| শনিবার, ০৯ মার্চ ২০১৯ | প্রিন্ট
মানুষের জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম এখন দিন দিন বেড়েই চলছে।ওষুধ বিক্রেতাদের আচরন দেখলে মনে হয় তাদের ওপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রন নেই।বিক্রেতারা যে যার ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে ওষুধ বিক্রি করছে।ওষুধের প্যাকেটে খুচরা মূল্য উল্লেখ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই দামে বিক্রি হয় না। ১২ টাকার ইনজেকশন ৮শ’ এবং ৬০ টাকার ওষুধ ১৯শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশব্যাপী বৈধ-অবৈধ প্রায় ২ লাখ খুচরা ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দামে ওষুধ বিক্রি করছেন। তাদের এ কাজে সহায়তা করেন ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা।এই চক্র দেশের সাধারণ মানুষের ওপর মূল্যসন্ত্রাস চালালেও নির্বিকার সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। এ ছাড়া ওষুধের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি এবং বিপণন খরচ মেটাতে সময়-অসময় দাম বাড়ায় ওষুধ কোম্পানিগুলো।
মাত্র ১১৭টি ওষুধ ছাড়া বাকিগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই প্রশাসনের। ফলে কারণে-অকারণে ওষুধের দাম বৃদ্ধির নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের।সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর হতে কোন ওষুধের বাড়ানো হয়নি বলে সংশ্লিষ্টসুত্র জানায়।ওষুধ বিক্রেতারা তাদের ইচ্ছমতো ওষুধের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের সাথে প্রতারনা করছেন। তবে দোকানিরা দাম বাড়িয়ে থাকলে বিষয়টি প্রশাসনের জানা নেই।
অস্বাভাবিক দামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ওষুধ বিক্রি হচ্ছে বলে দেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা-উপজেলায় প্রতিনিয়ত সাধারন লোকদের কে ঠকানো হচ্ছে। ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপিতে প্রয়োজনীয় ডসেটিক্সেল, প্যাক্লিটেক্সেল, কার্বোপ্লাটিন, সিসপ্লাটিন, জেমসিটাবিন ইত্যাদি ওষুধের দাম ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ক্যাটামিন ইনজেকশনের দাম ৮০-১১৫ টাকা কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকায়।
খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওষুধের দাম প্রতি পাতায় (ট্যাবলেট ও ক্যাপসুলের ক্ষেত্রে) লেখা থাকে না। লেখা থাকে ৫ পাতা বা ১০ পাতার একটি বাক্সে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্রেতা প্যাকেটের গায়ের দাম দেখার সুযোগ পান না। অন্যান্য পণ্যের মতো ওষুধের দাম সম্পর্কে রোগীদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রোগীদের মুখ দেখেই একশ’ থেকে দু’শ গুণ দাম বাড়াতেও দ্বিধা করে না অসাধু বিক্রেতারা।
দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সরবরাহকারী ও বিক্রেতাদের সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত কোনো ওষুধের দাম বাড়ায়নি কোম্পানিগুলো। তবে ডিসেম্বরের আগে বেশকিছু ওষুধের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে ইনসেপ্টা ফার্মার ওমিডন ২ থেকে আড়াই টাকা, স্কয়ার ফার্মার মোটিগার্ট আড়াই টাকা থেকে ৩ টাকা, বেক্সিমকো ফার্মার নিউসেপ্টিন-আর আড়াই টাকা থেকে ৩ টাকা, এসিআই ফার্মার অ্যাবেক্যাপ ৫/২০ ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা ও ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল ফার্মার মাইক্রোফ্রি ২৫ টাকা থেকে ২৮ টাকা দামে উন্নীত হয়েছে।
তবে এ ধরনের সাধারণ ওষুধের ক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধির অভিযোগে ভিন্নতা রয়েছে। বিভিন্ন বিষেশায়িত হাসপাতালের সামনে ওই সব রোগের ওষুধের চাহিদা অনুসারে দাম বাড়ানো হয়। এ ক্ষেত্রে ওষুধের প্যাকেটে লেখা দামের কোনো পরিবর্তন হয় না। যখন যে ওষুধের চাহিদা বাড়ে তখন কোম্পানির প্রতিনিধি ও দোকানিরা মিলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে থাকেন।
রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকার একটি ওষুধের দোকানে দেখা গেছে, ডক্সিভা ২০০ মিলিগ্রাম ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। ওষুধটির নির্ধারিত মূল্য ৬ টাকা হলেও একজন ক্রেতার কাছে ৮ টাকা এবং আরেকজনের কাছে ১০ টাকা বিক্রি করতে দেখা যায়।
ক্রেতারা ওষুধের সঠিক মূল্য জানেন না বা জানার চেষ্টাও করেন না। কারণ ওষুধ কেনা হয় সুস্থতার আশায়, তাই মূল্য ততোধিক গুরুত্ব পায় না। এ ছাড়া ওষুধ শিল্প সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত ওষুধের কাঁচামাল বা এপিআইয়ের দাম বাড়ার কারণে বাড়ে ওষুধের দাম। পাশাপাশি বিপণন খরচও এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে বেশিরভাগ কাঁচামাল আসে ভারত ও চীন থেকে। দাম বাড়লে কোম্পানিগুলো ঔষধ প্রশাসনে দাম বাড়ানোর আবেদন করে। কিন্তু দাম কমলে তারা আর ওষুধের দাম কমানোর কথা চিন্তা করে না।
এ ছাড়া বিদেশি ওষুধের কারণেও দামের তারতম্য দেখা যায়। যেমন ক্যান্সারের কেমোথেরাপির ওষুধের দাম সম্প্রতি বেড়েছে। সম্প্রতি কিছু বিদেশি কোম্পানি ওষুধের দাম অস্বাভাবিক হারে কমিয়ে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপিতে প্রয়োজনীয় ডসেটিক্সেল, প্যাক্লিটেক্সেল, কার্বোপ্লাটিন, সিসপ্লাটিন, জেমসিটাবিন ইত্যাদি ওষুধের দাম ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আবার একই কারণে কোনো কোনো ওষুধের দাম ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কমাতে হয়েছে। ভারত থেকে আমদানিকৃত হারসেপ্টিন ওষুধের প্রতি পিসের দাম ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অস্বাভাবিকভাবে সে ওষুধের দাম কমে বর্তমানে ৯০ হাজার ৪০০ টাকায় নেমেছে। এদিকে দেশে প্রস্তুতকৃত বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের একই ওষুধের আগে দাম ৮০ হাজার টাকা থাকলেও বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার টাকা।
রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকার ওষুধ বিক্রেতাদের মতে, দেশে পপুলার, ইনসেপ্টা, রেনেটা ও গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস ক্যাটামিন ইনজেকশন উৎপাদন করে। সরবরাহ সংকটে বর্তমানে বাজারে ৮০-১১৫ টাকার ইনজেকশনটি ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে উৎপাদনকারী চার প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত ইনজেকশনটি ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি করে। গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের উৎপাদিত জি ক্যাটামিন ৫০ এমজির প্রতিটি ইনজেকশনের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) ৮০ টাকা, পপুলার ফার্মার ক্যাটালার ৫০ এমজির এমআরপি ১১৫, ইনসেপ্টার ক্যাটারিডের এমআরপি ১১৫ ও রেনেটা কেইন ইনজেকশন প্রতি ভায়াল এমআরপি ১০০ টাকা। কিন্তু সরবরাহ ঘাটতির কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো বেশি দামে ইনজেকশনটি বিক্রি করছেন। কোথাও ২০০ টাকা আবার কোথাও ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে ওষুধের মূল্য নির্ধারণে সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা না থাকায়ও ওষুধের দাম বাড়ে। ১৯৯৪-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়- অত্যাবশ্যকীয় তালিকাবহির্ভূত ওষুধের দাম নিজ নিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে। ২৪ বছর আগের সেই নির্দেশনা বলে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ায় কোম্পানিগুলো। অথচ ১৯৮২ সালের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশে যে কোনো ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের ছিল।
লেখক-সাংবাদিক ও কলামিস্ট
mailto:Email-ganipress@yahoo.com
Posted ১১:৪৭ | শনিবার, ০৯ মার্চ ২০১৯
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin