বুধবার ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুতিনের হুঁশিয়ারি – সিরিয়া ফের আক্রান্ত হলেই…

  |   সোমবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৮ | প্রিন্ট

পুতিনের হুঁশিয়ারি – সিরিয়া ফের আক্রান্ত হলেই…

স্বাধীনদেশ অনলাইন : যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুমকি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, পশ্চিমা জোট যদি সিরিয়ায় আবার হামলা চালায়, তবে বিশ্বব্যাপী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে যাবে। রোববার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানির সাথে এক টেলিফোন আলোচনাকালে এ কথা বলেন পুতিন।

টেলিফোন কথোপকথনে দুই নেতা একমত পোষণ করেন যে, ‘এ অবৈধ হস্তক্ষেপ সিরিয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ক্রেমলিন প্রেস সার্ভিসের বরাতে এ খবর দিয়েছে রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা আরআইএ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার দুই মিত্র ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে নিয়ে সিরিয়ায় হামলার পর এ দুই নেতা এ বিষয়ে আলোচনা করেন।

আরআইএ’র খবরে প্রকাশ, পুতিন বলেছেন, ‘জাতিসঙ্ঘকে উপেক্ষা করে পশ্চিমী দেশগুলো ইতিমধ্যেই সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে। নতুন করে হামলা হলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে বলে রাশিয়া মনে করে।’

শনিবার সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের রাসায়নিক অস্ত্রাগারগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে তিন দেশ। গত সপ্তাহে সিরিয়ার দৌমায় সরকারি বাহিনীর রাসায়নিক আক্রমণের প্রতিবাদে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। দৌমার হামলায় অনেক বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়। আহত হয় কয়েকশত লোক।

যুক্তরাষ্ট্রও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে যে, সিরিয়া যদি এ ধরনের আর কোনো রাসায়নিক আক্রমণ করে তবে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে না। শনিবার জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে জাতিসঙ্ঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হেলি বলেছেন, ‘সিরিয়া যদি এমন বিষাক্ত গ্যাস আবারো ব্যবহার করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এর উপযুক্ত জবাব দেবে।’

এদিকে, জাতিসঙ্ঘে সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত বাশার আল জাফরি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এ ধরনের ‘সন্ত্রাসী’ আক্রমণ বন্ধ করার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। পুতিন এ ধরনের আক্রমণকে ‘আগ্রাসন’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, এতে সিরিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতি খারাপতর হয়ে উঠবে। সূত্র: আল জাজিরা

বিবিসির বিশ্লেষণ : সিরিয়া নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বৃহৎ শক্তিগুলো পরস্পরকে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অস্থিরতা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। এ যুদ্ধে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েছে রাশিয়া। আর প্রেসিডেন্ট বাশারের বিরোধীদের নানাভাবে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।

সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করার জন্য সিরিয়াকে কড়া জবাব দেয়া হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সর্বশেষ এই টুইটে বলেছেন, ‘রাশিয়া প্রস্তুত হও’- কারণ যে মিসাইল আসবে আসবে তা হবে ‘সুন্দর, নতুন এবং বুদ্ধিমান।’

এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন হচ্ছে- পৃথিবী কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে? মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক লিনা খাতিব বলছেন, সিরিয়ার সঙ্ঘাত এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করেছে। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উত্তর কোরিয়াও একটি বড় মাথা ব্যথার কারণ। লন্ডনের স্কুল অব আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজের গবেষক স্টিভ স্যাং মনে করেন উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক সমতা অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

মস্কোর ইনস্টিটিউট অব পলিটিকাল স্টাডিজের গবেষক সার্গেই ম্যারকভ মনে বলছেন, পশ্চিমা নেতারা নিজেদের রাশিয়ার চেয়ে শক্তিশালী মনে করে। পৃথিবীতে এখন নানা ধরনের দ্বন্দ্ব কিংবা সঙ্ঘাত চলছে এবং এর সাথে নানা দেশ জড়িত। মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক লিনা খাতিব বলছেন, এক ধরনের শীতল যুদ্ধ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

এর সাথে আরো একটি বিষয় যুক্ত হয়েছে। সেটি হচ্ছে, পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিধর দেশগুলো এখন যারা পরিচালনা করছে তারা সবাই জাতীয়তাবাদী। সেজন্য যেকোনো সঙ্কটের ক্ষেত্রে তারা পিছপা হতে চাইছেন না। একথা মনে করেন দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক শশাঙ্ক জোসি।

এমন প্রোপটে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি কি রয়েছে? মস্কোর ইনস্টিটিউট অব পলিটিকাল স্টাডিজের গবেষক সার্গেই ম্যারকভ মনে করেন, যদি রাশিয়ার কোনো সৈন্যকে যুক্তরাষ্ট্র হত্যা করে তাহলে কেবল উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি আসতে পারে। লিনা খাতিব মনে করেন, যদি বৃহৎ শক্তিগুলোর পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায় এবং পরস্পরের স্যাটেলাইটে সাইবার আক্রমণ করে তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কারণ থাকতে পারে।

লন্ডনের স্কুল অব আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজের গবেষক স্টিভ স্যাংয়ের মতে কোরিয়া উপদ্বীপ থেকে যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে সেটা হবে খুবই ভয়ঙ্কর একটি বার্তা। এর অর্থ হচ্ছে সে অঞ্চলে একটি যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যদিও উত্তেজনা বাড়ছে কিন্তু একই সাথে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে অনেকেই কাজ করছেন। পৃথিবীজুড়ে যেসব শান্তিকামী নাগরিক সমাজ আছে তারা সরকারগুলোর ওপর চাপ তৈরি করছে, যাতে তারা সঙ্ঘাতে না জড়িয়ে পড়ে। শশাঙ্ক জোসির মতে জাতিসঙ্ঘ এবং অন্যন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। যেকোনো ধরনের বড় যুদ্ধ থামানোর জন্য জাতিসঙ্ঘ একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মি. জোসি মনে করেন।–নয়া দিগন্ত

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:৪০ | সোমবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com