বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

‘বাবা এ জন্মদিনেও তুমি নেই’ আসলাম চৌধুরীর মেয়ের আবেগঘন স্ট্যাটাস

  |   শনিবার, ০১ মে ২০২১ | প্রিন্ট

‘বাবা এ জন্মদিনেও তুমি নেই’ আসলাম চৌধুরীর মেয়ের আবেগঘন স্ট্যাটাস

কারাবন্দি বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর মেয়ে মেহেরীন আনহার উজমা তার ফেইসবুকে বাবাকে নিয়ে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি তার স্ট্যাটাসে বাবাকে ছাড়া নিজের জন্মদিন পালনের কষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন।

 

আসলাম চৌধুরী ২০১৬ সালে গ্রেপ্তার হন। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ওই বছরের ১৫ মে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে পুলিশের হাতে গেপ্তার হন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চট্টগ্রামের আলোচিত নেতা আসলাম চৌধুরী। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। এখন পর্যন্ত বিএনপির এই নেতাকে ৬৮টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সর্বশেষ আট বছর আগের এক নাশকতার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নিতে চেয়েছিল পুলিশ। শুনানি নিয়ে আদালত তাকে তিন দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন। এর মধ্যে আদালত থেকে কয়েকবার জামিনে মুক্তি পেলেও আবার জেলগেটে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাবন্দি করা হয় এই নেতাকে।

 

আসলাম চৌধুরীর একমাত্র সন্তান মেহেরীন আনহার উজমা। বাবাকে নিয়ে তার লেখা স্ট্যাটাসটি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। তার স্ট্যাটাসটি দৈনিক অধিকারের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল।

 

বাবা, গত পাঁচ বছরের মতই আজ তোমার টুমপিল তার ২০তম জন্মদিন কাটাবে তোমায় ছাড়া। পাঁচটি বছর পরেও ফিরে পাইনি তোমাকে। বাবা, রাজনীতির প্রয়োজন নেই, আমাদের কাছে ফিরে এসো। তোমার প্রতীক্ষায় আমি –

 

আস্থা, ভরসা আর পরম নির্ভরতার নাম ‘বাবা’। প্রতিটি সন্তানের কাছেই বাবা মানে শক্তি আর সাহস। বাবা মানে একটু শাসন, অনেক ভালোবাসা। বাবা সেই গাছের ছায়া, যে ছায়ায় সন্তান বেঁচে থাকার এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার শক্তি পায়। শত আবদার আর নির্মল শান্তির জায়গাটা হলো বাবা।

 

আমার বাবা মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী এফসিএ একজন সমাজকর্মী। শুনেছি ছাত্রজীবন থেকে দু:খী মানুষের পাশে থাকতেন। আমার জন্মের পর থেকে দেখে আসছি আমার বাবা নিজ এলাকায় কত মানুষের কর্মের সংস্থান করেছেন। পাশাপাশি লায়নিজমের মাধ্যমে এলাকার শত শত মানুষকে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। মেডিকেল ক্যাম্প, বিভিন্ন ছাত্রদেরকে বৃত্তি প্রদানসহ, পরামর্শ দিয়ে উৎসাহ দিতেন পড়ালেখা করার জন্য। বাবার জীবনের এক ও অভিন্ন চিন্তাধারা হচ্ছে, কাউকে কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে ঠকানো যাবেনা।

 

বাবার এখন অনেক ব্যাংক ঋণ। বাবা বলতেন আমি যদি ২/৩ বছর স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করতে পারি তাহলে আমার এ সমস্যা দূর হয়ে যেতো। সেজন্য আমার বাবাসহ আমরা চাই স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করে আবার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুক এবং ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুক।

 

আমি বলবো, ‘আমার বাবা যদি সুযোগ পায় অল্প সময়ের মধ্যে তার দৃঢ়চিত্ত এবং মেধার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে সফল হবে।’

 

বাবা আমার রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন কোন অর্থনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে নয়। বরং বৃহত্তর পরিসরে মানুষের সেবা করার জন্য। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বাবা আমার, দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর কারাগারের অন্ধকার প্রোকষ্ঠে দিনাতিপাত করে চলেছে। বিনিময়ে অর্জন করেছে ঋণখেলাপির পদবী।

 

আমি আমার বাবা মা’র একমাত্র মেয়ে। তাই আমাদের অঢেল অর্থ সম্পদের প্রয়োজন নেই। আমি চাই, স্বাভাবিক ব্যবসা বানিজ্য করে এবং তাঁর মেধাকে কাজে লাগিয়ে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দেয়া হোক।

 

বাবা তুমি প্রয়োজনে রাজনীতি থেকে সাময়িক অবসর নাও। চূড়ান্ত অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত একান্ত তোমার বাবা। তবুও তুমি এ সময়ে আমার পাশে আমার কাছে ফিরে আসো। তোমাকে আমার আর মায়ের অনেক বেশী প্রয়োজন।

 

আমার বাবার সাথে লায়নিজমের সুবাদে অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, ব্যবসায়িক সুবাদে চায়না, সিংগাপুর, আমেরিকা এবং পর্যটক হিসাবে ভারত, ব্যাংকক, ফ্রান্স, স্পেন, ভ্রমন করেছি। আমি দেখেছি আমার বাবার বন্ধুবৎসল মনোভাব। সব বাবাই শাসনে কঠোর, ভালোবাসাতে কোমল, স্নেহে উদার, ত্যাগে অগ্রগামী। যদিও আমি দীর্ঘ সময় ধরে পিতৃত্বের স্নেহ, মায়া, ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে চলেছি। আমি যখন ‘O’ লেভেল দিবো তার আগে থেকে বাবা কারাগারে বন্দি। কারাগারে থাকলেও আমার বাবা আমাকে সাহস দিতেন। পড়ালেখার জন্য উৎসাহ দিতেন।

 

আর সেই আমি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। এর মাঝে চলে গেছে পাঁচটি বছর। আমিই জানি পাঁচটি বছর কত দীর্ঘ। আমার এই বেড়ে উঠার সময়টাতে বাবার সান্নিধ্য আমার অনেক বেশী প্রয়োজন। আমি বঞ্চিত হচ্ছি আমার অভিজ্ঞ বাবার সুপরামর্শ থেকে। এই মুহূর্তে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমার সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সুপরামর্শ খুবই প্রয়োজন। জীবনের এ চলার পথে, যে সময়টাতে একটা মেয়ের বাবা’কে খুব প্রয়োজন তখন বাবা আমার কাছ থেকে অনেক অনেক দূরে। জানো বাবা, আমরা কেউ ভালো নেই। আমি তোমাকে অনেক মিস করছি। জানি বাবা তুমিও ভালো নেই আমাদেরকে ছেড়ে।

 

উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলায় বারবার বাবাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে ।আমার জীবনের গড়ে ওঠার এ সময়টাতে বাবার সঠিক সিদ্ধান্ত এবং পরামর্শ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আপনাদের কাছে কি মনে হয়না ‘দু’হাজার আট দিন’ অনেক বেশী সময়, একজন নির্দোষ মানুষকে বন্দী করে রাখার জন্য?

 

আমার মা’ও আমার ভবিষ্যত সহ বাবার চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমাদের সমস্ত পরিবার অস্থির অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। অন্যের সান্ত্বনা শুধু বাহ্যিক অশ্রুই মুছতে পারে ভেতরের ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ের কান্না কেউ শুনতে পায়না। সারাক্ষণ অন্তর জুড়ে একটা হাহাকার বিরাজ করছে।

 

আমার বাবা সাবেক কলেজ অধ্যাপক, সাবেক লায়ন্স গভর্নর, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব জনাব মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরীর অবিলম্বে মুক্তি চাই। ফিরে এসো বাবা। তোমার প্রতীক্ষায় আমি আর মা।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:১৩ | শনিবার, ০১ মে ২০২১

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com