| শনিবার, ২৪ মে ২০১৪ | প্রিন্ট
ফেনী: ফেনীতে চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অভিযোগ পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এনিয়ে একরাম হত্যাকান্ডের ঘটনায় মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে ফেনীর পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোষ নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যান্ডের অগ্রগতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তিনি জানান, পুলিশ ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। হত্যার ঘটনার সাথে জড়িদের চিহ্নিত করার কাজ এগোচ্ছে।
সাংবাদিকরা জানতে চায়, গত কয়েকদিন ফেনী-২ আসনের বর্তমান সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং সাবেক সাংসদ ও সাবেক সাধারন সম্পাদক জয়নাল হাজারী চেয়ারম্যান একরাম হত্যাকান্ডের জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করবে কিনা। জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, জয়নাল হাজারী কেন? তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশ যে কোন ব্যক্তিকে আটক ও জিজ্ঞাসা করতে পারে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও গ্রাম থেকে আলা উদ্দিন এবং শর্শদি গ্রাম থেকে আনোয়ার হোসেন নামে দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে ফেনীর বিচারিক আদালতে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছে।
ফুলগাজীতে মানববন্ধন-সাংবাদিক সম্মেলন
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হকের খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শুক্রবার সকালে ফুলগাজী উপজেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত সাংবাদ সম্মেলনে একরামের হত্যার সাথে জড়িতদের অভিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টায় ফুলগাজী উপজেলা সদরে চেয়ারম্যান একরামুল হকের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে এক মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়। মানববন্ধন কর্মসূচীতে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনে সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ গ্রহন করেন।
মানববন্ধন কর্মসূচী চলাকালে নিজাম হাজারী বক্তব্য রাখেন। তিনি চেয়ারম্যান একরামুল হককে নির্মম ও পৈশাসিক কায়দায় হত্যার নিন্দা জানান এবং অভিলম্বে জড়িতদের খুঁজে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান।
মানববন্ধন শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক আবদুল আলিম। তিনি চেয়ারম্যান একরামকে হত্যার জন্য সরাসরি বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে (মিনার) দায়ি করেন এবং তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। তিনি বলেন, অতীতে মিনার চৌধুরীর নেতৃত্বে চেয়ারম্যার একরামুল হকের ওপর একাধিকবার হামলা করা হয়।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে আন্দেলনের পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষনার কথা থাকলেও কোন কর্মসূচী ঘোষনা ছাড়াই সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন, ভাইস চেয়ারম্যান অনিল বনিক, মঞ্জুরা আজিজ, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রাব্বানী মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ বেস্টনীতে নিজাম হাজারীর ফুলগাজী ত্যাগ
একরামুল হক একরাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফুলগাজীতে আয়োজিত মানববন্ধনে নেতাকর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী। পরে পুলিশি বেস্টনীতে তাকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে হয়।
শুক্রবার সকালে মানববন্ধনে উপস্থিত হলে নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে আওয়ামী লীগ ও একরাম সমর্থকরা। এসময় তড়িঘড়ি করে দুমিনিট বক্তব্য দিয়েই নিজাম হাজারী পুলিশি নিরাপত্তা ও বেস্টনী এবং নেতাকর্মীদের পাহারায় ফুলগাজী ত্যাগ করেন।
ওই সময় নিজাম হাজারীর বা দিকে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান, বাহার উদ্দিন, আবদুল করিম। ডান দিকে গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদ খান, ফুলগাজী থানা ওসি আহমদ নাসির উদ্দিন মোহাম্মদসহ ডজন খানেক পুলিশ ও কয়েকশ নেতাকর্মী।
নিজাম হাজারীর পেছনে থাকা ফুলগাজীর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগের নেতাকর্মীরা তাকে উদ্দেশ করে স্লোগান দেয়। তারা বলেন, ‘আল্লাহর গজব পড়বে, নিজাম হাজারীর ফাঁসি চাই।’
আবিদ আটকের গুঞ্জন
একরামকে নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়লা জেসমিন বড় মনির ছেলে আবিদ ঢাকায় র্যাবের হাতে আটকের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। সে ফেনী সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর মামাতো ভাই। ঘটনার পর থেকে আবিদের নাম গত ক’দিন ধরে বেশ আলোচিত হচ্ছে।
শুক্রবার দিবাগত রাত ২টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিকে রাজধানীর উত্তরার ৫ ও ১৪ নাম্বার সেক্টরে অভিযান চালায় র্যাব-১ এর একটি দল। সেখানে কাউকে না পেয়ে র্যাব সদস্যরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আবিদের ঘনিষ্ট বন্ধু হেলাল উদ্দিনের বাসায় অভিযান চালায়। ওই বাসা থেকে আবিদ সহ আরো ৮ জনকে আটক করা হয়।
হত্যাকান্ডের ভিডিও চিত্র প্রকাশ
একরামকে বহন করা গাড়িটিকে আটকানোর পর সবার আগে গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে এসেছিলেন আবিদ। মুখ ঢাকা থাকলেও তার শারীরিক গঠন ও হাঁটার ভঙ্গিতে তাকে চিনতে পেরেছেন অনেকেই।
এদিকে দিনে দুপুরের এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ভিডিও চিত্র মোবাইলে ধারণ করেছেন অনেকেই। এসব ভিডিও চিত্র থেকে সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করছেন স্থানীয়রাই। এদিকে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, তাদের হাতে আসা ভিডিও চিত্র থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে চারজনকে। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, এরা সকলেই নিজাম হাজারীর সমর্থক ও কর্মী। আবিদ ছাড়া পুলিশ শনাক্ত করেছে- রুটি সোহেল, পারভেজ ও হুমায়ুনকে। এই তিনজনসহ কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ সদস্যের বাড়ি বিরিঞ্চি এলাকায়। ফেনী পৌরসভার কাউন্সিলর শিবলুর নেতৃত্বে দলটি এ মিশনে অংশ নেয় বলে জানায় সূত্র। শিবলুকে বর্তমানে নিজাম হাজারীর অন্যতম শক্তি হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়।
এছাড়াও ভিডিও চিত্রে জিয়াউল আলম স্টারকে চিনতে পেরেছেন এলাকাবাসী। পৌর কমিশনার গিটারের ভাই জিয়াউল আলম স্টারের হাতে রয়েছে বর্তমানে নিজাম উদ্দিন হাজারীর অস্ত্রবাহিনী ও ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ।
ঘটনার পরিকল্পনায় ছিলেন জাহাঙ্গীর আদেল ও জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। একাডেমি এলাকায় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ দুজনকেই ওই সময় ঘটনাস্থলের আশপাশে দেখা গেছে। এদের মধ্যে আদেল বর্তমানে নিজামের মূল বুদ্ধিদাতা হিসেবে পরিচিত। আর জাহিদও সহচর নিজামের।
Posted ১০:০০ | শনিবার, ২৪ মে ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin