| শনিবার, ১১ মার্চ ২০১৭ | প্রিন্ট
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে আসাদুজ্জামান লেন্টু নামে এক শিক্ষক একই সাথে দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন। এর আগে তিনি ঘোষনগর সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন। ওই বিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি নিয়ে এখন তিনি একই সাথে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রামনগর কেবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কালীগঞ্জ শহরের ভূষণ নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সাথে দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার কারণে তিনি কোন প্রতিষ্ঠানেই ঠিকমত সময় দেন না। যে কারণে বিদ্যালয় দু’টিতে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
এছাড়া ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভূষণ নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, স্কুলের এমপিওভুক্তি, বিদ্যালয়ের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব থেকে ২ টি ল্যাপটপ, ২ টি চেয়ার-টেবিল, ল্যাব সাজানোর ৩০ হাজার টাকাসহ প্রায় ৮ লাখ টাকা অত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ছাদেকুর রহমান ও উপজেলা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কার্যালয়ের সহকারী প্রোগ্রামার মার্জিয়া খানম স্কুল পরিদর্শন করে ১৭ টি ল্যাপটপের মধ্যে ১৫ টি পেয়েছেন। বাকি ২ টি ল্যাপটপ ও কম্পিউটার টেবিল এবং ল্যাব সাজানোর ৩০ হাজার টাকার তিনি হিসেব দিতে পারেননি।
এসব সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও ছাদেকুর রহমান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষক আসাদুজ্জামান লেন্টু প্রায় ২০ বছর ধরে কালীগঞ্জ উপজেলার ঘোষনগর সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কৃষি) হিসেবে চাকরি করেন। ২০১০ সালে তিনি কালীগঞ্জ ভূষণ নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলেও তিনি ঠিকমত স্কুল করেন না। অথচ ওই স্কুলে সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দ, ট্রেনিং সুবিধাসহ আনুসঙ্গিক সুযোগ সুবিধা তিনি ভোগ করে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, ম্যানেজিং কমিটির সাথে আঁতাত করে তিনি তিনজন শিক্ষক ও একজন পিয়ন নিয়োগ দিয়ে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অনুসন্ধান করে তার এই নিয়োগ বাণিজ্যের তথ্য উন্মোচিত হয়েছে। ওই সুত্র মতে প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান লেন্টু সহকারী শিক্ষক আশরাফুজ্জামান মুক্তারের কাছ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার, মাসুয়ারা পারভিনের কাছ থেকে ৭৫ হাজার, আলিনুর রহমানের কাছ থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, পিয়ন পঞ্চানন সিংহের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন। শিক্ষক আশরাফুজ্জামান মুক্তারকে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলেও তিনি হাতেগোনা কয়েকদিন কাস নিয়ে স্কুল থেকে চলে যান।
বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়ানোর শিক্ষক নেই। এছাড়া এমপিওভুক্তির কথা বলে শিক্ষক আমিরুল ইসলামের কাছ থেকে ৫৩ হাজার, নাজনীন আক্তারের কাছ থেকে ৫৩ হাজার, আফরোজার কাছ থেকে ৪৩ হাজার ও অফিস সহকারী কামরুন্নাহারের কাছ থেকে ৪১ হাজার টাকাসহ মোট ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দুর্নীতিবাজ আসাদুজ্জামান লেন্টু ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, এমপিওভুক্তি, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব থেকে ২ টি ল্যাপটপ, ২ টি টেবিল ও চেয়ার, ল্যাব সাজানোর ৩০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট প্রায় ৮ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। এসব টাকার তিনি হিসেবে দিতে পারেননি। শিক্ষকরা প্রশ্ন করলে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন।
আবার অনেক সময় বলে থাকেন, বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু দৃশ্যত বিদ্যালয়ের কোন উন্নয়নই হয়নি। একই ব্যক্তি দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হওয়ায় তিনি ভূষণ নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে কাস নেন না। দম্ভোক্তি প্রকাশ করে শহরে বলে বেড়ান, উপরি মহলে আমার যোগাযোগ আছে, ক্ষমতা আছে, কেউ কিছুই করতে পারবে না। সূত্র আরো জানায়, বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কোন সিদ্ধান্ত শিক্ষকদের জানানো হয় না। ভাল কোন ট্রেনিং হলে নিজেই সেখানে অংশগ্রহণ করেন। ব্যক্তিগত কাজে ঢাকা গেলেও স্কুল থেকে বিল তুলে নেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অমিত সেন জানান, ল্যাব সাজানোর ৩০ হাজার টাকা এখনো কালেকশন হয়নি। ২ টি ল্যাপটপ ও চেয়ার-টেবিলের ব্যাপারে তিনি জানান, একটি ল্যাপটপ আনার সময় প্রথমেই মিসিং হয়েছে। অন্যটির ব্যাপারে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
তিনি আরো বলেন, আমি নতুন সভাপতি হয়েছি। স্কুলের অনেক বিষয়ই জানা নেই। তিনি সব বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে পরে জানাবেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস এম কামরুজ্জামান জানান, একই ব্যক্তি দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারেন না। ল্যাপটপ খোয়া গেলে তাকে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। আমি খোঁজ খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ছাদেকুর রহমান জানান, তিনি বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। একই ব্যক্তি দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই প্রতিষ্ঠানে একই ব্যক্তির চাকরি করার আইনগত কোন বিধান নেই। সরকারি সম্পত্তি ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বিষয়টি তিনি লিখিতভাবে বোর্ডকেও অবহিত করবেন। এ ব্যাপারে শিক্ষক আসাদুজ্জামান লেন্টুর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ জন্য তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
Posted ১১:০৬ | শনিবার, ১১ মার্চ ২০১৭
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin