| মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট
পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে উদয় হয় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের। রক্ত রাঙা মাটিতে প্রাকৃতিক সবুজের আভায় জন্ম নেয়া স্বাধীন বাংলাদেশের এই দিনটি একই সঙ্গে যেমন আনন্দের তেমনই বেদনার। তাই শহীদদের স্মরণ করার সঙ্গে সঙ্গে পুরো জাতি মেতে ওঠে বিজয় উৎসবে। প্রতিবছর এই দিনে শহীদদের শ্রদ্ধায় সবাই সমবেত হন সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে।
তবে করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর মার্চ মাস থেকে প্রায় গত ৮ মাস ধরেই বন্ধ ছিলো স্মৃতিসৌধ। এ কারণে বাতিল করা হয়েছিল ২৬ মার্চের সকল কার্যক্রমও। দীর্ঘদিন পরে এবার বিজয় উদযাপনে ফের খুলে দেয়া হচ্ছে সৌধ। করোনাভাইরাসের কারণে সৌধ এলাকার সার্বিক সামাজিক দূরত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিতেও বাড়তি সচেতনতা রাখা হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
দিবসটির প্রথম প্রহরে জাতির বীর সন্তানদের উদ্দেশে শহীদবেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ বিশিষ্টজনেরা। এরপরই সর্বস্তরের মানুষের হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ভরে যাবে শহীদবেদী। এ কারণে বিজয় উদযাপনে প্রতিবছরের মত এবারো সেজেছে স্মৃতিসৌধ।
পুরো সৌধ প্রাঙ্গণকে ধুয়ে মুছে এরইমধ্যে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। বর্ণিল ফুলের চারা রোপন ও রং তুলির আঁচরে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পুরো সৌধ চত্বর। লাল, নীল, হলুদ বাতির ঝলকানিতে রাতের আকাশেও জানান দিচ্ছে বিজয়ের স্বাদ। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য সৌধ এলাকায় সিসিটিভি স্থাপনের কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌধ কর্তৃপক্ষ।,
জানা যায়, বিজয় দিবসকে সামনে রেখে গত ১৫ দিন ধরেই পুরো সৌধ এলাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ করছেন গণপূর্ত বিভাগের ৬৫ জনসহ বহিরাগত প্রায় আরো ৫০ জন কর্মচারী। সৌধ স্তম্ভসহ পুরো এলাকা ধুয়ে ফেলার পর শহীদ বেদী থেকে প্রধান ফটক পর্যন্ত পায়ে হাঁটার লাল ইটের হেরিংবন্ড পথকে লাল ও সাদা রঙের আঁচরে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়েছে। এছাড়া প্রতি বছরের মত সৌধ প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্থানে রোপন করা হয়েছে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনিসহ বাহারী ফুল গাছের চারা। লেকের বাড়তি জলজ উদ্ভিদ পরিস্কার করে লাগানো হয়েছে লাল পদ্ম। এছাড়া পুরো এলাকায় শোভা বর্ধনে গাছ ও ঘাস ছেঁটে ফেলাসহ আলোকবাতি স্থাপনের কাজও এরইমধ্যে শেষ করা হয়েছে।,
সৌধের পরিচ্ছন্নতা কর্মী সাগর মিয়া বললেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে পুরো সৌধ এলাকায় রঙের কাজ করছেন তিনি। প্রতিবছর দিন চুক্তিতে এই কাজ করেন। এতে অর্থের সঙ্গে সঙ্গে শহিদদের প্রতি ভালোবাসা জানানোর সুযোগও মেলে বলে কাজটি করতে ভালোবাসেন তিনি।,
সাভার গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়েছে। এবছর সৌধকে একটু অন্যরকম করে সাজানোর চেস্টা করা হয়েছে। এসব কাজের জন্যে গত ৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় সাধারন দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখা হয়েছিল। ১৬ ডিসেম্বর সকালে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিদেশি কূটনীতিকদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের পর সৌধ এলাকা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।,
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবার দ্বিগুণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দু’পাশ ও ব্রিজসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি বসানো হয়েছে বাড়তি চেকপোস্ট। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বাড়ানো হয়েছে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি।.
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন সরদার পূর্বপশ্চিমকে বলেন, জাতীয় স্মৃতিসৌধে আগত সকলের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্যে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এছাড়া স্মৃতিসৌধ এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামাল দিতে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করবে।.
Posted ১১:৩২ | মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain