বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নৌকারই জয়, চট্টগ্রামের নগরপিতা রেজাউল করিম চৌধুরী

  |   বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২১ | প্রিন্ট

নৌকারই জয়, চট্টগ্রামের নগরপিতা রেজাউল করিম চৌধুরী
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। আগামী পাঁচ বছরের জন্য চট্টগ্রামের নগরপিতা হচ্ছেন তিনি।বুধবার রাত দেড়টায় মোট ৭৩৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে প্রাপ্ত ৭৩৩টি কেন্দ্রের ফলাফলে নৌকা প্রতীক নিয়ে রেজাউল করিম চৌধুরী পেয়েছেন তিন লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকে ডা. শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। বাকি দুটি কেন্দ্রের ফল স্থগিত করা হয়েছে। ফলে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৭৫৯ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হলেন রেজাউল করিম চৌধুরী।

নগরীর এম এ আজিজ স্টেয়িামের জিমনেশিয়াম হলে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে এ ফল প্রকাশ করা হয়।

এর আগে বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ করা হয়। ভোটগ্রহণ শুরুর পর সকালে একজন নিহত, বিভিন্ন কেন্দ্রে সংঘর্ষ, গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে।

সব কেন্দ্রে এবারই প্রথমবার ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) অনুষ্ঠিত হয়। একদিন আগেই প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের নিয়ে নতুন পদ্ধতির এ ভোটগ্রহণ কার্যক্রম শেখাতে ‘মক ভোটিং’-এর ব্যবস্থা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এদিকে ভোটগ্রহণ শুরু হলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মো. আলাউদ্দিন নামের একজন নিহত হয়েছেন। বুধবার সকাল ১০টার দিকে ১৩নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ইউসেফ আমবাগান স্কুল কেন্দ্রের বাইরে এ সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়। নিহত আলাউদ্দিনকে নিজের সমর্থক বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী মাহমুদুর রহমান।

১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থক ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়। সকাল ১০টার দিকে লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়।

চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে দুটি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। লাঠিসোটা নিয়ে কয়েকশ উত্তেজিত নারী-পুরুষ ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায়। তারা ইভিএম মেশিন, কেন্দ্রের দরজা-জানালা ও নিরাপত্তারক্ষীদের গাড়ি ভাংচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

বুধবার সকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হলে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাথরঘাটা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বেলা ১১টার দিকে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকেরা কয়েকটি বুথ দখল করে জাল ভোট দিচ্ছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এর পরপরই ৫০০ থেকে ৬০০ উত্তেজিত নারী-পুরুষ লাঠিসোটা নিয়ে ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায়।

তারা ভোটকেন্দ্রের সামনে রাখা পুলিশ ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত তিনটি মিনিবাস ভাংচুর করে। কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে পাঁচটি ইভিএম মেশিন এবং কক্ষের দরজা ও জানালার কাচ ভাংচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। একপর্যায়ে পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আসে।

এদিকে চসিক নির্বাচনে ৫৭ শতাংশ ভোটকেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসাবে চিহ্নিত করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। অর্থাৎ ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪১০টিই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। বাকি ৩২৫টি কেন্দ্রকে ‘সাধারণ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোটা নগরীতে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে মোট ভোটার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে নতুন ভোটার ৮০ হাজার।

মঙ্গলবার প্রচারবিহীন দিনে নিজ নিজ বাসায় থেকে নির্বাচনে জয়ের কলাকৌশল ঠিক করার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের নানা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কিংবা উত্তাপ-উত্তেজনা থাকলেও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ নেই। যাতে ভোটের দিন কেন্দ্রে গিয়ে নাম-নম্বর খুঁজে পেতে সমস্যা না হয়। কিন্তু এবার সেই ধরনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি কোনো প্রার্থীর মধ্যেই। তাই ভোটকে কেন্দ্র করে উৎসব-আমেজ বলতে যা বোঝায়, তা নেই।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপি মনোনীত ডা. শাহাদাত হোসেন ছাড়াও আরও পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা হলেন- ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আবুল মনজুর, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী।

এছাড়া কাউন্সিলর পদে ৪০টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫৭ নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

১৮নং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ কাউন্সিলর পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. হারুন উর রশীদ। অন্যদিকে ৩১নং আলকরণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুজনিত কারণে এ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ভোট হয়নি। তবে মেয়র ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হয়।

গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী একই বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটির ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে ২১ মার্চ প্রথম দফায় চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন স্থগিত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ১৪ জুলাই পুনরায় চসিক নির্বাচন স্থগিত করা হয়।

এ সময়ে চসিকের প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু হলে নির্বাচন কমিশন ২৭ জানুয়ারি সিটি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৬:০৬ | বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২১

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com