বৃহস্পতিবার ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

প্রসঙ্গ আমার দেশ : জনতার আদালতে তারা ক্ষমা পাবেন না : ‘হায়েনার হিংস্রতায় আওয়ামী লীগ : মেষশাবকের ভীরুতায় বিএনপি’

  |   শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট

প্রসঙ্গ আমার দেশ : জনতার আদালতে তারা ক্ষমা পাবেন না : ‘হায়েনার হিংস্রতায় আওয়ামী লীগ : মেষশাবকের ভীরুতায় বিএনপি’

জাহেদ চৌধুরী

Zahed-Chowdhury 

’৮৪ থেকে ২০১৪। পুরো তিন দশক। খণ্ডকালীন বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা এবং মাস্টার্সের রেজাল্ট হওয়ার আগেই দৈনিক বাংলায় ওয়েজ বোর্ডের চাকরি। দৈনিক বাংলা, মানবজমিন হয়ে আমার দেশ। তিন দশকের সাংবাদিকতা জীবনে দুই দশকের বেশি সময় কাটে রিপোর্টার হিসেবে মাঠে-ঘাটে, সভা-সেমিনারে। দেশে কিংবা বিদেশি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে। সাংবাদিকতায় ‘বিট’ বলে একটি শব্দ প্রচলিত আছে। সে হিসেবে ‘বিএনপি’ আর ‘পার্লামেন্ট’ বিটে সর্বোচ্চ সময় ব্যয় করেছি। ’৯১-৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিটে সক্রিয় ছিলাম। খালেদা জিয়া যখন বিরোধীদলীয় নেতা তখন বিরোধীদলীয় নেতার বিটও কাভার করতে হয়েছে।

গত অর্ধযুগ থেকে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অনুষ্ঠান ছাড়া মাঠে-ময়দানে কমই যাওয়া হয়। আমার দেশ-এর সিটি এডিটর অতঃপর নিউজ এডিটর হিসেবে সক্রিয় সাংবাদিকতায় অনেকটা গৃহবন্দি। তবে গত তিন দশক থেকে আজকের দিন পর্যন্ত পুরো মাত্রায় সক্রিয় আছি সাংবাদিকতায়। ব্যবস্থাপনায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হয়েও কলেজ জীবনের শেষলগ্নে শুরু সাংবাদিকতায়ই আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় কেটেছে। চারজন বরেণ্য সম্পাদকের সঙ্গে কাজ করতে পেরে, শিখতে পেরে নিজেকে গর্বিত ভাবি। পেশা হিসেবে পূর্ণকালীন সাংবাদিকতা জীবনের শুরুতে দৈনিক বাংলার সম্পাদক আহমেদ হুমায়ূন সম্পাদক হিসেবে দিনের পর দিন যেভাবে গাইড করেছেন, বলতে গেলে ভিত্তি রচনা করে দিয়ে গেছেন। স্বনামখ্যাত সাংবাদিক জহিরুল হক, হেদায়েত হোসেইন মোরশেদ, মনজুর আহমদ, ফজলুল করিমের সান্নিধ্য আমার শুরুটা অনেক সহজ করে দিয়েছে। মতিউর রহমান চৌধুরীর মতো রিপোর্টার থেকে উঠে আসা সম্পাদকের নেতৃত্বে প্রায় সাত বছর দৈনিক মানবজমিনে সিনিয়র রিপোর্টার, ডেপুটি চিফ রিপোর্টার, চিফ রিপোর্টার ও বিশেষ প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন সাংবাদিকতা জীবনের ভিত্তিকে পোক্ত করেছে।

আমার দেশ-এ স্বনামখ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদের শিক্ষকসুলভ সহযোগিতা আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। অতঃপর অকুতোভয় সত্যনিষ্ঠ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে আমার দেশ-এর বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন আমার সাংবাদিকতা জীবনের পূর্ণতা এনে দিয়েছে। সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের নির্ভীক সিদ্ধান্ত, সহকর্মীকে ছায়ার মতো সব ধরনের ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে রক্ষা করে বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকে মসৃণ করে দিয়েছেন তিনি। সহকর্মীদের সব ঝুঁকি নিজের কাঁধে নিয়ে সম্পাদক হিসেবে তিনি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা আজকের সমাজে বিরল।

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আদালত অবমাননার শুনানির সময় সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বিচারপতিদের প্রশ্নের জবাবে দৃঢ়চিত্তে যখন বললেন, ‘খবরটির শিরোনামের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি’, তখন চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি। কারণ শিরোনামটি আলোচনা করেই ঠিক করা হয়েছিল, এককভাবে মাহমুদুর রহমান চাপিয়ে দেননি। অথচ সহকর্মীদের বাঁচাতে নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিলেন। ‘চেম্বার মানেই সরকারের পক্ষে স্টে’ সহকর্মী অলিউল্লাহ নোমানের লেখা এই প্রতিবেদন নিয়ে ২০১০ সালের জুলাইতে যখন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হচ্ছিল, তখন মাহমুদুর রহমান কারারুদ্ধ অবস্থায় নিজেই তার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন। খবরটি সত্য ও সঠিক দাবি করে বক্তব্যে অনড় থেকে সাত মাস জেল খাটেন। অলিউল্লাহ নোমানকেও ৩৭ দিন জেল খাটতে হয়। আপিল বিভাগের শুনানিকালে মাহমুদুর রহমান বলেছিলেন, আমার দেশ-এর সহকর্মীদের আমি স্যালুট করি। কারণ তারা আমার অনুপস্থিতিতেও সত্য ও ন্যায়ের প্রশ্নে আপস করেননি।

আজ এক বছর হতে চললো আমার দেশ হাসিনা সরকারের আমলে দ্বিতীয় দফায় বন্ধ হয়ে আছে। সম্পাদক প্রথম দফায় ২০১০-১১ সালে ১০ মাস জেল খাটার পর এবার এক বছর থেকে কারারুদ্ধ আছেন। অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি মাহমুদুর রহমান। সে জন্য তিনি আজ কারাবন্দি। আমার দেশ আপস করতে রাজি হয়নি, এ জন্য পত্রিকাটি বন্ধ। আইনের তোয়াক্কা না করে সরকার জোর করে আমার দেশ-এর প্রেস বন্ধ করে রেখেছে। পুলিশ পাহারায় আছে। অন্য প্রেস থেকেও আমার দেশ ছাপতে দিচ্ছে না। ঢাকায় কেন্দ্রীয় অফিস ও প্রেসে আমার দেশ-এর তিনশ’ স্টাফসহ সব মিলে হাজার খানেক স্টাফ পরিবার-পরিজন নিয়ে এক বছর ধরে কষ্টে জীবন-যাপন করছেন।

আমাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে সম্পাদক মাহমুদুর রহমান গত জানুয়ারিতে জানিয়ে দেন আমার দেশ-এর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কারণেই (যেমনটি সরকারের লোকজন বলে আসছিলেন) যদি পত্রিকাটি বন্ধ ও সহস্রাধিক সাংবাদিক-কর্মচারীর জীবন বিপন্ন হয়ে থাকে তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে মাহমুদুর রহমান তার যে কোনো সহকর্মীর কাছে সম্পাদনার দায়িত্ব ও শেয়ার হোল্ডারের কাছে তার মালিকানা হস্তান্তরে রাজি আছেন। কিন্তু মাহমুদুর রহমানের এ উদারতাকে দুর্বলতা ভেবে সরকার কোনো সাড়া দেয়নি।

মাহমুদুর রহমান সরে যাওয়ার শর্তে আমার দেশ-এর ছাপাখানা খুলে দিতে সরকার রাজি হয়নি। ফলে সঙ্কট যে তিমরে ছিল, সেখানেই রয়ে গেছে। সরকার যে এতদিন ভাঁওতার আশ্রয় নিয়েছিল, সেটা প্রমাণ হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের মতো স্পষ্টবাদী সম্পাদকের কণ্ঠ শুধু রুদ্ধই নয়, ভিন্নমতের মিডিয়ার কণ্ঠরোধই যে সরকারের এজেন্ডা, সেটা আবারও প্রমাণ হয়েছে।

মাহমুদুর রহমান তার বাড়ি ও সিরামিক ফ্যাক্টরি বিক্রির টাকা দিয়ে আমার দেশ পত্রিকা চালিয়ে নিচ্ছিলেন। ৬ বছরে কোনোদিন মাসের ১০ তারিখের পর বেতন হয়নি। আগেই হয়েছে। পত্রিকা বন্ধ হওয়ার পরও ৮ মাস তিনি বেতন-ভাতাদি দিয়েছেন। এখন ৪ মাস থেকে বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় সাংবাদিক-কর্মচারীদের এক অবর্ণনীয় দুর্দশায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।

আমার দেশ পত্রিকার জন্য দু’দফায় জেল-জুলুম ও রিমান্ডের নির্যাতন সহ্য করেও সাংবাদিক-কর্মচারীদের মানবিক দিক বিবেচনা করে তিনি পত্রিকাটির সম্পাদনা ও মালিকানা হস্তান্তর করতে সম্মত হয়ে যে উদারতা ও মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সেজন্য তাকে স্যালুট জানাই। পাশাপাশি সরকার মিডিয়ার ওপর নেকড়ের মতো যে থাবা বিস্তার করেছে, তার নিন্দা জানাই। প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপির ভূমিকা এখানে মেষশাবকের মতো। মাহমুদুর রহমানের উদারতার সুযোগ নিয়েও বিএনপির কোনো নেতা বা ব্যবসায়ী সরকারবিরোধী পত্রিকাটির হাল ধরতে এগিয়ে আসেননি। মেষশাবকের মতো ভীতু বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ীরা আওয়ামী নেকড়ের মুখে আমার দেশ পত্রিকাটিকে তুলে দেয়ার পথ সুগম করে দিচ্ছেন। আওয়ামী সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন, মানবতাবিরোধী অপরাধচিত্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের স্বার্থ ভারতের কাছে বিকিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা এতোদিন পালন করেছে আমার দেশ। সত্যের সঙ্গে থেকেছে, অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেনি। মজলুম জনতার কণ্ঠস্বর হিসেবে দেশের ঘরে ঘরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল আমার দেশ। হয়তো এমন একদিন আসবে আমার দেশ-এর এই ভূমিকা আর থাকবে না। আমরাও হয়তো এর সঙ্গে আর থাকার সুযোগ পাব না। আর দশটি পত্রিকার মতো গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে নতুন আঙ্গিকে দেখা যাবে আমার দেশ-কে। যারা আজ আমার দেশ-এর ব্যাপারে সঠিক ভূমিকা নিচ্ছেন না, জনতার আদালতে তারা ক্ষমা পাবেন না।

– আমারদেশ

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:৫৬ | শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com