বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাপিয়ার জন্য নাজমা-অপুকে বিদায় নিতেই হচ্ছে

  |   শুক্রবার, ০৬ মার্চ ২০২০ | প্রিন্ট

পাপিয়ার জন্য নাজমা-অপুকে বিদায় নিতেই হচ্ছে

মেঘমুক্ত আকাশে বিজলির মতো হঠাৎ করেই আলোচনায় গর্জে ওঠা একটি নাম শামীমা নূর পাপিয়া। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে স্বল্প সময়ে হয়ে যান বিত্ত-বৈভবের মালিক। নানা কৌশলে বড় বড় কাজ বাগিয়ে নিতেন। বড় নেতাদের খুশি করতে তার কাছ থেকে সুন্দরী তরুণী সংগ্রহ করতো নেতারা। পাপিয়াকে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রদান এবং তার কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আশ্রয়-প্রশ্রয়ের দায়ে নেতৃত্ব হারাতে পারেন যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, দুই মাসের মধ্যে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে। আগামী ১১ মার্চ শেষ হতে যাচ্ছে যুব মহিলা লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ। গ্রেফতার হওয়ার পর পাপিয়াকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

গত বছর ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম আসে যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন নেতার। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ওমর ফারুক চৌধুরীকে। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ ছাড়তে হয় রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে। একই অভিযোগে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাউসার ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথও পদ হারান। যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে অংশগ্রহণেরও সুযোগ পাননি পদ হারানো ঐ নেতারা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা জানান, ক্যাসিনোকাণ্ডে ছাত্রলীগ-যুবলীগকে শুদ্ধি অভিযানের আওতায় আনার পর এবার যুব মহিলা লীগেও একই সূত্র প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শামীমা নূর পাপিয়ার অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর অবাক আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুব মহিলা লীগে শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘অনেকের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছি। কারা কী করছেন সবার আমলনামা আমার কাছে রয়েছে। এ ব্যাপারে অনেক প্রতিবেদন আসছে। অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নেতাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ সম্প্রতি অনানুষ্ঠানিক একটি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন বলে দলীয় একটি সূত্র ইত্তেফাককে নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, পাপিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর যুব মহিলা লীগের শীর্ষ দুই নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যান। ঐ সময় প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত যুব মহিলা লীগের নেতাদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো তালিকা করতে পারেননি যুব মহিলা লীগের বর্তমান নেতৃত্ব। তবে সরষের মধ্যে ভূত থাকলেও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এখনই বাদ যাচ্ছেন না সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। আগামী মাসে সম্মেলন হতে যাচ্ছে যুব মহিলা লীগের। আর এ সম্মেলনে বিতর্কিত অনেকে বাদ পড়বেন।

আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানান, খুব শিগিগরই যুব মহিলা লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে যুব মহিলা লীগের শীর্ষ দুই নেতার আলোচনা হয়েছে। এরই মধ্যে সংগঠনটির কয়েকজন নেতার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সামনে আসায় সংগঠনটিকে ঢেলে সাজাতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুব মহিলা লীগের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থিতিতেই বিভিন্ন সংগঠনের সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুব মহিলা লীগ, মহিলা লীগ, তাঁতী লীগসহ যেসব সংগঠনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, সেগুলোর সম্মেলনের বিষয়ে প্রাথমিক কিছু নির্দেশনা শেখ হাসিনা সেদিনই দিয়েছেন। কিন্তু কয়েক দিন যাবত্ যুব মহিলা লীগের নরসিংদী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর যুব মহিলা লীগের এক নেতাসহ কয়েক জনের নানা কুকীর্তির কথা সামনে আসায় এ সম্মেলন দ্রুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর। তিনি কোনো ধরনের ছাড় দিতে নারাজ। দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করে যারা অপকর্ম করবেন, তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে তার।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর দুই জন সদস্য জানান, দায়িত্বশীল নেতাদের নানা অপকর্মের অভিযোগের তির এখন যুব মহিলা লীগের শীর্ষ দুই নেতার দিকে। এসব ঘটনাকে তাদের ব্যর্থতা হিসেবেও দেখা হচ্ছে। কেননা, বিতর্কিত শামীমা নূর পাপিয়াকে নরসিংদী জেলার যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক করার পেছনে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের এক নেতার ভূমিকা ছিল বলে আলোচনা হচ্ছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় যুব মহিলা লীগের বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের জন্য সিনিয়র নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেন।

২০১৭ সালের ১১ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পান নাজমা আক্তার ও অধ্যাপিকা অপু উকিল। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি মাসের মার্চ মাসে।

প্রসঙ্গত, যুব মহিলালীগ নরসিংদী জেলার সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়াকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে আস্তানা তৈরি করে, নারী, মাদক অস্ত্র ব্যবসাসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রভাবশালীদের মনোরঞ্জনের জন্য পাপিয়া রাশিয়া, থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ থেকে সুন্দরী তরুণীদের নিয়ে আসতেন। অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তার আস্তানায় আসা ব্যক্তিদের গোপন ভিডিও সংগ্রহ করে তা প্রকাশের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়েরও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। পাপিয়ার অপরাধ জগতের বিস্তারিত তথ্য জানতে স্বামী সুমনসহ পাপিয়াকে ১৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।পূর্বপশ্চিমবিডি

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৫০ | শুক্রবার, ০৬ মার্চ ২০২০

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com