাপারে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সহসভাপতি জালাল উদ্দিন আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, বার্মিংহাম আওয়ামীলীগের সম্মেলনের সময় সবার সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কবীর আহমদকে সভাপতি ও মাহবুব আলম চৌধুরী মাখনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর সেসময় এই দু’জনই যোগ্যতর ছিলেন। বিশেষ করে দলের দুর্দিণে যারা কাজ করেছিলেন সম্মেলনের সময় তাদেরই মূল্যায়ন করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক কোন্দলের কথা যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ অবগত আছে উল্ল্যেখ করে তিনি বলেন, যা হচ্ছে তা দুর্ভাগ্যজনক। এ পরিস্হিতি আর চলতে দেয়া যায়না। ইতোমধ্যেই এ ব্যাপার নিয়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন দু’পক্ষের মাঝে ভুলবুঝাবুঝি হচ্ছে। আর এ সমস্যা সমাধানের জন্য শীঘ্রই যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের একটি প্রতিনিধি দল বার্মিংহামে আসছে। বার্মিংহাম আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের সাথে বসে পরিস্হিতি পর্যবেক্ষণ করে কবীর আহমদ ও মাহবুব আলম চৌধুরী মাখনকে এক সাথে কাজ করার নির্দেশনা দিতে পারে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ। আর যদি তার তা না মানেন তবে পুরো কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হতে পারে বলে জালাল উদ্দিন আহমদ জানান।
Posted ১৮:৪০ | শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin